আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি
অন্য একটি পোস্টে শিশুকে কীভাবে বর্ণ শেখানো যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো। সেখানে অনেকে মন্তব্য করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং তাঁদের নিজস্ব মতামতও জানিয়েছেন। এবার শিশুকে কীভাবে বর্ণের মাত্রা শেখানো যায় সেটি দেখা যাক।
******
শিশুকে বর্ণের মাত্রা শেখানো খুব-ই, আবারও বলি, খুব-ই সহজ কাজ। যদিও আমরা অনেকেই বলতে পারবো না যে, বাংলা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণে মোট কতোটি মাত্রা আছে।
এটা বলার অবশ্য প্রয়োজনও পড়ে না বা অতটা জরুরি নয়; কিন্তু কোন বর্ণে মাত্রা আছে, কোনটিতে নেই- সেটি জানা অবশ্যই জরুরি।
সাধারণত অন্য সবকিছু শেখানোর মতো মাত্রার বিষয়টিও শিশুকে মুখস্থ করাতে দেখা যায়। তাতে যেটা লাভ (!) হয়- অনেক সময় কোথায় অর্ধমাত্রা, কোথায় পূর্ণমাত্রা বসবে, সেটি গুলিয়ে যায়। তার চেয়ে মুখস্থ না করে যদি শিশুকে দিয়েই বর্ণগুলো মাত্রা অনুসারে একটি ছকে ফেলে শেখানো যায়, তাহলে ভুল হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
******
প্রথমে শিশুকে বই দেখে দেখে খাতায় যে কোনো একটি বর্ণ লিখতে বলুন।
ধরি, শিশু লিখেছে ছ। এবার শিশুকে বুঝিয়ে বলুন, ছ-এর উপরে যে দাগটি আছে, সেটিকে বলা হয় মাত্রা। ব্যাস, আর কিছু বলার দরকার নেই।
এখন তাকে বলুন, উপরে এরকম মাত্রা একেবারেই নেই, এমন একটি বর্ণ বই থেকে খুঁজে বের করে খাতায় লিখতে। ধরি, শিশু খুঁজে খুঁজে লিখলো ঙ।
এক্ষেত্রে শিশুর খুঁজতে সমস্যা হলে তাকে আপনিও সাহায্য করতে পারেন। ছ এবং ঙ-কে দুটো আলাদা লাইনে লিখি।
এই দুটো লেখার পর অধর্মাত্রা আছে এমন একটি বর্ণ এবার আপনি নিজেই বের করুন ও লিখুন। ধরি, আপনি লিখলেন খ। শিশুকে বুঝিয়ে দিন, এই বর্ণে ছ-এর মতো এতো বড় বা পুরো মাত্রা নেই, আবার ঙ-তে যেরকম একেবারেই মাত্রা নেই, এটি সেরকমও নয়।
কিছুটা মাঝামাঝি বা হালকা একটু মাত্রা আছে। এটাকে অর্ধমাত্রা বলে।
এখন যে বর্ণগুলোর মাত্রা একইরকম, সেগুলো শিশুকে বই দেখে দেখে সাজাতে বলুন। প্রয়োজনে রোল করা কাগজ ব্যবহার করুন, এবং এই কাজে আপনিও সাহায্য করুন। সেক্ষেত্রে খাতায় বর্ণগুলো আসতে পারে এভাবে-
ছ অ আ ই ঈ উ ঊ ক ঘ চ জ ঝ ট ঠ ড ঢ ত দ ন ফ ব ভ ম য য় র ল ষ স হ ড় ঢ়
খ গ ণ থ ধ প শ
ঙ ঋ এ ঐ ও ঔ ঞ ৎ ং ঃ ঁ
এখন শিশুকে দিয়ে গোনাতে পারেন-
পুরো মাত্রা আছে এমন বর্ণ কয়টি? - ৩২টি।
অর্ধমাত্রা আছে কয়টি বর্ণে? - সাতটি।
আর মাত্রা নেই, এমন বর্ণ কয়টি? - ১১টি
মোট বর্ণ কয়টি? - ৫০টি।
******
এক্ষেত্রে পূর্ণমাত্রার ক্ষেত্রে ঝ নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন। এটি একটু অন্যরকম। সেক্ষেত্রে শিশুকে ধৈর্য্য ধরে বুঝিয়ে বলা ছাড়া উপায় নেই।
অনেক শিশু আবার অর্ধমাত্রাকে ছোটমাত্রা বলতে পছন্দ করে। কারণ এটি ঠিক পূর্ণমাত্রার অর্ধেক নয়। সেক্ষেত্রে শিশু ছোটমাত্রা বলুক, সমস্যা নেই। একটু বড় হয়ে সে নিজেই অর্ধমাত্রা বলতে শিখবে।
এই ধরনের কাজের আরেকটি ছোট উপকার আছে।
সেটা হলো একই সাথে তাকে সংখ্যা শেখানো। একটি কাজের মাধ্যমে একাধিক দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি এখন সব ভাষাতেই স্বীকৃতি পাচ্ছে। বাজারে এগুলো নিয়ে বেশ কিছু খেলনাও কিনতে পাওয়া যায় (বাংলাতে পাওয়া যায় কিনা জানি না)। শিশুকে সেগুলো কিনে দিতে পারেন।
শিশুকে বর্ণের মাত্রা শেখানো হলো।
এই পর্যায়ে শিশু আপনাকে অবশ্যই কার বা ফলার মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন করবে। সেক্ষেত্রে শিশুকে আপাতত বুঝিয়ে বলুন যে এগুলো আপনারা দুজনে মিলে পরে শিখবেন। মনে রাখতে হবে, শিশুকে কখনোই বলা যাবে না যে- তোমাকে এগুলো পরে শিখাবো। বরং আপনারা দুজনে মিলে পরে একসাথে অনেককিছু শিখবেন- এই ধারণাটা শিশুর মনে গেঁথে দিন। তাতে লাভই হবে।
******
আগামী পর্বে কার ও ফলা নিয়ে আলোচনা করার আশা রাখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।