সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
ঘটনা-১
তখন নবম কি দশম শ্রেনীতে পড়ি। টিফিনের সময় ৮/৯ জন স্কুলের দোতালার বারান্দায় বসে আড্ডা মারছি।
এমন সময় একজন হুজুর নিচ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। আমি জোরে চিৎকার করে বলে উঠলাম, দেখ, দেখ কাঠ মুল্লা যায়! পাশের জন বলে উঠলো, নির্ঘাত শালার টুপির তলে ৭০ টা শয়তান ! আর এক জন বলে উঠলো, না না ! টুপির চেয়ে বেশি শয়তান দাঁড়িতে ঝুলতেছে ! হুজুর আমাদের দিকে তাকালেন, কি করুন ! কি তিব্র সেই চাহনি !
ঘটনা-২
কলেজের প্রথম দিন প্রথম ক্লাস, তাই ভাব নিয়ে প্রথম বেন্চের কোনায় বসলাম। একটু পরে এসে দেখি, আমার খাতা বই পাশে সরিয়ে এক হুজুর আমার পাশে বসেছে। আমি উঠে গিয়ে পার্টির বড় ভাইদের কাছে নালিশ দিলাম যে, "এক হুজুর আমাকে সরিয়ে আমার জায়গায় নিজে বসেছে। " সাথে সাথে একজন বড় ভাই এসে হুজুরের খাতা বই সব ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললো, এর জন্য এই জায়গা আজীবন বরাদ্দ, আর তুই আজীবন এই বেন্চের ২ বেন্চ পিছনে বসবি।
আমার ভিতরের পশু আমিটি তখন বিজয়ের আনন্দে হেসে উঠেছিলো, আর হুজুরের চোখ টলটল করে উঠেছিলো কিনা তা আজ আর মনে নেই।
ঘটনা-৩
কলেজের দ্বিতীয় বছর, ৫/৬ টা গ্রুপ কলেজ বিল্ডিং এর দোতালায় শিড়ির পাশে কোনার একটা কক্ষে বসে তাস্ পিটাচ্ছে, আর আমরা ৪ জন বাহিরে বসে পাহারা দিচ্ছি। একটু পর একটা গ্রুপ উঠে আসবে আর আমরা খেলতে যাব। এভাবেই পর্যায় ক্রমে চলতো। এমন সময় দেখলাম, একটি বোরখা পরা মেয়ে ( শুধু চোখ দেখা যাচ্ছিলো ) শিড়ি দিয়ে উঠে আসছে।
আমাদের মধ্যে একজন বলল, দোস্ত একটা মজা দেখ। মেয়েটা শিড়ি দিয়ে উঠে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে হঠাৎ তার সামনে গিয়ে দাড়ালো এবং একটা বিকট চিৎকার দিয়ে লাফ দিয়ে সামনে থেকে সরে যাবার অভিনয় করে বলে উঠলো, নিন্জা, নিন্জা মাইরা ফালাইলোরেরেরেরে
আর আমরা হো হো হো করে হাসে উঠলাম। মেয়েটি শুধু একবার চোখ তুলে তাকালো আমাদের দিকে তারপর চোখ নামিয়ে মাথা উচু করে হেটে চলে গেল !
ঘটনা-৪
কুয়েটের রশিদ হলে থাকি। নাস্তিকতাবাদ তখন তুঙ্গে। তর্কের খাতিরে ধর্মের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করি, ঘন্টার পর ঘন্টার কেটে যার।
আহ্ কি সুখ, কি আনন্দ ! যা হওক, প্রতিসপ্তাহে একদিন তবলিগের ভাইরা রুমে রুমে গিয়ে দাওয়াত দিত। প্রথম প্রথম বিরক্ত হলও কিছু বলতাম না। কিছুদিন পর একটা বুদ্ধি বের করলাম। উনারা রুমে আসলেই একজন উঠে গিয়ে জোরে পর্নো মুভি চালিয়ে দিতাম, এতে উনারা আর কিছু না বলে উঠে চলে যেতেন।
কত সহস্রবার যে উনাদের ভন্ড বলে গালি দিয়েছি তা গুনে শেষ করা যাবেনা।
ঘটনা-৫
পাশ করে ঢাকায় একটা software Company তে programmer হিসাবে চাকুরি জীবন শুরু করলাম। কিছুদিন চাকুরি করার পর আব্বু বলল, তোমার চাকুরি করার দরকার নেই, তুমি Masters শেষ কর। দিলাম চাকুরি ছেড়ে। তারপর দেশের বাহিরে Masters এর জন্য চেষ্টা শুরু করে দিলাম। হাতে অফুরন্ত সময়।
কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে হটাৎ মাথায় চিন্তা আসলো যে, এত দিন তো শুধু না জেনেই সব ধর্মের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেছি এবার একটু জেনে উদ্ধার করি। যেই ভাবা সেই কাজ। কুর'আন শরীফ কিনে আনলাম, internet থেকে হাদিসের বই গুলো download করলাম। সাথে সাথে কিছু comparative religion, Science and religion -এর উপর কিছু বিখ্যাত বই জোগাড় করলাম। ৭/৮ মাস শুধু এই সবের উপর পড়াশুনা করলাম।
যতই পড়ছিলাম ততই অবাক হচ্ছিলাম। কি করেছি আমি সারা টি জীবন ? মনে হচ্ছিলো, সারা জীবন অন্ধকার টানেলের মধ্যে থেকে শেষ সময়ে এসে টানেলের মাথায় আলোর দেখা পেলাম !
তারপর হটাৎ একদিন যোহরের ওয়াক্ত থেকে নামাজ শুরু করলাম এখনো চালিয়ে যাচ্ছি, আল্হামদুলিল্লাহ। প্রথম নামাজ পড়ে উঠার পর দেখি দু'চোখ বেয়ে পানি ঝরছে ! কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না এই অস্রুধারা !
এ কান্না তো আনন্দের কান্না, অন্ধকার থেকে আলোতে আসার কান্না! স্বাধীনতা পাওয়ার সুখে কান্না !! পুনর্জনমের কান্না !!!
বিধাতা মোরে ক্ষমা করো । কিন্তু ক্ষমা কি পাব সেই নাম না জানা হুজুরের কাছ থেকে ? ক্ষমা কি পাব সেই হুজুর সহপাঠীর কাছ থেকে ? ক্ষমা কি পাব সেই নাম না জানা বোরকা ওয়ালীর কাছ থেকে ? ক্ষমা কি পাব সেই নাম ভুলে যাওয়া তবলিগের ভাইদের কাছ থেকে ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।