উপকারির উপকার স্বীকার করেনা যে-অকৃতজ্ঞ।
উপকারির অপকার করে যে-কৃতঘ্ন।
যে ব্যক্তি উপকারির উপকার স্বীকার করে, আবার অপকারও করেনা, কিন্তু ঐ ব্যাক্তিকে দেখলে উপকারির মাথায় রক্ত চেপে যায় তাকে কি বলা যায়?আমি এখনও মোক্ষম শব্দ খুঁজে পাইনি।
ধরেন,বাসে এক অপরূপা কে আপনি আপনার সিট টা ছেড়ে দিয়ে বসতে দিলেন,অপরূপা আপনাকে ধন্যবাদ দেবার পর পাশের যাত্রীর সাথে হেসে হেসে গল্প করতে থাকে,তখন মেজাজ টা কিরকম লাগে?মাদার টেরিজা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে নাকি নিজেকে ধন্য মনে করতেন,জানিনা যে হাসি দেখলে মাথায় খুন চাপে ঐ হাসির ব্যাপারে মাদার টেরিজা কি সিদ্বান্ত নিতেন।
আবার,বাসে আপনার দিকে পেছন ফেরা এক যাত্রিকে পেছন থেকে দেখে মুরুব্বী মনে করে বসতে দেবার পর দেখলেন ওনার বয়স আপনার থেকেও কম,অকালে চুল পেকে যাওয়া বা পড়ার কারণে মুরুব্বী দেখা যায়।
রাস্তায় বিশাল জাম। তার ওপর,আপনার দেয়া সীটে ঐ যাত্রী ঘুমুচ্ছে। কি রকম রাগ লাগে?এরকম এক ঘটনায় ,যিনি সিট ছেড়ে দিয়েছেন ঐ চুল কম যাত্রীকে শুধোয় "ঐ মিয়া ঘুমান ক্যান?"
"ঘুমাইলে আপনের কি?সিট দিয়া কি কিন্না লাইছেন নাকি?লাগবোনা আপনের সিট। আপনের সিটে আপনে বন"
সে যাই হোক ,আপনি যদি মাসুদের বন্দ্ধু সুমনের পাল্লায় পড়েন আপনার জন্য এধরণের অভিজ্ঞতা নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হবে। সুমন এতো ঘন ঘন মতামত বদলায় যে তাল মেলানো কষ্টকর।
আমি সুমনকে এড়িয়ে চলি কিন্তু কিভাবে যেনো আমাকে কাহিনীতে জড়াবেই। আমরা থাকি গাজীপুর,মগবাজারে ভোর বেলাতে সুমনের সাথে দেখা দেখা হবে কেন?আপনাদের খুলেই কই-
অনেক দিন পর ভার্সিটি খুলবে। আমি পরদিন ভোরে সিলেট চলে যাবো। বড় ফুপু আমাদের বাসায় বেড়াচ্ছেন,বল্লো,"আজকে চল আমার বাসায় আমাকে মগবাজার নামিয়ে দিয়ে আয়,আগামীকাল আমার বাসা থেকে কমলাপুরে চলে যাবি"
পারাবত ট্রেন ভোর বেলা। ফুপুর বাড়ি থেকে বের হয়ে মগবাজার চৌরাস্তার কাছে দেখি সুমন এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
"তুই এতো ভোরে মগবাজারে কি
করস?"(আজও জানিনা ও তখন কোথা থেকে এলো!)
আমার প্রশ্ন যেনো শুনতে পায়নি,এমন ভাব দেখিয়ে বল্লো,"তোর ব্যাগটা ভারী ,দে আমি তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি,আমিও সিলেট যাচ্ছি"
আমি তখনো ভাবিনি সুমন আমার সাথে সিলেট যাবে।
আমি শুধোই," সিলেট কেন?"
"তোরে দেখে মন টা হু হু করে উঠলো। তোর ওখানে বেড়াবো মাজার জিয়ারত করবো। "
রেলের স্ট্যান্ডিং টিকেট করালো আমাকে দিয়ে।
ট্রেনে বসার পর সুমন কয়,"তুই যে আমার পরিচিত এটা বলবি না"
আমি কিছু বলতে যাবো আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দিলো।
ট্রেনের ওয়েটার কে খুব মুডে বল্লো,"শুনুন আমাকে আধা ঘন্টা পরপর চা দিবে,আর এখন নাস্তা দাও,আর বিল সিলেট এ একসাথে নিবে "
রেলের নাস্তার অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা জানেন,ক্ষণিকের উৎসাহে যেটাকে কাটলেট বলা হয়-দাম ৫০ টাকা,এক স্লাইস পাউরুটি(ওটাকে পাউরুটি বলা হলে তোষক কাকে বলে?)১০টাকা...,আর কি পরিমাণ খরুচে ব্যাপার!স্বয়ং ,প্রিন্স সদর আগা খান পর্যন্ত দাম শুনে ভিরমি খাবেন। নাস্তা খাবার পর সুমন সিলেট যাবেনা,এয়ারপোর্ট নেমে যাবে।
ওমা কিসের কি?এয়ারপোর্ট এসে গাড়ি দাঁড়াবার পর,সুমন বল্লো,"রবিন ,সরি আমার মনে ছিলো না,আজকে কাজ আছে গাজীপুরে। আই গটা গেট ডাউন হিয়ার,সরি মেট..."।
আমি কিছু না বলে সোল্ডার শ্রাগ করলাম,বিষয় টা কে পাত্তা না দিয়ে বই পড়ায় ডুব দিলাম।
আখাউড়া আসার পর,রেলের ওয়েটার প্রায় কাঁদো,কাঁদো,আমাকে বলে,"ভাই,আপনার সামনেঐ লোকটা কই ?উনি কি আপনার চেনা?"
আমি তো বেলালুম অস্বীকার।
চেহারাটা নিষ্পাপ ভাব এনে শুধোলাম"কেন ভাই কি হইছে?"
"আয়হায়!ঐ হারামজাদার কাছ থাইকা ৮৫ টাকা পাই,ভদ্র লোক মনে করছিলাম,কইছে সিলেট যাইয়া একবারে দিবো,পুরা গাড়ী চক্কর মাইরা দেখি উধাও। আমারে পথে বসাইয়া গেলো"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।