আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রসফায়ার নিয়ে দৃকের চিত্র প্রদর্শনীতে পুলিশের বাধা : হতভম্ব ভারতীয় নেত্রীসহ ১৮ দেশের মানবাধিকার কর্মীরা

আমরা সবাই সবার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ‘ক্রসফায়ার’ শিরোনামে রাজধানীর ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, উপরের নির্দেশে তারা এ প্রদর্শনী বন্ধ করতে এসেছে। গতকাল প্রদর্শনী শুরুর আগ মুহূর্তে পুলিশ দৃকের চারদিক ঘিরে ফেলে এবং প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়ে দৃক গ্যালারিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় প্রদর্শনীতে আসা দর্শক ও অতিথিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপমহাদেশের বিশিষ্ট লেখিকা ও মানবাধিকার নেত্রী (ভারতের) মহাশ্বেতা দেবীর প্রদর্শনী উদ্বোধনের কথা ছিল।

এ ধরনের একটি মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় তিনি হতভম্ব হয়ে যান। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও ১৮ দেশের মানবাধিকার কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পাঠশালা ও দৃকের যৌথ উদ্যোগে সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমির উদ্বোধন উপলক্ষে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম আমার দেশকে বলেন, বিকাল ৪টায় প্রদর্শনী শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগে বিকাল ৩টার দিকে ধানমন্ডি থানা থেকে পুলিশ এসে প্রদর্শনী বন্ধ করতে বলে।

এ প্রদর্শনী হলে নাকি দেশে ‘অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি হতে পারে এমন মন্তব্য করেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। আমরা তাদের বলি ’৯৩ সাল থেকে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রদর্শনী করে আসছি। আমাদের এসব প্রদর্শনী নিয়ে কোথাও অরাজকতা তৈরি হয়নি, এবারও হবে না। কিন্তু তারা কোনো কিছুই মানতে রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে দৃক গ্যালারিতে তারা তালা ঝুলিয়ে দেয়।

পরে আমরা রাস্তায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করি। তিনি জানান, পুলিশ বাধা দিলেও এ প্রদর্শনী আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। শহিদুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো যাবে, আর আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার পাব না— এটা তো সভ্য দেশে কল্পনা করা যায় না। তিনি বলেন, দৃক গ্যালারি বরাবরই ভালো কিছু করে আসছে। তাই দৃকের এসব প্রদর্শনীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও এসেছেন।

ক্রসফায়ার নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই সমালোচনা করে আসছে। তারা বলছে, এর মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। প্রদর্শনী বন্ধের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য হচ্ছে, সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নেয়ায় ওই প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠন করা হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের নিয়েই তৈরি হয় নতুন এ বাহিনী।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের জন্য র্যাবের সমালোচনা দিন দিন বাড়ছেই। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, জন্মের পর থেকে এই বাহিনী হত্যা করেছে শত শত মানুষ। এসব মৃত্যুই হয়েছে র্যাব এবং দুর্বৃত্তদের গোলাগুলির সময়। মানুষগুলো ক্রসফায়ারে পড়ে মারা যাওয়ার সময় ছিল র্যাবের হেফাজতেই। ক্রসফায়ারে অবশ্য এ পর্যন্ত কোনো র্যাব সদস্যের প্রাণহানি ঘটেনি।

সম্প্রতি উচ্চতর আদালতের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত এক আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং র্যাবের কাছে একটি হত্যাকাণ্ডের ব্যাখ্যা চায়। এ বছরের ৯ জানুয়ারি এ নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা দেয়ার শুনানি ছিল। কিন্তু এর আগে প্রধান বিচারপতি দৃশ্যত প্রশাসনিক কিছু কারণে বেঞ্চটিই ভেঙে দেন। ক্রসফায়ার নিয়ে গতকালের প্রদর্শনীটি ছিল একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বহু আলোচিত সমালোচিত বিষয়টির দিকে রূপকাশ্রয়ী দৃষ্টিতে তাকিয়েছেন।

মূলত প্রতীকধর্মী ছবিগুলোকে প্রকৃত ঘটনার খণ্ডচিত্রের পরম্পরায় সাজানো হয়েছে। দৃক গ্যালারিতে ক্রসফায়ার শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী বন্ধের প্রতিবাদে শাহবাগে বিক্ষোভ ঢাকার দৃক গ্যালারিতে ক্রসফায়ার শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, কবি, ব্লগার, সংস্কৃতিসেবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। বিক্ষোভ থেকে তারা সব বাধা অপসারণ করে আজ থেকে দৃক গ্যালারিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী উন্মুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা অবিলম্বে ক্রসফায়ার বন্ধ, ক্রসফায়ারকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধেরও দাবি করেন। সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী খোমেনী ইহসানের আহ্বানে তাত্ক্ষণিকভাবে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে চারুকলা অনুষদ, শাহবাগ মোড় হয়ে জাদুঘরের সামনের সড়কে সমাবেশে মিলিত হয়।

বিক্ষোভকারীরা মিছিলে ক্রসফায়ারবিরোধী বিভিন্ন সেম্লাগান দেন। এসময় তারা ক্রসফায়ারে নিহত শহীদ কমরেড সিরাজ শিকদার, কমরেড মোফাখখার চৌধুরী ও ডা. মিজানুর রহমানের পক্ষে জিন্দাবাদ উচ্চারণ করেন। মিছিল ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক যীশু মহমদ, আরিফ মুহাম্মদ, আহম্মেদ ফয়েজ, সাইয়েদ শোয়েব, তুহিন আহমেদ, আহমদ বাসির, হারুন-অর-রশিদ, সংস্কৃতিকর্মী নিত্যানন্দ পাল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নেতা প্রিয়ম পাল ও হুমায়ুন কবীর, আদনান আদি, ব্লগার মু. নূর নবী, কাইয়ুম তমাল প্রমুখ। দেখুন
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.