আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষঃ ইউ হ্যাভ টু বি ক্রুয়েল অনলি টু বি কাইন্ড...



সেদিন অফিসে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিলো কাজ শেষ করতে করতে। রাত ন'টার দিকে, ডি ও এইচ এস-এর সিএনজি স্টান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজিগুলোর একটা খুব সাধাসাধি ব্যাতিরেকেই যখন রাজি হয়ে গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে আসার জন্য, তখন মনটা অনাকাংখিত প্রাপ্তিতে বেশ খুশী হয়ে গেলো। একেতো সিএনজি পাওয়া ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় এভারেস্ট জয়ের মত ব্যাপার, তার উপরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কথা শুনলে, বিশেষতঃ একটু রাতের দিকে- এমনকি রিকশাও আসতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী যে কারোই এ তিক্ত অভিজ্ঞতাটা খুব কমন। কেন তার কারণ বোঝা খুব দুরুহ নয়... কিছুটা নিরাপত্তার ব্যাপারে আশংকা, আর কিছুটা চালকের স্বার্থবুদ্ধিসংশ্লিষ্ট, এতো রাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে খুব একটা ফিরতি যাত্রী পাওয়া যায় না।

খুশী খুশী মন নিয়ে সিএনজিতে উঠে সোনারগাঁ শেরাটন পেরিয়ে শাহবাগের মোড়ে এসে পড়লাম। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসার যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন যে রেলক্রসিং এর মতো দশাসই বেশ কিছু ক্রসিং আগলে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারগুলো। সিগনাল ক্রস করে ঢোকার মুখেই সার্জেন্টের ইশারায় সিএনজি থেমে যেতে হলো। ব্যাপারটা একেবারে আনকমন নয়, তাই খুব একটা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্হ হইনি। সিএনজিকে বললাম ঘুরে নিলক্ষেত দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করতে।

মনে একটা ক্ষীণ আশা, হয়তো সে দিকের পথটা বন্ধ করা হয়নি। অফিসফেরত ক্লান্ত শরীরে হাঁটতে ইচ্ছা করছিলো না। কিন্তু হা হতোস্মি, নিলক্ষেত গেটের কাছেও গেট বন্ধ করে রাখা। ইচ্ছা না থাকলেও সিএনজি বিদায় করে হাঁটা ধরলাম। আমাদের কৈশোরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রাস্তা জুড়ে এককালে হাজার রাউন্ড গোলাগুলি হয়েছে, প্রকাশ্য দিবালোকে কিংবা রাতে, বেঘোরে মারা পড়েছে উৎসুক রিকশাওয়ালা আর সাধারণ মানুষ।

সে তুলনায়, বলতেই হয় এ ক্যাম্পাস বেশ আলুনি হয়ে গিয়েছে, আজকাল মারামারির দৃশ্যে পেপারে কাটা রাইফেল হাতে ক্রলিং করা ছাত্রদের পরিবর্তে লাঠিসোঠা হকিস্টিক নিয়ে ধাওয়া করা ছাত্রদের ছবি ছাপা হয়। যে যাই বলুক, আমার কাছে ব্যাপারটা ইতিবাচক পরিবর্তন বলেই মনে হয়। মানুষজনকে বেশ সাবলীল ভাবে হেঁটে যেতে দেখে বুঝলাম ভেতরে যাই ঘটে থাকুক, মূল রাস্তায় এর প্রভাব পড়েনি বললেই চলে। বোধকরি গন্ডগোলটি হলের ভেতরের, তবুও প্রশাসনের অতিসতর্কতায় গেট আটকানোটাকেও মনে মনে সমর্থক করলাম। মনের মাঝে খানিকটা কৌতুহল জেগেছিলো কি হলো তা জানার জন্য, কিন্তু বাসায় গিয়ে তা একসময় ভুলেই গিয়েছিলাম।

মনে করিয়ে দিলো পরদিনের পত্রিকাগুলো। প্রথম পাতা জুড়ে সোনার ছেলেদের দু'গ্রুপের হতাহত ছেলেদের সারি, ইনসেটে মধ্যযুগীয় একগাদা "উদ্ধারকৃত অস্ত্রশস্ত্র"। ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কার্যক্রমের ফলে তাদের দলভুক্ত ছাত্রদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল থাকা যারপরনাই কঠিন, তার উপরে আদর্শিক দিক থেকে তাদের বিপরীত মেরুতেই অবস্হান, তারপরও ছবিগুলো দেখে আক্ষরিক অর্থেই গভীর বেদনাবোধে আক্রান্ত হলাম। পত্রিকার বরাত মতে, বেশীরভাগই প্রথম বর্ষের ছাত্র... ছাত্রজীবনের শুরুতে মফস্বল থেকে আসা অনেক ছেলেকেই শুধুমাত্র সিট পাওয়ার জন্য ছাত্ররাজনীতির সাথে তাল মেলাতে হয় ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়, সে সত্যটা জানা থাকায়, আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না, এদের অনেকেই স্রেফ ভিকটিম, তাদের আর কিচ্ছু করার ছিলনা। মনের মধ্যে একটি গভীর হতাশাবোধ এবং তিক্ত স্বাদ নিয়ে দিনটা শুরু হলো, এবং কিছুতেই মাথা থেকে ব্যাপারটা সরিয়ে ফেলতে পারলাম না।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অজস্র ঘটনা ঘটেছে, যার অনেকগুলোই বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে। নেহায়েৎ যেগুলো পত্রিকার পাতায় চলে আসে, পত্রিকাওয়ালারা খবরের কাটতি বাড়ার জন্য কিংবা সাংবাদিকতার নীতিমালার খাতিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরওয়ালাদের ভাষ্য নেয়, তারা গদবাঁধা বলে যান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি তদন্তকমিটি গঠন করা হবে, এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্হা নেবে... একটি শব্দও এদিক ওদিক হয়না। তারপরে আর কিছু হয় কিনা, কিংবা কি হয়, তা জানার সুযোগ আমাদের মত আমজনতার নাই... কিছুতো নিশ্চয়ই হয়, না হলে এত বিদ্যাবুদ্ধিওয়ালা লোকজন কিছু করার কথা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেন, তা'তো আর মিথ্যা হতে পারেনা। তবে তাতে কাজের কাজ যে কিছুই হয়না তা বোঝা যায় সপ্তাহ কিংবা মাস ঘুরতেই তাদের আবার সেই বিবৃতিগুলো দিতে হয়, নতুন কোন ঘটনা পরিপ্রক্ষিতে... অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি স্রেফ বহিঃস্কারাদেশ ক্ষমতাটির যথার্থ ব্যবহার করতেন, আর হাতেগোণা কিছু "ব্যাড এপল"-কে ঝুড়িতে না রাখার শক্ত সিদ্ধান্তটি নিতে পারতেন, তাহলেও এধরণের ঘটনা অনেক কমে আসতো। সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো প্রশ্রয়।

রংবেরংয়ের রাজনৈতিক ভেদবুদ্ধিতে আজকাল শিক্ষকদের নৈতিক অবস্হান প্রশ্নবিদ্ধ, আর লেজুড়বৃত্তিতে যে যত পারঙ্গম, প্রশাসনে তার অবস্হান ততই পোক্ত। তাই পত্রিকার সাংবাদিকদের সমুখে বিবৃতি দেয়া ভিসিকেই হয়তো পরমুহুর্তে ছাত্রনেতাদের সেলফোনে মিঠে মিঠে কথা বলে অভয় দিতে হচ্ছে... ক্যান্সার চিকিৎসার একটা পর্যায়ে আক্রান্ত কোষগুলোকে সরিয়ে দিতে হয়। গোটা দেহকে বাঁচাতে এমপিউটেশন করতে হয়। আপনারা গুটিকতেক ক্যান্সারকে বিশ্ববিদ্যালয় অংগনের অযোগ্য ঘোষণা করুন, দরকার হলে সরাসরি ফোন তুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলুন নেতা পাতি নেতাদের রাজনৈতিক প্রেসার মোকাবেলা করার জন্য। আর না পারলে সরাসরি খোলাখুলি সবকথা জানিয়ে দিয়ে দ্বায়িত্বটি বরং সারেন্ডার করুন... আর কারো না হোক, অজস্র ছাত্র ছাত্রী, তাদের মা বাবা আর আম জনতার স্যালুট পাবেন... উইল এনি অফ ইউ ডেয়ার?


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.