যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
সাওপাওলো থেকে সান্তিয়াগোর ফ্লাইটে উঠে মেজাজ গরম করে চাইলাম বিয়ার। ততোধিক মেজাজ গরম করে এয়ারহোস্টেজ জবাব দিলো, ঠু আর্লি ফর বিয়ার। এবার আরেককাঠি গলা চড়িয়ে বললাম, লাস্ট ৩৫ আওয়ারস ইন ফ্লাই...ডুনট ফা.... উইথ মি! ছোট্ট একটা প্লেন - জিএমজির ঢাকা-কোলকাতা ফ্লাইটের মত, তার উপরে এয়ারহোস্টেজ সবগুলা বুড়া। আমার কাছে মিরপুর গুলিস্থানের কন্ডাকটরদের মত মনে হচ্ছিলো। ঝাড়ি খেয়ে বললো, কাম উইথ মি।
নিয়ে গেলো পেছনের কিচেনে। দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুটো বিয়ার শেষ করেই বাথরুমে গেলাম ডিপোজিট করতে। তারপরে মনে হলো প্লেনটার দিকে নজর দেয়া যায়। সাওপাওলো থেকে উড়াল দিয়ে আর্জেন্টিনার উপর দিয়ে সরু স্ট্রিপের মত চিলির দিকে যেতে যেতে পথে পড়বে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ মাউন্টেন রেঞ্জ এনডেজ। পুরো প্লেন জুড়ে অপরিচিত বর্ণের মানুষ, বিচিত্র ভাষার ঝংকার।
আমার পাশের সিটের ভদ্রলোক কিছুক্ষণ পরেই ভাঙা ইংলিশ বললো, গত বছর আমি ইন্ডিয়া গেছিলাম। সে জাহাজে চাকরী করে। চিটাগং ছিলো দশপনেরো দিন। শুনেই আমি লাফ দিয়ে উঠলাম। আরে...আমি তো বাংলাদেশ থেকে! শুনে সেও ফাল মেরে উঠলো...ওয়াও....তারপরে নানান প্যাচাল।
চিলি সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা সে দিয়ে ফেললো। তারমধ্যে প্রথম সতর্কবাণী হলো, ডাউনটাউনে ছিনতাই হয়, অতএব ক্যামেরা নিয়ে সাবধানে থাকতে হবে! স্কুডো, দি চিলিয়ান বেস্ট বিয়ার - আর যদি ঐসবের ইচ্ছা থাকে তবে সেইসব জায়গায় যাবার ঠিকানা।
আমার সিটটা সেফটি সিটের পাশে। হোস্টেজ বললো, আপনি তো ড্রাংক - এই সিটের কিছু স্পেশাল রিকয়ারমেন্ট আছে, এই করতে হবে - সেই করতে হবে - ইন কেস যদি ফ্লাইটে ঝামেলা হয়। বললাম, তফাৎ যাও - আই ক্যান হ্যান্ডেল দিস! তারপরে সামনের খোলা জায়গায় পা ছড়িয়ে এন্ডেজ পর্বতমালা দেখতে দেখতে, কোনো ধরণের ক্রাস ল্যান্ডিং ছাড়াই সান্তিয়াগো পৌছে গেলাম।
এ্যাজ এক্সপেক্টেড এয়ারপোর্টে বিশাল লটরবটর সহ সামিটকারীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ এবং এতদিন ভার্চুয়াল চেহারার পরিচিত মানুষদের দেখে - আরে তুমি তো অনেক প্রিটি, তোমার মুখটা এমন শুকনা কেনো......লম্বা জার্নি, কে স্প্যানিশ জানে, এক ডলারে কত পেসো...হোটেলের ঠিকানা কার কাছে এসব আলাপ-টালাপ সেরে হোটেলে এসে ঢুকতে পারলাম।
সান্তিয়াগো এয়ারপোর্টে নেমে লাস্ট সিগারেটটা ফুকে, হোটেলে এসে দৌড়ে নামলাম রাস্তায়। তখন বিকেল ৫টা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক উচুঁতে শহরটি বলে বাতাসে উষ্ণতার পরিমাণ বেশী। মুখটা কেমন ড্রাই ড্রাই লাগছিলো।
সেই সাথে একটা শীতেল ব্যাপাস্যাপার। এই ওয়েদারের সাথে আমার শরীর কস্মিনকালেও পরিচিত হয়নি। ফুয়ানদর হোটেলে রুম বরাদ্দ পেতে আধা ঘন্টা লাগবে। বিশাল কিউ। রাস্তায় নেমে এক প্যাকেট মার্লবোরো কিনলাম ২০০০ পেসো দিয়ে মানে চার ডলারের মত।
প্যাকেটের গায়ে বীভৎস ছবি, অক্সিজেন মাস্ক পরিহিত একটা বাচ্চার অপারেশনের। দেখে সিগারেট খাওয়ার আনন্দ গেলো মাটি হয়ে। সিগারেট ধরাতে গিয়ে দেখলাম পকেটের বাংলাদেশী ম্যাচে কোনো কাঠি নেই। দোকানীর কাছে ম্যাচ চাইলে সে ম্যাচলাইট দিলো - ২০০ পেসো। কিনতে হবে।
কিনে সিগারেট ধরিয়ে সামনের রাস্তায় এসেই চোখে পড়লো চিলি ইউনিভার্সিটি।
জায়াগটাকে বলা হয় সেনত্রো - মানে সেন্টার। আশেপাশে প্রেসিডেন্ট প্যালেস, টাওয়ার, আর ইউনিভার্সিটির বিশাল ক্যাম্পাস। যত্রতত্র হাঁটাহাটি করে মনে হলো - কি শুনে এলাম আর কি দেখছি। চিলি সম্বন্ধে আমার ধারণা ছিলো - থার্ড ওয়ার্ল্ডের কোনো দেশ হবে।
দরিদ্র আর ক্লিষ্ট চেহারা দেখবো চারদিকে।
কিন্তু ভুল ভাঙা শুরু হলো বেসিক্যালী ব্রাজিলে বসেই। ব্রাজিলকেও ভেবেছিলাম অনুন্নত কোনো দেশ। সাউথ আমেরিকান ভূগোল এবং অর্থনীতি সম্বন্ধে আমার আইডিয়া ভাগ্যিস কারো সাথে আগে শেয়ার করিনি। প্লেনে জাহাজী ক্রু সেই সহযাত্রী বলেছিলো, ব্রাজিলের পরেই চিলির অবস্থান ইকোনমিক পাওয়ার হিসাবে ইন সাউথ আমেরিকা।
শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেও সান্তিয়াগো এয়ারপোর্ট থেকে সেনত্রো পর্যন্ত যতটুকু দেখলাম তাতে নতুন ধারণা গঠিত হয়ে গেছে। গোত্র ও ভাষাভাষিতে স্পেনের একটা খন্ড বলে আপাত প্রতীয়মান হলেও চিলি দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম শক্তিধর অর্থনীতির দেশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।