নীল আকাশের নিচে সবুজ অরণ্য খুঁজে বেড়াচ্ছি যেখানে পাতব শয্যা, সেই দিন আর সাহসের অপেক্ষায়, মানুষে আমার বিশ্বাস অল্প।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত একটি ঘটনা ক্রসফায়ার, যার সর্বশেষ ‘শিকার’ ঝালকাঠির কলেজ ছাত্র লিমন, পূর্বেও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ‘ক্রসফায়ার’ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটটি এমন যে এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিশদ এবং বিস্তারিতভাবে আলোচনার প্রয়োজন, কারণ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন সব সময় যে প্রকৃত দোষী ব্যাক্তিকেই সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, যার সর্বশেষ উদাহরণ লিমন, এখন মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়াটা অস্বাভাবিক নয় যে পূর্বে সংঘটিত সকল ‘ক্রসফায়ারের’ কোনটিতে নির্দোষ ব্যাক্তিও থাকতে পারে, যা মোটেও গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা, এমতাবস্থায়, মানবাধিকার কর্মী এবং সংগঠনগুলোর আবেদন যা তারা পূর্বে র্যাব, পুলিশ বাহিনীর এনকাউন্টার, ক্রসফায়ার নামক অভিযানগুলোর বিরুদ্ধে করেছিল, তা নিয়ে যুক্তিযুক্ত আলোচনার সময় এসেছে, মানবাধিকার সংস্থা ঐ রূপ হত্যাকান্ড সমূহকে বিচারের আওতায় আনার আবেদন করেছিল, কারণ, প্রত্যেক মানুষের বিচার পাবার অধিকার রয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের মত গনতান্ত্রিক দেশে এমন অদ্ভুত সিস্টেম চালু হল কেন এবং কীভাবে, এটা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞান চর্চার প্রয়োজন নেই, প্রতিটি সরকার এসেই নিজেদের সুবিধা বিবেচনা করে এবং বিরোধী দলের চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়, সেরকম একটা পদ্ধতি চালু করে, যেমন ১৯৯৬-এ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ‘জননিরাপত্তা আইন’ নামে একটি আইন চালু করেছিল, এটির উদ্দেশ্য কী ছিল তা অনেকেই জানেন, এরপর ২০০১-এ জোট সরকার এসে অপারেশন ক্লিন হার্ট নামে অভিযান শুরু করে, এরই ধারাবাহিকতায় র্যাাবের জন্ম, তারপর ক্রসফায়ারের, কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণ মানুষ এটা নিয়ে খুব উচ্চবাচ্য করেনি, তার কারণও অবশ্য ছিল, র্যাব তখন চিহ্নিত ভয়ঙ্কর দাগি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে ক্রসফায়ার করে, ফলে দেশে অনেক নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়, অপরদিকে, র্যাব যে শুধু তৎকালীন বিরোধি দলের সন্ত্রাসীদের হত্যা করেছে, তা নয়, জোটের শরিক দলগুলোরও কিছু সন্ত্রাসী তাতে নিহত হয়, আর এই হত্যাকান্ডগুলো গ্রহনযোগ্যতা পাবার মূল কারণগুলোর দিকে তাকালে আমরা এমন কিছু বিষয় দেখতে পাই যা সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, সর্বপ্রথম যেটি আসবে তা হল বিচার ব্যাবস্থা, আজো সাধারন মানুষ বিচার ব্যাবস্থার উপর আস্থাশীল নয়, সুতরাং, অত্যাচারির নির্যাতন সহ্য করা ছাড়া উপায় ছিলনা, থানায় গেলে পুলিশ মামলা রাখতনা, মামলা রাখলেও চার্যশিট প্রদানে গড়িমসি, কিংবা অভিযোগ অবান্তর বলে উড়িয়ে দেয়া, স্থানীয় ভাবে টাকা পয়সার মাধ্যমে আপসের চেষ্টা, সাক্ষী প্রমাণের দূর্বলতা, এমনকি আইন প্রয়োগকারি বাহিনীর সদস্য কর্তৃক হুমকি-ধামকি, সর্বোপরি অভিযুক্ত যদি সরকারের আশির্বাদপুষ্ট হত তাহলে তো আর কথাই নেই, বিচার চাওয়া যে নিরর্থক তা ফরিয়াদি আগেই বুঝতে পারত, তার উপর এত কিছুর পর যদি মামলা আদালতে উঠত সেখানেও আসামীর খালাস পাবার মত ব্যাবস্থা ছিল, ছাড়া পেয়ে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠত, বাদীর অবস্থা নাজেহাল করে দিত, এমনকি এলাকা ছাড়তে হত, অনেকটা ক্রিকেট বিশ্বকাপে জেমি সিডন্স যেমন তামিমকে ‘লাইসেন্স টু কিল’ পারমিশন দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই, সন্ত্রাসীও যেন ছাড়া পেয়ে ঐ রূপ কোনো অনুমোদন পেয়ে যেত, যার একটা উদাহরন হতে পারে নাটোরের চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ হত্যকান্ড, অনেকেই হয়ত বিষয়টা জানেন, তাই বিস্তারিত বর্ণনায় যেতে চাচ্ছি না, এমন ভীতিজনক পরিস্থিতে সাধারন মানুষ ক্রসফায়ারকেই উদ্ভূত সমস্যার সমাধান উৎকৃষ্ট সমাধান মনে করেছিল, এছাড়া বিচার ব্যাবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা, অসহযোগিতা, উপযোগিতা ইত্যাদি নিয়ে মানুষ আশাবাদি হওয়ার কোন কারণ খুঁজে পায়নি, ফলে এসব নিয়ে ভাবনার উদ্রেক হয়নি, সবাই তা একরকম নীরব সমর্থন করেছিল, এমনকি, এদেশে যেখানে পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক গৃহিত সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ কিংবা বাতিল হওয়াটা সংস্কৃতিই হয়ে গেছে সেখানেও আশ্চর্য ব্যাতিক্রমভাবে জোট আমলের ক্রসফায়ার আওয়ামী মহাজোট নিষিদ্ধ কিংবা বাতিল করে দেয়নি, চালু রেখেছে, এটা কী যে গর্ত করেছে তাকে সেই গর্তে ফেলবার কোন প্রচেষ্টা নাকি অন্যকিছু তা সরকারের নীতি নির্ধারকগণই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন, তবে এখন সময় এসেছে এই রকম বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডগুলোর বিষয়ে কী করা হবে তা নিয়ে সরকার এবং অতি আবশ্যিকভাবে বিচার ব্যাবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে পৌছুবার, কারন, ইতিমধ্যে যা হয়েছে তার আর ক্ষতি বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজন নেই, আর কোনো লিমনের জীবন অকালে এমন অন্ধকারে পর্যবসিত হোক তা কোন মা চাইবেন না, কিন্তু সরকারকে সত্যিকার গনতন্ত্রের পথেই হাটতে হবে, জননিরাপত্তা কিংবা অপারেশন ক্লিন হার্ট নামক বিচার ব্যাবস্থা চালু করে বিরোধী দলকে নাস্তানাবুদ করার চিন্তা না করে বরং সুষ্ঠ সুন্দর বিচার ব্যাবস্থা চালু করতে হবে, যাতে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করণ এবং নির্দোষ ব্যাক্তির ন্যায় বিচার প্রাপ্তি সহজ হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।