আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্ভাব অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজে সহায়তা করবে রেসকিউ রোবট

https://www.facebook.com/arshinogorer.porshi

বিশ্বের প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিবছরই বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, সুনামি ও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। সম্প্রতি দেশে সিডর, আইলা, নার্গিস নামক ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলবর্তী এলাকা। এছাড়াও দেশের বড় বড় শপিং মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি দেশের সর্ববৃহৎ শপিং সেন্টার বসুন্ধরা সিটি অথবা গাজীপুরের গার্মেন্টস কারখানার কথাই চিনত্মা করা যাক।

এসব ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় দ্রম্নত উদ্ধার কাজের অভাবে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনই আশঙ্কা থেকে অগি্নকা-, ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ৫ শিক্ষার্থী মিলে উদ্ভাবন করেছে উদ্ধারকারী রোবট বা রেসকিউ রোবট। উদ্ভাবিত এ রোবটটির নাম BCA5I (Bangladesh CUET ASRRO 5 Initial)। রোবট উদ্ভাবনকারী দলের সদস্যরা হলেন_ এমটিআর আজাদ পোদ্দার, দিব্য জ্যোতি ফৌজদার, ইনসান আরাফাত জামিল, কাদের ও শাহরিয়ার।

অগি্নকা- বা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার ও সাহায্য করার জন্য এ সিরিজের রোবটগুলো কাজ করবে। রোবটটির কার্যপ্রণালি সম্পর্কে গবেষকরা বলেন, উদ্ধারকারী সিরিজ রোবটের আওতায় সর্বপ্রথম যে রোবটটি তৈরি করা হয়েছে তা অগ্নিকাণ্ড থেকে দুর্গতদের উদ্ধারে ব্যবহার করা যাবে। প্রাথমিকভাবে রোবটটিকে লাইন ফলোয়ার হিসেবে কাজ করানো হয়েছে। এ রোবটটি গৃহে আগুন লাগলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করবে, এ্যালার্ম দেবে এবং উদ্ধার কাজ শুরম্ন করবে। নতুন সংযোজন হিসেবে আগুন হতে উদ্ধার করার জন্য রোবটে একটি মডিউল ব্যবহার করা হয়েছে।

এ মডিউলটি তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে নিজ থেকেই কাজ শুরু করবে এবং এর মাইক্রো কন্ট্রোলারে যে লজিক দেয়া আছে সে অনুসারে উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরম্ন করবে। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (বিএসএমই) এবং চুয়েটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সর্বশেষ বিজ্ঞান মেলায় উদ্ধারকারী সিরিজের এ রোবটটি তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে। গবেষক সূত্রে জানা যায়, রেসকিউ সিরিজ রোবটের আওতায় আরও কয়েক ধরনের উদ্ধারকারী রোবট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ভূমিকম্প উদ্ধারকারী রোবট, উভচর রোবট ইত্যাদি। ভূমিকম্পে উদ্ধারকারী রোবটের কার্যপ্রণালি সম্পর্কে গবেষকরা জানান, এ রোবটটি লাইন ফলোয়ার সেন্সর ব্যবহার করে তার গন্তব্যস্থলে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারবে।

এর একটি শক্তিশালী হাত রয়েছে যাতে দুটি আঙ্গুল যুক্ত আছে। আঙ্গুল দুটোকে মানুষের ন্যায় সঙ্কোচন এবং প্রসারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আঙ্গুলের সঙ্গে যুক্ত আছে সেন্সর যার ফলে রোবটটি আহত ব্যক্তির আকার ও আয়তন সম্পর্কে ধারণা করে দ্রুত উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করতে পারবে। রোবটটিতে যুক্ত মাইক্রো-কন্ট্রোলারে 'সি' প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্ভাবক সূত্রে আরও জানা যায়, রোবটটির মান আরও উন্নত করে অত্যাধুনিক রোবটে পরিণত করা হবে, যাতে সংযুক্ত থাকবে Thermographic camera Ges wireless transmission system।

এ ক্যামেরার মাধ্যমে রোবটটি দুর্ঘটনায় আটকে পড়া কোন ব্যক্তি জীবিত আছে কিনা তা বুঝতে পারবে এবং তার transmission system-এর মাধ্যমে কন্ট্রোল রম্নমে দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তির অবস্থা এবং তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাঠাতে পারবে। যার ফলে দ্রম্নত সে স্থানে গিয়ে ঐ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এ রোবটেতে যুক্ত হতে যাওয়া যন্ত্রাংশগুলো বাংলাদেশে না থাকায় তা বিদেশ থেকে আনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উদ্ভাবক সূত্র জানায়। চুয়েটের রোবট বিষয়ক গবেষণাকারী সংগঠন 'অ্যাসরো' (এন্ড্রমিডা স্পেস এ্যান্ড রোবটিক রিসার্চ এ্যাসোসিয়েশন)-এর দু'টি দল বর্তমানে উদ্ধারকারী রোবট গবেষণায় কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে উভচর রোবটের কাজ প্রায় শেষের পথে।

এ ধরনের রোবটের মূল কাজ হবে জলোচ্ছ্বাসদুর্গত মানুষকে উদ্ধার ও সাহায্য করা। একই সঙ্গে রোবটটিকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়াটিও প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। উদ্ধারকারী রোবট গবেষণায় তাদের সাহায্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক ড. সজল চন্দ্র বণিক। চুয়েটের এই দলটির রোবট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব। গবেষকরা জানিয়েছেন, দেশে রোবট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান একবারেই পাওয়া যায়না।

বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেশের বাইরে থেকে আনতে হয়। গবেষকরা সরকারের কাছে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সময়য়োপযোগী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশেই উন্নততর রোবট নির্মাণ সম্ভব হবে। চুয়েটের এ পাঁচ তরম্নণ নির্মাতার লক্ষ্য এবিইউ রোবোকনেসহ অন্যান্য আনত্মর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা। এ উদ্ভাবন সম্পর্কে দিব্য জ্যোতি ফৌজদার বলেন- 'বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ।

প্রতিবছরই এ দেশে ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড ও জলোচ্ছ্বাসে হারিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ প্রাণ। বর্তমানে বিশ্বে এমন কোন যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি যেটি দ্বারা আগেই ভূমিকম্পের অবস্থান সম্পর্কে জানা যাবে। যেহেতু অবস্থান সম্পর্কে জানা যায় না তাই আমরা টার্গেট করেছি ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারতৎপরতার ওপর। এছাড়াও অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী উদ্ধারতৎপরতার ঘাটতির কারণে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। এরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার ওপর জোর দিয়েই আমরা রোবটটি তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.