আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরেকজন সফল মানুষের গল্প…



প্রতিটি সফল মানুষের পেছনে আছে কিছু গল্প, তা অনেকটা রূপকথার মতো। আর সে সব গল্প থেকে মানুষ খুঁজে নেয় স্বপ্ন দেখার সম্বল, এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন প্রেরণা। যারা ভালবাসে স্বপ্ন দেখতে আর সফলতার শীর্ষে যেতে, তাদের জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আজ যার গল্প বলব তার ডাক নাম ধীরু। ধীরুর জম্ম ১৯৩২ সালে ভারতের গুজরাতে।

তার বাবা পেশায় ছিল স্কুল শিক্ষক। সংসার চালাতে অনেক হিমশিম খেতে হত তার বাবাকে। আর সে ছিল বেশ ভাল ছাত্র। কিন্তু অভাব নিয়ে আর কত দিন বাঁচা যায়? তার ছেলে পড়াশুনায় ভাল জেনেও তার মা তাকে তার পরিবারের জন্য রোজগার করতে বলেন। ধীরু তার মা কে হতাশ হতে বারণ করে বলেন-হতাশ হয়োনা এক দিন আমি অনেক টাকা উপার্জন করবো।

আমাদের সব দুঃখ ঘুঁচে যাবে। তার মা অতটুকু ছেলের মুখে এসব কথা শুনে অবাক হয়। যে বয়সে অনেক ছেলে-মেয়ে হয়ত নিজের কাজ গুলোই ঠিক মত করতে পারে না তখন সে তার সংসারের হাল ধরার জন্য ছোট্ট খাবারের দোকান দেয়। সেখানে সে আলু, রসুন আর পেঁয়াজের চপ ভাজা বিক্রি করতে শুরু করে। পাশাপাশি চলে পড়াশুনা।

দু-তিন বছর এভাবে সে তার পরিবারকে অর্থ সহায়তা করতে থাকে। কিন্তু আর পড়াশুনা হয়না। স্কুল ছেড়ে ১৯৪৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সে পাড়ি জমায় সুদুর ইয়েমেনের এডেন বন্দরে। অনেক ঘুরে ফিরে কাজ নেয় একটি পেট্রল পাম্পে। কাজ গাড়িতে তেল ভরা।

তার আগে আর একটি কোম্পানীতে কিছুদিন ক্লার্ক-এর কাজ করেছিল। তার চতুরতার পরিচয় এডেনেই পাওয়া য়ায়। তখন ইয়েমেনে যে মূদ্রা গুলো বাজারে চলতো তা ছিল খাঁটি রুপার। সে খোঁজ পেয়েছিল লন্ডন ভিত্তিক কিছু ব্যবসায়ীর কাছে এসব রুপার মূদ্রার বেশ চাহিদা রয়েছে। সে প্রতিদিন এসব মূদ্রা জমাতো আর লন্ডনের ব্যবসায়ীদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতে শুরু করলো।

এ ভাবেই সে কয়েক লক্ষ টাকা জমিয়ে ফেলে। দশ বছরে বেশ কিছু টাকা জমা হলে ১৯৫৮ সালে সে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে এসে সে বসে থাকেনি, সে তার চাচাতো ভাইদের নিয়ে গড়ে তোলে Majin Commercial Corporation. সে প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল পলেস্টার সুতা আমদানী এবং ইয়েমেনে ভারতীয় মসলা রপ্তানী করা। সেই ব্যবসায় পুঁজি ছিল মাত্র ১৫,০০০ রুপি। ব্যবসা অনেক সফলতা পায়, যার প্রেক্ষিতে ধীরু ১৯৭৭ সালে আহমেদাবাদে একটি কাপড় তৈরির কারখানা গড়ে তোলে।

তিনি “Vimal” ব্রান্ডের কাপড় তৈরি করে যা আজ ভারতের ঘরে ঘরে পরিচিত। তার ব্যবসায় সফলতার আরেকটি কারন তার ব্যবসা পরিচালনার পদ্ধতি। যে কোন কর্মচারী যে কোন সময় তার কক্ষে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারতো। সে সবার সাথে সমান ভাবে মিশতে পারতো। সে এটাকে বলতো-“ Open-door” পলিসি।

১৯৭৭ সালেই ভরতে প্রথম IPO এর ব্যপারে পদক্ষেপ নেয়। সেখান থেকে ২০০৭ সাল নাগাদ সে আয় করেন ১০ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৯-২০০০ সালে তার কোম্পানী বিশ্বের সববৃহত “ Integrated Grass root’s Refinery”- প্লান্ট প্রতিষ্ঠা করে জামগড়ে। তার আর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ২০০২ সালে CDMA মোবাইল কোম্পানী খোলা। মোবাইল ব্যবহারে তখন জাগরনের জোয়ার চলছে।

তার স্বপ্ন ছিল একজন অটরিক্সা চালকও যেন তার ফোন ব্যবহার করতে পারে তার জন্য মাত্র ৫০০ রুপিতে সে ফোন বিক্রি করত। এর কারনে প্রথম ভারতীয় কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ৫০০ শ্রেষ্ঠ কোম্পানীর তালিকায় চলে আসে। একটা মানুষের জীবনে সফল হওয়ার জন্য যা যা আর্জন দরকার তার সবই ধীরু করেছে। ২০০২ সালে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় ধীরু। আরও সফলতার দরকার ছিল বলে কি আপনার মনে হয়? তাহলে শুনুন আরও গল্প…।

মৃত্যুকালে তার সম্পদের পরিমান ছিল ৭৫০০০ কোটি রুপী! অথচ শুরুটা ছিল মাত্র ১৫০০০ রুপী। আজ তার পরিবার ভারতের সবচেয়ে ধনী পরিবার, বিশ্বের ধনীদের তালিকাতেও শীর্ষে তাদের নাম। জানতে ইচ্ছে করছেনা, কে এই ধীরু…? সে Reliance Group- এর প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানী। সংগ্রহঃ http://bdbrands.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.