আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি
আমরা কীভাবে বর্ণমালা শিখেছি?
আমার নিজের অভিজ্ঞতাই মনে করতে পারি। আমরা কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে গোল হয়ে চটের উপর পড়তে বসেছি। শিক্ষিকা বেত হাতে আমাদের মাঝখানে। প্লাস্টিকের বর্ণপরিচয় বই খুলে অক্ষরগুলোর উপর আঙ্গুল রেখে পড়ছি। শিক্ষক বললেন- সরুয়ু।
আমরা চিৎকার করে বললাম- সরুয়ু।
শিক্ষক বললেন- সরুয়ু তে অজগর।
আমরা বললাম- সরুয়ু তে অজগর।
শিক্ষক বললেন- অজগরটি আসছে তেড়ে।
আমরা বললাম- অজগরটি আসছে তেড়ে।
...এভাবে
শিক্ষক বললেন- আমটি আমি খাব পেড়ে।
আমরা সোৎসাহে চিৎকার দিলাম- আমটি আমি খাব পেড়ে। কারণ অজগর তেড়ে আসার বদলে আম পেড়ে খাওয়া অনেক মজার।
মোটামুটি এভাবেই আমাদের বর্ণমালা শেখা চলতো। যার গলায় যতো জোর আছে, সে ততো জোরে পড়তো।
কারণ বেশি জোরে পড়লে নাকি তাড়াতাড়ি শেখা হয়। আর গলাটা সবার আগে বেহেশতে বা স্বর্গে যাবে।
পড়ার পর লেখার পালা। শিক্ষক সবার শ্লেটে অ-আ-ই-ঈ বড় করে লিখে দিতেন, আমরা সেগুলোর উপর হাত ঘুরাতাম। এভাবে ঘুরাতে ঘুরাতে বর্ণমালা লেখা শিখে যেতাম।
২.
এই যে পদ্ধতিতে আমরা ছোটবেলায় বর্ণমালা শিখেছি, এটাকে বলা হয় বর্ণানুক্রমিক পদ্ধতি। এতে প্রথমে স্বরবর্ণ ও পরে ব্যঞ্জনবর্ণ ক্রমানুসারে শিখতে হতো। এখনও বিভিন্ন জায়গায় এই পদ্ধতিতে পড়ানো হয়।
আমরা যখন এভাবে বর্ণমালা শিখছিলাম, তখনই পশ্চিমে বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে বর্ণমালা শেখানো সম্পর্কে সমালোচনা শুরু হয়। কারণ এই পদ্ধতিতে বর্ণমালা শিখতে গিয়ে শিশু মূলত বর্ণের বিমুর্ত রূপের সাথে পরিচিত হয় এবং বলা হয় এই প্রক্রিয়ায় শেখাটা শিশুদের কাছে মোটেও আনন্দজনক নয়।
এ সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাও রয়েছে।
এই যে এখানে ‘অ’ বর্ণটি শেখানো হচ্ছে, এতে শিশু আসলে কী শিখছে। শিশু শিখছে একটা ‘অ’- আর কিছু না। শিশু শুধু জানে এটা তাকে শিখতে হবে; কিন্তু কেন শিখতে হবে এবং ‘অ’-এর সাথে কীসের কীসের সংযোগ ঘটবে- তা সে জানে না। বর্ণানুক্রমিক পদ্ধতিতে কীসের সাথে কীসের সংযোগ ঘটানো যায়, সে বিষয়টি শিশুর কাছে অজানা থাকে।
ফলে শিশুকে এখানে মোটামুটি আনন্দ ছাড়াই একটা বড়সড় ‘অ’ শিখতে হচ্ছে। শিশু মনস্তত্ব বলে, বর্ণমালা পুরোপুরি শেখার পর শিশু তখনও বুঝে উঠতে পারে না এগুলো সে কেন শিখলো। শিশু শুধু জানে, শিক্ষক শিখতে বলছেন, তাই শিখতে হবে।
৩.
বর্ণানুক্রমিক পদ্ধতি সমালোচনা আসতে থাকায় শব্দানুক্রমিক পদ্ধতি আসলো। এই পদ্ধতিতে শিশুকে প্রথমে শব্দ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
পরে শব্দের কোথায় বর্ণটি আছে, সেটি দেখিয়ে বর্ণটি শেখানো হয়। যেমন শিশুকে বলা হলো-
এটি একটি আম।
এখানে ‘আম’ শব্দটিতে ‘আ’ এবং ‘ম’ দুটো বর্ণ আছে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে একটি বস্তুগত বিষয়কে ধরে শিশু একইসাথে দুটো বর্ণ শিখে গেলো।
একটা সময় পরে দেখা গেলো, যতোটুকু ভাবা হয়েছিলো, এই পদ্ধতিতেও শিশুর শিখন ততোটা আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসু নয়।
এরই ধারাবাহিকতায় 'বাজারে আসে' বাক্যানুক্রমিক পদ্ধতি। এবং এই পদ্ধতিই এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুসৃত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবির বইগুলোও বাক্যানুক্রমিক পদ্ধতিতে সাজানো। এই পদ্ধতির মূল কথা হচ্ছে, বর্ণ বা শব্দ সম্পর্কে জানার আগেই শিশু অন্যের সাহায্যে বাক্য পড়বে প্রথমে। সেটা একটি সম্পূর্ণ বাক্য হতে পারে; কিংবা ছড়া বা গল্প পড়েও হতে পারে।
অর্থাৎ অ বা অজগর শেখার আগেই শিশু পড়বে ‘অজগর সাপ অনেক বড়’ কিংবা ছোট ছোট ছড়া বা গল্পগুলো শিক্ষক বা পিতামাতার সাহায্য নিয়ে আগে পড়বে।
৪.
অন্য আলোচনা বাদ দিয়ে ধরে নিচ্ছি, শিশুকে আমরা বাক্যানুক্রমিক পদ্ধতিতে বর্ণমালা শেখাবো। সেক্ষেত্রে শিশুকে বর্ণমালা শেখানোর জন্য কিছু উপকরণ হাতে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে পড়া ও লেখার কাজটা একসাথে করতে হবে।
১. বর্ণমালার বই।
বইটি কেমন হবে সেই আলোচনা আসবে একটু পরেই। এমনকি এই বই আপনি নিজেও বানিয়ে নিতে পারবেন।
২. সম্ভব হলে শ্লেট ও চকের মাধ্যমে শিশুকে লেখা শেখানো উচিত। শ্লেট না পাওয়া গেলে কাগজ ও পেনসিল। পেনসিলের অবর্তমানে কালির কলম।
এবং এর কোনোটিই না পাওয়া গেলে তবে বলপয়েন্ট কলম। কারণ শিশুরা যখন লেখা শেখে তখন যথাসম্ভব খসখসে কাগজ ও কলম ব্যবহার করা উচিত। তাতে তারা সহজে বর্ণের গঠন ও আকার লিখতে পারবে। এক্ষেত্রে কাগজ ও কলম যতো অমসৃণ হয়, ততোই শিশুর জন্য মঙ্গলজনক হবে। খসখসে কাগজে শিশু যতো সহজে সোজা দাগ ও দাগের বাক ঘোরাতে পারবে, মসৃণ কাগজে সেটা ততো সহজে পারবে না।
এক্ষেত্রে বর্ণের আকার বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং শ্লেট ও চক যোগাড় করতে পারলে খুবই ভালো।
৩. শিক্ষকের হাসিখুশি মুখ ও সাহায্যকারী মনোভাব। এটা খুবই মনে রাখা দরকার যে, এই শিক্ষক (তিনি আনুষ্ঠানিক শিক্ষকও হতে পারেন, পিতামাতাও হতে পারেন) আসলে শিশুকে পড়াতে যাচ্ছেন না; বরং তিনি ও শিশু মিলে কিছু একটা কাজ করতে যাচ্ছেন। আজকে তাদের কাজ হলো- দুজনে মিলে ‘অ’ ‘আ’ পড়বেন ও লিখবেন।
৫.
এক্ষেত্রে আরেকটা কাজ করা দরকার। আনুষ্ঠানিক পড়ায় আসার আগে শিশুকে দিয়ে কিছু দাগ ও আকৃতি প্র্যাকটিস করিয়ে নিতে হবে। যেমন-
- - - - - - - - - - - - - - - -
| | | | | | | | | | | | | | | | | | | | | | | |
/ / / / / / / / / / / / / / / / / / / / /
\ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \ \
< < < < < < < < < < < < <
> > > > > > > > > > > > >
[ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [ [
) ) ) ) ) ) ) ) ) ) ) ) ) ) ) ) ) ) )
( ( ( ( ( ( ( ( ( ( ( ( ( ( ( ( ( ( (
~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~
এই কাজগুলো করতে গিয়ে শিশু মোটামুটি বর্ণমালা শেখার প্রাথমিক রেখাগুলো আয়ত্ত করতে পারবে। আর একবার আয়ত্ত করতে পারলে শিশু সহজেই বর্ণমালা লিখতে পারবে।
৬.
এখন পড়া ও লেখার কাজটা কোথাও কোথাও একসাথে চলবে, কখনও বা পড়ার কাজটা আগে হবে, কখনও পরে।
সেটা নির্ভর করবে পরিবেশ, শিশু কতোক্ষণ পড়তে চায় এবং পড়ালেখার জন্য কী উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর ওপর। আপনার কাছে যদি খুব ভালো বই থাকে এবং আপনি শিশুকে আনন্দসহকারে পড়াতে পারেন, তাহলে এক বসাতেই অনেককিছু শেখাতে পারবেন। মনে রাখতে হবে, শিশু যতোক্ষণ পড়তে চায়, তার বেশি পড়ানোর জন্য জোরাজুরি করা যাবে না। সেজন্য সব বই, উপকরণ ও শ্লেট-পেনসিল একসাথে নিয়ে শিশুর সাথে বসে পড়াটাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহ্য অনুযায়ী ধরা যাক শিশুকে ‘অ’ দিয়ে পড়ানো শুরু করবেন।
সেক্ষেত্রে বইয়ের বাম পাশে বা উপরে থাকবে ‘অজগর’-এর ছবি।
অজগর সাপ অনেক বড়
এবার আপনি প্রথমে ছবি দেখিয়ে পরে লেখাগুলোর ওপর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে জোরে পড়বেন- অজগর সাপ অনেক বড়। এখানে আপনি যখন যে শব্দটি পড়বেন, কেবল তখনই সেই শব্দের উপর আঙ্গুল রাখবেন। আগের বা পরের শব্দের উপর আঙ্গুল রাখবেন না।
আপনার পড়ার পর শিশু আঙ্গুল দিয়ে পড়বে- অজগর সাপ অনেক বড়।
এখানেও শিশু যখন যে শব্দটি পড়বে, সেটির উপর আঙ্গুল রেখে পড়ানোর অভ্যাস করাতে হবে।
আপনি পড়বেন- আমটি তুমি হাতে ধর।
শিশু বলবে- আমটি তুমি হাতে ধর।
এইভাবে পুরোটা শেষ করবেন। প্রশ্ন হলো, শিশুকে এভাবে পড়িয়ে লাভ কী? উত্তর হচ্ছে- এভাবে পড়িয়ে লাভ হচ্ছে, শিশু ছন্দে ছন্দে পুরো বিষয়টি পড়বে এবং এক ধরনের আনন্দ লাভ করবে।
সে বুঝবে তাকে আসলে কিছুই শেখানো হচ্ছে না, বরং দুজনে মিলে ছন্দে ছন্দে কিছু একটা পড়ছে। এটিই সবচেয়ে বড় লাভ। শিশু যদি বুঝতে পারে তাকে শেখানো হচ্ছে, তাহলে কিন্তু মহাসর্বনাশ!
৭.
এভাবে বেশ কিছুদিন পড়ানোর পর আপনি একেকটা বাক্য বলবেন এবং শিশুকে জিজ্ঞেস করবেন বাক্যটি কোথায় আছে তা বের করতে। যেমন- ‘অজগর সাপ অনেক বড়’- এটা কোন জায়গায় আছে? শিশু আপনাকে দেখিয়ে দিবে এই বাক্যটি কোন ছবির সাথে আছে। যতোক্ষণ না পর্যন্ত শিশু এভাবে সবগুলো বাক্য চিহ্নিত করতে পারে, ততোক্ষণ আপনি তার সাথে ছন্দে ছন্দে বাক্য পড়তে থাকবেন।
কখনও শুধু আপনি পড়বেন, কখনও শুধু শিশুই পড়বে। তবে সুখের কথা, এগুলো চিহ্নিত করতে শিশু বেশিদিন সময় নেয় না।
পরবর্তীতে বাক্যগুলো থেকে শিশুকে টুকটাক দু’একটা শব্দ কোথায় কোথায় কোথায় আছে তা জিজ্ঞেস করবেন। যেমন- অজগর সাপ অনেক বড়- এখানে অজগর শব্দ কোনটা? অবাক বিস্ময়ে আপনি লক্ষ করবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশু নির্ভুল উত্তর দিচ্ছে। তার মানে শিশু ছবির সাথে শব্দের সংযোগ ঘটাতে পারছে, যদিও সে জানে না ‘অজগর’ শব্দটি কী কী বর্ণ দিয়ে গঠিত।
এভাবে মোটামুটি অনেকগুলো বলতে পারলে পরবর্তী ধাপে যেতে পারেন।
৮.
এভাবে পড়াতে গিয়ে যখন দেখলেন শিশু মোটামুটি শব্দগুলো পড়তে পারছে, তখন যাবেন বর্ণের দিকে। এক্ষেত্রেও কোনো কিছু খুঁজে বের করার নীতি অনুসরণ করতে হবে। যেমন- অজগর শব্দটি দেখিয়ে এর মধ্যে ‘এই ‘অ’ বর্ণটি কোথায় কোথায় আছে চলো বের করি’ বলে অন্যান্য বাক্যে ‘অ’ বর্ণটি বের করবেন। দেখুন, এতে শিশু প্রথমবারের মতো জানছে এটি ‘অ’ এবং এটাকে বর্ণ বলে।
আপনার আর কিছু বলার দরকার নেই। শিশু যদি প্রশ্ন করে বর্ণ কী? তাহলে আপনি বলতে পারেন- এই যে ‘অ’ এটাকে বলে একটা বর্ণ। এরকম এই ‘আ’ এটা হচ্ছে আরেকটা বর্ণ।
ধরে নিচ্ছি মোট দশটি শব্দে শিশু ‘অ’ বর্ণটি খুঁজে পেলো। সেগুলো আপনারা দুজন মিলে দাগ দিয়ে রাখলেন।
এখন ওই বই ছাড়াও অন্যান্য উপকরণে এমনকি বাংলা পত্রিকার বড় বড় শিরোনামে দুজনে মিলে ‘অ’ খুঁজতে পারেন। এ সময় দশটি শিরোনামে আপনারা দুজন কয়টি ‘অ’ খুঁজে পেলেন, তা গুনতে শুরু করবেন। দেখবেন, বর্ণ শেখার সাথে সাথে শিশু গুনতেও শিখে যাচ্ছে।
অ-এর পর আ, ই এভাবে এগুতে পারেন, কিংবা যখন যেটা সামনে পড়বে, সেটা নিয়েও এগুতে পারেন। এক্ষেত্রে ক্রম বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।
যেমন- অজগর শব্দে প্রথমে পুরো বই থেকে ‘অ’ খুঁজে বের করলেন, পরে ‘জ’, ‘গ’ ও ‘র’ খুঁজে বের করতে পারেন। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ‘অ’ শব্দটি শিশু শব্দের প্রথমেই পাবে। বাকি তিনটি শব্দের ভেতরেও থাকতে পারে। কারণ স্বরবর্ণ সবসময়ই শব্দের প্রথমে বসে। তা থাকুক, খুব সহজেই শিশু এগুলো বের করতে পারবে।
এই পর্যায়ে আর কিছু না করানোই ভালো।
৯.
এবার লেখার পালা। আপনি আগেই শিশুকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের দাগ টানিয়েছেন। এখন সেগুলো আবার চর্চা করান। তারপর বর্ণ লিখতে শুরু করুন একটু অন্যভাবে।
প্রথমে সহজ ও একইরকম দেখতে বর্ণগুলো দিয়ে লেখা শুরু করান। যেমন- ব। এটি শ্লেটে লিখে শিশুকে লিখতে দিতে পারেন। যেহেতু শিশু আগেই 'ব' লেখার মতো সবগুলো দাগ আঁকার চর্চা করেছেন, সুতরাং আপনি দু’একবার দেখিয়ে দিলে খুব সহজেই সেটি লিখতে পারার কথা। প্রয়োজনে আলাদা কাগজ-কলমে আপনিও তার সাথে লিখুন।
লক্ষ রাখতে হবে, লিখতে গিয়ে শিশু বর্ণের আকৃতি বদলে ফেলছে কিনা বা ভুল লিখছে কিনা। 'ব' লেখার পর ব-এর মতো দেখতে অক্ষরগুলো লেখা শিখান। এভাবে বর্ণমালার পুরো ৫০টি বর্ণই শেখাতে পারেন। আগেই বলেছি, এই পর্যায়ে ক্রমঅনুসারে শেখানোটা গুরুত্বপূর্ণ না। পড়তে ও লিখতে শেখাটাই প্রধান।
কোনটির পর কোনটি শেখালে ভালো হয় তার একটি ধারাবাহিক রূপ আমি নিচে দিয়ে দিচ্ছি। তবে এগুলো আপনি নিজেও সাজিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে একেক শিশুর একেক অক্ষরে প্রতি ঝোঁক থাকতে পারে। শিশুর আগ্রহ দেখে এগুলো সাজিয়ে নেওয়াটাই শ্রেয়। পুরো বইয়ে শিশু যদি গরুর ছবি দেখে বেশি আনন্দ পায়, তাহলে ‘গ’ বর্ণটি দিয়েও বর্ণ লেখা শেখানো শুরু করতে পারেন।
তবে স্বাভাবিক অবস্থায় নিচের ক্রমটি অনুসরণ করাই শ্রেয়। এতে সহজ থেকে কঠিন অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।
দ
ব র ঝ ক ধ ঋ
খ ঘ হ থ ফ ম য য় ষ
ড ড় উ ঊ ভ জ ঙ
ত অ আ
ঢ ঢ় ট চ ছ
এ ঐ ঞ
গ প
ণ ন ল শ
ঠ
ই
ঈ
ও ঔ
স
ঃ ং ৎ ঁ
বর্ণগুলো শিশু লিখতে পারলে আবার ‘অজগর’ সাপটি দেখিয়ে ‘অজগর’ শব্দটি বের করতে বলেন। বের করার পর সেটি লিখতে বলুন। দেখবেন, শিশু খুব তাড়াতাড়িই বর্ণের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলবে।
পাশাপাশি আরেকটি কাজও করতে পারেন- পুরোপুরি না শিখিয়ে কয়েকটি বর্ণ শেখানোর পর সেখান থেকে শব্দ বের করেও শব্দ লেখার চর্চা শুরু করতে পারেন। যেমন- ব ও ক শেখার পর আপনি অনায়াসেই বক লেখাতে পারেন বকের ছবি দেখিয়ে।
আজকে আপাতত শেষ। তবে শেষ করার আগে কিছু সতর্কবার্তা।
সতর্কবার্তা এক. শিশুকে কখনও সরুয়ু, সরায়া শেখাবেন না।
সোজাসাপ্টা অ আ বলবেন। হ্রস্বই, দীর্ঘই ইত্যাদি শেখানে পুরোপুরি নিষেধ। শেখাতে হবে আ (আআ), ই (ই), ঈ (ইই), উ (উ), ঊ (উউ)। অর্থাৎ যেখানে স্বর দীর্ঘ, সেখানে দীর্ঘভাবে উচ্চারণ করাতে শিখাবেন, যেখানে স্বর হ্রস্ব সেখানে হ্রস্বভাবেই শেখাবেন।
সতর্কবার্তা দুই. বইয়ের বাক্যগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
এক্ষেত্রে যাদের সামর্থ ও সুযোগ আছে, তারা নিজেরই কম্পিউটারে বই বানিয়ে নিতে পারেন। যেমন- ব্যক্তিগতভাবে 'অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে' পড়ার পুরোপুরি বিপক্ষে আমি। এই বাক্য দিয়ে ছোটবেলা থেকেই শিশুর মনে সাপের ভীতি ঢুকিয়ে দেয়া হয়। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ছোট ছোট এসব প্রপঞ্চ শিশুর মনে বিরাট প্রভাব ফেলে। সুতরাং বিতর্কিত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলুন।
এক্ষেত্রে অবশ্য 'অযু করে পড়তে বস'- এই ধরনের বাক্যও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং আপনি নিজেই 'অজগর সাপটি অনেক বড়' বা এই ধরনের বাক্য বানাতে পারেন। তাতে বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে শিশু এক ধরনের আইডিয়া পাবে। অজগর সাপ যে বড় সাপ, সেটি আর শিশুকে নতুন করে শেখাতে হবে না।
সতর্কবার্তা তিন. নিজে নিজে বাক্য বানিয়ে শিশুকে শেখানোর ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে।
এক্ষেত্রে শিশুর রুচি-আগ্রহ ইত্যাদিকে সম্মান জানাতে হবে। আপনি হয়তো ঠিক করলেন শিশুকে শেখাবেন- আপেল খেতে ভারি মজা! কিন্তু দেখা গেল আপেল খেতে শিশুর আদৌ আগ্রহ নেই, বরং আপেলের বদলে আম খেতে তার ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে 'আম খেতে ভারি মজা' দিয়ে বাক্যগঠনই শ্রেয়।
সতর্কবার্তা চার. শব্দের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। কখনই ভেগ বা বিমুর্ত বিষয় বা উদাহরণ দিয়ে শিশুকে বর্ণ শেখাতে যাবেন না।
এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন- 'স' দিয়ে আপনি বুঝাতে চাইলেন সুখী মানুষ। এক্ষেত্রে স-এর পাশে একটি সুখী মানুষের ছবি থাকার সম্ভাবনা বেশি যে কিনা হাসিখুশি মুখে তাকিয়ে আছি। সাবধান! শিশু কিন্তু এক্ষেত্রে ভুল বুঝতে পারে। সে মনে করতে পারে, মানুষ মাত্রই সুখী।
কিংবা সে বুঝতেই পারবে না এটি দিয়ে সুখ বুঝানো হচ্ছে। বরং সে মনে করতে পারে, সুখী = মানুষের মুখ। সুতরাং যতোদূর সম্ভব বিমুর্ত শব্দ পরিহার করুন।
আপাতত এইটুকুই। মোটামুটি সহজভাবে বিষয়টা বলার চেষ্টা করলাম।
এর মাঝে হয়তো অনেককিছু বলার বাকি রয়ে গেছে। মন্তব্য থেকে বা পরে মনে আসলে সেগুলো যোগ করে দিবো।
নোট: ছবি নেওয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে।
পরবর্তী পর্ব- শিশুকে কীভাবে মাত্রা শেখাবেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।