আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পের বইয়ের গল্প - পাঠ্যবই পর্ব



গল্পের বইয়ের গল্প - রূপকথা পর্ব গল্পের বইয়ের মত পাঠ্য বইয়ের গল্পগুলোও পড়তে বেশ লাগত। বিশেষ করে বড় বোনদের 'চয়নিকা' আর 'আমার বই' এর গল্পগুলো। পরে বইগুলো আমারও হল। পাঠ্য বইয়ের তালিকা থেকে 'চয়নিকা' বাদ দেয়ার পর কী যে কষ্ট পেয়েছিলাম। "লবণের মত ভালোবাসা" আর "লোভী মাকড়সার গল্প" তো চয়নিকা থেকেই পড়েছিলাম।

এগুলো মনে হয় জীবনেও কোনদিন ভুলবার নয়। সেদিন ভাগ্নেকে লোভী মাকড়সার গল্প শোনালাম। সেই যে লোভী মাকড়সা, যে খাবার খুঁজে আনতে তার চার ছেলেকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম চারদিকে পাঠিয়ে দিল। আর প্রত্যেকের হাতে একটা করে দড়ি ধরিয়ে দিল যার আরেক মাথা তার পেটের সাথে বেঁধে রাখল। বলে দিল খাবার পেলেই যেন দড়ি ধরে টান দেয়, সে ছুটে যাবে খাবার খেতে।

তারপর অপেক্ষা অপেক্ষা অপেক্ষা.........। হঠাৎ উত্তর দিক থেকে দড়ির টান অনুভব করল। মাকড়সা উত্তর দিকে রওনা দিতে না দিতেই দক্ষিণ দিক থেকেও টান শুরু হল। তারপর একসাথে পূর্ব আর পশ্চিম দিক থেকেও দড়ির টান পড়তে শুরু হল। মাকড়সার তখন চারদিক থেকে টান খেয়ে মর মর অবস্থা।

এদিকে তার ছেলেরা মায়ের আসতে দেরী দেখে আরও জোরে জোরে টানতে থাকল। অবশেষে দড়ির টান খেয়ে খেয়ে মাকড়সার পেটটাই গেল সরু হয়ে। এইজন্যই তো আমরা দেখি মাকড়সার পেট এমন সরু। বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে এলেই প্রথম কাজ হত বাংলা বইয়ের সব গল্প একটানে পড়ে ফেলা। 'ইংলিশ ফর টুডে'তেও খুঁজে খুঁজে বের করতাম গল্প আছে কি না।

ছোট ছোট কিছু গল্প খুঁজে পেতামও। আর 'র‌্যাপিড রিডার্স' তো ছিলই, ওখানেও মজার মজার গল্প পড়তে পারতাম। এক সময় এমন নেশা হয়ে গিয়েছিল যে নতুন বইগুলো পেয়ে 'পরিবেশ পরিচিতি' বইয়েও গল্প খুঁজতাম। ক্লাস নাইনে উঠে পেলাম শেক্সপিয়ারের গল্পগুলো, সহজ ইংলিশে লেখা। আমাদের ইংরেজী স্যার ক্লাসে পড়ানোর সময় গল্পগুলো তার নিজস্ব মজার ভাষায় অনুবাদ করে শোনাতেন।

শাইলকের "Fool!" এর অনুবাদে "গাধারামমমমমমমম!" বলে যে অঙ্গভঙ্গী করে চিৎকার করতেন ওতে আমরা পুরো স্কুল কাঁপিয়ে হেসে দিতাম। রোমিও আর জুলিয়েটের প্রেম কাহিনী আগেও পড়েছিলাম। এবার তার বিশ্লেষণ করতে শিখলাম। কিন্তু প্রতিবারই গল্পটা পড়ার পর শেষটুকু পাল্টে দিতে ইচ্ছা করত। হ্যামলেটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের গল্প পড়ে এত মন খারাপ হত যে ঐ প্রশ্নটা পরীক্ষায় এলেও এড়িয়ে যেতে চাইতাম।

এইচ এস সি তে উঠে 'লালসালু' আর 'পদ্মা নদীর মাঝি'র সাথে পরিচয় হল। 'লালসালু'র বইটা হাতে পেয়েই এক টানে পড়ে গিয়েছিলাম। পাঠ্যবইয়ে কিছু অংশ পরিমার্জিত করা হয়েছিল। পরে আমাদের বাংলা শিক্ষিকা সেটুকু আমাদের ক্লাসে বলেছিলেন। কিরকম রাগ যে লাগত ঐ বুড়ো ঠগবাজটার উপর।

পদ্মা নদীর মাঝির একটা ছোট অংশ ছিল বাংলা বইয়ের পাঠ্য হিসেবে। কলেজের লাইব্রেরী থেকে মূল বইটা নিয়ে পুরোটা পরে ফেলেছিলাম। পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবন যেন চোখের সামনে দেখতে পেতাম পড়তে গিয়ে। শুরুর দিকে একটা লাইন ছিল যেটা কিছুতেই মাথায় ঢুকাতে পারছিলাম না। বার বার পড়তেই থাকলাম, না বুঝে ছাড়বই না।

অবশেষে যখন উদ্ধার করতে পারলাম, তখন পুরোপুরি ঢুকে গেলাম বইতে। এরপর আর সমস্যা হয়নি। লাইনটা ছিল, "কলি না পিত্যেয় যাবি কুবের। " লাইনটা মনে হয় সারা জীবনেও আর ভুলব না। এটা বোঝার পর একটানে পুরো বই পড়ে গিয়েছি, খেয়ালও নেই যে কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে আরও আগেই।

পরে বের হবার সময় দারোয়ান গেটের তালা খুলে দিতে দিতে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমার মাথায় তখনও ঘুরছে ঐ লাইনটা যার অর্থ ছিল, 'বললে না আশ্চর্য হয়ে যাবি কুবের। ' পাঠ্যবইয়ে পড়া এই গল্প-উপন্যাসগুলোর উপর তৈরী করা সিনেমাগুলোও দেখেছি আগ্রহ নিয়ে। কোনটা হয়ত আগে সিনেমা দেখেছি, পরে গল্প পড়েছি, আবার কোনটা আগে পড়া হয়েছে, পরে সিনেমা হবার পর দেখা হয়েছে। 'পথের পাঁচালি' দেখা হয়েছিল খুব ছোট থাকতেই।

ঐ সময় নাইন-টেনের বইয়ে এই উপন্যাসের খুব ছোট একটা অংশ গল্প হিসেবে ছিল। যখন ক্লাস ফোরে পড়ি, বড় বোনের এস এস সি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে একটা প্রশ্ন দেখলাম, দুর্গা চরিত্রের বিশ্লেষণ কর। আমি দেখেই বলে দিলাম, সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। সিনেমা দেখে দুর্গা চরিত্রের এই ছিল আমার বিশ্লেষণ। বড়পা এখনও মাঝে মাঝে এই কথা বলে আমাকে পচায়।

লালসালু, পদ্মা নদীর মাঝি, রোমিও এন্ড জুলিয়েট সবগুলোরই সিনেমা দেখা হয়েছে। সিনেমাগুলো অবশ্যই ভালো নির্মিত হয়েছে। কিন্তু কেন যেন বইতে পড়ে যে অনুভূতি হয় সিনেমায় সেটা হয় না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।