আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেতু

I often see flowers from a passing car That are gone before I can tell what they are Haven gives its glimpses only to those Not in position to look too close…

১. সেতুর সাথে আমার পরিচয় খুব অদ্ভুত ভাবে। ক্লাস থ্রি তে পড়ি তখন। নিয়মিত আর্টের স্কুল আর গানের ক্লাসে যাই, প্রাণান্ত চেষ্টা করি ক্লাস রোল কিভাবে ১৮ থেকে ৮ বানানো যায়। সেই সময়কার কথা... হ্যাঁ, যা বলছিলাম... সেতুর সাথে পরিচয় হয় খুব অদ্ভুত ভাবে, আর অদ্ভুত বলেই ওই ঘটনা এখনো যেন আমি চোখের সামনে দেখতে পাই...... ক্লাস থ্রি তে পড়ার সময় একবার মা কে না বলে চুরি করে আইসক্রিম খেয়েছিলাম। সেই থেকে টনসিল ফুলে ঢোল, সাথে প্রচণ্ড জ্বর।

টানা দুই সপ্তাহ পর যখন বিছানা থেকে ছাড়া পেলাম, সেদিন ছিল শুক্রবার। , আমার আর্টের ক্লাস ছিল। ক্লাসে গিয়েছিলাম আমার প্যাস্টেল রঙ এর ছোট বক্স টা নিয়ে... বড় বক্স টা নিতে সেদিন ভুলে গেছিলাম। ধানক্ষেতের দৃশ্য আঁকা শেষ, রঙ নিয়ে পড়েছি মহা বিপদে। ছোট বক্স এর সবুজ রঙ শেষ, বড় বক্স তো আনিনি।

কী আর করা, অসম্পূর্ণ ছবিই নিয়ে গেলাম আশু টিচারের কাছে (আমাদের ছবি আঁকা শেখাতেন আশুতোষ স্যার, আমার জীবনে দেখা সবচাইতে ভালো মানুষগুলোর একজন)। টিচার ছবি দেখে বললেন সবুজ রঙ আনতে... আমি আবার বিপদে পড়লাম। পাশেই বসে ছিল রোগাপটকা একটা ছেলে, আমার হঠাৎ কী মনে হল, ওকে গিয়ে বললাম... - তোমার সবুজ রঙ টা আমায় একটু দেবে? - না, দেয়া যাবে না। - কেন দিলে কী হয়? - বললাম তো দেয়া যাবে না। - তুমি এমন রেগে রেগে কথা বলছ কেন? সামান্য একটা রঙ ই তো, কোহিনূর হীরা তো আর না!! হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটি আমাকে একটা চড় মেরে বসে।

আমি তো অবাক। অপমানে আমার দুই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করে... আশু টিচার মনে হয় ঘটনাটা দেখেছিলেন। আমাকে কাছে দেকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে। আমি কিছু বলতে পারলাম না। একটা ছেলে আমাকে চড় মেরেছে- এত্ত বড় অপমানের কথা আমি টিচারকে বলব কিভাবে??? আমি একনাগাড়ে কেঁদেই চলেছি।

টিচার এবার ছেলেটিকে ডাকলেন... - তুমি ওকে মারলে কেন? - (ছেলেটা নিশ্চুপ) - কী হল, কথা বল না কেন? - ( কোন উত্তর নেই ) - স্যরি বল ওকে অপর পক্ষে আবারো নীরবতা। কিছুতেই স্যরি বলাতে না পেরে টিচার একপর্যায়ে ছেলেটার হাত ধরে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করিয়ে দিলেন... - আজ থেকে তোমরা বন্ধু। জানো তো, বন্ধুরা কখনো মারামারি করে না, জানো তো? - হু, জানি। এরপর মুখ গোঁজ করে ছেলেটা বোর্ড নিয়ে উঠে চলে যায়। আমিও মন খারাপ করে বাড়ির পথ ধরি।

২. মঙ্গলবার। আর্টের ক্লাস চলছে। আমি ছবি আঁকছি একমনে। আমাএ পাশ থেকে কে যেন বলল... - আমি সেতু। তুই? আমি তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেটা।

তাই পাত্তা না দিয়ে ছবি আঁকায় মন দেই। - কথা বলবি না আমার সাথে?রাগ করেছিস? ...................................................... - আমি স্যরি। আসলে সেদিন মন খুব খারাপ ছিল। টিচার না বলেছে আমার এখন বন্ধু, তাহলে তুই কথা বলছিস না ক্যান?............ ছেলেটা একটানা বকবক করেই যাচ্ছে। আমি মনে মনে মহা বিরক্ত।

ছবি আঁকায় মন দিতে পারছি না। বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে নাম বললাম... - নাম তো শুনেছ, এখন বিদায় হও। - যাক, তুই অবশেষে আমার সাথে কথা বললি!! এই দেখ, আমি তোর জন্য বিগ বাবল এনেছি। তুই কথা বলছিলি নাবলে দিতে পারছিলাম না। জানিস, তোকে মেরেছি বলে আম্মু আমকে খুব বকেছে... আমি সেতুর দিকে তাকালাম।

দেখলাম ওর হাতে সত্যিই দুইতা বিগ বাবল। - আয়, বাবল ফুলাই বলেই ও একটা গাম নিয়ে চিবাতে সুরু করল। - কিরে, তুই নিবি না? দেখবি, আমি কত্ত বড় বাবল ফুলাতে পারি? আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই সেতু বাবল ফুলাতে সুরু করল। তারপর সেই বাবল ফেটে গিয়ে ওর সারা মুখে গাম লেগে গেলো। দেখে তো আমি হাসতে হাসতে শেষ! মুখ থেকে গাম উঠাতে উঠাতে সেতু রেগে গিয়ে বলল “হাস হাস, তুই তো হাসবিই আমার দুঃখে।

শয়তান কোথাকার!”ওর চোখের কোণে দু ফোঁটা পানিও ছিল মনে হয়। কাল এই রোগাপটকা ছেলেটার জন্য কেমন যেন মায়া অনুভব করি তখন। হাত থেকে বিগ বাবল টা নিয়ে মুখে দেই। সেই থেকেই সেতুর সাথে আমার বন্ধুত্তের শুরু। ৩. ভালই কাটছিল দিনগুলো।

পাল্লা দিয়ে ছবি আঁকতাম আমরা, ফাঁকে ফাঁকে কত্ত শত গল্প!! দুষ্টুমিতে সেতু ছিল বস, আর ওর সাথে সাথে আমিও দিনকে দিন একটা মাস্টারপিস হয়ে উঠছিলাম। ছেলেবেলার বন্ধুত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কুল নির্ভর হয়। অথচ আলাদা স্কুলে পড়া সত্ত্বেও কয়েকদিনের মধ্যেই সেতু আমার জানের দোস্ত হয়ে গেলো, কীভাবে কে জানে!!! মনে পড়ে ক্লাস ফাইভে সামার স্যারের বৃত্তি কোচিং এর কথা। ওখানে নিয়ম ছিল, খাতায় কাটাকাটি হলে স্যার গুড দিবে না। তাই কাটাকাটি হলে আমরা ওই পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলতাম, আর ব্রেক এর সময় গোল্লা পাকিয়ে বম্বাস্টিং খেলতাম।

আর বদমাশ সেতুটা শুধু বলত- - তরা যে কাগজের বল দিয়ে ক্যান খেলিস!!খেলার মজা হল কাঠের বলে। আমি একদিন নিয়ে আসব, দেখিস। সেতু কাঠের বল এনেছিল, আর আমরা খেলার মজা দেখেছিলাম মিথিলার মাথা কেটে রক্তারক্তি হওয়ার পর। সব মিলিয়ে দিনগুলো ছিল টক- ঝাল- মিষ্টি আচারের মতই মজার...... এইটা একটা নিছক মজার গল্প হতে পারত...... সুন্দর বন্ধুত্তের গল্প হতে পারত...... হতে পারত সোনালী দিনের অমর সাক্ষি.........যদি না ক্লাস সিক্সে ওঠার পর ক্যাডেট কোচিং ছুটির সময় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সবার সামনে সেতু আমাকে প্রপোজ করে বসত......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.