আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলো নেরুদার দেশে - ৫

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

ফুয়ানদর হোটেলে সবচেয়ে রয়্যাল স্যুটটা আমার কপালে জুটলো। দুজন করে এক রুমে থাকার কথা। আমার সাথে যিনি থাকবেন আগেভাগেই আয়োজকরা মেইলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। মস্কোর একটা ছেলে। কিন্তু কিছু একটা ভজঘটো হওয়ায় আমাকে যে রুমের চাবি ধরিয়ে দিলো সেটাতে গিয়ে বিস্ময়াভিভূত হয়ে গেলাম।

তিন রুমের একেবারে পরিপূর্ণ সুইট। ড্রইং, ডাইনিং এবং একটা বেডরুম। নিশ্চিত ধরে নিলাম নামে কোনো গন্ডগল হয়েছে অথবা হোটেলের লোকজনের মাথাগোল হয়ে গেছে। আমিও চুপিচুপি রুমে ঢুকে গেলাম - এট লিস্ট রাতের মধ্যে যেনো না পাল্টে দেয়, সেজন্য একটা সাওয়ার নিয়ে রাতের খাবারের জন্য নেমে গেলাম। শীতের কোনো কাপড় নিয়ে আসিনি।

তেমন কোনো শীতও নয়। তবে একটা হলে ভালো হয়। রাস্তার পাশে পেয়েও গেলাম। একহাজার পেসোতে একটা জ্যাকেট। সন্ধ্যার পরে রাস্তার ওপাশে আমরা কজন ঢুকে পড়লাম একটা রেস্টুরেন্টের।

চিকেনের ফ্রাইড জাতিয় কিছু একটা হলেই আমার চলে যায়। যত জঘন্য হোকই না কেনো। ফটো কার্টেসী, জুয়ান আরেলানো, পেরু কিন্তু এখানে সবাই দেশী মানে চিলিয়ান ফুড বাছাই করতে উঠে পড়ে লাগলো। অবশেষে যা খেলাম তার স্বাদও মনে হলো - ইহজনমে এমন বিচিত্র টেস্ট নেবার সৌভাগ্য/দুর্ভাগ্য আমার হয়নি। হোটেলে ফিরে কারো সাথে আড্ডা মারার ইচ্ছে হলো না।

চোখ ভর্তি ঘুম, পেট ভর্তি মদ - আর ঐতিহাসিক এক সুইটের মধ্যে যে অভাবটা সুতীব্র হবার কথা - তার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে, মানে সকাল হবার আগেই উঠে গেলাম। সাত সকালের সান্তিয়াগো দেখার সুযোগ মিস করতে চাইলাম না। ঘুরে এসে নিচে নেমে দেখলাম বুফে ব্রেকফাস্ট লেগে গেছে। রাতের খিদেটা চনমনিয়ে উঠলো।

পেট ফুলিয়ে ইউরোপিয়ান ব্রেকফাস্ট মেরে দলবল বেধে রওনা হলো মেট্রো ধরতে - সামিটের ভেন্যুতে যেতে। মেট্রো থেকে নেমে চিলি লাইব্রেরীতে যেতে কিছুটা হাঁটতে হয়। গ্লোবাল ভয়েসের সিটিজেন মিডিয়া সামিটির ভেন্যু হচ্ছে এই লাইব্রেরীর কনফারেন্স হল। সমস্ত বিশ্বের সবকটি মেজর ভাষাভাষি, বর্ণ এবং সংস্কৃতির এক বর্ণীল উপস্থিতি দেখা গেলো। বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীদের সাথে ভার্চু যোগাযোগ অথবা পরিচয় আছে।

তবে প্রথম দিন ছিলো চিলির স্থানীয় অনেক অংশগ্রহণকারী। চিলিয়ান সিটিজেন মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী, গবেষক, আলোচক ও বিশ্লেষক। কনফারেন্স হলের ভেতরে ঢুকে আমার দুর্বল চার্জ বিশিষ্ট ল্যাপটপের সুবিধার্থে একদম সামনের আসনে পাওয়ার সকেটের সুযোগ নেবার জন্য বসে পড়লাম। বলতে গেলে সেটাই একটা বড় প্রাপ্তি হলো এ্যানি নেলসনের সাথে লম্বা একটা আলোচনা ফাদার। গত রাতে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল মিডিয়ার অধ্যাপক এ্যানির সাথে ডিনারে পরিচিত হবার পর থেকেই সুযোগ খুঁজছিলাম তার সাথে আরো কিছুটা সময় কাটাতে।

একটা সেশনে ছিলো ইউটিউব, ফ্লিকারের প্রতিনিধি - যারা বর্ণণা করেছেন কিভাবে তাদের মডারেশন সম্পন্ন হয়। ইউটিউবের প্রতিনিধি দেখাচ্ছিলেন আঞ্চলিক সংস্কৃতির সাথে বৈশ্বিক নানা প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে তাদের নানারকম পলিসির কথা। একটা উদাহারণ দিয়ে বলছিলেন এমন ভিডিও যা কোনো যৌক্তিক কারণে বন্ধ করা হয় তার অংশ বিশেষ জেপিজি ইমেজ ফর্মেটে রাখা হয় উদাহারণ হিসাবে। ইউটিউব এবং ফ্লিকারের মডারেটশন যথেষ্ট ইউজার ফ্রেন্ডলী নয়, দীর্ঘদিন যাবত প্রতিক্রিয়া সংগঠনের পরেই তারা রেসপন্স করেন এমন অভিযোগ অডিয়েন্সের মধ্য থেকে উত্থাপিত হলে ফ্লিকারের প্রতিনিধি তার সেশনে নানামুখী সীমাবদ্ধতার কথা বললেন। একটা উদাহারণ দিয়ে বললেন, একজন শিশুর ধূমপানের দৃশ্য ফ্লিকারে থাকবে কিনা এ নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কের পরে তারা একবার সেটা বাতিল করে আবার পুনরায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।

ভার্চুয়াল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা মানুষদের মানে এই নেটস্ফিয়ারের নানামুখী বৈশিষ্ট্য ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছিলো প্রথম দিনের ওয়ার্কশপেই। আমি মোটামুটি লাইভ ব্লগিং করে যাচ্ছিলাম আর একটু পরে পরে বাইরে গিয়ে বিড়ি ফুকে আসছিলাম। সকালের টাটকা ব্রেকফাস্টের পরে দুপুরে হালকা লাঞ্চ খারাপ লাগে নাই। প্রচুর ড্রিংকসের ছড়াছড়ি, আঙুর আর তরমুজের। আমাদের ভাতেল পেটে ফলফ্রুট সহ্য হয় না বলে বৈশ্বিক বাঙালিদের চিত্রবিচিত্র কাহিনীতে অনেক পড়েছি।

তবে বুঝলাম বিকেল হতেই। যতই বার্গার আর স্যান্ডুচ মারো না কেনো দুপুরে ভাত না খেলে তুমি আসলে কিছুই খাও নাই। পেটের মধ্যে চোচো - আর ধারেকাছে কোনো রেস্টুরেন্ট নাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।