I often see flowers from a passing car That are gone before I can tell what they are Haven gives its glimpses only to those Not in position to look too close… প্রথম পর্বের পর.........
আমি ক্লাস সিক্সে ওঠার পর আম্মু আর আব্বুর মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হল আমাকে ক্যাডেট কোচিং করানো নিয়ে। আম্মু আমাকে ক্যাডেট কোচিং করাতে চায়, আর বাবা বলে – “আমার একটা মাত্র মেয়ে ক্যাডেটে চলে গেলে আমি একা বাসায় থাকব কি করে???”জবাবে আম্মু বলে – “তাই বলে আদর দিতে গিয়ে মেয়েকে অশিক্ষিত রাখবা??”এই নিয়ে মাঝে মাঝে আম্মু –বাবার মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়।
এই রকম যখন পরিস্থিতি, তখন আম্মু-আব্বুর ঝগড়া মিটাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হলেন আমার নানাভাই। আম্মু নানাভাইকে অসম্ভব রকম ভয় পায়, আর আব্বু যখন ক্লাস টু তে পরে তখন আমার দাদাভাই মারা যাওয়াতে আব্বুও নানাভাইকে অনেক শ্রদ্ধা করত , মেনে চলত। তাই নানাভাই-র কথা আম্মু- বাবা দুইজনই মেনে নেয়।
বলাই বাহুল্য, নানভাই ও চাননি আমি এত্ত ছোট বয়সে বাসার বাইরে পড়তে যাই। তার প্রধান কারণ ছিল এই- আম্মু আর খালামনির বিয়ে হয়ে গেছে। মামা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, বাড়িতে থাকে না। আর আমাদের বাড়ি থেকে নানাবাড়ি মাত্র ২০কিমি দূরে হওয়ায় প্রত্যেক শুক্রবার আমি বাবার সাথে বাইকে করে নানাবাড়ি চলে যেতাম।
সে যাই হোক, নানাভাই যে সমাধান দিলেন, সেইটা হল আমার বৃত্তি পরীক্ষার ফল পর্যন্ত অপেক্ষা করা হোক।
আমি যদি বৃত্তি পাই, তাহলে আর ক্যাডেট কোচিং করব না, আর যদি না পাই, তাহলে দেখা যাবে। বেচারা নানাভাই, বুঝতে পারেন নি, যে আমি স্কুলের ৫ টা আর কোচিঙের ১০ টা পরীক্ষার সবগুলোতে প্রথম ছিলাম, যে আমাকে নিয়ে সবার ধারণা ছিল যে মেধাতালিকায় ১ম হব, সেই আমি সবাইকে অবাক করে দিয়ে, সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে, সবাইকে আশাহত করে বৃত্তিই পাব না!!!
যাই হোক, সেই দুঃখের কাঁদুনি গাইতে বসব না এখন। রেজাল্টের আগের দিনগুলো আমার খুব মজায় কাটতো। খাই দাই ঘুমাই আর স্কুলে যাই। আর কোন কাজ নেই, তাই মনের সুখে অনুষ্ঠান করি, কবিতা আবৃত্তির প্রতিযোগিতায় ১ম-২য় হই।
আর মাঝে মাঝে সেতু – তমা- বিন্তুর সাথে ফোনে কথা বলি, ওদের ক্যাডেট কোচিঙের পড়ার চাপের কথা শুনে সমবেদনা জানাই।
এপ্রিল মাসে খুব সম্ভবত বৃত্তির রেজাল্ট বের হল। আমার সুখের দিনও ফুরালো তখন। নানাভাই-র ফয়সালা মোতাবেক আমিও ভর্তি হলাম ক্যাডেট কোচিঙে।
প্রথম যেদিন কোচিং এ যাই, সবাই যেন কেমন কেমন করে আমাকে দেখছিল।
আমি বুঝতে পারছিলাম, কিছু একটা সমস্যা আছে। অনি- রাফির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম, ওরা কেমন যেন এড়িয়ে গেল। সেতুকে ডাকলাম, ও শুনেও না শোনার ভান করে চলে গেল। আমি বুঝতে পারলাম, আমার বন্ধুরা কেমন যেন পাল্টে গেছে। মন খারাপ হল ভীষণ...... শুধু একটা মাত্র রেজাল্ট মানুষের জীবনকে এতোটা পাল্টে দিতে পারে!!!!
কিন্তু না, আমার বোঝার মধ্যে একটু ভুল ছিল।
সেইটা বুঝেছিলাম পরদিন কোচিং- এ যাওয়ার পর। আমার যেতে একটু দেরি হয়েছিলো। আমাকে দেখে সবাই যেন ফিসফিস করে কি সব বলাবলি করছিলো। অথচ আমি জিজ্ঞেস করলে কিছু বলছিল না। আমার খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
আমিতো আর জানতাম না যে হতভাগা সেতুটা আমি যাওয়ার আগেই কিছু একটা ঘোষণা করে রেখেছিল!!!
মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল, তাই সারা কোচিং- এ কারো সাথে আর কথা বলিনি। কান্না চাপতে চাপতে ছুটির সময় সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম...... আজ বাসায় গিয়ে কাঁদতে হবে... খুব কাঁদতে হবে আজ... বাথরুমে গিয়ে কাঁদতে হবে, যাতে আম্মু টের না পায়। আম্মু টের পেলে কষ্ট পাবে খুব।
নেমে এসে নিচে দাঁড়িয়ে আমি আম্মুকে খুঁজি। এখনো সবাই নামছে সিঁড়ি দিয়ে।
আমি দাঁড়িয়ে আছি সিঁড়ির নিচে-ই। হঠাৎ শুনি কে যেন আমাকে ডাকছে- “পৃথ্বী, এই পৃথ্বী!!!”তাকিয়ে দেখলাম সেতু। “হুম সেতু, বল। ক্যামন আছিস??” “পৃথ্বী শোন, আই লাভ ইউ”
আমি প্রথমে ভাবলাম ভুল শুনছি। কি বলল যখন জিজ্ঞেস করতে যাব তখন দেখি সেতু দৌড় দিয়েছে।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছি...... আমার হাত দুয়েক দূরে আম্মা দাঁড়িয়ে...... সিঁড়ি দিয়ে সবাই নিচে নেমে আসছে...... সেতুর কথা শুনে কেও কেও ফিরেও তাকিয়েছে......আমি দাঁড়িয়েই আছি......আম্মু শুনে ফেললে কী হবে...... স্যাররা শুনে ফেললে কী বলবে...... কাল থেকে ফাজিল ছেলেমেয়েগুলা আমাকে খ্যাপাবে...... কী লজ্জা!!! কী লজ্জা!!! আমি এখন কী করব...... মা ধরণী দ্বিধা হও...... আশ্রয় দাও তোমার কোলে এই অবুঝ সন্তানকে......... তার সব লজ্জা নিবারণ করো.........
(চলবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।