আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড়ের বন্ধ্যা ও উগ্র রাজনীতিঃ কোন পথে নিয়ে যাবে আমাদের

বৃষ্টি যেরকম আসতে আসতে ফিরে যায়..তেমনি বৃষ্টির মতো আমিও ফিরেছি বহুবার... পাহাড়ে বহমান বন্ধ্যা ও উগ্র রাজনীতির রক্তাভ স্রোতধারা, উন্নয়নবঞ্চিত দরিদ্র পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের কোথায় নিয়ে যাবে? সেটি এখন এক বড়ো সংশয়ের জায়গা। অত্যন্ত যৌক্তিক কারণেই পাহাড়ের আইন-শৃঙ্খলা এবং জনমানুষের নিরাপত্তার প্রশ্নটিই যেন বার বার সামনে চলে আসছে। গত ২১ মে রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত এক হালি প্রাণঘাতী জিঘাংসার দায়ও নিতে চাননি কেউই। মনে হয়, আজগুবি-বায়বীয় যমদেবতা এসে, একের পর এক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছেন। পাহাড়ের বিদ্যমান রাজনৈতিক বিরোধ ভাবাপন্ন দুটি দলের বক্তব্য শুনলে তা-ই বিশ্বাস করতে হবে।

সবদোষ সরকারের ঘাড়ে অথবা সুযোগ বুঝে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে চাপিয়ে দিলেই কী সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? আবার নিজেরা নিজেরা দ্বন্দ্ব-সংঘাত করে রাজনৈতিক কর্মসূচীও দেয়া হয়। অনেক অসহায় সাধারণ মানুষকে আক্ষেপ করতে শুনি, "নিজের রক্ত নিজে খেয়ে আমরা এখন কুমীর বনে যাচ্ছি"। সমস্যাকে কেউ কোনদিন জোর করে গায়েব করতে পারেনি। সমস্যাকে সমাধানের জন্য খোলা মনে আলোচনার কোন বিকল্প পৃথিবীতে আবিষকৃত হয়নি। বরং নিজের দোষ অহেতুক অন্যের ঘাড়ে না চাপিয়ে সমাধানের পথ খোঁজাই উত্তম।

সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে মেনে না নেয়া বা স্বীকার না করা অগণতান্ত্রিক এবং এক ধরণের মৌলবাদও। আবার অস্ত্রের ভাষায় সমাধান খোঁজার মধ্যে বাস্তবতাও কতটুকু, তা-ও ভেবে দেখার সময় আসন্ন। যদি রক্তই সমাধান দিতে পারতো তাহলে পাহাড়ে অনেক আগেই তা আপনাআপনি এসে যেতো। এখন আমরা পাহাড়ী-বাঙ্গালী শান্তিপ্রিয় অনেক মানুষই শান্তির জন্য সরকারের চলমান উদ্যোগে ভরসা রাখছি। যদিও চুক্তি নিয়ে দ্বিমত আছে পাহাড়ী-বাঙ্গালী উভয় সমাজে।

আমার বিশ্বাস, এটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। পাহাড়ের অনেক অন্দরে-জনপদে সুর্যের আলো না পেঁৗছলেও সত্য কিন্তু চাপা থাকার বিষয় নয়। সব ধরণের যোগাযোগ পাহাড়ের অনেক দূর্গম জনপদেও এখন মানুষকে প্রতিনিয়ত কৌতুহলী এবং সত্যান্বেষী করে তুলছে। স্থায়ী শান্তির হুঙ্কার দাতারা যে যাই বলুক, পত্রিকা-বিবৃতিতে যাই প্রকাশ পাক-মানুষ কিন্তু ঠিকই ধরে নেই, "ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি"। ব্যক্তিগতভাবে আমরা সকলেই জানি, তিন পার্বত্য জেলার তিন মাননীয় সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করছেন।

আঞ্চলিক পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যানও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন। তিন সার্কেল প্রধান বা রাজা মহোদয়রাও অঘোষিতভাবে সর্বজনশ্রদ্ধেয়। তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পদমর্যাদা ঠিক নির্ধারিত না হলেও তাঁদের অসীম অর্থনৈতিক ক্ষমতা সমর্্পকে পাহাড়ের সব মানুষই কমবেশী অবগত। উপরের প্যারাটি সমর্্পকে কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না। ভুল বুঝে থাকলেও আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

কারণ সত্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকলে এ লেখার পাঠকের কাছে আমাকে জ্ঞানপাপী হতে হবে। এতোসব পদ-পদবীর ভারে ভারাক্রান্ত এ জনপদে কাঁহাতক মানুষ অশান্তি ভোগ করবেন? আর কেনইবা দেশের অপরাপর অঞ্চলের মানুষ, পার্বত্যাঞ্চলকে অনুন্নত ভাববেন? তাহলে কী এখানে "বিচার মানি, তালগাছ আমার"- এরকম কোন গলদ রয়েই গেছে? আবার কখনো-সখনো দেখি, পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে সাত-সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপাড়ের মানুষও বেশ আগ্রহী। বিগত একদশকে আমরা তাঁদের তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক (!) উন্নয়নের মহড়াও দেখছি। হয়তো বিশ্বায়নের এ যুগে দাতাগোষ্ঠির চাপাচাপিতে কিছুটা লাভবান হবার সুযোগ আছে। খোদ বিরোধী দলীয় নেত্রীই যখন সেপথ মাড়ান-সেখানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের এ ধরণের চেষ্টাতে আমি দোষের কিছু দেখিনা।

বিনয়ের সাথে সবার কাছে প্রস্তাব রাখতে চাই, একটি পরিবারের ছোট সন্তানকে বাদ দিয়ে যেমন ওই পরিবারের সহায়-সম্পত্তি ভাগ বন্টন সম্ভব হয়না তেমনি পার্বত্যাঞ্চলের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও কোন পক্ষকে বাদ দিয়ে সেটি আশা করা ভুল। পেশাগত কারণে কোন ঘটনা হলেই অসংখ্য যৌক্তিক-অযৌক্তিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কাছের-দূরের এসব প্রশ্নকর্তাদের সব প্রশ্নের উত্তর সন্তোষজনকভাবে সব সময় দিতেও পারিনা। দু'একজন খুব ক্ষেপে যান, বলেন-তুমিতো পাহাড়ে স্যাটেলার। আমি কিন্তু ব্যক্তি জীবনে খুবই ঠোঁটকাটা মানুষ।

বিতর্কচর্চার ভক্ত। তাই সবসময় মেনে নিয়ে চলতে পারিনা। পারিনা চুপ করেও থাকতে। অনেক অগ্রজকে (বিশেষ করে শহর চট্টগ্রামের) মুখের ওপর বলে দিই, পাহাড়ের সমস্যার জন্য সব দোষ স্যাটেলারদের না, আর পাহাড়ের রাজনীতিও স্যাটেলাররা নিয়ন্ত্রণ করেন না। আমি বুঝিনা, যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সিংহভাগ দখল অ-স্যাটেলারদের হাতে, ভূমি, শিক্ষার দিক থেকেও স্যাটেলাররই পিছিয়ে, সেখানে কেনো এসব দরিদ্র মানুষকেই রাজনৈতিক গিনিপিগ বানানো হয়? আমি বিশ্বাস করি, মানুষতো ফেরেশতা নয়।

একবারে কাউকে ধোয়া তুলসী পাতাও ভাবার আব্দার করবোনা। আমরা কখনো নিজের মুখটা আয়নায় রেখে ভাবতে চাই না যে, এতোকাল পাহাড়ে যে রাজনীতি চর্চা হয়েছে, তা কী কালের ইতিহাসে পুরোটা সঠিক? অসামপ্রদায়িকতার চাদর গায়ে দিয়ে অনেকে কী কট্টর-উগ্র জাতীয়তাবাদী হয়ে ওঠেননি? প্রগতিশীল রাজনৈতিক মাঠের একজন সাধারণ কর্মীও জানেন জাতীয়তাবাদ কতোটা ভয়ংকর এবং অগণতান্ত্রিক। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের অংশ হিসেবে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, একাত্তরের পটভূমি পুরোটা জাতীয়তাবাদের ওপর নির্ভরশীল ছিলোনা। পাকিস্তান নামক অসভ্য-বর্বর রাষ্ট্রটির জন্মলগ্ন থেকেই পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষ রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়েছেন। আর এ বৈষম্যের জবান তৈরী করতে করতেই এ ভূ-খন্ডের মানুষ ছিনিয়ে এনেছে প্রিয় স্বাধীনতা -----------প্রদীপ চৌধুরী, সাংবাদিক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।