তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা
মানুষ যা চায়, তা সবসময় হয়না। আবার যা হয়, তা হয়তো সে কোনদিন চায়নি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলাম মাসিক নবধ্বনি পত্রিকাটি। আমার ধারণার চেয়েও প্রথমদিকে পত্রিকাটি বেশ সাফল্য ও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু বছরখানেক পার হওয়ার পর কেমন যেন ভাটার টান শুরু হল।
আমার সহকর্মীদের কেউই মনে প্রাণে নবধ্বনিকে ভালবাসতোনা। আমি চেয়েছিলাম, কোন সঞ্চয় না করে পাঠকের জন্য কিছু ব্যাতক্রমী বিষয় উপস্থাপন করতে। যাতে মাদরাসার ছাত্ররা নিজেদের ইতিহাস ও ্ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করতে শেখে। আমাদের কার কতো সুনাম হলো, কত মুনাফা হলো, সেসব নিয়ে ভাবিনি, কাউকে ভাবতে দিইনি। এ পর্যন্ত বাসার কারো কাছ থেকে কিংবা কোন বন্ধুর কাছে এর জন্য টাকা চাইনি।
ধার নিয়েছি, শোধ করেছি। ব্যক্তিগত মুনাফার সুযোগ না থাকা হয়তো অনেকের ভালো লাগেনি। সহপাঠী ও বন্ধুদের কেউ হিংসা করেছে, কেউ ঈর্ষা করেছে, আমি ওসব নিয়ে ভাবিনি। আমার নির্বাহী সম্পাদক কোন মাসে ২৫ তারিখের মধ্যে স্বেচ্ছায় কলাম দিয়েছেন, আমি স্মৃতি হাতড়ে পেলাম না। তবু ছাপাতাম, বিলি বিক্রি করতাম।
নিজেই প্রেস থেকে পত্রিকা এনেছি, একা একা প্যাকেট করেছি, কুরিয়ার সার্ভিস, পোস্ট অফিসে গিয়েছি, এমনি কতো কাজ। কোন কোন মাসে একজন পাঠক আর আমার সহকর্মীদের মধ্যে কোনো তফাত হতো না। পাঠক তাও পত্রিকা কিনে পড়ে, ওরা পড়তো বিনামূল্যে বিনাশ্রমে। কথাগুলো মোটেই ক্ষোভ কিংবা হতাশার নয়, ওরা এমন ছিলো, আমারও কিছু বলার ছিলো না। কোনো বেতন নেই, স্বেচ্ছাশ্রমে যা পাই, তাতেই হাজার শোকর।
কাতার আসার পর থেকে নবধ্বনি বন্ধ, মাঝে মাঝে মনের ভেতর কোথাও যেন একটু ব্যথা হয়, অনুভব করি, ভালোবাসা, আর শ্রমে গড়া এ পত্রিকাটি এভাবে পড়ে থাকবে, কখনো কখনো তা বড্ড কষ্টকর মনে হয়।
নবধ্বনির প্র“ফ দেখতাম কম্পিউটারে বসে। শুরু হয়েছিল নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের রিলাক্স কম্পিউটার থেকে। ভালো মানুষ ছিলেন বরিশালের মতিন ভাই। ভোর সকালে এসে আমার জন্য দোকান খুলে আবার বাসায় চলে যেতেন, আমি বসে বসে প্র“ফ সংশোধন করতাম, কখনো কখনো সাথে থাকতেন হোসাইন ভাই।
তারপর দীর্ঘদিন কাজ করলাম ইফতেখার দাদন এর কাছে, প্রায় সমবয়সী হালকা গড়নের দাদন যেমন বিনয়ী ও অমায়িক, তেমনি বন্ধুভাবাপন্ন। টাইপ করার সময় তার আঙুলের দ্রুত চলন অবাক করতো অনেককে। আমার এলোমেলা টানা লেখা বুঝতে তার অসুবিধা হতো না মোটেও। ডিজাইন করে দিতেন দেশবাংলার মনির ভাই। কতো রাত কাজ করেছি তার সাথে, ফজর পড়েই আবার হাজির হয়েছি তার অফিসে।
এই মনির ভাই আর দাদন ভাই- এমন অমায়িক আর চটপটে কাজে দক্ষ দুজন মানুষের সহায়তায় নবধ্বনি তখন প্রতিমাসের এক তারিখে প্রকাশিত হতো নিয়মিত। প্রেস থেকে তরতাজা পত্রিকাটি হাতে পাওয়ামাত্র সব ক্লান্তি উড়ে ুেযত তুলার মতো। সেসব আজ কেবলই স্মৃতি, একদিন হবে অতীত ইতিহাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।