থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।
[ পূর্বে প্রকাশিতের পরে ]
পর্ব - ০১ , পর্ব – ০২ , পর্ব – ০৩ , পর্ব - ০৪
পর্ব – ০৫ [ গণতন্ত্রের কচকচানি ]
গণতন্ত্র নিয়ে আমাদের যেমন আক্ষেপ আছে, তেমনি আমাদের গৌরবও আছে। আমাদের ধারনা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেকগুলো চেতনার একটা চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র। আসলেই কি তাই? আমাদের অনেকের কাছেই গণতন্ত্রের কোন স্পষ্ট ছবি নাই। তাই আসলে গণতন্ত্র যে কি, তা নিয়ে বিস্তর মাথা ফাটাফাটি হয়ে গেছে এই দেশে।
ক্ষমতা কি একক ভাবে প্রয়োগ হলে উত্তম ভাবে চর্চা করা যায়, নাকি যৌথ ভাবে প্রয়োগ করে ভাল ফলাফল মিলে, তাই নিয়েই কেউ স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নাই। কেননা গণতন্ত্র শুধু মাত্র এককের ক্ষমতায় যাওয়াই নয়, এতে অনেকের সংশ্লেষ থাকা লাগে। আমাদের দেশে গণতন্ত্র মানেই হল এক নেত্রী-এক পরিবার-এক দল। এই ব্যবস্থাটা ১৯৭৫ সালে প্রবর্তিত ব্যবস্থারই অনুরূপ, কিন্তু আমাদের কেউই তা মুখে তা স্বীকার করতে চাই না!
গণতন্ত্র তৈরী হয় জনগণের ভেতর থেকে। আমাদের দেশের এক্কেবারে ছোট যে সব গ্রাম আছে, তাতে একজন করে মোড়ল বা প্রধান আছেন।
তাদের প্রতি স্থানীয়দের যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে, তা কিন্তু আমাদের সমাজের আদিম গণতন্ত্রেরই নমুনা।
আসলে আমাদের গণতন্ত্রে যারা জনগণের প্রতিনিধি হতে চান, তাদের এই ভাবেই শ্রদ্ধা আর আলোবাসা নিয়ে জনগণের মাঝ থেকে উঠে আসতে হবে। কোন এলাকায় কোন দলের থেকে যিনিই নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হতে চান না কেন, তাঁকে তাঁর দলের ঐ এলাকায় সবার মতামতের ভিত্তিতেই আসা দরকার। কেউ বেশী টাকা দলের তহবিলে ঢেলে দিল আর অমনি তাকে ধরে নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়ে দেওয়াটা একটা মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের আধুনিক রূপ মাত্র। এর ফলে আমাদের যারা বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধি হচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু সেই সব সামন্তপ্রভুদের মতই আচরন করে থাকেন।
তাদের ধারনা হয় যে এই মল্লুক আমার। কিন্তু তারা হচ্ছেন, আমাদের নির্বাচনী প্রথা মতে, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি। তারা প্রতিনিধিত্ব করেন আমার, আপনার, আমদের সকলের। কিন্তু মানসিক ভাবে সামন্ত হবার কারনে কোন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উনাদের ভেতরে জাগ্রত হয় না।
আর তাই গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেনরা খালি অকাতরে প্রাণই দিয়ে যান, কিন্তু সত্যিকারের গণতন্ত্র আমাদের দেশে আসে না।
গণতন্ত্রে একটি বড় ব্যাপার হলো নগরিক ভাবনা। আমাদের এখন যে দশা তাতে মনে হয়, যারা তথাকথিত সুশীল সমাজ নামে এক অচ্ছ্যুৎ গোষ্ঠী বানিয়েছে, যাদের কথা বার্তায় দেশোদ্ধারের বন্যা বয়ে যায়, যারা এক সময়ে উঁচু পদে চাকুরী করে এখন অবসরে আছেন এবং যারা বিদেশি এবং দেশি বিভিন্ন ক্ষমতাশালী শক্তির সাথে সম্যকভাবে মিশে যেতে পেরেছেন, তারাই কেবল নাগরিক।
এই সব তথা কথিত সুশীল সমাজ ও এদের চেলাচামুন্ডারা এবং ক্ষমতাসীনরা – এই হাতে গোনা কিছু লোকেরা মিলে আমাদের বাদবাকি সত্যিকারের নাগরিকদের প্রজা হিসাবে গণ্য করে থাকেন।
মনে রাখতে হবে, আমরা যদি আমাদের দেশকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে ভাবতে ভালোবাসি, তাহলে আমাদের দেশের সকলেই নাগরিক, কেউই কারো প্রজা নয়। প্রজা হিসাবে ভাববার দিন শেষ হয়ে গেছে ব্রিটিশদের সময়েই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।