আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন

পিছনের পায়ের ছাপের রেখাটা র্দীঘ আর অস্পষ্ট হয়ে আসছে... ক্রমশঃ...
গতপর্বে বলছিলাম ব্যাক্তিত্ব নিয়ে যত কথা । আজ বলবো আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ব্যাক্তিত্বের সাথে আত্মবিশ্বাস অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে পারে ব্যাক্তিত্বের প্রখরতা। তেমনি আবার আত্মবিশ্বাসের অভাবে ব্যাক্তিত্ব হয়ে পরতে পারে ম্লান।

কিন্তু অতিমাত্রার আত্মবিশ্বাসও কিন্তু ব্যাক্তিত্বের প্রখরতা না বাড়িয়ে বরং অপরের মনে জন্ম দিতে পারে আপনার সর্ম্পকে নেতিবাচক মনোভাবের। তো চলুন জানা যাক আত্মবিশ্বাস নিয়ে কিছু কথা। আত্মবিশ্বাস বলতে মূলতঃ আমাদের নিজের সর্ম্পকে এবং নিজের যোগ্যতা সর্ম্পকে ইতিবাচক চিন্তা এবং বাস্তব সম্মত অনুভূতির সংযোগকে বুঝায়। আমাদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন, ইতিবাচক মনোভাব, উৎসাহ, স্বকীয়তা, স্বাধীনচেতা, বিশ্বাস, সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার যোগ্যতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ইত্যাদি আত্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলে। অন্যভাবে এই বৈশিষ্ট্যগুলোই সামগ্রিক ভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করে।

যখন আপনি নিজের উপর ভরসা করতে পারবেন, পারবেন সকল দুঃশ্চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে নিজের অবস্থানে দৃঢ় ভাবে দাড়াঁতে, তখনই আপনি হয়ে উঠবেন বিশ্বাসী- আত্মবিশ্বাসী। আত্মবিশ্বাস নিজেকেই তৈরী করতে হয়। এটা অন্যের থেকে গ্রহণ করা যায় না। হয়তো অন্য কেউ আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে দিবে। এমনকি বাবা-মাও সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তৈরী করতে পারেন না।

বরং সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করেন। নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসাবে গড়ে তোলার প্রথম ধাপ হচ্ছে ভবিষ্যতের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা। মনে রাখবেন আপনার ভবিষ্যত আপনারই হাতে। আপনিই পারেন আপনার ভবিষ্যতকে সুন্দর একটা কাঠামো দিতে। আর এই কাঠামো দানের জন্য সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা প্রয়োজন তা হচ্ছে আপনি কি চান তা ঠিক করা, আপনি কোথায় পৌছুতে চান তা ঠিক করা।

হতে পারে আপনার লক্ষ্য অসম্পূর্ণরূপে অর্জন হলো না, কিন্তু সেই ব্যার্থতাটুকুও মেনে নেয়াটাও কিন্তু আত্মবিশ্বাসেরই পরিচায়ক। যদি আমাদের প্রশ্ন করা হয় আমাদের আত্মবিশ্বাস কেমন? বা আমরা কতটুকু আত্মবিশ্বাসী? উত্তরে কি বলবো আমরা? নিশ্চই আমরা বেশিরভাগই বলবো আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাইনা? তাহলে চলুন কিছু কম আর যথাযথ আত্মবিশ্বাসমূলক আচরণ সর্ম্পকে জানি। কিভাবে আমরা এই দুইটিকে আলাদা করতে পারি? কিছু উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টা দেখি- ১) কম আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ কিছু করার আগে সবাই কি ভাবছে তা চিন্তা করা। যথাযথ আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ কিছু করার আগে যদি নিজের কাছে মনে হয় কাজটি ঠিক, তাহলে তাই করা।

অন্যরা কি ভাবছে তার চেয়ে নিজের বিশ্বাসের উপর বেশি গুরুর্ত্ব দেয়া। ২) কম আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ সবসময় যা আপনি করেন তারই পূর্ণরাবৃত্তিতে আপনি সাচ্ছ্যন্দবোধ করেন। যথাযথ আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ ঝুকি নিতে পছন্দ করা। নিজের লক্ষ্যে পৌছুতে পরবর্তী ধাপে ঝুকির মুখোমুখি হতেও দ্বিধা না থাকা। ৩) কম আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ কোন কাজে পরাজিত হলে মনে করেন এটা ব্যাক্তিগত ভাবে নিজের জন্য খারাপ মনে করা।

তাই সেই কাজ এড়িয়ে চলা। যথাযথ আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ পরাজিত হওয়াটাকে পরবর্তী ধাপের অভিজ্ঞতা অর্জনের নির্দেশক হিসাবে বিবেচনা করা। ৪) কম আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ আপনি ভুল করতে পারেন -এটা মানতে পারেন না। নিজের বিচার বা বিবেচনাই আপনার কাছে মূখ্য। যথাযথ আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ ভুলগুলো আপনি মেনে নেন এবং পরবর্তীতে তা শোধরানোর জন্য সচেষ্ট হন।

৫) কম আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ সবসময় অন্যের কাছ থেকে নিজের কাজের মূল্যায়ন চান। অপরের কাছে নিজের অর্জনগুলো বা সফলতাগুলো তুলে ধরেন বার বার। যথাযথ আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ অন্যের কাছে নিজের কাজের মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা আপনার কাছে মূখ্য নয়। কারণ আপনি জানেন আপনি কি কাজ করেছেন। ৬) কম আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ আরে ধূর… ব্যাপার না…।

অন্যরা আপনার সর্ম্পকে কোন নেতিবাচক মনোভাব করলে তা আপনি এভাবেই উড়িয়ে দেন। যথাযথ আত্মবিশ্বাসী আচরণঃ অন্যের নেতিবাচক মনোভাবকে যথেষ্ট গুরুর্ত্ব দেন এবং তা পরবর্তীতে সংশোধনে সচেষ্ট হন। আচ্ছা এবার যদি আমাদের প্রশ্ন করা হয় আমাদের আত্মবিশ্বাস কেমন? উত্তরটা কি আগের মতোই হবে? নিজেই নিজেকে বলুন। প্রতিযোগীতার এই বিশ্বে সফলতার দ্বারে পৌছানোর জন্য আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠার কোন বিকল্প নেই। আর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে প্রয়োজন কিছু কিছু বিষয়কে অনুধাবন করা।

চলুন জেনে নেয়া যাক সে সব বিষয়গুলো- ১) নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার খারাপ দিকটি কি? হতে পারে আপনি মানসিক বা শারীরিক ভাবে দুর্বল। কিন্তু আমি দূর্বল এটা ভেবে সময় নষ্ট করার চেয়ে কি করে দূর্বলতা কাটানো যায় সেটা চিন্তা করতে হবে। ২) আত্মবিশ্বাসী হওয়ার লক্ষ্যে জীবন বাজি রাখার প্রয়োজন নেই। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করুন। নিজের ভুলগুলোকে মেনে নিন এবং পরবর্তীতে সংশোধনের জন্য চেষ্টা করুন।

৩) অপরকে লক্ষ্য করুন। আত্মকেন্দ্রিকতা ভুলে অন্যের কাছ থেকে শেখার চেষ্টাও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠার অন্যতম উপায়। ৪) জীবনটাকে একটা ঝাকি দিন। সুযোগটা কাজে লাগান। একটা নতুন কিছু করুন।

হতে পারে, নতুন কোন একটা খেলা শিখতে পারেন, বা ভালো কোন একটা বই পড়তে পারেন…। যাকিছু ভালো একটা কিছু করুন। এতে আপনার মনের উপর চাপ কমবে। মনের উপর চাপ রেখে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায় না। ৫) অন্যকে দিন।

মনে রাখবেন আপনি যতটুকু দিবেন ঠিক ততটুকুই ফেরত পাবেন। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। অন্যর প্রতি নিজের বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন। বিনিময়ে আপনার প্রতি তার বিশ্বাসটুকু ঠিকই ফেরত পাবেন। ৬) নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমি কতটুকু আত্মবিশ্বাসী।

এবং এই আত্মবিশ্বাসটুকুর কারণ কি? সততার সাথে নিজেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন। খুজেঁ পাবেন আপনার আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পথে আপনার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো। এবার নেতিবাচক দিকগুলো সংশোধনের চেষ্টা করুন। আর ইতিবাচক দিকগুলো আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করুন। ৭) কারো ব্যাক্তিত্বকে আদর্শ হিসাবে বিবেচনা করুন।

হতে পারে সেটা আপনার আপনজন, বা অনেক দুরের কেউ। তার ব্যাক্তিত্বের ইতিবাচক দিকগুলো ভাবুন। তার আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি খুজেঁ বার করুন। তারপর নিজের সাথে তুলনা করুন। চেষ্টা করুন তার ইতিবাচক দিকগুলোকে গ্রহন করার।

৮) নিজের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। হতে পারে আপনি ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেন, হতে পারে আপনি ভালো গান গাইতে পারেন, হতে পারে আপনি ভালো অংক করতে পারেন, হতে পারে আপনি একজন ভালো বন্ধু, আরো অনেক কিছু হতে পারে। তার মানে আপনার মাঝে অনেক ভালো বিষয় আছে। সেগুলোর উপর জোর দিন। সেগুলোকে ভিত্তি করে হয়ে উঠুন আত্মবিশ্বাসী।

৯) নিজের লাইফ স্টাইল বদলে ফেলুন। হতে পারে এটা আপনার পোশাক-পরিচ্ছদের পরিবর্তন, হতে পারে পোশাকের রঙ পরিবর্তন, হতে পারে চুলের ষ্টাইল পরিবর্তন। অর্থাৎ নিজেকে বদলানোর ইচ্ছাটা যেমন ভিতরে ভিতরে প্রয়োজন, তেমনি সেটার বহিঃপ্রকাশও প্রয়োজন। ১০) কখনোই বিষন্নতায় ভুগবেন না। বিষন্নতা আপনার নিজেরই সৃষ্ট একটি মানসিক রোগ।

যার প্রতিকার একমাত্র আপনার হাতেই। তাই বিষন্নতা এড়িয়ে এগিয়ে চলুন সামনের দিকে। ১১) ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে মিশুন। তাতে করে আপনার মনেও তার ছোঁয়া পরবে। আর যদি নেতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে মিশেন তাহলে তার ছোঁয়াও আপনার উপর পরবে।

তাই বেছে নিন আপনার ইতিবাচক বন্ধুকে। ১২) অতীতকে ভুলে যান। অতীতটা শুদ্ধ হোক বা ভুল, তাকে কিছু আসে যায় না। কারণ অতীতকে আপনি বদলাতে পারবেন না। বরং অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আজ থেকেই নতুন করে শুরু করুন, নতুন এক ভবিষ্যতের জন্যে।

সবশেষ কথা নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসাবে গড়ে তুলতে চান কিনা, তা নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন। যদি চান, তাহলে বদলে ফেলুন নিজেকে… তুলে ধরুন আপনার ভিতরের আত্মবিশ্বাসী আপনাকে। আত্মবিশ্বাসেই সফলতা… সবার সুন্দর জীবন কামনায়… ======================== ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট অন্যান্যঃ ফারুক হাসান-এর ব্লগে প্রকাশিত
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.