আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন মেহনতী মানুষের গল্প

আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ । আইটি প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করছি। টুকটাক ছাইপাশ কিছু লেখালেখির অভ্যাস আছে। মানুষকে ভালবাসি। বই সঙ্গে থাকলে আমার আর কিছু না হলেও হয়।

ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে। ভালবাসি প্রকৃতি; অবারিত সবুজ প্রান্তর। বর্ষায় থৈ থ একজন নুরুল হুদা, একজন শ্রমজীবী মানুষ। বয়স পঞ্চাশ বা কাছাকাছি। স্বভাবে স্পষ্টভাষী।

একটি করাত কলে কাজ করেন মিস্ত্রি হিসেবে। বেতন চলনসই। বেশ ভালভাবেই তার সংসার চলে। সকাল আটটায় কাজ শুরু করে টানা দুপুর একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত করেন। কাঠের গুড়ো মিশ্রিত শরীরেই দুপুরের খাবার সারেন।

এর পর সিগারেটে কয়েকটান দিতে না দিতেই সহকর্মীদের হাক দেনÑ কাজ শুরু করার জন্য। চলে সন্ধা পর্যন্ত। অতঃপর কাজ শেষে ফ্রেশ (মূখ ও হাতের কনুইয়ে সামান্য জল সেচন) হয়ে কল সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসেন। এখানে বসেই নানা আলাপ চারিতায় তার সাথে কথা হয়, গড়ে উঠে সখ্য। নানান বিষয়ের অবতারণা হয়।

আবিস্কার করি অসংখ্য অজানা, অমানা কথা। বাংলাদেশের মানচিত্রে তার পূর্ণ জ্ঞানে বিমোহিত হই। কথা প্রসঙ্গে তিনি প্রায় ও নিজেকে একজন সামান্য শ্রমিক হিসেবে জাহির করার প্রয়াস পান। তিনি বলেন- পেটের দায়ে সকাল সন্ধা পরিশ্রম করি। আপনার এ কাজ তো পরিশ্রমের ? উত্তরে তিনি শৈশবে আর্থিক দীনতার কথা উল্লেখ করে পড়াশোনা না করতে পারার অনুশোচনা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন- আপনি বা আপনারা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে হয়ত তার ধারণা নেই ) পড়াশোনা করেন, তারা আমাদের মত কৃষক শ্রমিকদের টাকায় পড়াশোনা করেন। তাই শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে আপনাদের অবশ্য পালনীয় কিছু দায়িত্ব রয়েছে-গুছিয়ে না হলে ও তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিলেন । রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা পোষণ করে বলেন- স্বাধীনতার পর কত সরকার আসল আর কত সরকার গেল, কোন সরকারই শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য উন্নোয়নে উল্ল্যেখযোগ্য কিছুই করেনি - এটিও তিনি আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই । তিনি তো সত্যি কথাই বলেছেন ।

আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা যারা সচল করে রেখেছেন, তাদের আমরা অবমূল্যায়ণ করে নানান ভাবে শোষণের হাতিয়ারে পরিণত করছি। তারা অশুভ রাজনীতির করাল গ্রাসের শিকার। আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হল তৈরী পোশাক খাত। স্বাধীনতার পর হতে আজ পর্যন্ত কোন সরকারকেই দেশের অর্থনীতির এই কারিগর, চালকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে কার্যকরী কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। ন্যূনতম মজুরী তো দুরের কথা- কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ এমনকি জীবনের নিরাপত্তা পর্যন্ত দিতে অম হয়েছি।

কৃষকদের অবস্থাও ঠিক একইরকম। দিন রাত পরিশ্রম করে ন্যায্য মূল্য যেমন পাচ্ছে না , পাচ্ছেনা সামাজিক স্বীকৃতি টুকুন ও। অথচ আমরা যারা কোট - টাই পরে বড় বড় অফিসে বসে আঙ্গুল মটকাচ্ছি, কম বা বেশি আমরা সবাই কৃষক শ্রমিকদেরই সন্তান। আসুন একটু চিন্তা করি। থমকে দাড়ায় এবং বুকে হাত দিই।

হৃদ কি স্পন্দিত হচ্ছেনা? আসলে আমরা নিজেদের শেকড় ভুলতে বসেছি। শ্রমের মর্যাদা দিতে ভুলে গেছি। যে জাতি শ্রমের মর্যাদা দিতে জানে না, সে জাতি কখনো সমৃদ্ধ হতে পারে না। তাই আমাদের ঘুমিয়ে থাকা বিবেককে জাগাতে হবে,নইলে আমরা অচিরেই এক মানবিক সাথে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পতিত হব-তা জোর দিয়ে বলা যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.