আপন আলোয় উজ্জল.............
পুরো নাম: গৌতম গম্ভীর
জন্ম: ১৪ অক্টোবর, ১৯৮১, নয়াদিল্লি
ডাক নাম: গোতি
উচ্চতা: ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি
পরিবার: বাবা দীপক গম্ভীর, মা সীমা গম্ভীর, বোন একতা গম্ভীর
শখ: বই পড়া, প্লে স্টেশনে গেমস খেলা
অবসর কাটে: পরিবারের সঙ্গে, বন্ধুদের সঙ্গে লং ড্রাইভে গিয়ে
খাবার: মায়ের হাতের রাজমা চাল
চলচ্চিত্র তারকা: আমির খান, রানী মুখার্জি
প্রিয় ক্রিকেটার: সৌরভ গাঙ্গুলী ও বীরেন্দর শেবাগ
প্রিয় মাঠ: মোহালি
প্রিয় বন্ধু: শেবাগ, মুনাফ প্যাটেল, ইশান্ত শর্মা, অমিত মিশ্র
ক্রিকেটার না হলে: আর্মি অফিসার হতাম
২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। উত্তাল ওয়াংখেড়ের গ্যালারি। ভারতীয় ক্রিকেটাররা একেকজন যেন উড়তে চাইছেন। কিন্তু গৌতম গম্ভীর? উচ্ছ্বাসটা যেন ঠিক বাঁধভাঙা নয়। ফাইনাল জয়ের অন্যতম নায়কের যে মনে পড়ে গেছে চার বছর আগের কথা! ২০০৭ বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়লেন, পুরো পৃথিবীটাই যেন মিথ্যে হয়ে গিয়েছিল।
মাস খানেক ব্যাট ছুঁয়েও দেখেননি। একদিন ভাবলেন, ‘ক্রিকেট না খেললে কী করব? এই একটা কাজ ছাড়া আর কিছুই তো ভালো পারি না!’ আবার ফিরলেন মাঠে। সেই গম্ভীর পরের বিশ্বকাপে গেলেন দলের অন্যতম বড় ভরসা হয়ে, ফাইনাল জয়েও তাঁর বড় অবদান!
এই হলো গম্ভীর। প্রতিভা তো ছিলই, তবে গম্ভীর মানে এর চেয়েও বেশি কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। ছেলেবেলায় স্বপ্ন দেখতেন আর্মি অফিসার হবেন।
কিন্তু একসময় ক্রিকেটই হয়ে গেল ধ্যানজ্ঞান। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গেলেন মামা পবন গুলাতিকে। বয়সের ব্যবধান ১৭ বছর, কিন্তু মামা-ভাগনে ছিলেন এক প্রাণ।
মামার প্রশ্রয়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে কত যে খেপ খেলতে গেছেন! প্র্রতিবেশীদের জানালার কাচ কত ভেঙেছেন, এর তো ইয়ত্তাই নেই। ছাত্র হিসেবে ছিলেন গড়পড়তা, কিন্তু ক্রিকেটে দ্রুতই আলাদা করে চেনাতে শুরু করলেন।
আশাভঙ্গের কাহিনিও অবশ্য লেখা হলো। অনূর্ধ্ব-১৪ পর্যায়ে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েও জাতীয় দলে সুযোগ হলো না। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েও ছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার, কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে জায়গা হলো না ১৯৯৯ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে। ওই বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক, দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৩ করার পরও পরের ম্যাচে বাদ। ২০০০ সালে জাতীয় একাডেমির প্রথম ব্যাচে সুযোগ পাওয়াটা সেই সব ক্ষতে একটু প্রলেপ।
তবে আগে এতবার বঞ্চিত হওয়ায় মনের কোণে ঢুকে গেল এক ধরনের অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তার অভাব। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিলেন, কিন্তু সেঞ্চুরির পরও মনে হতো, পরের ম্যাচে জায়গা হবে তো! ওই ভয়টাই কাল হলো জাতীয় দলে ঢুকে। নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলেন খুব কম সময়ই। দলে আসা-যাওয়া করতে করতে ২০০৭ বিশ্বকাপের ওই ধাক্কা।
জাতীয় দলে ফিরতে সময় লাগেনি।
এবার বাদ দেওয়ার সুযোগই দেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস, জায়গা পাকা করলেন ওয়ানডে দলেও। তবে সত্যিকার অর্থেই ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিলেন টেস্টের পারফরম্যান্সে। প্রথম ১৮ টেস্টে মাত্র একটি সেঞ্চুরি, অথচ পরের ১০ টেস্টেই কিনা ৮টি! আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার, টেস্ট ব্যাটিংয়ের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে, টানা ১১ টেস্টে ফিফটি করে ভিভ রিচার্ডসের বিশ্বরেকর্ড ছোঁয়া, টানা পাঁচ টেস্টে সেঞ্চুরি, টানা চার টেস্ট সিরিজে ৩০০ রান করা একমাত্র ভারতীয়, অর্জুনা পুরস্কার—গম্ভীর ছাড়িয়ে গেলেন নিজের কল্পনাকেও। ‘লিটল মাস্টার’ আছে, ‘দ্য ওয়াল’ আছে, গ্যারি কারস্টেন তাই গম্ভীরের নাম দিলেন ‘দ্য রক!’ তার পরও ঠিক সন্তুষ্ট নন গম্ভীর, কারণ ভালো করতে পারতেন আরও।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ‘পরের ম্যাচেই বাদ পড়ব না তো’ এই ভয় এখনো মাঝেমধ্যেই জাপটে ধরে তাঁকে। নিজের ওপর প্রচণ্ড চাপ নিয়ে নেন, স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেন না। অনেক মনোবিদ দেখিয়েছেন, লাভ হয়নি। সর্বশেষ প্যাডি উপটন বলেছেন, ‘গম্ভীরের ধরনটাই এমন, স্পেশাল কেস। ’ শেন ওয়াটসনকে কনুই মারা, আফ্রিদি-কামরান আকমলের নাকে নাক ঘষার মতো বিতর্কগুলোর কারণ হিসেবেও বলেন অতিরিক্ত টেনশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া! বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছেন আরও একবার, যখন বোনের বিয়ের জন্য খেললেন না শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি টেস্ট।
সমালোচনা হবে জেনেও অবশ্য গম্ভীর সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন। কারণ, দুই বছরের ছোট বোন একতা যে তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধুও!
নিজে অবশ্য এখনো বিয়ে করেননি, তবে করতে যাচ্ছেন শিগগিরই। মহেন্দ্র সিং ধোনি বিয়ে করার পর ভারতের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলরদের একজন চুপিচুপি বাগদান সেরে ফেলেছেন বিশ্বকাপের আগে। উত্তর ভারতের প্রখ্যাত শিল্পপতি রবীন্দ্র জৈনের মেয়ের সঙ্গে বিয়েটা হতে যাচ্ছে আইপিএলের পরপরই। এমনিতে স্বভাবে যথেষ্ট অন্তর্মুখী।
তবে কাছের বন্ধুদের মাঝে প্রচণ্ড প্রাণখোলা। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘যখন শেবাগ, মুনাফ, ইশান্ত, অমিত মিশ্রদের সঙ্গে থাকি, তখন আমিই শুধু কথা বলি, ওরা মুখ খোলার সুযোগ পায় না। ’ ডিসকো বা পার্টি যতটা পারেন এড়িয়ে চলেন। জীবনে কখনো অ্যালকোহল ছুঁয়েও দেখেননি। জীবনের লক্ষ্যটা শুনুন না, ‘একজন সাদাসিধে আর ভালো মানুষ হওয়া!’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।