শোয়াইব জিবরান
বাবা ঠিক করেছিলেন তিনি বিয়ে করবেন। অথচ এটার কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমাদের কাছে ছিল না। মা প্রায় আমাদের বড় বোনের সমবয়সি। বাবা যখন মাকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বৎসর। বাবার বয়স ৩১।
এখন মায়ের বয়স যখন ৪২ বাবার বয়স পঞ্চাশ পার হয়ে গিয়েছে। আমাদের মা সুন্দরী। আমরা মানে চার বোন। ঘরে আমরা চারটি মেয়ে। তবু বাবা চললেন বিয়ে করতে।
সে রাতের কথা আমাদের এখনও মনে আছে। আকাশে এত্তোবড় একটা চাঁদ উঠেছিল। এমন চাঁদের রাতেই ভগবান বৌদ্ধ মানুষের দুঃখ নিবারণের জন্য গৃহত্যাগ করেছিলেন। আর আমাদের পিতা চললেন বিয়ে করতে। তিনি যে বিয়ে করতে বের হয়ে যাচ্ছেন তা আমরা নিশ্চিত ছিলাম না।
অনুমান করেছিলাম মাত্র। তবে বাবা বের হয়ে যাবার পর মা যখন সাজতে বসলেন আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মা অনেকণ ধরে সাজলেন। তাঁর ধবধবে সাদা মুখখানির উপর মাখলেন তিব্বত স্নো। তাতে তার মুখ খানি হয়ে উঠল পুতুলের মতো।
গায়ে মাখলেন আতর। তারপর টিনের বাক্স থেকে বের করলেন বিয়ের লাল শাড়ি। যত্ন করে পড়লেন। তারপর খাটের নিচে থেকে বের করলেন বাবার ভুজালি। আমরা এতণ তাকে আড়াল থেকে দেখছিলাম।
এবার আমাদের গায়ে কাঁপন লাগলো। আমরা ভয়ে ভয়ে পরস্পকে জড়িয়ে ধরলাম। মা আমাদের সামন দিয়ে ভুজালি নিয়ে শা করে বের হয়ে গেলেন। আমাদের মনে হলো শাদা রঙের মা কালি মহিষাসুরকে দমনে গেলেন। আমাদের ছোট বোনটি তার পিছু নিল।
বাকী ঘটনা তার কাছ থেকে শোনা।
বাড়ির সামনের রাস্তায়ই অপেক্ষা করছিলেন তার ষণ্ডা সাইজের তিন ভাই। তারা রওয়ানা দিলের গ্রামের পাশ বেয়ে বয়ে চলা খালের দিকে। তারা গিয়ে বসে থাকলেন খালের বাঁকে।
রাত গভীর হলে চলল।
আকাশে জেগেছে ভরা পুর্ণিমার চাঁদ। জ্যোৎস্নায় ভেসে চলেছে চরাচর। অনতিবিলম্বে দূরে বজরা দেখা গেল। বসরাটি এগিয়ে আসছে। কিছুদূর আসার পরই মাঝিদের চেনা গেল।
ছোট মামা, যাকে আমরা ভীমমামা বলে ডাকতাম, হাঁক ছাড়লেন, তৈয়ব মিয়া বজরা ঘাটে ভিড়াও। বজরা তীরে ভিড়ল। শেরওয়ানি পরা আমাদের পিতাকে দেখা গেল। মা একলাফে ভূজালি নিয়ে উঠলেন বজরায়। পিছে পিছে তার তিন ভাই আর ছোট মেয়ে।
আসন্ন হত্যাকাণ্ডের আশংকায় নৌকার লোকেরা ঝাপ দিলো পানিতে। জ্যোৎস্নার ভেতর এখন শুধু একা আমাদের পিতা দাঁড়িয়ে।
কিন্তু মা তার পাশে গিয়েই একটি অদ্ভুত কাণ্ড করে বসলেন। তিনি হাতের ভূঁজালি ছুড়ে ফেলে জড়িয়ে ধরলেন তার স্বামিকে। তারপর শুরু করলেন বিলাপ।
আমাদের ছোট বোনটি কিছু ঠিক করতে না পেরে সেও শুরু করলো বিলাপ। রাতের চাঁদ সাী সে বিলাপ দূর নত্রেরা শুনেছিল।
বাবা মাথা নত করে মাঝরাতে বাড়ি ফিরলেন। মা তাকে ভাত বেড়ে দিলেন। বাবা কোন কথাই বললেন না।
এরপর আরা আমরা কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। একটি বৎসর আমাদের স্বাভাবিকভাবে গেল।
এক শেষরাতে আমাদের ঘুম ভাঙল মায়ের বিলাপে। আমরা চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি বাবা ঝুলছেন ঘরের আড়ার সাথে আর মা বিলাপ করছেন, পায়ের নীচে বসে।
সে রাতটি সেই পুর্ণিমারাত ছিল যে রাতে আমাদের পিতা বিয়ে করতে বেরিয়েছিলেন আর গৌতম বের হয়েছিলেন আমাদের দুঃখ নিবারণের উপায় খুঁজতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।