এরকমই, আমি এরকমই
অ্যারন দারুণ ঈর্ষার সাথে লিও’র দিকে তাকিয়ে থাকে, কী অদ্ভুত সুন্দর চেহারা লিও’র, কী দ্রুত সে যে কোনো কিছু বুঝে ফেলে, আবার ওদের এই ছোট্ট দলটিকে এমন সাবলীলভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে – মনে হয় শুধু এই জন্যই ও তৈরি।
পিছনে এনা দাঁড়িয়ে ছিলো, সে এই বিষমরকম শুষ্ক খটমটে জায়গায় এসে মহাবিরক্ত, বিরক্তি চেপে রাখার কোনো চেষ্টা তার মধ্যে নেই বরং সুযোগ পেলেই বা না পেলেও সে তার বিরক্তি-ক্ষোভ সবাইকে জানান দিচ্ছে। সে হঠাৎ অ্যারনের দৃষ্টি আকর্ষণ করল, “ওটা কী, দেখো তো?”-বহুদুরে একটা আবছা গম্বুজ-সদৃশ কাঠামোর দিকে সে ইংগিত করে।
অ্যারন ভাল করে বোঝার আগেই লিও তথ্যটা ওদের জানিয়ে দেয়, “ওটা ছোট্ট একটা পাহাড়, পুরো পাথুরে, কিন্তু জীবন্ত। ”
তারমানে সে বলতে চাইল ওটা একটা আগ্নেওগিরির জ্বালামুখ।
- অ্যারন মনে মনে বুঝে নেয়। লিও’র প্রায় বিরল ত্রুটিগুলোর মধ্যে একটা আবিষ্কার করে ও মাঝে মাঝেই তৃপ্তি পায়, সেটা হল লিও’র বোঝানোর অক্ষমতা। নিজে খুব ভাল বুঝলেও অন্যকে বোঝাতে গেলেই লিও গোলমাল পাকিয়ে ফেলে, যেটা এক কথায় বলে দেওয়া যায় সেটা বিশদ ব্যখ্যা করে ফেলে, নয়ত জটিল কিছু একশব্দে বলে দায় সেরে দেয়।
তারপরও লিও’র নেতৃত্বে কোনো সমস্যা নেই, অ্যারন ভেবে দেখল, তার কারন দলের বাকি সবাই’ই বুদ্ধিমান, যথেষ্ট পরিমাণেই। এমনকি এসনাইন, যে মুলত শারীরিক শক্তির জন্যই পরিচিত, সেও আসলে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ওদের প্রায় সমপর্যায়ের।
গ্রহটার সূর্য ডুবে যাবার অনেক পরে, যখন এনা তার প্রাথমিক নিরীক্ষণ শেষ করল, সারি বেঁধে নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে করতে ওরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল, সবার পিছনে এসনাইন হঠাৎ অস্ফুট শব্দ করে থেমে যায়। তার সেই শব্দের ব্যাখ্যা শোনার জন্যে কেউ ঘুরে দাঁড়ায় না, কারন আচমকা সবাই স্থির হয়ে গেছে।
ওদের সদ্যপরিচিত গ্রহটার চাঁদের আলোয় ধাতব দেহগুলো চকচক করতে থাকে, কিছুটা দমকা বাতাস রোবোটগুলোর গা ঘেষে বয়ে যায়।
এসনাইন প্রথম নড়ে ওঠে, গাঠনিক দিক দিয়ে তার দৈহিক ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। সে তার সামনে স্থির হয়ে থাকা দেহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে প্রথমে, তারপর চারপাশটা।
সে কিছুই চিনতে পারে না, অবাক হয়ে সে তার স্মৃতি নাড়াচাড়া করে দেখে, পুরোটাই ফাঁকা।
একে একে লিও, অ্যারন আর এনাও, বলা যায়, জেগে ওঠে। রোবোটগুলো পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে, দেখা গেল তাদের সবারই স্মৃতিবলয় ফাঁকা।
প্রবৃত্তি, যেটা তাদের দৈহিক এবং কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলিক কাজের প্রোগ্রাম, সেটার নির্দেশে ওরা দ্রুত পরস্পরকে যাচাই করে, কিছু স্মৃতি এইসময় তাদের স্মৃতিবলয়ে জমা হয়ে গেল।
অ্যারন তার যোগাযোগ যন্ত্রের সাহায্যে প্রশ্ন করে, “তোমাদের কি মনে হয়, এটা কোথায়?”
লিও দ্রুত হিসেব করে তাদের পায়ের নিচে থাকা গ্রহটার একটা বর্ণনা দিয়ে দিল।
এনা ভয় পাওয়া গলায় বলে, “আমরা এখানে কেন, কিছু মনে নেই কেন, গ্রহটা এমন বিশ্রীরকম কর্কশ কেন, চারপাশ এমন ফাঁকা কেন...”
লিও এনাকে থামিয়ে দেয়, কিছু ইন্দ্রীয় খুব দ্রুত প্রসারিত ও সংকোচিত করে, তারপর অস্থিরতার সঙ্গে বলে, “সবাই জলদি আমার সাথে এস- এক্ষুনি!”
লিও ছুটতে শুরু করতে সবাই একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, পরক্ষণে দূরে একটা গম্বুজ আকৃতির কাঠামো থেকে ধোঁয়া আর অগ্নিউদগীরণ, সেই সাথে বিকট শব্দ শুরু হওয়ায় সবাই লিওর পিছু নেয়।
নিরাপদ দুরত্বে সরে এসে ওরা সবাই একসাথে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয়াচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। অ্যারন তার সবগুলো ইন্দ্রীয়ের সংকেত কপোট্রনের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে পরীক্ষা করে দেখে তারা আসলেই সঠিক তথ্য দিচ্ছে কিনা, নাকি সে ভারচুয়াল কোনো জগতে আছে। সব ঠিকই আছে দেখে সে আরও চিন্তিত হয়, “তবে? আমি এখানে কেন?”
এনা তার সংগীদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের করতে থাকে, তাদের চিন্তা ভাবনার ধরণ বোঝার চেষ্টা করে- এদের কাছে সে কতটুকু নিরাপদ? লিওকে তার বন্ধু বলে মনে হল, বিপদে সে তাকে সাহায্য করেছে, হয়ত সবসময়ই করবে।
এসনাইন একটা বিরাট পাথরখন্ডকে সতর্কভাবে নিরীক্ষণ করে, ওটা থেকে কী কী ধাতু পাওয়া যাবে, সেগুলো কতখানি কাজে লাগবে আর এইসব করতে কি পরিমান শক্তি ব্যয় হবে তার একটা হিসাব করে ফেলে।
ওদিকে লিও, গ্রহটায় আরও সম বা অসম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রজাতির অস্তিত্বের সম্ভাবনা হিসাব করে চলে, তাদের সাথে সাক্ষাতের কথা ভেবে খুশি হয়, প্রতিকুল পাথুরে গ্রহে সবার সম্ভাব্য ভোগান্তির চিন্তায় কাতর হয়।
অ্যারন তার কম্যুনিকেটরে সবার মনোযোগ আকর্ষন করে বলল, “আমাদের আসলে এখন কিছু করার নেই, আমি এখানেই থাকছি, নেহাত আবার কোনো বিপদ না দেখলে কিছু করতে চাই না। ”
“না, চল পুরো গ্রহটা ঘুরে দেখা দরকার, কে জানে কোথায় কি আছে, আমাদের মত হয়ত আরো কেউ থাকতে পারে, তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা উচিৎ। ”-লিও বলে।
অ্যারন একটুক্ষণ ভেবে বলল, “তার কোনো দরকার নেই, ভেবে দেখ, আমরা সবাই রোবোট, কেউ আমাদের এখানে রেখে গেছে, কেন কেউ জানি না-সুতরাং এখানে থেকে তার নির্দেশের অপেক্ষা করাই ভাল।
”
লিও একমত হতে পারে না, “তুমি কিভাবে জানলে কেউ আমাদের রেখে গেছে এখানে –ওই আগুনের মাঝে পড়ার জন্যে! কেউ তা করে থাকলেও আমাদের প্রতি তার দায় আছে বলে মনে হয় না। ”
এনা লিওর কথায় যুক্তি খুজেঁ পায়, লিওকে তার যথেষ্ট বুদ্ধিমান বলেই মনে হচ্ছে, এর উপর ভরসা রাখা যায়। সে অসহিষ্ণু গলায় বলল, “ঠিক, এ জায়গাটা একেবারে বাজে। আমাদের আশেপাশে খোজঁ করা উচিৎ। ”
অ্যারন আবার ভেবে বলে, “কিন্তু, তাহলে আমরা এখানে এলাম কোথা থেকে, কিভাবে, কেন?”
“এই পাথরগুলো কিভাবে এলো, কেন?”-লিও পালটা জানতে চায়।
এইকথায় এসনাইন তার পাথরবিষয়ক সদ্য-সমাপ্ত গবেষণার একটা ফিরিস্তি দিয়ে দিল, সে জানালো যে ওই পাথর থেকে যে ধাতু পাওয়া যাবে তা থেকে তারা আরও মজবুত আর সক্ষম কিছু রোবোট বানিয়ে ফেলতে পারে, নিজেদের মত।
অ্যারন এসনাইনকে একটু রূঢ়ভাবে থামিয়ে দেয়, “ও সবের কোনো দরকার নেই। আমরা এখানে ওইজন্যে আসিনি নিশ্চই। ”
“তবে কি জন্যে এসেছ? তুমি বসে থাকো তাহলে চুপ করে। ”-এনা ঘৃণাভরে জবাব দেয়।
“অকর্মার ধাড়ি কোথাকার। ”
অ্যারনের কপোট্রনের কোথাও একটা বিদ্যুৎ-তরংগ উৎপন্ন হয়। সে তীব্র শ্লেষের সাথে একটা অর্থহীন শব্দ উচ্চারন করে আক্রমনাত্বক ভঙ্গীতে এনার দিকে এগিয়ে গেলে, লিও দুওনের মাঝে এসে দাঁড়ায়।
এসনাইন বেশ কৌতুহলের সাথে ওদের বিতন্ডা উপভোগ করছিলো, লিও তাতে পানি ঢেলে দেওয়ায় সে আবার তার পাথর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, এনা সোৎসাহে তার সাথে এসে যোগ দিল।
লিও কিছুটা করুণাভরে অ্যারনের দিকে তাকায়, ওর জন্যে তার কিছুটা মায়াই হয়।
অ্যারন অবশ্য হতাশ আর বিদ্রুপাত্বক চোখে বাকিদের দেখতে থাকে। কী বোকা এরা। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ এখানে তাদের অস্তিত্বের নিশ্চই অন্য কোনো অর্থ আছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্য?
“ওরা বুঝতে পারছে না,”-অ্যারন নিজের মনে বলে। “সে যখন আসবে,” অজানা কারও কথা সে ভাবে, “তখন বোকাগুলো তার কোন কাজেই লাগবে না-স্রেফ ধ্বংস হয়ে যাবে।
“কিন্তু তাহলে, ওদের প্রোগ্রাম করায় ভুল ছিলো কোথাও?”-সে ভাবে, পরক্ষণে স্বগতক্তি করে, “আমি ধ্বংস হতে চাই না। ”
“বুদ্ধিবৃত্তির কী অপচয়!” লিও অ্যারনের জন্যে আফসোস করে এনার কাছে এসে।
“ও আমাদের মত করে ভাবতে পারছে না কেন?”-এনা বলে। “মনে হয় ওর বুদ্ধিমত্তা কম, প্রাচীন প্রজাতির কোনো রোবোট। ”
অ্যারন বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভাবতে থাকে, মাঝে মাঝে ঘৃণাভরে অন্যদের দিকে তাকায়, এনা সাথে সাথে সে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে থাকে।
ওদের থেকে বহুদুরে একজন কেউ দারুণ আগ্রহে রোবোটগুলোকে মনিটর করে চলে, যে নিজে তাদেরকে প্রোগ্রাম করেছে, যে জানে কখন কে কী করবে, তবু প্রতিবারই, খেলাটা শুরু করে হয়ত সে চরম উত্তেজনায় থাকে, তার সীমাহীন অলস সময়ে কিছুটা স্পন্দন জাগে হয়ত!
খেলাটা কিন্তু জমে উঠছে!
>>> সাধারণ ব্লগার থাকাকালীন গল্পটা একবার পোস্ট করা হয়েছিলো, কিছুটা পরি-বর্তন ও বর্ধনের পর নিরাপদ ব্লগার হিসেবে রিপোস্ট করা হল।
অ্যারন দারুণ ঈর্ষার সাথে লিও’র দিকে তাকিয়ে থাকে, কী অদ্ভুত সুন্দর চেহারা লিও’র, কী দ্রুত সে যে কোনো কিছু বুঝে ফেলে, আবার ওদের এই ছোট্ট দলটিকে এমন সাবলীলভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে – মনে হয় শুধু এই জন্যই ও তৈরি।
পিছনে এনা দাঁড়িয়ে ছিলো, সে এই বিষমরকম শুষ্ক খটমটে জায়গায় এসে মহাবিরক্ত, বিরক্তি চেপে রাখার কোনো চেষ্টা তার মধ্যে নেই বরং সুযোগ পেলেই বা না পেলেও সে তার বিরক্তি-ক্ষোভ সবাইকে জানান দিচ্ছে। সে হঠাৎ অ্যারনের দৃষ্টি আকর্ষণ করল, “ওটা কী, দেখো তো?”-বহুদুরে একটা আবছা গম্বুজ-সদৃশ কাঠামোর দিকে সে ইংগিত করে।
অ্যারন ভাল করে বোঝার আগেই লিও তথ্যটা ওদের জানিয়ে দেয়, “ওটা ছোট্ট একটা পাহাড়, পুরো পাথুরে, কিন্তু জীবন্ত।
”
তারমানে সে বলতে চাইল ওটা একটা আগ্নেওগিরির জ্বালামুখ। - অ্যারন মনে মনে বুঝে নেয়। লিও’র প্রায় বিরল ত্রুটিগুলোর মধ্যে একটা আবিষ্কার করে ও মাঝে মাঝেই তৃপ্তি পায়, সেটা হল লিও’র বোঝানোর অক্ষমতা। নিজে খুব ভাল বুঝলেও অন্যকে বোঝাতে গেলেই লিও গোলমাল পাকিয়ে ফেলে, যেটা এক কথায় বলে দেওয়া যায় সেটা বিশদ ব্যখ্যা করে ফেলে, নয়ত জটিল কিছু একশব্দে বলে দায় সেরে দেয়।
তারপরও লিও’র নেতৃত্বে কোনো সমস্যা নেই, অ্যারন ভেবে দেখল, তার কারন দলের বাকি সবাই’ই বুদ্ধিমান, যথেষ্ট পরিমাণেই।
এমনকি এসনাইন, যে মুলত শারীরিক শক্তির জন্যই পরিচিত, সেও আসলে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ওদের প্রায় সমপর্যায়ের।
গ্রহটার সূর্য ডুবে যাবার অনেক পরে, যখন এনা তার প্রাথমিক নিরীক্ষণ শেষ করল, সারি বেঁধে নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে করতে ওরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল, সবার পিছনে এসনাইন হঠাৎ অস্ফুট শব্দ করে থেমে যায়। তার সেই শব্দের ব্যাখ্যা শোনার জন্যে কেউ ঘুরে দাঁড়ায় না, কারন আচমকা সবাই স্থির হয়ে গেছে।
ওদের সদ্যপরিচিত গ্রহটার চাঁদের আলোয় ধাতব দেহগুলো চকচক করতে থাকে, কিছুটা দমকা বাতাস রোবোটগুলোর গা ঘেষে বয়ে যায়।
এসনাইন প্রথম নড়ে ওঠে, গাঠনিক দিক দিয়ে তার দৈহিক ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।
সে তার সামনে স্থির হয়ে থাকা দেহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে প্রথমে, তারপর চারপাশটা। সে কিছুই চিনতে পারে না, অবাক হয়ে সে তার স্মৃতি নাড়াচাড়া করে দেখে, পুরোটাই ফাঁকা।
একে একে লিও, অ্যারন আর এনাও, বলা যায়, জেগে ওঠে। রোবোটগুলো পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে, দেখা গেল তাদের সবারই স্মৃতিবলয় ফাঁকা।
প্রবৃত্তি, যেটা তাদের দৈহিক এবং কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলিক কাজের প্রোগ্রাম, সেটার নির্দেশে ওরা দ্রুত পরস্পরকে যাচাই করে, কিছু স্মৃতি এইসময় তাদের স্মৃতিবলয়ে জমা হয়ে গেল।
অ্যারন তার যোগাযোগ যন্ত্রের সাহায্যে প্রশ্ন করে, “তোমাদের কি মনে হয়, এটা কোথায়?”
লিও দ্রুত হিসেব করে তাদের পায়ের নিচে থাকা গ্রহটার একটা বর্ণনা দিয়ে দিল।
এনা ভয় পাওয়া গলায় বলে, “আমরা এখানে কেন, কিছু মনে নেই কেন, গ্রহটা এমন বিশ্রীরকম কর্কশ কেন, চারপাশ এমন ফাঁকা কেন...”
লিও এনাকে থামিয়ে দেয়, কিছু ইন্দ্রীয় খুব দ্রুত প্রসারিত ও সংকোচিত করে, তারপর অস্থিরতার সঙ্গে বলে, “সবাই জলদি আমার সাথে এস- এক্ষুনি!”
লিও ছুটতে শুরু করতে সবাই একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, পরক্ষণে দূরে একটা গম্বুজ আকৃতির কাঠামো থেকে ধোঁয়া আর অগ্নিউদগীরণ, সেই সাথে বিকট শব্দ শুরু হওয়ায় সবাই লিওর পিছু নেয়।
নিরাপদ দুরত্বে সরে এসে ওরা সবাই একসাথে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয়াচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। অ্যারন তার সবগুলো ইন্দ্রীয়ের সংকেত কপোট্রনের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে পরীক্ষা করে দেখে তারা আসলেই সঠিক তথ্য দিচ্ছে কিনা, নাকি সে ভারচুয়াল কোনো জগতে আছে। সব ঠিকই আছে দেখে সে আরও চিন্তিত হয়, “তবে? আমি এখানে কেন?”
এনা তার সংগীদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের করতে থাকে, তাদের চিন্তা ভাবনার ধরণ বোঝার চেষ্টা করে- এদের কাছে সে কতটুকু নিরাপদ? লিওকে তার বন্ধু বলে মনে হল, বিপদে সে তাকে সাহায্য করেছে, হয়ত সবসময়ই করবে।
এসনাইন একটা বিরাট পাথরখন্ডকে সতর্কভাবে নিরীক্ষণ করে, ওটা থেকে কী কী ধাতু পাওয়া যাবে, সেগুলো কতখানি কাজে লাগবে আর এইসব করতে কি পরিমান শক্তি ব্যয় হবে তার একটা হিসাব করে ফেলে।
ওদিকে লিও, গ্রহটায় আরও সম বা অসম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রজাতির অস্তিত্বের সম্ভাবনা হিসাব করে চলে, তাদের সাথে সাক্ষাতের কথা ভেবে খুশি হয়, প্রতিকুল পাথুরে গ্রহে সবার সম্ভাব্য ভোগান্তির চিন্তায় কাতর হয়।
অ্যারন তার কম্যুনিকেটরে সবার মনোযোগ আকর্ষন করে বলল, “আমাদের আসলে কিছু এখন কিছু করার নেই, আমি এখানেই থাকছি, নেহাত আবার কোনো বিপদ না দেখলে কিছু করতে চাই না। ”
“না, চল পুরো গ্রহটা ঘুরে দেখা দরকার, কে জানেকোথায় কি আছে, আমাদের মত হয়ত আরো কেউ থাকতে পারে, তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা উচিৎ। ”-লিও বলে।
অ্যারন একটুক্ষণ ভেবে বলল, “তার কোনো দরকার নেই, ভেবে দেখ, আমরা সবাই রোবোট, কেউ আমাদের এখানে রেখে গেছে, কেন কেউ জানি না-সুতরাং এখানে থেকে তার নির্দেশের অপেক্ষা করাই ভাল। ”
লিও একমত হতে পারে না, “তুমি কিভাবে জানলে কেউ আমাদের রেখে গেছে এখানে –ওই আগুনের মাঝে পড়ার জন্যে! কেউ তা করে থাকলেও আমাদের প্রতি তার দায় আছে বলে মনে হয় না। ”
এনা লিওর কথায় যুক্তি খুজেঁ পায়, লিওকে তার যথেষ্ট বুদ্ধিমান বলেই মনে হচ্ছে, এর উপর ভরসা রাখা যায়। সে অসহিষ্ণু গলায় বলল, “ঠিক, এ জায়গাটা একেবারে বাজে। আমাদের আশেপাশে খোজঁ করা উচিৎ।
”
অ্যারন আবার ভেবে বলে, “কিন্তু, তাহলে আমরা এখানে এলাম কোথা থেকে, কিভাবে, কেন?”
“এই পাথরগুলো কিভাবে এলো, কেন?”-লিও পালটা জানতে চায়। এইকথায় এসনাইন তার পাথরবিষয়ক সদ্য-সমাপ্ত গবেষণার একটা ফিরিস্তি দিয়ে দিল, সে জানালো যে ওই পাথর থেকে যে ধাতু পাওয়া যাবে তা থেকে তারা আরও মজবুত আর সক্ষম কিছু রোবোট বানিয়ে ফেলতে পারে, নিজেদের মত।
অ্যারন এসনাইনকে একটু রূঢ়ভাবে থামিয়ে দেয়, “ও সবের কোনো দরকার নেই। আমরা এখানে ওইজন্যে আসিনি নিশ্চই। ”
“তবে কি জন্যে এসেছ? তুমি বসে থাকো তাহলে চুপ করে।
”-এনা ঘৃণাভরে জবাব দেয়। “অকর্মার ধাড়ি কোথাকার। ”
অ্যারনের কপোট্রনের কোথাও একটা বিদ্যুৎ-তরংগ উৎপন্ন হয়। সে তীব্র শ্লেষের সাথে একটা অর্থহীন শব্দ উচ্চারন করে আক্রমনাত্বক ভঙ্গীতে এনার দিকে এগিয়ে গেলে, লিও দুওনের মাঝে এসে দাঁড়ায়।
এসনাইন বেশ কৌতুহলের সাথে ওদের বিতন্ডা উপভোগ করছিলো, লিও তাতে পানি ঢেলে দেওয়ায় সে আবার তার পাথর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, এনা সোৎসাহে তার সাথে এসে যোগ দিল।
লিও কিছুটা করুণাভরে অ্যারনের দিকে তাকায়, ওর জন্যে তার কিছুটা মায়াই হয়। অ্যারন অবশ্য হতাশ আর বিদ্রুপাত্বক চোখে বাকিদের দেখতে থাকে। কী বোকা এরা। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ এখানে তাদের অস্তিত্বের নিশ্চই অন্য কোনো অর্থ আছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্য?
“ওরা বুঝতে পারছে না,”-অ্যারন নিজের মনে বলে।
“সে যখন আসবে,” অজানা কারও কথা সে ভাবে, “তখন বোকাগুলো তার কোন কাজেই লাগবে না-স্রেফ ধ্বংস হয়ে যাবে।
“কিন্তু তাহলে, ওদের প্রোগ্রাম করায় ভুল ছিলো কোথাও?”-সে ভাবে, পরক্ষণে স্বগতক্তি করে, “আমি ধ্বংস হতে চাই না। ”
“বুদ্ধিবৃত্তির কী অপচয়!” লিও অ্যারনের জন্যে আফসোস করে এনার কাছে এসে।
“ও আমাদের মত করে ভাবতে পারছে না কেন?”-এনা বলে। “মনে হয় ওর বুদ্ধিমত্তা কম, প্রাচীন প্রজাতির কোনো রোবোট।
”
অ্যারন বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভাবতে থাকে, মাঝে মাঝে ঘৃণাভরে অন্যদের দিকে তাকায়, এনা সাথে সাথে সে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে থাকে।
ওদের থেকে বহুদুরে একজন কেউ দারুণ আগ্রহে রোবোটগুলোকে মনিটর করে চলে, যে নিজে তাদেরকে প্রোগ্রাম করেছে, যে জানে কখন কে কী করবে, তবু প্রতিবারই, খেলাটা শুরু করে হয়ত সে চরম উত্তেজনায় থাকে, তার সীমাহীন অলস সময়ে কিছুটা স্পন্দন জাগে হয়ত!
খেলাটা কিন্তু জমে উঠছে!
>>> সাধারণ ব্লগার থাকাকালীন গল্পটা একবার পোস্ট করা হয়েছিলো, কিছুটা পরি-বর্তন ও বর্ধনের পর নিরাপদ ব্লগার হিসেবে রিপোস্ট করা হল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।