নিরপেক্ষভাবে বিচার করে যেকোন বুদ্ধিমান লোকই বলতে বাধ্য যে শিশু মাত্রই বর্বর, অমার্জিত, অসভ্য, নগ্ন পশু। আমরা অমার্জিত, অসভ্য, নগ্ন পশু-প্রকৃতির প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষকেতো সহ্য করি না। শুধু যে সহ্য করি না তা নয়, এই সব অমার্জিত, অসভ্য, নগ্ন পশু-প্রকৃতিকে দমন করার জন্য আমরা অর্থাৎ সুসভ্য সমাজ যুগে যুগে নানা কৌশল অবলম্বন করেছি। আইন, আদালত, জেলখানা, ফাঁসিকাঠ, শাস্ত্র, বচন, উপদেশ, নীতিকথা, নরক-ভীতি এগুলোর সবই পৃথকভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে এই পশু-প্রকৃতি দমনের জন্যই ব্যাবহার করছি। অথচ শিশুর মধ্যে সেই বর্বরতাই আমাদের আনন্দ দেয়।
কিন্তু কেন? অনেকর ধারনা, শিশুরা অসহায় বলেই তাদের প্রতি সভ্য মানুষের একটা সহজাত অনুকম্পা আছে, আর এই অনুকম্পাই ক্রমশ অনুরাগে রুপান্তরিত হয়। শুধু শিশুই নয়, আমরা যে নারীকেও তার প্রতি সৌজন্য প্রকাশের জন্য ব্যাগ্র হই তারও মূল কারণ তাদের অসহায় অবস্থা। অসহায় ও অক্ষমকে ভালবেসে, রক্ষা করে, সম্মান করে সভ্য পুরুষ নিজের পৌরুষকেই সার্থক করে। শিশু ও নারী যদি দূর্বল না হত তবে আমরা তাদের এত অত্যাচার সহ্য করতাম না। নারী পুরুষ হলে অথবা শিশু প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে আর আমাদের আনন্দ দিতে পারে না।
তাদের অক্ষমতাই তাদের অস্ত্র।
আরেকদিক থেকে চিন্তা করলে, মুসোলিনি, হিটলার, আলেকজান্ডার এসব প্রতাপশালী ডিক্টেটররাও তো এক হিসেবে কম বর্বর না, এদেরকে কোনভাবে অসহায়ও বলা যাবে না। অথচ সভ্য সমাজ তো এদের স্বচ্ছন্দে সহ্য করে যাচ্ছে। শুধু সহ্য করে যাচ্ছে না, রীতিমত শ্রদ্ধায় সম্ভ্রমে গলে পরছে।
তাহলে কি, যে যে কারণে আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সহ্য করি, মৃত্যুকে সহ্য করি- শুধু সহ্য করি না, তাদের কেন্দ্র করে নানারকম কাব্য করি এবং তাদের আবির্ভাবের কারন ও যৌক্তিকতা নির্ধারনে ব্যার্থ হয়ে অবশেষে অজ্ঞাত অলৌকিক শক্তির আশ্রয় নিই- সেই কারনেই আমরা শিশু, নারি ও হিটলারকে সহ্য করি এবং তাদের লীলা দেখে আনন্দিত হই?
অর্থাৎ উপায় নেই।
অসহায় তারা নয়- আমরাই অসহায়। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অদম্য প্রাণশক্তিকে রোধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আর নেই বলেই তাদের নানা উপদ্রবের মধ্যে একটা সৌন্দর্য্য, একটা লীলা আবিষ্কার করে নিজেদের অজ্ঞাতসারে আমরা আমাদের অক্ষমতাজনিত লজ্জাকে চাপা দিয়ে জ্ঞাতসারে পুলকিত হয়ে উঠি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।