আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলো নেরুদার দেশে - ৬

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

সামিটের প্রথম দুই দিন মানে ৬-৭ই মে হচ্ছে সিটিজেন মিডিয়ার পাবলিক সামিট যেখানে যে কেউ অংশ নিতে পারে। চিলিয়ানদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে - নেটস্ফিয়ারের, তারুণ্যের, সিনিয়র সিটিজেনদের। 'বিবলিওকা ডি চিলি' বা চিলি লাইব্রেরীর ডিজিটাল আর্কাইভ সেকশনে প্রচুর বাচ্চা-কাচ্চার সমাগম। স্কুল শেষ করে লাইব্রেরীতে ঢুকেছে। বিকেলের দিকে একটা গ্রুপ ডিসকাশনের মাঝের বিরতিতে ঘুরে দেখছিলাম।

ঢাকার জাতিয় গ্রন্থাগারের চারগুন বড় হবে সান্তিয়াগোর এই গ্রন্থাগারটি, কিন্তু এটা সান্তিয়াগোর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী নয়। এমন লাইব্রেরী এই শহরেই আছে আরো আট/দশটা। বিষ্ময়কর এদের গ্রন্থাগার-সংস্কৃতি। প্রায় ৯০% চিলিয়ানের গ্রন্থাগারে এক্সেস আছে, প্রায় ১০ লাখ চিলিয়ানকে ইন্টারনেট পরিষেবাও প্রদান করা হয়ে থাকে এসব লাইব্রেরী থেকে। প্রতিটি গ্রন্থাগারই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত যেখানে মানুষজন ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।

প্রচুর ডিজিটাল বইয়ের সমাহার, ইন্টারনেট নির্ভর প্রকল্প যার উদ্দেশ্য লোকজনকে ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত করা। উপরন্তু এসব গ্রন্থাগারে রয়েছে ছোটবড়ো অসংখ্য অডিটরিয়াম, অনুবাদক, উন্নত যন্ত্রপাতি যার ফলে স্থানীয় পর্যায়ের নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির সাথে সাথে আন্তর্জাতিক মানের সভা-সেমিনারও আয়োজন করা সম্ভব হয়। অপরিচিত বর্ণের মানুষ সম্ভবত এদেশে কম-ই আছে, ফলে বাচ্চাকাচ্চারা অবাক চোখে দেখছিলো। লাইব্রেরীর সামনে জেকে ধরলো, তাদের ছবি তুলতে হবে। ল্যাটিন আমেরিকার সাইবার ক্যাম্পেইন নিয়ে একটা গ্রুপ ডিসকাশন হচ্ছিলো।

সেইসাথে আরেকটা বিখন্ডে সাউথ এশিয়ান। যোগ দিলাম ল্যাটিন আমেরিকান সাইবারোলজি জানতে। পরিচয় হলো ফাবিয়ালার সাথে, সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা করছে। পলিটিক্স নিয়ে আগ্রহী বা বলতে গেলে পাড়-কমিউনিটস্ট। দীর্ঘদিন একটা বারে নর্তকীর কাজ করে আবার পড়াশুনা শুরু করেছে।

বয়স আমার মতই। প্রথম দিনের ওয়ার্কশপ শেষে ছিলো বিনো বাংকো বা হোয়াইট ওয়াইন পার্টি। লাইব্রেরী ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে প্রধান অডিটরিয়াম হলের বাইরে বিশাল জটলা। এত বিচিত্র প্রকারের মানুষ, আকৃতি, বর্ণ ও ভাষায় - এবং সবারই আগ্রহ সবার সাথে পরিচিত হবার। কারণ পুরো বিশ্বকে এমন হাতের মুঠোয় পাওয়া সবসময় সম্ভব না।

ওয়াইনের আড্ডা হয়ে উঠলো সংস্কৃতি বিনিময়ের, আর লাইব্রেরীর মত জায়গাই তো তার জন্য আদর্শ হবে। তারপরেই ফ্যাবিয়ালো নিয়ে গেলো সাইট-সিইংএ। প্রেসিডেন্ড প‌্যালেস দেখা হয়নি। সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। আমি ক্লিকাচ্ছি আর ফ্যাবিয়ালো গিলাচ্ছে পলিটিক্স।

বাংলাদেশী টাকায় চিলিতে একজন ফ্রেশারের বেতন ৩০ হাজারের মত। এতে কি হয়, জীবনযাত্রার মান যেভাবে বাড়ছে সেহারে বেতন বাড়ছে না। প্রেসিডেন্ড প্যালেস দেখার পরে ফাবিয়ালো নিয়ে চললো স্থানীয় একটা বারে। জুটলো নিউইয়র্কের এমিলি জ্যাকোবি যে ডিজিটাল ডেমোক্রেসি নামে একটা সংস্থা গড়ে তুলেছে বন্ধুদের নিয়ে। কিছুদিন আগে হিলট্রাকসে রোহিংগা এবং আরকানী উদ্বাস্তুদের নিয়ে কিছু কাজ করে এসেছে।

ডেমোক্রেসি বিষয়ক মূলত এটা একটা ডিজিটাল হাউকাউ - বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আমেরিকার পোলাপান যেভাবে সমস্ত বিশ্বকে তাদের টার্গেট অডিয়েন্স মনে করে - এটা সম্ভবত অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। আমাদের দৃষ্টিই থাকে দেশের ভেতরে - দেশের মধ্য থেকে আমরা বহির্বিশ্বের কোনো অডিয়েন্সকে টার্গেট করি না। বিখ্যাত সুইটে গতকাল একা ঘুমিয়েছি। আজকে নিশ্চিত ছিলাম চেঞ্জ করে দিয়েছে।

হোটেলে ফিরে দেখলাম হোটেলের টনক নড়েনি। ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে গেছিলো। রুমে ঢুকে ভাবলাম টিভিটা খুলে দেখি - এটিএন বাংলা খুঁজে পাওয়া যায় কিনা, অবিরাম ইভার মুখ না দেখলে ঘুম আসার কথা না। কিন্তু কোথাও ইভার মুখ না দেখে সিএনএন চিলি দেখলাম কিছুক্ষণ। সিএনএনের আলাদা একটা চ্যানেল আছে চিলির জন্য - স্প‌্যানিস বকবকানী থামাতে রিমোট অফ করে, লাইট অফ করে, জামা কাপড় অফ করে বিছানায় ঢুকে পড়লাম এবং সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।