আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একান্তই ব্যক্তি আলাপচারিতা

মানবীয় গুনাবলির পরশ ছড়িয়ে যাবে সবখানে....এই আমার িবশ্বাস...।

সরদার ফজলুল করিম স্যার কর্তৃক এক সাংবাদিককে দেয়া পরামর্শকে অবশ্য পালনীয় মনে করে আনিসুল হকের লেখা ‌‍মা উপন্যাস পড়ি প্রথমবারের মতো। আমি এটা করেছি এ জন্য যে আমি বিশ্বাস করি এই জ্ঞানতাপস আনিসুল হকের বইয়ের কাটতি বাড়ানো বা আনিসুল হকের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর তাগিদে সাংবাদিক ভাই (?)কে এ পরামর্শ দেননি, তিনি এটাকে উচিত মনে করেছেন বলেই তা বলেছেন। উপন্যাসের একেবারে শুরুর দিককার কয়েকটা লাইন (...আজাদের মাকে দাফন করা হবে একটু পরেই। আজ ৩১শে আগস্ট।

১৯৮৫ সাল। গতকাল, ৩০শে আগস্ট, আজাদের মা মারা গেছেন। পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে আজাদের ধরা পড়ার ঠিক ১৪ বছরের মাথায়, একই দিনে, তিনি মারা গেলেন। এটা শহরের অনেক মুক্তিযোদ্ধারই জানা যে, এই ১৪টা বছর আজাদের মা একটা দানা ভাতও মুখে দেন নাই, কেবল একবেলা রুটি খেয়ে থেকেছেন; কারণ তাঁর একমাত্র ছেলে আজাদ তাঁর কাছে ১৪ বছর আগে একদিন ভাত খেতে চেয়েছিল; পরদিন তিনি ভাত নিয়ে গিয়েছিলেন রমনা থানায়, কিন্তু ছেলের দেখা পান নাই। অপেক্ষা করেছেন ১৪টা বছর, ছেলে আর ফিরে আসে নাই।

অপেক্ষার এই ১৪টা বছর তিনি কোনোদিন বিছানায় শোন নাই, শানের মেঝেতে শুয়েছেন, কী শীত কী গ্রীষ্ম, তাঁর ছিল একটাই পাষাণশয্যা, কারণ তাঁর ছেলে আজাদ শোবার জন্যে রমনা কি তেজগাঁ থানারয়, কি তেজগাঁ ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে বিছানা পান নাই। )পড়ার পর আমার মনে হয়েছিল (অন্ত:পক্ষে) বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরের প্রতিটি সন্তানের জন্য এই বই পড়াবার কর্তব্য তার শরীরের অস্থি-মজ্জার উপস্থিতির মতোই বড়ো জ্বলজ্বলে। অন্তরাত্মার যে গভীর জায়গা থেকে সন্তানের জন্য মায়ের এই মমতা সেই গভীরের কোনো আভাস তাঁর সন্তান বুঝতে পারুক বা না পারুক মা তাঁর সন্তানকে মমতা দিতেই থাকেন, ভালোবাসতেই থাকেন। বিশ্ব-সংসারের তাবত রত্নভান্ডার একসাথে জড়ো করলেও এ মমতার, এ ভালোবাসার বিনিময়মূল্য দাড় করানো সম্ভব নয়। এ মা যখন দেশের জন্য তাঁর সন্তানকে কোরবানী দেয়ার কথা ঘোষণা দেন তখন কারোরই বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে মা শুধুমাত্র দেশের বেলাতেই তাঁর সন্তানের সকল দায়-দায়িত্ব তুলে নিলেন, তুলে নেন।

অন্য কোনো জায়গাতেই তাঁর আস্থা নেই। যে যুদ্ধে মা বুকে পাথর বাঁধলেন (আমার দেশে) সেই যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭১এ, স্বাধীনতার যুদ্ধ। এবং আজকে সেই দিন যে দিনটি ছিলো যুদ্ধ শুরুর দ্বারপ্রান্তে। কি আশা, কি ভরসায় মা বুকে পাথর বেঁধেছিলেন? কি আশায় সন্তান চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে জেনেও যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন তা জানবার দায়ভার তাঁর ঐ সন্তানের না যিনি যুদ্ধে গেলেন, মায়ের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বার লোভ সংবরণ করলেন; সকল দায়ভার এ সন্তানের/সন্তানদের যারা এখন মায়ের সকল আদর-ভালোবাসা-মমতা (নির্লিপ্ত হয়ে) ভোগ করছি। আজ, এখন আমরা চিন্তা করে দেখি আমি/আমরা মায়ের কোন সন্তান/সন্তানসকল।

আমাদের বসবাস দায়হীন পৃথিবীতে নাকি প্রতিটি দায় এর সাথে অঙ্গাঅঙ্গি হয়ে!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।