আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ । আইটি প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করছি। টুকটাক ছাইপাশ কিছু লেখালেখির অভ্যাস আছে। মানুষকে ভালবাসি। বই সঙ্গে থাকলে আমার আর কিছু না হলেও হয়।
ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে। ভালবাসি প্রকৃতি; অবারিত সবুজ প্রান্তর। বর্ষায় থৈ থ
ঈদের পর নতুন কর্মসূচি
কওমি মাদরাসার শীর্ষ আলেমদের নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম আগের চেয়ে এখন আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী। অরাজনৈতিক হয়েও সংগঠনটির রাজনৈতিক গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠায় নেতাকর্মীদের মনোবল আগের চেয়ে অনেক চাঙ্গা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে হেফাজতের ভোটের প্রভাবের ঘটনায় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা উজ্জীবিত।
এ ছাড়া হেফাজতের সাথে সরকারের বিভিন্নপর্যায় থেকে সমঝোতার চেষ্টা বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে হেফাজতকে আসন দেয়ার লোভনীয় প্রস্তাবের বিষয়টি হেফাজতের নেতাকর্মীদের মনোবলে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তবে সংগঠনটি সরাসরি রাজনীতিতে না জড়ানোর আগের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে। সরকার নতুন করে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় এ সরকারের আমলে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছে সংগঠনটি। হেফাজত আমিরের যে ভিডিও চিত্রের বক্তব্য নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে কড়া সমালোচনা করা হচ্ছে তাকে সমঝোতার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পিত অপপ্রচার হিসেবেই দেখছেন নেতাকর্মীরা। পাল্টা বক্তব্যের মাধ্যমেই ভিডিও ইস্যু মোকবিলা করার চিন্তা করছে সংগঠনটি।
ঈদের পরে নতুন করে কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। আগের মতোই ওলামা সম্মেলনের মাধ্যমে আলোচনার ভিত্তিতেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হতে পারে। হেফাজতের শীর্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে সংগঠনটির বর্তমান অবস্থা এবং তাদের চিন্তাভাবনার বিষয় জানা যায়। হেফাজত নেতারা বলছেন, তাদের ১৩ দফা দাবি এই সরকার বাস্তবায়ন করবে এমন আশা এখন আর কেউ করছে না। তারা বলছেন, ৫ মে শাপলা চত্বরে অভিযানের পরই এটা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
তারপরও সরকারের বিভিন্নপর্যায় থেকে হেফাজতের সাথে সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত থাকায় কেউ কেউ কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছিলেন। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের পর গাজীপুরের নির্বাচনের আগ পর্যন্তও সরকারি মহল বিভিন্নভাবে হেফাজতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। এমনকি হেফাজতের একটি অংশ সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ছিল এমন প্রচারণাও চালানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে সরকারি দল সমর্থক প্রার্থীর পরাজয়ের পর সরকার সরাসরি হেফাজত বিরোধী অবস্থানে চলে যায়। নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার বন্ধের কথা সামনে আনা হয়।
নির্বাচন কমিশনেও এ নিয়ে কথা হয়। এরই মধ্যে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফীর একটি ওয়াজের ভিডিও বক্তব্য প্রচারিত হয়। এ নিয়ে কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় রিপোর্ট হতে থাকে। একপর্যায়ে জাতীয় সংসদে এ নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় লিপ্ত হন সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো সরাসরি আল্লামা শফীর কড়া সমালোচনা করে এ নিয়ে কথা বলেন।
হেফাজত নেতারা মনে করছেন, হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক সংগঠন না হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের ব্যালটের প্রতিবাদ থেকেই হেফাজতের ১৩ দফার প্রতি জনমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। সরকারি দল দাবির প্রতি তোয়াক্কা না করে হেফাজতকে দমনের লক্ষ্যে ৫ মে শাপলা চত্বরে যে অভিযান চালিয়েছে তা যে অন্যায় ও অগ্রহণযোগ্য সেটাও প্রমাণিত হয়েছে এর মাধ্যমে। এতে সর্বস্তরে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নেতাকর্মীদের মনোবল আরো চাঙ্গা হয়েছে। সরকারি দল হেফাজতের ব্যাপারে যেভাবে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় যাচ্ছে তাতে আগামীতে স্থানীয় ও জাতীয় সব নির্বাচনে হেফাজতের প্রভাব আরো বেশি জোরালোভাবে পড়ার ক্ষেত্রই তৈরি হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। হেফাজতের সাথে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়েই সরকারি দল এখন হেফাজতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও হেফাজত নেতারা মনে করছেন।
নেতারা জানান, ৫ মে ঢাকা অবরোধের আগে অবরোধ প্রত্যাহার করার শর্তে হেফাজতকে নির্বাচনে ৫০টি আসন দেয়ার লোভনীয় প্রস্তাব সরকারি পক্ষ থেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হেফাজত দাবি আদায়ের বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করছে জানিয়ে তা তখন প্রত্যাখ্যান করেছিল। পরে সরকারি মহল হেফাজতকে ম্যানেজ করতে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। এসব খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এসব ঘটনা নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
কওমি মাদরাসার পরীক্ষার পর রমজান মাস এসে যাওয়ায় ইফতার মাহফিলের মধ্যেই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়ে আল্লামা শফী ওমরাহ করতে যান। গত বুধবার তিনি ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠদের সাথে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। আল্লামা শফীর সাথে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াজের ভিডিও নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার বিষয়টি অবহিত করার পর আল্লামা শফীর প্রথম মন্তব্য ছিলÑ ‘কোনো কাজ হবে না, কোনো কাজ হবে না, তাদেরই ক্ষতি হবে। ’ ভিডিওটির নিজের না অন্যের সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করেই তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নারী বিরোধী বক্তব্য আমি কখনো দিয়েছি বলে মনে পড়ছে না।
নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগে জেনা-ব্যভিচার কিভাবে বেড়ে যাচ্ছে সেসব বিষয়ে কথা বলি সব সময়। ’ হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুুনগরী গতকাল নয়া দিগন্তের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ঈমানি আন্দোলনকে দমন করা যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না। শাপলা চত্বরে আলেমদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে হেফাজতকে শেষ করে দেয়া যাবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনা সরকারের জন্য কত বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে ইতোমধ্যেই সরকার হয়তো বুঝতে পেরেছে। আলেম-উলামাদের সাথে এই ধরনের খারাপ আচরণ করতে থাকলে সরকারের জন্য ভবিষ্যতে আরও খারাপি আছে।
অসুস্থ বাবুনগরী বলেন, আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে যেভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তাতে উনার কোনো ক্ষতি হবে না, হেফাজতেরও কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, নাস্তিকেরা মহানবী সা: ও ইসলামকে কটাক্ষ করার পর তাদের শাস্তি দাবি করায় তারা আগেও আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছিল। কিন্তু তা কেউ গ্রহণ করেনি। এখনো যারাই নাস্তিকদের পথ অনুসরণ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা মানুষ গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল ভেঙে দেয়ার লক্ষ্যেই গণহত্যা চালানো হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানিতে সেটা উল্টো হয়েছে। মানুষ নানাভাবে তার জবাব দিয়ে হেফাজতের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করছে। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল আরো বেড়েছে। ঈদের পর আলোচনা করে কর্মসূচি দেয়া হবে জানিয়ে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, হেফাজত আগেও কখনো রাজনীতির সাথে জড়ায়নি ভবিষ্যতেও জড়ানোর ইচ্ছা নেই।
তবে হেফাজতকে যারা সমর্থন করে যাবে, দাবির সাথে থাকবে হেফাজত অবশ্যই তাদের সাথে থাকবে। হেফাজতের সিলেট মহানগরীর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি মাওলানা শাহীনুর পাশার কাছে তৃণমূলে হেফাজতের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে হেফাজতের ভোটের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। কারণ দেশের মানুষ আলেম ওলামাভক্ত। আালেমদের অপমান করা মানুষ সহ্য করছে না। সদ্যঅনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেফাজতের ভূমিকার ব্যাপারে জেলা হেফাজতের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, গাজীপুরেও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী-সমর্থকেরা ব্যালটের মাধ্যমে সরকারকে জবাব দিয়েছে।
গাজীপুরবাসী সারা দেশের মানুষের বার্তা সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর কাছে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের সাথে নানাভাবে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার এখন অপ্রপচারে নেমেছে। হেফাজত আমিরের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, মন্ত্রী, মহাজোটের এমপি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রশাসনের বিভিন্নপর্যায়ের কর্মকর্তারা হাটহাজারী গিয়ে দফায় দফায় আল্লামা শফীর সাথে দেখা করে হেফাজতের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে ৫ মে ঢাকা অবরোধের আগে কিছু দাবি মানার ব্যাপারে মৌখিক আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল।
অবরোধের আগে হেফাজতকে ৫০টি আসন দেয়ার প্রস্তাব দেয়ার খবরের ব্যাপারে জানতে চাইলে হেফাজতের এই নেতা বলেন, তৃতীয় মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাবও এসেছিল। কিন্তু হেফাজত রাজনৈতিক সংগঠন না হওয়া এবং দাবির ব্যাপারে আপসহীন হওয়ার কারণে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এসব কারণেই সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, অপপ্রচারের জবাব আমরা দিচ্ছি। আশা করছি রমজানের পর আমরা কর্মসূচিতে যাব।
তবে এই সরকার ১৩ দফা বাস্তবায়ন করবে এমন আশা হেফাজত এখন আর করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, হেফাজতের ওপর যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে সিটি নির্বাচনে জনগণ তার জবাব দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে মানুষ আরো কঠিনভাবে জবাব দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হেফাজত যেভাবে ছিল সেভাবেই আছে বরং জুলুম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ঈমানি শক্তি আরো বেড়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।