আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালো থেকো সুরঞ্জনা, তোমার সমস্ত আকাশ জুড়ে ভালো থেকো তুমি



দু'তিনটা লেখা পড়ার পরে সুরঞ্জনা আপার ''না বলা কথাটুকু'' পড়ে বুঝলাম যে তিনি আমার মায়ের বয়সি হবেন। তারপর থেকে বেশ সত:স্ফুর্তভাবেই আমি তাঁর পোষ্টে কমেন্ট করছি। কারণ অনেক মেয়েই নিজেদেরকে 'মেয়ে' ভাবেন, আর 'মেয়ে' বলে ছেলেদের বিশেষ দৃষ্টি তাদের প্রাপ্য মনে করেন। অনেক ছেলেও আবার এই মহাকাব্যে নিজের নাম লেখান, নিজের নামটি এই মহাকাব্যে দেখতে পেয়ে সুখী বোধ করেন। আমি যে এই সুখে কখনো শিহরিত হয়ে উঠতে চাইনি, তা নয়, এতটা নির্দয় আমি নই।

কিন্তু আমি দেখেছি, অন্য আরো অনেক কিছুর মত এই সুখ আমার কপালে সয় না। কেনো এই সুখ আমার কপালে সয় না, তা না বুঝলেও এটি স্পষ্ট যে, মেয়েদের চোখ বাঁকা নয়, ভঙ্গি বাঁকা নয়, চলন বাঁকা নয়, এ আমার কপালেরই দোষ। আর যেহেতু আমারই কপাল, তো, যত মন্দই হোক, আমার এই মনের দু:খ কাউকে বলতেও পারি না। যাক, আমার এই মনের দু:খ মনে রেখেই মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমার মনের দু:খ আপনারা শুনবেন কেনো? আমাদের যাপিত জীবনে, ফুল আর কাটা বিছানো আমাদের পথে, পথের বাঁকে কত যে চিহ্ন, কত না রঙবেরঙের।

কত জনের সাথে কত রকমের সখ্যতা গড়ে উঠে আমাদের। ''না বলা কথাটুকু''তে আমার বা'বুকে বেঝে উঠে বিচ্ছদের এই করূন সুর : ছেলেবেলার খেলার সাথী, সহপাঠি, এবং আরো কত জনের সাথে যে আর দেখা হয় না! কারো কারো সাথে হয়তো এ-জীবনে আর দেখা হবে না। এই আমি বেঁচে আছি, ওরা বেঁচে আছে, তবু এই আমরা মৃত্যুর সমান, (অন্তত যাদের সাথে আর দেখা হবে না)। কী ছোট মানুষের জীবন। কোনো দৃশ্য বা জায়গার বেলায়ও এটি প্রযোজ্য, যেমন আমাদের স্কুল, স্কুল আমরা অনেক দেখি, কিন্তু আমরা যে স্কুলে পড়ে এসেছি, সেই স্কুলের পাশ দিয়ে হেটে গেলে আমাদের মন কেমন যেন হয়ে যায়, যা অন্য কোনো স্কুলের পাশ দিয়ে গেলে হয় না।

''না বলা কথাটুকু'' আমার চিত্ত বীণার তারে এই সাড়া দিয়ে গেলো। ''ছেলেবেলার খেলার সাথিরা আজ কে কথায় আছে, কেমন আছে জানিনা। তাদের সবার নাম আজ আর মনে নেই। '' এই বাক্য দুটো পড়া মাত্রই আমাদের চোখ চলে যায় বা ফিরে যায় আমাদের ছেলেবেলায় বা ফেলে আসা অথবা পার হয়ে আসা দিনগুলোয়। আমাদের চোখে অনেক মুখ ভেসে উঠে, অনেক দৃশ্য ভেসে উঠে।

আবার অনেক মুখ ও দৃশ্য কেমন যেন, ভেসে উঠতে উঠতে তলিয়ে যায়, ভেসে উঠতে পারে না, ভেসে উঠতে অনেক চেষ্টা করে, তবু পারে না। এই মুখ ও দৃশ্যের এ-প্রচেষ্টা, ব্যর্থ এ-প্রচেষ্টা কষ্টের ঢেউ হয়ে আমাদের বুকে আছড়ে পড়ে। আবার যে মুখ ও দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে, তার মধ্য থেকেও অনেক মুখ ও দৃশ্য কষ্টের ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ে আমাদের বুকে, বুকের ভেতরে। আর কোথায় যেন হারিয়ে যাই আমরা, না জানি কোথায় যেন হারিয়ে ফেলি নিজেদেরকে। উদ্ধৃতি বাক্য দুটো ''খেলার সাথিরা কোথা আজ তোরা, ভুলিইয়াই গেছি নাম...'' এর প্রথম দু'বাক্য।

এখানে যে অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে, একে এরিক ফ্রমের ভাষায় বললে ''ভ্রাতৃপ্রেম বা সখ্য''। তিনি বলেছেন, ''সর্বপ্রকার প্রেমের ভিত্তিস্থলে সখ্য বা ভ্রাতৃপ্রেম। ভ্রাতৃপ্রেম সর্বপেক্ষা মৌলিক প্রেম। যে-প্রেমের উপাদান, অন্যব্যক্তির জীবনের প্রতি যত্নশীলতা, শ্রদ্ধা, দায়িত্বশীলতা ও শুভেচ্ছা ইহা সেই প্রেম। '' যাদের ভেতরে এই প্রেম নেই, নি:সন্দেহে প্রেমের দেখা তারা পাইনি।

প্রেম কেবল মাত্র কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রতি হতে পারে না। যার ভেতরে ভ্রাতৃপ্রেম যতটা প্রবল, সে ভালো-মন্দ মিলিয়ে বা একটা পর্যায় ভালো-মন্দ ছাপিয়ে মানুষকে মানুষ হিশেবে দেখতে পায়, এবং সে নিজে ক্রমশ আরো বড় মানুষ হয়ে ওঠে, ''একজন মানুষ'' হয়ে উঠে। সুরঞ্জনা আপাকে আমরা এরই প্রতিরূপ হিশেবে দেখতে পাই, তাই এ-কথাগুলো বলা। আর মানুষের মানুষ হয়ে ওঠা একটা নিরন্তর প্রক্রিয়ার বিষয়। এটি কতিপয় বা নির্দিষ্ট কোনো নৈতিকতা বা মাপকাঠির বিষয় নয়।

''আমি মা'' আপার যত্নশীলতা, দায়িত্বশীলতা ও অনুভূতিপ্রবণতা সম্পন্ন, এবং আমাদের ভেতরে এইসব বৈশিষ্ঠের চিন্তার উদ্রেক করা এ-পোষ্টে আমার কমেন্ট ও তাঁর রিপ্লাই তুলে দিলাম : ''এই যে আপনার অনুভূতি, আপু, এই অনুভূতি প্রত্যেক মায়ের অনুভূতি হয়ে উঠুক; এই শুভ কামনা। '' (কমেন্ট)। ''হানিফ, এই মা'এর ভালোবাসা আর আশীষ নিও। '' (রিপ্লাই)। সুরঞ্জনা আপার লেখা খুবই বৈচিত্রময়, তিনি তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ জীবনের কথা আমাদের শোনান, ''আমি বিজয় দেখেছি...'' পোষ্টে সেই সময়কার সুরঞ্জনা, এক কিশোরীর চোখে আমরা মুক্তিযুদ্ধেরর বিভিষিকা দেখতে পাই।

এখন চলছে ''স্মৃতি ১৯৭১''। ''কোথায় আছ কেমন আছ মা...''-এ দেখতে পাই এক সন্তানের আর্তি। পারিবারিক ভালোবাসার গল্প ''কত দিন দেখিনি তোমায়''। ফুল নিয়ে আছে তাঁর নানা তথ্য ও অনুভূতির কথা, ''ফুলের বনে যার কাছে যাই তারেই লাগে ভালো...''-এ যেমন : ''ফুটবে আবার দোলনচাঁপা চৈতী রাতের চাঁদনী / আকাশ ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদনী...'' নজরুলের এই লাইন তুলে দিয়ে বলেছেন, ''নজরুল কত সুন্দর করে দোলনচাঁপার কথা বলেছেন। অতো সুন্দর করে না বলতে পারলেও নজরুল থেকে কম ভালবাসিনা।

এটা আমার অনেক প্রিয়। যখনই বাগান করেছি প্রিয় সব ফুলের সাথে অবশ্যই দোলনচাপাও বাগানে লাগিয়েছি। গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা এই ফুলটিও বর্ষায় ফোটে। '' ''বাবার চিঠি''-তে উঠে আসে সেই সময়কার বিদ্যমান সমাজিক অবস্থা। এখানেই শেষ করি।

ভালো থেকো সুরঞ্জনা। আজীবন সুন্দর আর চিরসবুজ থেকো। ভালো থেকো সুরঞ্জনার সকাল ও সন্ধ্যা। ভালো থেকো সুরঞ্জনার দিন ও রাত। ভালো থেকো সুরঞ্জনার স্বপ্ন ও সাধ।

ভালো থেকো সুরঞ্জনার দু'চোখর মণি। সবখানে ছড়িয়ে তোমার চেতনার আলো, তোমার সমস্ত আকাশ জুড়ে ভালো থেকো তুমি। ___________________ কমেন্টগুলোও দেখার অনুরোধ রইলো। কারণ অনেক কমেন্টই বেশ প্রাসঙ্গিক। আমি ত্রাতুল ভাইর '২৪' নং কমেন্টটির কথা বলতে পারি, এখানে সুরঞ্জনা আপা ছাড়াও কয়েকজন ব্লগার এবং আরো কিছু প্রসঙ্গ এসেছে।

অবশ্য অনেক কমেন্টই উল্লেখযোগ্য। এ-বিষটি আমি এ-জন্য বললাম যে, কে কাকে নিয়ে কি বলছে, তার চেয়ে গরুত্বপূর্ন হলো, মানুষকে মানুষ হিসেবে গন্য না করার এই দিনে, এখানে যে শ্রদ্ধ্যা, ভালোবাসা ও সখ্যতা প্রকাশ পেয়েছে তা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.