আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি ক্ষয়ে যাওয়া ভালবাসার গল্প- সত্য ঘটনা অবলম্বনে (পর্ব-১)

ভোরের তারা হয়ে একাকি পথ খুজি
শেষ রাতের নিস্তব্ধতার সাথে সুর মিলিয়ে ধীরে ধীরে চারিদিকে ফযরের আযান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে । ঘোর লাগা আবেশিত তন্দ্রাটুকু আদিলের ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকে। পর্দার ফাক দিয়ে তার চোখ চলে যায় জানালার বাইরে। আবছা অন্ধকারের মধ্যে দুই একটা পাখির কিচির মিচির ধ্বনি ভোরের জানান দিচ্ছে। বৃদ্ধের মত জবুথবু গাছগুলো দুই একটা করে পাতা নেড়ে নেড়ে যেন নিজেদের আড়মোড়া ভাঙ্গাচ্ছে।

আদিল শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে। নিজেকে তিলে তিলে শেষ করার চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেনি সে। তারই ধারাবাহিকতায় অন্যমনস্ক ভাবে মোটরবাইক চালাতে যেয়ে গুরুতর এ্যাকসিডেন্ট করেছে। বা পায়ের হাড়টা ভেঙ্গে গেছে, বুকের বাম দিকে পাজরের নীচটায় পচন ধরেছে, উঠে গেছে বুড়ো আঙ্গুল থেকে অনেক খানি মাংস। ফলশ্রুতি স্বরপ আজ হাসপাতালে শুয়ে থাকা, একটা মেজর অপারেশন করাতে হয়েছে পায়ে।

হাড়ের উপর চামড়া লেপ্টে থাকা আদিলকে দেখলে কেউ বলবে না সে বত্রিশ বছরের টগবগে যুবক। শুধু চেহারায় আর শারিরিক অবয়বে যৌবনের পোড় খাওয়া ছাপ টুকু মনে করিয়ে দেয় সে যুবা পুরুষ। আদিল পিছনে ফিরে নিজের জীবনের দিকে তাকায়। ভাবনার সরোবরে ডুব সাতার দিয়ে বার বছর আগে চলে যায় সে। আদিল আর তার বোন বাবা মায়ের দুইটিই সন্তান।

বাবা টেক্সটাইল ইঞ্জীনিয়ার, মা সরকারি ম্যাডিকেলের চিকিৎসক। নওগাতেই তার বাবা সুখের বাসা বেধেছিলেন। অর্নাস শেষ করতে না করতেই বড় বোনটার বিয়ে হয়ে যায়। আদিল তখন সবে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ভর্তির প্রিপারেশন নিচ্ছে। তাদের পরিবারের শিক্ষাপ্রিতী সর্বজন বিদীত।

বিশেষ করে মায়ের দিকে, মায়ের এক মামা আছেন অক্সফোর্ডের শিক্ষক, ডাবল পিএইচডি এবং তার বই বিশ্বের কয়েকটি নামী ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয়। এমন সব অতি উচ্চ শিক্ষিত আত্মীয় স্বজনের ভীড়ে আদিল যেন একটু পিছিয়ে পড়াদের দলে। এস এস সিতে ফার্স্ট ডিভিশন এবং এইচ এস সিতে সেকেন্ড ডিভিশন নিয়ে বুয়েটে কম্পিউটার সাইন্স পড়তে চাওয়াটা অনেকটা দিবা স্বপ্নের মতই লাগছিল আদিল আর তার পরিবারের কাছে। আদিল অনুভব করত এমন ব্রিলিয়ান্ট বাবা মায়ের ঘরে জন্ম নিয়ে তার আরো ভাল ফলাফল করা উচিত ছিল। মা বাবা দুজনে কেয়ার নিয়েছেন ঠিকই তবুও তাদের পেশাগত জীবনের ব্যস্ততার সুযোগটা সে খেলাধুলাতেই বেশী ব্যয় করত।

পরে নিজেকে সে এই বলে স্বান্তনা দিয়েছে- অল্প বয়স ছিল ভাল ফলাফলের গুরুত্ব সেভাবে বুঝতে পারিনি। তাহলেতো আজ জীবনটা অন্য রকম হোত। ফলাফল দেখে বাবা বলেছিলেন- "এখানে অযথা সময় নষ্ট না করে তুমি ইন্ডিয়া চলে যাও। আমি সব ব্যবস্হা করে দিচ্ছি"। অবশেষে ব্যঙ্গালোরে অবস্হিত "ব্যঙ্গালোর ইউনিভার্সিটিতে" আদিল কম্পিউটার সাইন্সে এ্যাডমিশন নিল।

খুব অল্প সময়ের ভিতরেই বাবা পাসপোর্ট ভিসা সব বের করে ফেললেন। জীবনে প্রথম বারের মত বাবা মাকে ছেড়ে এত দূর যেতে মন খারাপ লাগছে আবার নতুন জায়গায় যাবার জন্য থ্রিলও কাজ করছিল। মা বাবা খুব স্বাভাবিক থাকার ভান করছিলেন যেন পড়া শেষ করে ঘরের ছেলেতো ঘরেই ফিরে আসবে, এ আর এমন কি। আদিল নিজেও বেশ চাপা স্বভাবের ছেলে, সে ও ভাব করছিল এটা কোন ব্যপার না। তারা তিনজনই টের পেত ছোটবেলা থেকে ব্যস্ততার কারনে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তাতে আবেগ প্রকাশ না করার এক অদৃশ্য দেয়াল তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে।

তারপরও বাবার মুখটা গম্ভীর মায়ের চোখদুটু দিঘীর জলের মত হয়ে আছে। খারাপ লাগছিল ফুটবল খেলার মাঠ, পুরনো জমিদার বাড়ির ভাঙ্গা পাচিলের উপর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, নদীর পারে হাত পা ছড়িয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোয়ার কুন্ডলী ছোড়া,পহেলা বৈশাখের উচ্ছাস, বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া এই সব সবকিছুর জন্য। ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন একটু আগেভাগেই গিয়েছিল আদিল, ভর্তির ফরমালিটি গুলো যে শেষ করতে হবে। গাছপালা ঘেরা বড় বড় মাঠ নিয়ে লাল ইটের বিশাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। সেখানে এ্যাডমিশন রুম খুজতে খুজতে আদিল একসময় দোতালায় এসে উঠল।

সামনে লম্বা করিডোর আর করিডোরের বাম পাশে সারি সারি ক্লাশ রুম চলে গেছে যেমনটা সব পুরনো ইউনিভার্সিটিতেই দেখা যায়। করিডোরে ছেলে মেয়েরা ক্লাশ শুরুর আগে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। সিড়ি দিয়ে উঠার পর সামনে থাকা মেয়েটির দিকে আদিলের প্রথম চোখ গিয়েছিল। তার দিকেই এগিয়ে গেল সে। মেয়েটা লম্বায় প্রায় তার সমান,ফর্সা গায়ের রং, নীল জিন্সের সাথে লাল রংয়ের খাটো করে একটা গেঞ্জি পড়েছে,খয়েরি চুল গুলো কাধ বেয়ে কোমরে নেমে গেছে।

সবমিলিয়ে সে দারুন স্মার্ট, সুন্দর, তার মুখে ছড়িয়ে আছে একটা স্মিত অভিজাত হাসি। কাছে যেয়ে আদিল ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করল এ্যাডমিশন রুমটা কোনদিকে বলতে পারেন? মেয়েটা বলল "আপনি কি নতুন?" আদিল হে সূচক মাথা নাড়ল। তারপর মেয়েটার বলে দেয়া লোকেশন অনুযায়ী এ্যাডমিশন রুম খুজে বের করল, ভর্তির যাবতীয় ফরমালিটি পূরন করে এবার সে ক্লাশরুম খুজে বের করল। মনে আছে প্রথম ক্লাশ ছিল "ফানডামেন্টাল অফ কম্পিউটার"। ক্লাশে ডুকে ছোটখাট একটা ধাক্কা খেল।

দেখে ঐ মেয়ে সামনের বেঞ্চিতেই বসে আছে। তার মানে তারা দুজনে একই ক্লাশে পড়তে যাচ্ছে। চলবে........ দ্বিতীয় পর্ব এখানে Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.