অশ্লীলতার সংজ্ঞা কি? সহজ একটি সংজ্ঞা এমন হতে পারে যে, যে বিষয়টি পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বতস্ফূর্তভাবে দেখা যায় না কিংবা শোনা যায় না, কিংবা যে বিষয়ে কথা বলা যায় না কিংবা উপভোগ করা যায় না তাই অশ্লীল। আর বিস্তৃতভাবে বলতে হয়, “শ্লীলতাহানির ইচ্ছা জাগানিয়া যে কোন কিছুই অশ্লীল”। একটি শোভন ছবিকে যদি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যা কাউকে অশ্লীল চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে তবে সে শোভন ছবিটিও অশ্লীল। না, শুধু ছবি নয়, বরং নির্দোষ যে কোন কিছুকে যদি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়, যা দেখে কিংবা শুনে কিংবা অনুভবের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা চেতনায় শ্লীলতাহানির ইচ্ছা জাগে তবে তাই অশ্লীল। একটি পুরুষ উলংগ হয়ে হাটলে তা অশ্লীল, আবার একটি শিশু উলংগ হয়ে ঘুরে বেড়ালেও তাকে কেউ অশ্লীল বলে না কারণ প্রথমটি দর্শনে প্রথমেই খারাপ চিন্তা মাথায় আসে, দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে স্নেহে হদয় আদ্র হয়, অশ্লীলতার কোন স্থান সেখানে থাকে না।
কিন্তু শিশুটির ছবি যদি এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয় যে তা দেখে বয়স্ক কারো অঙ্গ বল ভ্রম হয় তবে সেক্ষেত্রেও অশ্লীলতার অভিযোগ আনা যায়। ইদানিং টিভিতে একটি শিশুর পাঁছা নিয়ে এমনই একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায়, যা প্রথম দর্শনে শিশুর বলে চিনতে ভ্রম হয়, এক কথায় যা অশ্লীল। কিছু লোক সমাজে আছে যারা বিকৃত মনমানষিকতার, তারা সব কিছুর মাঝেই যৌন উপাদান খুঁজে পায়। এদের হাত থেকে শিশুদের বাঁচাতে শিশুদেরও নিরাপদে রাখতে হয়, পোশাকে লজ্জাস্থানগুলো ঢেকে রাখতে হয়।
কোনটা শ্লীল আর কোনটা অশ্লীল তা সবাই সমানভাবেই বোঝে, তবে কেউ কেউ অশ্লীলতার মাত্রা নিয়ে বিতর্ক করতে পারেন।
আমার কোন একটি লেখায় আফ্রিকার দূর্ভিক্ষপীড়িত একটি মা ও শিশুর ছবি দিয়েছিলাম, যাতে মা শিশুটিকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন। দুধ পান করার বদলে বলা যায় শিশুটি ঢিলে একটুকরো চামড়া চুষছিল, যা আমার কাছে মোটেই অশ্লীল মনে হয় নি, অমন দৃশ্যে কারো যৌনস্পৃহা জাগার কথা নয়। কিন্তু পরে আমার ভুল ভাঙ্গে, কারণ এমন জীর্ণ শীর্ণ শরীরেই সে ধারণ করেছে কোন এক পুরুষের বীর্য, হয়েছেন সন্তানের মা। তাহলে ছবিটি আপাত অশ্লীল মনে না হলেও কারো কারো কাছে এটি যৌন উদ্দীপকতো বটেই। তাই সহজ ভাবে এটা মেনে নেয়াই ভালো যে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ যা বিপরীত লিংগকে কিংবা কখনো কখনো সমলিংগের মানুষদের মাঝে যৌনস্পৃহার জন্ম দেয় সেসব অংগ ঢেকে রাখা, বিশেষ করে এমন ভাবে ঢেকে রাখা যে তার অস্তিত্ব চট করে চোখে না পড়ে তার ব্যবস্থা করাই শালীনতা।
আর শালীনতাই যৌন অপরাধ রোধের একমাত্র কার্যকর উপায়।
ইদানিং বিজ্ঞাপনে অশ্লীলতার যথেচ্ছ ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বিষয়টি এমন যে অশ্লীলতা ছাড়া বিজ্ঞাপনই আজ আর কল্পনা করা যায় না। নারীর শরীরের বিশেষ অঙ্গের উপস্থাপন, নারী পুরুষের কামোদ্দীপ্ত সহাবস্থান, অশ্লীল শব্দচয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যৌনতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। একটা সময় ছিল অশ্লীলতাকে শ্লীলভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হতো।
কিন্তু ইদানিং শালীন বিষয়গুলোকেও অশ্লীলভাবে প্রচার করা হচ্ছে। যে বিষয়গুলো যৌন হিসেবে আগে মিডিয়ায় প্রকাশ হতো না ইদানিং তা ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। কনডম শব্দটি আগে টেলিভিশনে শোনা যেত না কিন্তু ইদানিং কনডমের বিজ্ঞাপন এমনভাবে দেয়া হয় যে শিশুদেরও বুঝতে অসুবিধা হয় না ওগুলোর কি কাজ, বরং বলা যায় উঠতি বয়েসী ছেলেরা বিজ্ঞাপনের যৌন উত্তেজক দৃশ্য দেখে কনডম নিয়ে ঝাপিয় পড়তে ইচ্ছে হয়। যে কোন বিজ্ঞাপনে নারীদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি আন্ডারওয়ার কিংবা গেঞ্জির বিজ্ঞাপনে নারীদেরকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয় যে মনে হয় ঐ নির্দিষ্ট ব্রান্ডের গেঞ্জি কিংবা গাঙ্গিয়া ব্যবহার করলেই নারীরা পাগল হয়ে গায়ে ঝাপিয়ে পড়বে।
বিজ্ঞাপনে যৌনতার ব্যবহার অনেক পুরণো। বিজ্ঞাপনে যৌনতার ব্যবহারে পণ্যের বিক্রি যে বাড়ে তাতে সন্দেহ নেই, কারণ সকল মানুষের মাঝেই যৌনস্পৃহা রয়েছে। বিশেষ করে উঠতি বয়েসি তরুন তরুনীদের মাঝে বিপরীত লিংগের প্রতি দূর্দমনীয় আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। আর এ যৌনস্পৃহার দাবানলে ঘি ঢেলে দেয়ার জন্য বিজ্ঞাপনে যথেচ্ছ যৌনতার ব্যবহার ইদানিং দেখা যায়। পুরুষদের ব্যবহারের জন্য তৈরী পারফিউমের বিজ্ঞাপনে যৌনতাকে এমন ভাবে তুলে আনা হয় যে মনে হয় ওগুলো পারফিউম নয় বরং নারী বশীকরণ ট্যাবলেট।
এক্স নামের পারফিউমের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় এটি ব্যবহার করে যত নারীর সামনে দিয়ে যাওয়া হয় সকল নারীই কামোন্মত্ত হয়ে যায় এমনকি লিফ্টের মাঝে মায়ের বয়েসী এক নারীর হাতে এক্স ব্যবহারকারীকে ধর্ষিত হতেও দেখা যায়। মজার ব্যাপার এসকল পণ্যের নামের সাথেও যৌন শব্দকে মিশিয়ে দেয়া হয়, এক্স শব্দটি সেক্স শব্দটারই কাছাকাছি শ্রুত একটি শব্দ।
যে পণ্যটি মানুষকে নিয়মিত ব্যবহার করতে হয়, না করলেই চলেই না, এমন পণ্যের বিজ্ঞাপনে যৌনতার ব্যবহার প্রয়োজন হয় না। যেমন চালের বিজ্ঞাপন সচরাচর দেখা যায় না, যদিও ইদানিং দামী কিছু চালের বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে যা সাধারণ মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। এখানে মানুষ ঠকানো খুব সহজ নয়, সবাই এসকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের গুরুত্ব বোঝে এবং তাই যাচাই বাছাই করে কিনতে পারে।
কিন্তু যে গুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় সেসব পণ্য গছিয়ে দিতেই যৌনতাকে বেশি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে অচল পণ্যগুলোই সবচেয়ে বেশী যৌনতাকে ব্যবহার করে। কারণ যৌনতাই হচ্ছে সবচেয়ে সস্তা উপায় যে কোন পণ্যের কাটতি বাড়ানোর। এজন্য দেখি কনকা টেলিভিশনে কিংবা মার্শেল ফ্রিজে যৌনআবেদনের যথেচ্ছ ব্যবহার। কনকা টিভির বিজ্ঞাপনে প্রভার আটোসাটো পোশাকে অশ্লীল অংগভঙ্গিতে দর্শকদের আহ্বান সহজ ভাষায় যৌনউদ্দীপনা সৃষ্টিরই অপকৌশল।
মার্শেল ফ্রিজেরও একই কথা, ফ্রিজের গুনাগুন বাদ দিয়ে সমুদ্রতীরে বারবার শরীরটাকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করে গ্রাহকদেরকে অচল ফ্রিজ গছিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। দর্শক মূলত মার্শেল ফ্রিজের নামে অশ্লীল মডেলটাকেই মনে মনে কিনে আনবে ঘরে। এভাবে প্রতিনিয়ত গ্রাহকদেরকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, প্রতারিত করা হচ্ছে, আর সুকৌশলে সমাজে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অবাধ যৌনাচারের ব্যধি যা প্রকারান্তরে ইভটিজিংকে মহামারী আকারে ছড়িয়ে দিতে ইন্ধন যোগাচ্ছে।
ইভটিজিংএর অত্যাচারে একেরপর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে দেশে, গত আগস্ট মাসেই ইভটিজিং-এর শিকার হয়েছে ২৮ নারী , ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৩ জন নারী ও ২১ শিশু, পরকীয়ার জন্য নিহত হয়েছে ৩০ জন নারী। ।
ইভ টিজিং প্রতিরোধে মিটিং মিছিল, সেমিনার সিম্পোজিয়াম, মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন, মোবাইল এসএমএস কোন কিছুই ইভটিজিংএর বুণোষাড়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না, বরং দিন দিন ইভটিজিং মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ যে কারণে ইভটিজিং ছড়িয়ে পড়ছে তাকে মোটেই মোটেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। ইভ টিজিং-এর জন্য প্রথমত অশ্লীল কামোদ্দীপক পোশাকে নারীদের অবাধ বিচরণই দায়ী। পাশাপাশি মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন যুব সমাজকে যভাবে কামোদ্দীপক সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইভ টিজিংএ বাধ্য করছে তাও আমলে আনা হচ্ছে না। ইভ টিজিংএর জন্য শুধু যুব সমাজকেই দায়ী করা হচ্ছে।
হ্যা, যুব সমাজই প্রকৃতপক্ষে ইভটিজিং করছে, কিন্তু যে অনিবার্য কারণগুলো তাদের ইভটিজিং করতে প্রতিনিয়ত উস্কানী দিচ্ছে তা মোটেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। তবুও এ কথা কিছুতেই বলা বন্ধ করবো না যে ইভটিজিংএর জন্য নারীরাই দায়ী, নারীদের কামোদ্দীপক অশালীন পোশাকই দায়ী। তাই ইভ টিজিং যদি সত্যিকার অর্থেই বন্ধ করতে হয় তবে অবশ্যই শুধু পুরুষের উপর দোষ না চাপিয়ে নারিদেরকে শালীন পোশাকে চলাফেরা করতে হবে। সরকার যদিও স্কুল কলেজে বোরখা পড়তে নিরুৎসাহিত করছে তবুও নারীদেরকে নিজেদের সম্ভ্রব বাচাতে মিথ্যে গোয়ার্তুমি না করে শালীনতার দিকেই ফিরে আসতে হবে। ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশেও স্কুল ড্রেস পড়ে শপিং মল, সিনেমা হল গুলোতে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে।
অশ্লীলতা বাণিজ্য বাড়ায় মাত্র, কিন্তু কেড়ে নেয় সামাজিক স্থিতিশীলতা। নারীদের উলংগ করে একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে হয়তো শক্তিশালী হতে পারে কিন্তু পারিবারিক, সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা তাতে কিছুতেই টিকে থাকতে পারে না। তাই ইভ টিজিং বন্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, অশ্লীলতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিতে হবে। আর সরকারকে স্কুল কলেজের মেয়েদের অশ্লীল পোষাক পড়তে উদ্বুদ্ধ করণ বন্ধ করতে হবে। (সংকলীত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।