আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া স্যাটেলাইট টিভি সংস্কৃতি এবং তার কারণ

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d

চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে, কিছু না বুঝেই চিলের পিছনে দৌড়ানোর এই স্বভাবটা আমাদের মজ্জাগত। ভারত আমাদের সংস্কৃতি দখল করে নিলো তাই ভারত তথা বহিঃবিশ্বের সংস্কৃতি বর্জন করো। কত গোলটেবিল, কত গলাবাজি, কত টেবিল চাপড়ানো আরো কত কি!! এই সমস্যার সমাধান কি এবং তার সঠিক প্রয়োগ কোথায় করলে আমরা আমাদের সংস্কৃতিতে ফিরে আসবো সেটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। বুলি কাপচানো আমাদের বুদ্ধিজীবিদের তথা আমজনতার একটা স্বভাব।

আমার বাড়ীর আঙ্গিনার রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব আমারই। ওখানে কাক পাখী বা ইতর শ্রেণীর প্রাণী মলমূত্র ত্যাগ করলে সেটা তো ঐ বিশেষ প্রাণীর কোন দোষ নয়। ঠিক সেই রকমই আমাদের সংস্কৃতির অবস্থাও তাই। আমাদের সংস্কৃতিতে মরচে পরে গেছে এবং সেটা ঘষেমেজে ঠিক করার সময় নেই আর তাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি পার্শ্ববর্তীদেশের সংস্কৃতিতে। তাই বলে দোষটা ওদের নয় বরং আমাদেরই।

আর এটা একটা সুক্ষ্ম চাল, একশ্রেণীর লোকই আছেন যারা চান আমাদের সংস্কৃতি গোল্লায় যাক। দুঃখের সাথে বলতে হয় তারা কিন্তু আমাদের দেশেরই লোক। ভারতের কোথাও বাংলাদেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখা যায় কিনা আমার জানা নেই। বোধ হয় নেই। আর থাকলেও সেটা তাদের তুলনায় পর্বতের মুসিক প্রসব সমতুল্য।

কিন্তু আমাদের টিভি খুললেই মোট যতগুলো চ্যানেল দেখা যায় তার মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ ভারতীয় চ্যানেল। আমরা দেখছি বা দেখতে বাধ্য হচ্ছি। আমার মতে আমাদের স্যাটেলাইট টিভি সংস্কৃতি কেন ধ্বংশের পথে যাচ্ছে তার কয়েকটি কারণঃ ১) আমাদের স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলো একেকটি একেক রাজনৈতিক পরিচিতি বহন করে। এবং এই কারণেই তাদের অনুষ্ঠান ও সংবাদের বিচিত্রতা দেখা যায়। যেটা দর্শক সমাজের ক্ষেত্রে চ্যানেল বাছায়ে একটা বড় বিভাজন ঘটায়।

২) মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার। সবচেয়ে বিরক্তিকর। "এক হাত বাঙ্গির তেরো হাত বিচি। " অনেক সময় বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়, অনুষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞাপন নাকি বিজ্ঞাপনের জন্য অনুষ্ঠান। আমাদের চ্যানেলগুলোতে শুধু খবর-ই ঘড়ি ধরে প্রচার হয়।

অথচ ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে ঘড়ির কাঁটার সাথে সব অনুষ্ঠান প্রচার হয়ে থাকে। তাই আমাদের চ্যানেলগুলো দর্শক হারানোর এটা একটা বড় কারণ। ৩) তথাকথিত পরিচালক, নাট্যনির্মাতা ও মাটি ফুঁড়ে জন্ম নেয়া নাট্য অভিনেতা/নেত্রীর মানহীন অভিনয় শৈলী আমাদের চ্যানেলগুলো ধ্বসের আরেকটি কারণ। আজকালকার নাটকের কোন স্ক্রিপ্ট থাকে না। কোন ভাষা নেই।

তারা এক অদ্ভুত ভাষায় (!) কথা বলে। ওটা কোন আঞ্চলিক ভাষাও নয়। ৪) আশি, নব্বই দশকের আমাদের টিভি নাটকের একটা শক্তিশালী ভিত ছিল। এইতো ক'দিন আগেও ভারত তাদের টিভির নাটক (সিনেমা বাদে) নির্মানে অনেক পিছিয়ে ছিল আমাদের নাটকের মানের দিক থেকে। ঢাকায় থাকি, এই সব দিন রাত্রি, মাটির ঘর, সংশপ্তক, রূপনগর, কোন কাননের ফুল, কোথাও কেউ নেই এসব নাটক এখন মানুষের চোখে ভাসে।

আমি এমনও শুনেছি বিটিভির টেরিষ্টেরিয়াল সুবিধা প্রচারের জন্য ভারতীয় সীমান্তবাসী আমাদের নাটকগুলো দেখতো। ৫) আশি, নব্বই দশকের যেকোন একজন টিভি নাটকের অভিনেতা/নেত্রীর সাথে এখনকার অভিনেতা/নেত্রীর তুলনা করলেই আমাদের বর্তমান অনুষ্ঠান কেন মানহীন হচ্ছে তা বোঝা যাবে। ৬) ভারতীয় চ্যানেলগুলোর মধ্যে কোন কোন চ্যানেল আছে খুবই ভালো আর শিক্ষনীয়। এবং তাদের প্রতিটি চ্যানেল ভিন্ন ভিন্ন মেজাজ বহন করে। যেমন কোনটি বিনোদনের জন্য, কোনটি সংবাদ ভিত্তিক, কোনটি বন ও পরিবেশের উপরে ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু আমাদের প্রায় সবগুলো চ্যানেলই হলো পাঁচমিশেলী তরকারী। ব্যাপারটা অনেকটা, "পানির লগে গুড় আর অল্প নুন মিশাইয়া দিলাম ঘুটা"। ৭) আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বাদ দিয়ে আমরা যাই অন্যের সংস্কৃতিতে। আমাদের গ্রাম, শহর, মানুষ, সমাজ, প্রেম-ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ এগুলো নিয়ে অনেক বক্তব্য আছে অর্থাৎ এগুলোকে নিয়েই বিনোদনের অনুষ্ঠান বানানো যায়। সব মিলিয়েই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি।

কোন এক ঈদে আমি লক্ষ্য করলাম প্রায় আমাদের সবকটি টিভি চ্যানেলের নাটকগুলোর মূল থিম হলো পরকীয়া। প্রসংঙ্গতঃ বলতে হয় ভারতীয় দুই একটি চ্যানেলের অনুকরণে এটা করা হয়েছে। যদিও পরকীয় আমাদের সমাজেরই একটা ইভেন্ট কিন্তু কথা হলো অসুস্থ ইভেন্ট দিয়ে বিনোদন কেন? এমনই আরো অনেক কারণ আছে যেগুলো আমাদের টিভি সংস্কৃতিকে ধ্বংশ করে দিচ্ছে। আমাদের অদক্ষতা এবং নিজ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ার জন্যই আমাদের দেশে ভারতীয় চ্যানেলের স্থান করে নেয়ার অন্যতম কারণ। আর তাই অন্যকে আগে দোষারোপ নয় বরং আত্মশুদ্ধিই বেশী প্রয়োজন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.