সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
পার দেখে কী রকম যে অনুভূতি তা বোঝানো কঠিন। অসাধারণ, ভয়াবহ, ভয়ংকর। দেখা দেখি নাই। অন্তর্জলী যাত্রা আমার প্রিয় একটি উপন্যাস।
ফলে সুযোগ পেয়েও দেখি নাই। কমলকুমারের লেখার চিত্রায়ণ সম্ভব? পদ্মানদীর মাঝি ভাল লেগেছে। উপন্যাসের একটা এন্টারপ্রেটেশন হিসেবে। ক্যামেরা ব্যবহার করে উপন্যাসের সমালোচনা আলোচনা হিসেবে একে দেখেছি আমি। গৌতম ঘোষের ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্রোচটা ভাল লাগে আমার।
এবার কারফিউয়ের মধ্যে বন্দি হয়ে দেখলাম আবার অরণ্যে ও যাত্রা/ইয়াত্রা।
আবার অরণ্যে কি অরণ্যের দিনরাত্রির সিকোয়েল নাকি? সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার সিকোয়েল গৌতম ঘোষ কেন করবেন? যুক্তিটা কী? অরণ্যের দিনরাত্রির কলাকুশলীরা বেঁচে আছেন বলে? তারা এই সিনেমায় কাজ করতে রাজি হয়েছেন বলে? সিনেমা বানানোটা এই ধরনের রোমান্সের মধ্যে পড়ে না। আর গৌতম ঘোষের মতো পরিচালক এই ধরনের রোমান্স করতে যাবেন সেটাও মেনে নিতে কষ্ট হয়।
ফলে নানা পূর্বধারণা নিয়ে সিনেমাটা দেখতে বসেছিলাম। না এইটা অরণ্যের দিনরাত্রির সিকোয়েল নয়।
আবারও একটা ক্রিটিক। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার সিনেমাটিক ক্রিটিক। আয়োজনটা ভাল। সিকোয়েলের ভঙ্গিটা তিনি চারিয়ে দিয়েছেন বটে। কিন্তু সেটা সিকোয়েল টাইপের রোমান্সের মধ্যে যায়নি।
সমালোচনার জন্য যতটুকু রেফারেন্স ব্যবহার করার দরকার করেছেন। যেটুকু উল্লেখ করার দরকার করেছেন। শেষ পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিয়েছেন।
১৯৭০ সালে সত্যজিৎ রায় যে অরণ্য দেখিয়েছেন আর ২০০৩ সালে গৌতম ঘোষ যে অরণ্য দেখালেন তার মধ্যে পার্থক্য অনেক। ষাট-সত্তররের একটা আউলা জেনারেশন এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে ঢুকে গেছে।
তাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে আরেকটা জেনারেশন। তাদেরই সন্তান তারা। পুতুপতু আউটিং তাদের সঙ্গে তাদের বাবা-মার। বলাবাহুল্য ৭০এর সেই তরুণরা আর বিদ্রোহী নন। সেই সময় আর এই সময়ের কনট্রাস্টগুলো তুলে ধরেছেন গৌতম ঘোষ।
কিন্তু এস্টাবলিশমেন্টের ভেতর দাখিল হয়ে যাওয়া লোকদের ছেলেমেয়েরা কি এখনকার প্রজন্মের প্রতিনিধি? অরণ্যের দিনরাত্রির মধ্যে চার তরুণ ৭০এর যে দাহকে ধারণ করেছে এই প্রজন্মের প্রতিনিধিরা কি সেই দাহকে ধারণ করে? যারা দাহকে ধারণ করে তাদের খোঁজ এই সিনেমায় নাই।
আর যতটুকু দাহ আছে তা আম্মুর মধ্যে। আম্মু চরিত্রে অভিনয় করেছেন টাবু। নাইন ইলেভেনে তার প্রেমিক মারা গেছে টুইন টাওয়ার বিস্ফোরণে। ঘটনার চাপে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।
তার আচার-আচরণ মোটামোটি মেলোড্রামাটিক। ভাবতে কষ্ট হয়, ভারতের মতো দেশে বসে গৌতম ঘোষের মতো পরিচালক এরকম মেলোড্রামাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।
টাবু যদি সেন্টার হয় এই সিনেমার তবে পুরো সিনেমাটাই মেলোড্রামা। একটা ক্ষীণস্রোতা ঝরায় পূর্ণিমা রাতে ভেসে টাবু গেল আদিবাসীদের গ্রামে। আর সেখানে দেখা হলো এনজিও মার্কা এক বিপ্লবীর সঙ্গে।
তিনি টাবুর বাবা-মার কাছে দাবি করলেন টাকা। টাবুর অস্থির মনের মহা দাওয়াই হলেন।
প্রশ্ন হলো সাঁওতাল গ্রামে টাবুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই ক্ষীণ ঝরার কাহিনি কতটা বিশ্বাসযোগ্য। বাকীটার কথা আর নাই বা বললাম।
আর ওই বিপ্লবী মাস্টার মশাইয়ের মুখ দিয়ে গৌতম ঘোষ সত্যজিৎ রায়ের সমালোচনাও করিয়ে নিলেন।
অরণ্য মানে মহুয়া, মেয়ে মানুষ আর ফুর্তি নয়, অরণ্য মানে হলো আক্রমণ, প্রয়োজনের সময় কেড়ে খাওয়া, আদিমতা।
২০০৩ সালের একটা সিনেমায় গৌতম ঘোষের একটা চরিত্র বলছে বাংলাদেশ, নেপাল থেকে তাদের দেশে সন্ত্রাসীরা ঢুকছে। কী অসম্ভব কল্পনা যে, ডুয়ার্স-পালামৌ-জলপাইগুড়ির সন্ত্রাসীরাও বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে। তা নিয়ে অ্যাকিউজ করা হচ্ছে। আবার সার্ক নিয়ে বড় বড় কথা ওই সিনেমাতেই হচ্ছে।
পলিটিক্যালি ইম্যাচিউর এরকম সিনেমা গৌতম ঘোষের কাছে আশা করা একটু কঠিনই বটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।