মনের জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবনাগুলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখি। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ হয়ে, ঐ দূর দিগন্ত পানে...
আমি যখন ছোট ছিলাম
খেলতে যেতেম মেঘের দলে,
একদিন এক মেঘবালিকা, প্রশ্ন করলো কৌতুহলে-
"এই ছেলেটা নাম কি রে তোর??"
আমি বললেম, "ফুসমন্তর"
মেঘবালিকা রেগেই আগুন-
"মিথ্যে কথা, নাম কি ওমন হয় কখনো??"
আমি বললেম, "নিশ্চই হয়, আগে আমার গল্প শোন!!"
সে বললো, "শুনব না যা-"
"সেই তো রাণী, সেই তো রাজা-"
"সেই তো একি ডাল-তলোয়ার"
"সেই তো একি রাজার কুমার পক্ষীরাজে"
"শুনব না যা ওসব বাজে"
আমি বললেম, "উম্ তোমার জন্যে নতুন করে লিখব তবে!"
সে বললো, "সত্যি লিখবি??"
"বেশ! তাহলে মস্ত করে লিখতে হবে!"
"মনে থাকবে? লিখে কিন্তু আমায় দিবি"
আমি বললেম, "তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী"।
লিখতে লিখতে লেখা যখন সবে মাত্র দুচার পাতা
হঠাৎ তখন ভূত চাপলো আমার মাথায়
খুজতে খুজতে চলে গেলাম ছোটবেলার মেঘের মাঠে
গিয়ে দেখি চেনা মুখ তো একটিও নেই এই তল্লাটে।
একজনকে মনে হল ওরি মধ্যে অন্যরকম
এগিয়ে গিয়ে বললেম তাকে, "তুমি কি সেই??মেঘবালিকা তুমি কি সেই??"
সে বললো, "মনে তো নেই আমার ওসব মনে তো নেই"
আমি বললেম, "তুমি আমায় লেখার কথা বলেছিলে"
সে বললো, "সঙ্গে আছে? ভাসিয়ে দাও গাঙের ঝিলে-"
"আর হ্যাঁ শোন..এখন আমি মেঘ নই আর.."
"সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়.."।
বলেই হঠাৎ, এক পশলায়
চুল থেকে নখ আমায় পুরো ভিজিয়ে দিয়ে
অন্য অন্য বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে
মিলিয়ে গেলো খরস্রোতায়, মিলিয়ে গেল
দূরে কোথায়, দূরে, দূরে..
"বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়..বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়"
আপন মনে বলতে বলতে আমি কেবল বসেই রইলাম
ভিজে একশা কাপড় জামায়
গাছের তলায় বসেই রইলাম,
বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্য??
এমন সময় অন্য একটি বৃষ্টি আমায় চিনতে পেরে বললো,
"তাতে মন খারাপের কি হয়েছে??"
"যাও ফিরে যাও, লেখো আবার"
"এখন পুরো বর্ষা চলছে"
"তাই আমরা সবাই এখন নানান দেশে ভীষণ ব্যস্ত"
"তুমি-ও যাও মন দাও গে তোমার কাজে"
"বর্ষা থেকে ফিরে আমরা নিজেই যাবো তোমার কাছে"।
এক পৃথিবী লিখবো আমি
এক পৃথিবী লিখবো বলে ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে গেলাম।
ঘর ছেড়ে সেই ঘর বাধলাম গহন বনে
সঙ্গী শুধু কাগজ কলম
একাই থাকবো, একাই দুটো ফুটিয়ে খাবো
দু এক মুঠো ধুলোবালি
যখন যারা আসবে মনে তাদের লিখবো, লিখেই যাবো
এক পৃথিবীর একশো রকম স্বপ্ন দেখার
সাধ্য থাকবে যেই রূপকথার
সেই রূপকথা
আমার একার।
ঘাড় গুঁজে দিন লিখতে লিখতে
ঘাড় গুঁজে রাত লিখতে লিখতে
মুছেছে দিন
মুছেছে রাত
যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হলো
মনে পরলো সাল কি তারিখ
বছর কি মাস সেসব হিসেব আর ধরিনি।
লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি
এক পৃথিবী লিখবো বলে একটা খাতাও শেষ করিনি।
সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল, খাতার উপর
আজীবনের লেখার উপর
বৃষ্টি এল এই অরণ্যে।
বাইরে তখন গাছের নীচে নাচছে ময়ূর আনন্দিত
এ-গাছ ও-গাছ উড়ছে পাখি
বলছে পাখি, "এই অরণ্যে কবির জন্য আমরা থাকি"
বলছে ওরা, "কবির জন্য, আমরা কোথাও, আমরা কোথাও, আমরা কোথাও হার মানিনি"
কবি তখন কুটির থেকে
থাকিয়ে আছে অনেক দূরে
বনের 'পরে, মাঠের 'পরে, নদীর 'পরে
সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পরে, বৃষ্টি পরে
সেই যেখানে কেও যায়নি
কেও যায়না কোনদিনি
আজ সে কবি দেখতে পাচ্ছে
সেই দেশে সেই ঝর্ণাতলায়
এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়
সোনায় মোড়া মেঘ হরিণী
কিশোর বেলার সেই হরিণী।
- "মেঘবালিকার জন্য রূপকথা" - জয় গোস্বামী
...
আবৃত্তি -
...
কি সুন্দর কবিতাটা! প্রথম যখন কয়েক লাইন পড়বার সুযোগ পেলাম এমন ভালো লেগেছিল। নেটে ঘেটে একটা আবৃত্তি খুঁজে পেলাম, উপরে যেটি দিলাম। সেখান থেকে শুনে শুনে টাইপ করেছি। হয়তো ভুলভাল হয়েছে অনেক।
মাহমুদুজ্জামান বাবুর 'মেঘবালিকা' গানটা শুনছিলাম এতক্ষণ। এখন শুনছি বাপ্পার "মেঘবালিকা এসো"। শুনতে শুনতে মেঘবালিকা চলে এলো :-)। সাথে নিয়ে নীলমেঘ -
নীলমেঘ, ও নীলমেঘ
কখন থেকে খুজছি তোমায়
বলো না তুমি কোথায় থাকো?
কোন আকাশে স্বপ্ন আকোঁ?
কোন আকাশটা রাঙ্গিয়ে এলে এই একটু আগে?
নীলমেঘ, ও নীলমেঘ
তুমি নাকি নীল আকাশে বৃষ্টি নামাও?
এ তল্লাটে এসো তো একটু হলে সময়!
কখন থেকে খুঁজছি তোমায়!
এই খুজে পাইতো এই হারায়!
একে শুধোয় তাকে শুধোয়
সবাই বলে, "এই একটু আগে ছিলো সেথায়!"
তুমি নাকি এসেছিলে বৃষ্টি সাথে নিয়ে!
চিহ্ন রেখে চলে গেছো সব ভিজিয়ে দিয়ে
আবার তোমার চিহ্ন ধরে খুঁজতে বেড়োই
মাঠে ঘাটে পথে পথে ঐ আকাশ পানে ছেয়ে
খুজতে খুজতে হারিয়ে ফেলি।
তুমি এখন কোন আকাশে?
নীলমেঘ, ও নীলমেঘ
সময় করে এসো আমার ঘরে
তোমায় আমি গল্প বলবো-রাজ্যের সব গল্প জমে আছে!
আমার চোখে যে বৃষ্টি বুনেছিলেম-সে গল্প বলবো তোমায়!
তার আকাশে যে স্বপ্ন একেঁছি সে গল্প বলবো তোমায়!
আর শুনবো তুমি কেমন করে ভিজিয়ে এলে ঐ পথ-ঘাট!
কেমন করে ডুবিয়ে এলে এক চিলতে ভালোবাসা!
শুনবো তুমি কেমন করে বৃষ্টি বানাও!
বলবে আমায় তোমার ঐ আকাশের গল্প?
আচ্ছা নীলমেঘ, ও নীলমেঘ
ঐ যে সবুজ পাহাড় যার বুকে আজো কলকল করছে ঝর্ণা জল
তার যে মেঘ ছিল-সেই রংধনু মেঘটা-সে এখন কেমন আছে বিজলীপ্রিয়ার সাথে?
আর ঐ কালো মেঘটা আমায় সেদিন যে চোখ রাঙ্গিয়ে চলে গেল
তার কি এখন রাগ পড়েছে?
আর ঐ বেগুনী মেঘটা, হলুদ মেঘ, আর ঐ সবুজ মেঘ
নীলমেঘ, ও নীলমেঘ
আমায় তুমি নিয়ে যাবে মেঘের রাজ্যে?
আমিও না হয় তোমায় নিজের হাতে মেঘ বুনে দেবো!
আর তুমি মনের সুখে বৃষ্টি নামাবে
নীলমেঘ, আমায় তুমি বৃষ্টি দিবে??
- মেঘবালিকা
...
এমন করে চাইবে যদি
সাধ্য কি আমার না বলি
এই যে দেখো নিয়ে এলাম
একখন্ড; বৃষ্টি মেঘ
শুধু তোমার জন্য।
মেঘের রাজ্যের দুয়ার অবারিত
নীলমেঘ সেখানে থাকুক না থাকুক
মেঘবালিকা, তুমি চলে এসো
ইচ্ছে তোমার হয় যখন তখন।
দোলনাটায় চড়লে হয়তো,
না হয় হেঁটে বেড়ালে মেঘের রাজ্যে
অন্য মেঘদের সাথে কথা বললে,
নীলমেঘ আসবে আবার যখন
মিলবে তার অবসর
ঝড়িয়ে বৃষ্টি দেশ হতে দেশান্তর।
- নীলমেঘ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।