আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেসব দক্ষতা লাগেই...

...

শিক্ষক থেকে চিকিৎসক। ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে প্রকৌশলী। সব পেশাতেই আছে নিজস্ব দক্ষতার কেরামতি। একেক পেশার যোগ্যতা বা দক্ষতার রূপটি হয় একেক রকম। তবে কিছু কিছু দক্ষতা আছে, যা প্রতিটি পেশা বা চাকরির জন্যই দরকার।

এ দক্ষতাগুলো সহায়তা করে চাকরি পেতে এবং কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে। এ যোগ্যতাগুলোই অনেকাংশে নির্ধারণ করবে আপনার চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পেশাজীবনের সফলতা। জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই সাধারণ জ্ঞান নয়, অতি সাধারণ। জানার কোনো শেষ নেই, শুধু শুরুই আছে। একটা নোট তৈরির জন্য ৮-১০টা বই।

ক্লাসের ফাঁকে সময় পেলেই লাইব্রেরিতে কিছুক্ষণ পড়াশোনা। ছাত্রজীবনে পড়াশোনা করা—শেখার প্রতি এই আগ্রহটাই সাধারণ জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করে; যা পরবর্তী সময়ে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় সহায়কের ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশসরকারি কর্মকমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মাদ মোহাব্বত খান জানান, যেকোনো ভালো চাকরির জন্য বিস্তৃত জ্ঞান দরকার। কোন বিষয়ে পড়ালেখা করছেন সেটা বড় নয়। বরং পড়ালেখার বিষয়টির পাশাপাশি জানতে হবে অন্যান্য অনেক বিষয়ই।

চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এ জ্ঞান সহায়তা করে। সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি ভালো দখল থাকা প্রয়োজন ইংরেজি ও বাংলা বিষয়েও। দক্ষিণ এশিয়াসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ঘটনাবলি, গণিতের ভিত্তি সম্পর্কেও জানা দরকার। এ দিকগুলো জানা থাকলে যৌক্তিক চিন্তাচেতনা লাভ হয়। প্রতিযোগিতামূলক যেকোনো পরীক্ষার লিখিত ও মৌখিক মাধ্যমগুলোতে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন জেনে রাখা অগণিত বিষয়ের কারণেই।

এ জন্য চিকিৎসক হতে চাইলেও জেনে রাখা দরকার বাংলাদেশের জেলা কয়টি। ‘লোকপ্রশাসন বিভাগে পড়লেও ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় সম্পর্কেও জানা দরকার। তাহলেই নিজেকে প্রকৃতপক্ষে তৈরি করা যাবে ভালো চাকরির জন্য। ’ জানালেন অধ্যাপক মোহাম্মাদ মোহাব্বত খান। এই সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডার বাড়াতে নিয়মিত খবরের কাগজের পাশাপাশি আপনাকে সহায়তা করবে বিভিন্ন সাময়িকপত্র।

আর এ যুগে ইন্টারনেট তো আছেই। দক্ষ হন যোগাযোগে পড়াশোনা তো করা হলো। জ্ঞানের মাত্রাও বাড়ানো হলো। এবার অন্য দক্ষতার দিকে নজর দেওয়া যাক। আর সেটা হলো, ভালো যোগাযোগ স্থাপনা।

‘চাকরির সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্নকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভালোভাবে কথা বলতে জানলেই হবে না। কথা অর্থবহ এবং তথ্যবহুল হতে হবে। কথার মধ্যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় থাকতে হবে। ’ বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

তিনি আরও জানান, যোগাযোগ স্থাপনের সময় চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা উচিত। এ ছাড়া শব্দ চয়ন, বলার ভঙ্গি এবং শুদ্ধ উচ্চারণে পরিষ্কারভাবে কথা বলতে পারাটাও দক্ষতার পরিচয় দেবে। যোগাযোগ স্থাপনের দক্ষতা চাকরি পাওয়ার পাশাপাশি পদোন্নতির ক্ষেত্রেও আপনাকে সহায়তা করবে। উজ্জ্বল করবে আপনার ভাবমূর্তি। এ ক্ষেত্রে সহকর্মী, অধস্তন কর্মকর্তা, নিম্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময় খুব সতর্কতার সঙ্গে শব্দ চয়ন করা দরকার।

পেশাগত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে সবার জন্য। এটা তার যোগাযোগ করার মাধ্যমেই ফুটিয়ে তুলতে হবে। বাচনিক, অবাচনিক যোগাযোগ স্থাপনার এ দুটি দিকই নৈপুণ্যের সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে হবে। যোগাযোগ স্থাপনায় যাঁরা দুর্বল, তাঁদের জন্য কিছু দিক নির্দেশনা দিলেন রোবায়েত ফেরদৌস। নিজে নিজে একটু চর্চা করতে পারলে ভালো হবে।

এ ছাড়া পড়াশোনার বাইরেও বাড়তি কাজ হিসেবে বিতর্ক করা, সংগঠন করা, নিজে নিজে কবিতা আবৃত্তি করা, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার চর্চা করতে পারে। দরকার আত্মনির্ভরশীলতা, সততা এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করছেন, কিন্তু এগিয়ে যেতে পারছেন না কর্মক্ষেত্রে। কোনো না কোনোভাবে পিছিয়ে পড়ছেন। এ দিকটি কাটিয়ে তুলতে লক্ষ করুন আরও কিছু দক্ষতার দিকে। যেকোনো কাজ নিজে করতে পারার দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে।

পারব না ভেবে হাল ছেড়ে দেওয়া, অন্যের দিকে বারবার ছুটে যাওয়ার প্রবণতা বাদ দিতে হবে। কর্মচারী হিসেবে আপনাকে দপ্তরের খুঁটিনাটি অনেক কাজই হয়তো করতে হবে। হাসিমুখে কাজগুলো করার চেষ্টা করুন। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের প্রধান দিলরূবা এস খান জানান, অন্যান্য গুণের পাশাপাশি একজন কর্মচারীর সততা, ইতিবাচক মনোভাব, কাজের প্রতি উৎসাহও চাকরি পাওয়ার দক্ষতার ভেতরেই পড়ে। একজন কর্মচারীর কর্মক্ষেত্রে সব কাজ করার মানসিকতা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায় অনেক দূর।

আরামপ্রিয়তা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। পরিশ্রমী মনোভাব এবং কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকতে হবে। দিলরূবা এস খান জানান, সময়নিষ্ঠ হতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে আপনি সময়মতো অফিসে ঢুকলেন এবং বের হলেন। বরং যে কাজটি যখন করা দরকার, তখনই করতে হবে।

এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর মতো মানসিকতা না থাকলে তা গড়ে তুলুন এখন থেকেই। কম্পিউটারে দক্ষতা দুনিয়াটাই এখন প্রযুক্তিনির্ভর। কর্মক্ষেত্রের প্রায় সব কাজই এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়। এ কারণে কম্পিউটারে দক্ষতা থাকতে হবে। মোহাম্মাদ মোহাব্বত খান জানান, শুধু টাইপ করা জানলেই হবে না।

জানতে হবে ই-মেইল করা, যেকোনো ফাইল খোলাসহ খুঁটিনাটি বিভিন্ন কাজ। ‘রিপোর্ট দেখা, তথ্য বিশ্লেষণ, গ্রাফিক্যাল অথবা টেবুলেশন প্রেজেন্টেশন করা প্রভৃতি কাজের জন্য কম্পিউটারের কাজ জানা খুবই জরুরি। এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট কাজ জানাটা এ ক্ষেত্রে খুবই দরকারি এ জন্য। কর্মক্ষেত্রে এ দক্ষতা আপনাকে আলাদা করবে অন্যদের চেয়ে। ’ জানান দিলরূবা এস খান।

ভালো লেখার ক্ষমতা ভারী ভারী শব্দের ব্যবহার এবং বিষয়বস্তু পেঁচিয়ে লেখার মতো গুণগুলোকে ত্যাগ করুন এখনই। বরং সহজ ভাষায়, সুন্দর করে লেখাই আপনাকে অন্যদের সুনজরে ফেলবে। যতই কম্পিউটার ব্যবহার করুন না কেন, হাতের লেখার দিকেও নজর দিতে হবে। এ বিষয়ে মোহাম্মাদ মোহাব্বত খান বলেন, মনের ভাব ফুটিয়ে তুলতে চাইলে তা গুছিয়ে লেখা উচিত। এটি সব পেশায়ই প্রযোজ্য।

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, রোগীর প্রেসক্রিপশন লেখার সময় একজন চিকিৎসকের হাতের লেখা পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি গোছানোও হওয়া উচিত। এতে রোগীর বুঝতে সুবিধা হয়। সরকারি কর্মকর্তাদেরও এ দক্ষতাটি আবশ্যক। কারণ, একটি কেস লেখার সময় সবকিছু গুছিয়ে, সবদিক তুলে ধরতে হয়। মেরিট কী, ডেবিট কী—সেগুলো পরিষ্কারভাবে লেখতে না পারলে তো সবার সামনে উপস্থাপনও করতে পারবেন না।

এ জন্য ভালো লেখার জন্য চর্চা করা খুবই দরকার। [কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো পত্রিকা। আমার কাছে ভালো লাগায় ব্লগে সংরক্ষন করে রাখলাম। ]


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.