আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলো নেরুদার দেশে - ৩

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
যখন দক্ষিণ আমেরিকার ভূখন্ড দেখা গেলো - কলম্বাসের মত বিচিত্র কোনো অনুভূতি আমার হলো না। যেটা হলো সেটা রীতিমত বিধ্বংসী। চোদ্দ/পনের ঘন্টা সিগারেট খেতে পারছি না। আর ভুক্তভোগী মাত্র জানে হার্ড-ড্রিঙ্কসের সাথে ধূমপান কতটা জরুরী। হাপরের মত ফুসফুস ওঠানামা করছে নিকোটিনের জন্য।

আমার বস্তুত ধারণাই ছিলো না যে প্লেনে স্মোকিং এমন লাদেনের মত নিষিদ্ধ। ভেবে নিয়েছিলাম লম্বা যাত্রায় হয়তো কোনো একটা সিস্টেম আছে। স্মোকিং রুম বা দেয়ার ইজ এ দুই-নম্বরী। এবং সর্বাগ্রে যে দুইনম্বরীর জায়গাটা খেয়াল হলো সেই বাথরুমের বিষয়ে দেখলাম আবার বিশেষ সতর্কবাণী। বাথরুমে ফ্লাস অন করে সিগারেট খাওয়ার আমার মৌলিক পরিকল্পনা দেখলাম অনেক আগেই লাখ লাখ মানুষ নকল করে বসে আছে এবং সেসব ধরা খেয়ে সতর্কবানীতে ঢুকেছে বাথরুমে 'কি করা যাবে আর যাবে না' তার লম্বা ফিরিস্তি।

আধঘন্টা লেট লতিফ হওয়ায় পরের ফ্লাইট ধরা গেলো না সাওপাওলোতে। রাত্র তখন অস্টম ঘন্টায়। সাও পাওলো এয়ারপোর্টে কিঞ্চিত ঠান্ডা অনুভব করলাম। এয়ারলাইনস সূত্র জানা গেলো পরের দিন দশটার ফ্লাইটে আমরা বুকড হয়েছি এবং রাত্রিভর আতিথেয়তার দায়িত্ব নেবে এমিরেটস। সাওপাওলা এয়ারপোর্টে এইচএসবিসি ব্যাংকের বিশাল বিশাল বিলবোর্ড।

সেখানে লেখা la munda le brasilia, পর্তুগীজ না বুঝলেও এটা বুঝলাম এর অর্থ 'দি ফুটবল দি ব্রাজিল' ছাড়া কিছু হতেই পারে না। তবে এয়ারপোর্টে ফুটবল খোঁজার আগে আমি যেটা সবার আগে খুঁজতে গেলাম সেটা হলো সিগারেট খাওয়ার জায়গা। এত সিকউরিটির বেড়া ডিঙিয়ে কিভাবে আমার প‌কেটে সিগারেটের প‌্যাকেট এবং একটা ম্যাচ রয়ে গেলো - সেটা এক বিশাল প্রশ্ন হলেও - ভাবার বিন্দুমাত্র সময় ছিলো না। দুবাইয়ের মত একটা স্মোকিং রুম আছে নিশ্চিত ধরে নিয়ে যখন ইতংবিতং খোঁজাখুঁজি শুরু করেছি তখন সবচেয়ে ভয়াবহ সত্যটা আবিষ্কার করলাম। একজন সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলে সে ধরিয়ে দিলো ফেডারেল আইন - পুরা এয়ারপোর্টে ধূমপানের বিশাল নিষেধাজ্ঞা।

কতক্ষণ এয়ারপোর্টে থাকতে হবে, হোটেলে কখন যাবো, কোথায় খাবো এসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জেনে নেবার চেয়ে ধূমপানের কোনো সুযোগ না থাকার সংবাদে যেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রি শপ গুলোতে হাভানা টোবাকোর বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপন। সেলস গার্ল বিগলিত হাসি দিয়ে সিগারেট কেনার আহবান জানালো। এইচএসবিসি ব্যাংকের স্লোগানকে তখন আমার পাল্টে দিতে ইচ্ছে করলো, ওখানে লিখতে হবে 'নো স্মোক নো ব্রাজিলিয়া'। কিন্তু এসব ভেবে আর কি হবে, ফুসফুসকে সান্তনা দিলাম এই বলে, আরেকটু ধৈর্য্য ধরো, এক কার্টুন নিকোটিন উপহার দেবো অচিরেই, মনের সুখে টেনো!
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।