আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বরের অস্তিত্ব : আমার চিন্তাভাবনা (পর্ব - ১)

শালিক পাখি

ইদানিং ব্লগে একটা ব্যাপার খুব আলোচিত, সমালোচিত হচ্ছে| আর তা হলো ঈশ্বর আছে কি নেই তা নিয়ে আস্তিক এবং নাস্তিকদের মধ্যে প্রবল তর্কযুদ্ধ, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে গালি গালাজ| এসব দেখে আমার মনে হলো আমার নিজের ধারণাটাও সবাইকে জানাতে পারি| প্রথমেই সবার উদ্দেশ্যে বলে রাখি, আমি ব্লগিং এ একেবারেই নতুন| নিয়ম কানুন খুব একটা জানিনা| আমার এই পোস্ট প্রথম পাতায় যাবে কিনা, বা যাবার জন্য কী কী শর্তাবলী প্রযোজ্য, সে সম্পর্কেও তেমন একটা ধারণা নেই| তবুও লিখছি, নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়, শুধু নিজের মতামত বা চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করার জন্য| যদি এই লেখা কারো দৃষ্টিতে পড়ে এবং কেউ এটাকে বিশ্লেষণ করতে চান বা আমার সাথে দ্বিমত বা সহমত পোষণ করতে চান, তাহলে তাকে স্বাগত জনাব| আর এক্ষেত্রে অবশ্যই ভদ্র ব্যবহার প্রত্যাশা করব| আর হ্যা, যদি কেউ এটা থেকে কোনো রেফারেন্স দিতে চান (যদিও রেফারেন্সের যোগ্য কি না জানিনা), তবে আমার অনুমতি নিয়ে নিলে খুশি হব| এবার আসি মূল কথায়| আমার ধর্ম বিশ্বাস আপাতত কাউকে জানাতে চাচ্ছিনা| তবে সেটা এই পোস্টের শেষে বলে দিয়েছি| জানাতে চাচ্ছিনা, কারণ আমি চাই না কেউ আমার এই লেখাটি একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়ুক| এখন যদি আমি বলে দেই আমি আস্তিক, বা আমি নাস্তিক, তাহলে লেখাটা অনেক খানি প্রভাবিত হয়ে যাবে, পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে| আস্তিক পাঠকরা আমার লেখাটি তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পড়বেন, আর নাস্তিক পাঠকরা তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে| ধৈর্য্য ধরে যদি পুরোটা পরেন, তবে লেখকের বিশ্বাস জেনে যাবেন| আর যারা একটু অধৈর্য্য, তাদের জন্য তো স্ক্রল বাটনটা আছেই| আমার এই লেখাটি শুধুই বিশ্বাস নিয়ে| শরীয়ত, আচার ব্যবহার, বা কোনো নিয়ম কানুন নিয়ে নয়| কাজেই যারা আশা করে আছেন যে আমি শরীয়তের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলব, তারা হতাশ হবেন| কাজেই তাদের মূল্যবান সময় অন্য কাজে ব্যয় করার পরামর্শ রেখে নিচ্ছি| এই পোস্টে আসলে আমি কিছু শব্দ নিয়ে আলোচনা করব| এগুলো হচ্ছে বিশ্বাস, মানুষ এবং ঈশ্বর| ১. বিশ্বাস: শুরুতেই আশা যাক বিশ্বাস কাকে বলে| তার আগে আমাদের জানতে হবে ‘প্রমাণ’ কী? জানতে হবে কারণ প্রমাণ আর বিশ্বাস শব্দদুটো ওতপ্রোত ভাবে জড়িত| নাস্তিকদের যখন বিশ্বাস করতে বলা হয়, তখন তারা প্রমাণ চায়, আর আস্তিকদের যখন কেন বিশ্বাস কর জানতে চাওয়া হয়, তখন তারা প্রমাণ দেবার জন্য মরিয়া হয়ে যায়| ‘প্রমাণ’ হচ্ছে সেই জিনিস, যা কোনো মতবাদকে বা ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে| যেমন আপনি বললেন, একটা থালায় কিছু পানি নিয়ে রোদে রেখে দিলে একটা সময় পরে তা জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে| আপনার ক্লাস ৫ পড়ুয়া ছোট ভাই তা ‘বিশ্বাস’ করলো না| তাই সে নিজে একটা পাত্রে কিছু পানি রোদে রেখে দিল এবং দেখল সেটা কিছুক্ষণ পরে আর নেই| সে তখন আপনাকে এসে জিজ্ঞেস করলো, তখন আপনি তাকে পানির স্বতবাষ্পীভবন বুঝিয়ে বললেন, তারপর সে বুঝলো এবং আপনার কথা ‘বিশ্বাস’ করলো| একটু ভুল হলো, বলা উচিত সে আপনার কথায় সম্মতি জ্ঞাপন করলো| আরেকটা উদাহরণ দেই| আপনি কী ‘বিশ্বাস করেন’ যে ২ + ২ = ৪? প্রশ্নটা একটু হাস্যকর হয়ে গেল না? উচিত ছিল বলা, “আপনি কী ‘জানেন’, ২ + ২ = ৪?” কিংবা যদি বলি আপনি কী ‘বিশ্বাস করেন’, সূর্য পূর্ব দিকে উঠে? এটাও একটা হাস্যকর প্রশ্ন| বলা উচিত ছিল, “আপনি কী ‘জানেন’, সূর্য পূর্ব দিকে উঠে?” এখানেই হচ্ছে ‘জানা’ আর ‘বিশ্বাস’ করার মধ্যে পার্থক্য| যে জিনিসটা সবার চোখের সামনে ঘটে, তা আমরা জানি, আর যে জিনিসটা আমাদের চোখের সামনে নাই, সেটাই আমরা বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করি| আপনি কি বিশ্বাস করেন ২ + ২ = ৪? না| আপনি জানেন ২ + ২ = ৪| আপনি কি বিশ্বাস করেন, সূর্য পূর্ব দিকে উঠে? না| আপনি জানেন সূর্য পূর্ব দিকে উঠে| কারণ এটা আপনার কাছে ‘প্রমাণিত’| কাজেই এটা আপনি জানেন| আশা করি ‘জানা’ আর ‘বিশ্বাস’ করার মধ্যে পার্থক্যটা পরিষ্কার হয়েছে| যেটার প্রমাণ আপনার কাছে নেই, সেটাকে মেনে নেয়াকেই বিশ্বাস বলে| তার মানে কি আপনি আগডুম বাগডুম যা খুশি তাই মেনে নিবেন? মোটেই না| কারণ আপনার নিজস্ব কিছু বিচার বিবেচনা আছে আর আপনি সেই বিচার বিবেচনার উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিবেন, কোনটা বিশ্বাসের যোগ্য আর কোনটা তা না| আরেকটু বিজ্ঞানভিত্তিক উদাহরণ দেই| নিউটনের গতি বিষয়ক তিনটা সূত্রের মূলে কিন্তু একটা বিশ্বাস বা ধারণা বা স্বতসিদ্ধ আছে| আর তা হলো বস্তুর ভর স্থির বা ধ্রুবক| ১৬০০ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত মানুষ কিন্তু এটা বিশ্বাস করে এসেছে, কারণ মানুষ তখন পর্যন্ত সেটাকে ভুল প্রমাণ করতে পারেনি| তার পরের ঘটনা অনেকেরই জানা| আইনস্টাইন নামের এক ভুবন বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রমাণ করলেন যে বস্তুর ভরও পরিবর্তনশীল| তবে হ্যা, এটা প্রমাণের জন্যও তিনি কিন্তু একটা বিশ্বাসের বা স্বতসিদ্ধের আশ্রয় নিলেন| যারা আপেক্ষিকতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন, তারা জানেন যে এই স্বতসিদ্ধটা হচ্ছে “আলোর গতি ধ্রুবক”| এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায় যেতে চাচ্ছিনা, কারণ সেটা আমার উদ্দেশ্য না| আবার এটা নিয়ে অনেক সূক্ষ গবেষনায় ভিন্ন কিছু ব্যাপারও লক্ষ্য করা গেছে| শুধু এইটুকুই বলবো, এখনো কিন্তু পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি যে আলোর বেগ ধ্রুবক নাকি পরিবর্তনশীল| বিজ্ঞান যা পেরেছে, তা হলো কিছু বাস্তব ঘটনার ব্যাখ্যা করতে পেরেছে এই স্বতসিদ্ধের মাধ্যমে| অর্থাৎ কিছু নির্দেশনা পাওয়া গেছে যে আলোর বেগ ধ্রুবক, কারণ আপনি যদি এটা মেনে না নেন, তাহলে বাস্তব অনেক ঘটনার ব্যাখ্যাই আপনি দিতে পারবেন না| কাজেই আপনাকে আপাতত স্বীকার করে নিতেই হচ্ছে যে আলোর বেগ ধ্রুবক| হয়তো আরো কয়েকশো বছর পরে নতুন কোনো বিজ্ঞানী নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন এই ব্যাপারে, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমাদের এই স্বতসিদ্ধ মেনে নিতে হবে| অতএব, বিশ্বাসের উপর আমার উপসংহার: ‘বিশ্বাস’ হলো সেই জিনিস, যা আপনাকে কোনো মতবাদ মেনে নিতে সাহায্য করে, যেটা আপনি জানেন না, কিন্তু এসম্পর্কে কিছু ধারণা বা Indication হয়তো আপনি পেতে পারেন| এটা আমার ব্যাখ্যা| আপনি আমার ব্যাখ্যা মেনে নিতে নাও পারেন|

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।