লেখক: মুহাম্মদ আমিনুল হক
এদেশে একটি কথা প্রচলিত আছে- ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর’। এরকম অসংখ্য প্রবাদবাক্য আমাদের মাঝে বিদ্যমান। অল্প বিদ্যা যে ভয়ঙ্কর, তা মনে হয় সবাইকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। কিন্তু ইদানিং পত্রপত্রিকায় ফতোয়া, দোররা, পাথর ছুড়ে মারা ও ইসলামের অনেক বিধান নিয়ে যেভাবে লেখালেখি হচ্ছে তাতে ঘুরেফিরে এই প্রবাদ বাক্যটিই আমার মানসে বার বার ভেসে উঠছে। এ বিষয় কোন কিছু লেখার ইচ্ছা না থাকলেও বিবেকের তাড়না ও একান্ত সুহৃদদের অনুরোধে না লিখে আর পারছি না।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের স্বভাব হল, কোন বিষয়ের এক্সপার্ট না হয়েও এক্সপার্ট সেজে যান অনায়াসে। যার যাতে জ্ঞান নেই তা নিয়ে মন্তব্য ও ঘাটাঘাটি করেন। এতে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, সাধারণ মানুষ এদের কথায় বিভ্রান্ত হন, হন পথভ্রষ্ট। এদেশের অধিকাংশ টিভি মিডিয়া ও সংবাদপত্র এখন সিন্ডিকেটেড দুর্বিত্তায়নে লিপ্ত। এদের প্রধান টার্গেট হলো ইসলাম।
ইসলামের নানা বিধি বিধানের সমালোচনা করা এদের কাজ। ইসলামের বিভিন্ন বিধানের বিরোধীতার পিছনে মূলত: এদেশ থেকে গোটা ইসলামকে বিদায় করাই উদ্দেশ্য। কেননা হান্টিংটনের 'The clash of Civilization' বইতে পশ্চিমা সভ্যতার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই বিশ্বব্যাপী চলছে ইসলাম ও মুসলিমের মহানিধনযজ্ঞ। সারাবিশ্বে পশ্চিমাদের গোলামেরা যে যার মত করে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করার চেষ্টা করছে।
আমাদের দেশে বিকৃত মস্তিস্ক ওয়ালা একদল ভাড়াটে বুদ্ধিজীবি, লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক রাত-দিন ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তরিকভাবে খেটে যাচ্ছেন। লক্ষ একটাই ইসলাম ও মুসলমান।
সমাজ জীবনে নানা ঘটনা দুর্ঘটনা আমাদের জীবনের অনুষঙ্গ। বিশ্বের আনাচে কানাচে প্রতিদিন কত অনাচর, হত্যা, ব্যাভিচার, ধর্ষণ, অপহরণ, বোমাবাজি মানব জীবনকে বিষাক্ত করে তুলছে। আমাদের দেশে হত্যা, রাহাজানি, মারামারি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, সীমান্তে হত্যা, ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, ক্রস ফায়ার, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, রিমান্ডে নির্যাতন, অপহরণ, সন্ত্রাস সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে চলেছে।
যে কোন অপরাধ ঘটলেই মিডিয়ায় এ নিয়ে নানান ধরনের বিশ্লেষণ চলতে থাকে। চলে নানা ধরনের লেখালেখি। অনেকেই ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মতামত প্রকাশ করেন। আবার অনেকেই ওৎ পেতে থাকেন। যেকোন ঘটনা ঘটলেই তাতে ইসলামের নাম জুড়ে দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকেন ধারাবাহিকভাবে।
তারা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করেন। বিশেষকরে একটি বামচক্র আছে যাদের কাজই হলো ঘটনার নাম ধরে ইসলামকে খাটো করা। আসল ঘটনাটি মাটি চাপা দিয়ে ছলে বলে কৌশলে ইসলামকে জড়িয়ে অনেক আজগুবি কথা বাজারে ছেড়ে সাধারণ মানুষকে ধর্মের ব্যাপারে বিস্বাদময় করা হয়। তাদেরকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। ইসলাম বিরোধী আইন পাশ করানোর পায়তারা করা হয়।
অনেকদিন আগে নূরজাহানের মৃত্যু এবং অতি সম্প্রীতি হেনার মৃত্যু নিয়ে দেশব্যাপি আলোড়ন তৈরী হয়েছে। এদের মৃত্যুতে সবাই শোকাহত হয়েছে। এ ধরনের মৃত্যু কোনভাবে কাম্য নয়। যাদের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। যারা তাদেরকে দোররা মেরেছে তারা তা করার অধিকার রাখেন না।
একটি রাষ্ট্রের আদালতের মাধ্যমেই কেবল যেকোন অপরাধীর বিচার সম্পন্ন হবে, এটাই নিয়ম।
একটি দুখজনক ঘটনা নিয়ে আরো জঘন্য দুখজনক কান্ড ঘটতে দেখলে আমাদেরকে তা ব্যথিত করে। আর তা হচ্ছে হেনার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইসলামী আইন রহিতকরণ ও আল্লাহর আইনের বিভিন্ন খুত ধরার চেষ্টা। ইতোমধ্যে একটি পত্রিকায় লেখা এসেছে ‘আর নয় ফতোয়া’। এছাড়াও বিভিন্ন শিরোণামে বিভিন্ন লেখায় আল্লাহর আইনের সমালোচনা করা হচ্ছে ভয়ঙ্করভাবে।
বাম ধারার পত্রিকাগুলোতে এ ধরণের লেখা প্রায়ই প্রকাশিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ৩ মার্চ রোজ বৃহস্পতিবার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় নাজমা মোস্তফার ‘দোররা’ লেখাটি পড়ে হতবাক হয়েছি। কারণ আমার দেশ পত্রিকার মত একটি পত্রিকায় এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক লেখা জনগনকে বিভ্রান্তিতে ফেলবে। নাজমা মোস্তফার লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। এরকম সীমাবদ্ধতা নিয়ে ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার কলম ধরা বিবেচনা প্রসূত কাজ হয়নি।
কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এ চারটি হচ্ছে ইসলামী শরীয়ার উৎস। কুরআন হচ্ছে প্রথম উৎস। হাদীস দ্বিতীয় উৎস। হাদীস কুরআনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ। ইজমা কিয়াসের মানদন্ড হচ্ছে কুরআন ও হাদীস।
সকল বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ আল্লাহ তায়ালা কুরআনে দেননি। রাসূলের মাধ্যমে আল্লাহ তার বিধানকে পূর্ণাঙ্গভাবে মানুষের সামনে পেশ করেছেন। আল্লাহর কালাম যেমন শরীয়ত, তেমনি রাসূলের কথা কাজও শরীয়ত। কুরআন থেকে রাসূলের হাদীসকে পৃথক করার কোন সুযোগ নেই। নাজমা মোস্তফা তার আর্টিকেলে লিখেছেন ‘আমাদের প্রকৃত সিলেবাসই কোরআন।
আমরা সব সময়ই যত না জপি তত কিন্তু পালন করি না’। উপরোক্ত দুটি বাক্যের প্রথমটি দিয়ে তিনি শরীয়াতের মূল ভিত্তি শুধু কুরআনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন এবং হাদীস, ইজমা, কিয়াসকে অস্বীকার করেছেন যা তার পুরো লেখার মধ্যে ফুটে উঠেছে। আর দ্বিতীয় বাক্যে আমরা সব সময়ই যত না জপি তত কিন্তু পালন করিনা বলে কুরআনকে অন্যধর্মগ্রন্থের মত পুথিনামা, জপনামার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বাক্যটিও অশুদ্ধ মনে হয়েছে। ‘আমরা সব সময়ই যত না জপি তত কিন্তু পালন করি না’।
এই বাক্যে দুবার ‘না’ ব্যবহার করে তিনি বাক্যটির যা অর্থ করতে চেয়েছেন; হয়েছে তার উল্টো।
পুরো আর্টিকেলটিতে তিনি বেশ কয়েকটি জঘন্য কমেন্ট করেছেন যা মেনে নেয়া যায় না। তিনি লিখেছেন-‘......এর সূত্র ধরে আর একটি বিধান পাথর মারা, যা মূলত ইসলাম ধর্মের কোন বিধানই নয়। পবিত্র কোরআনের কোথাও এমন ধারার কোন শাস্তির বিধান নেই। .....পাথর মারার বিধান: মুসলমানের নয় এটি ইহুদিদের বিধান’।
উপরোক্ত বাক্যগুলি প্রমাণ করে নাজমা মোস্তফা কত মূর্খ! বিবাহিত পুরুষ কিংবা নারী যেনা কারীর ব্যাপারে ইসলামের শাস্তি হল পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা। এ শাস্তির বর্ণনা রাসূল (স.) এর কথা ও কাজ উভয় দিক থেকে সন্দেহাতীতভাবে পাওয়া গেছে। উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা.) এর বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, “বিবাহিত যেনাকারীর শাস্তি বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর নিক্ষেপ করে মারা)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, মালিকের স্ত্রীর সাথে জনৈক মজুরের যিনার ঘটনায় রাসূল (স.) হযরত উনায়স আল আসলামিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন- “যদি মেয়েটি স্বীকার করে, তাহলে তুমি তাকে রজম কর”। মেয়েটি যেনার কথা স্বীকার করে এবং তাকে রজম করা হয়”।
তাছাড়া রাসূল (স.) নিজেই যে কয়েকটি রজমের দন্ড প্রদান করেছেন, তাও বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদীসের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।
রজমের ব্যাপারে আপত্তি: কেউ কেউ বিবাহিতদের যিনার শাস্তি রজম নয় বলে মন্তব্য করে থাকেন। তাদের যুক্তি হল, পবিত্র কুরআনে রজমের কথা নেই। তাদের এ আপত্তির জবাব হল, তাদের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা কুরআনে কোন বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় কিছু উল্লেখ না থাকলেই যে তা শরীয়াতের দলীল হতে পারে না, তা ঠিক নয়।
কারণ, কুরআনের মত সুন্নাতও শরীয়াতের একটি প্রধান উৎস। সুন্নাতে স্পষ্টভাবে রজমের কথা উল্লেখ আছে। তাছাড়া খুলাফা রাশেদুনও এ বিধান কার্যকর করেছেন। এ প্রসংগে হযরত ওমর (রা.) এর বক্তব্যটি প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, “আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (স.) কে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন।
তাঁর প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। সে অবতীর্ণ বিষয়াবলীর মধ্যে রজমের আয়াতও ছিল। আমরা তা পড়েছি এবং তা সংরক্ষণও করেছি। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (স.) রজমের দন্ড দিয়েছেন। পরে আমরাও তা করিয়েছি।
আমার আশঙ্কা হচ্ছে, সময়ের ব্যবধানে লোকেরা হয়ত বলবে আল্লাহর কিতাবে আমরা রজমের আয়াত পাচ্ছিনা। এভাবে তারা আল্লাহর নির্ধারিত ফরয ত্যাগ করে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। মনে রেখ, রজম আল্লাহর কিতাবেরই বিধান। বিবাহিত নারী-পুরুষ যিনা করলেই এবং তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেই, অথবা গর্ভ হয়ে গেলে কিংবা কেউ স্বীকার করলেই তা কার্যকর হবে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর শপথ! ওমর আল্লাহর কিতাবে বৃদ্ধি করেছে লোকেরা একথা বলে বেড়াবে- এ আশঙ্কা না হলে আমি অবশ্যই কুরআনে আয়াতটি লিখে দিতাম”।
নাজমা মোস্তফা বলেন: ‘সব পাপের বিচারকর্তা স্রষ্টা নিজেই। কিছু কিছু পাপের বিচারের বিধান নির্ধারণ করা হয়েছে, আমাদের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থটিতে হারাম এবং হালালের নির্দেশ দেয়া আছে। এতে মদ, শূকর, মাদকদ্রব্য, রক্ত, জুয়া খেলা, আল্লাহ ছাড়া অন্য নামে যবেহকৃত জীব, জবেহবিহীন আঘাতপ্রাপ্ত মরা জীব এসব নিষিদ্ধ; এর জন্য কোন শাস্তি আমার জানা নেই;.....
নাজমা মোস্তফার কোন বিষয়ে জানা না থাকলেই কি আমরা ধরে নেব এ বিষয়ে শরীয়াতের কোন নির্দেশনা নেই? ইসলামে মদ্যপায়ীর শাস্তি আছে। এ ব্যাপারে সকল ইমামই একমত। তাদের দলীল হল সাহাবাগণের ইজমা।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স.) মাদকদ্রব্য সেবনের অপরাধে খেজুরের দুটি ডালি দিয়ে চল্লিশটি আঘাত দিতেন। আবু বকর (রা.)ও তাই করেছেন এবং ওমর (রা.) সাহাবাদের পরামর্শ নিয়ে আশিটি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন।
নাজমা মোস্তফা নিম্নোক্ত মন্তব্যের মাধ্যমে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যে ধারার কোন কথা কোরআনে নেই, সেটিকে হাদীস দ্বারা প্রমাণের কোন সুযোগ নেই। কোরআনের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন কর্ম, আদেশ-নির্দেশ, উপদেশ কখনোই হাদিস হতে পারে না।
হাদীস আমাদের দ্বিতীয় সূত্র গ্রন্থ। হাদীসকে সব সময় হতে হবে প্রথম গ্রন্থ কোরআনের সাহায্যকারী বিবরণ’। ‘সত্য কথার অন্তরালে ষড়যন্ত্র’! নাজমা মোস্তফা হয়ত জানেন না, রাসূল যা বলেন, আল্লাহর নির্দেশেই বলেন। রাসূলের কথাও এক ধরনের অহী। এবং রাসূলের কথা মান্য করা একজন মুসলিমের কর্তব্য।
আল্লাহ বলেন: “এবং (নবী) প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন অহী, যা প্রত্যাদেশ হয়” (সূরা আন নাজম:৩-৪)। আল্লাহ আরো বলেন: “রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা” (সূরা আল হাশর:৭)। যে কথার সুত্র ধরে তিনি এ মন্তব্য করেছেন তা হচ্ছে- কোরআনে দোররা মারার বিধান আছে কিন্তু রজমের বিধান নেই।
আসলে কুরআনে যে দোররা মারার কথা বলা হয়েছে তা কেবল অবিবাহিত নর-নারীর জন্য প্রযোজ্য। আর রাসূল (স.) বিবাহিতদের জন্য রজমের বিধান করেছেন। এতে কুরআন ও হাদীসের মধ্যে কোন দ্বন্ধ নেই। কেননা রাসূল (স.) যেকোন বিধান জারি করার Lagislative Super Power খাটাতে পারেন; সে অধিকার আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। তা ছাড়া হাদীস কিভাবে হতে হবে; সে নসীহত নাজমা মোস্তাফা করতে পারেন না।
এ ধরনের মূর্খরাই ধর্মের বারোটা বাজায়। ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানই আল্লাহর রাসূল তার রবের ইশারায় মানুষদেরকে বাস্তবিক প্রয়োগের মাধ্যমে শিখেয়েছেন। পবিত্র কুরআনে নামাজের কথা থাকলেও কোন ওয়াক্তের নামাজ কত রাকাত হবে তার বিবরণ নেই। আল্লাহর রাসূলই আল্লাহর নির্দেশমতো তা নির্ধারণ করেছেন। প্রত্যেক নামাজের পূর্বে যে আযান দেয়া হয় তা কি কুরআনে আছে? নেই।
তাও আমরা রাসূল থেকে শিখেছি। এভাবে শরীয়াতের অসংখ্য বিধান রাসূলের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের বিস্তারিতভাবে শিখেয়েছেন।
নাজমা মোস্তফা তার লেখার শেষ পর্যায়ে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তাও অনুর্বর মস্তিস্কের ফল। ইবরাহিম আ. এর বাবা ইবরাহিমকে পাথর ছুড়ে মারার হুমকি দিয়েছিলেন আল্লাহর পথে আহ্বান করার অপরাধে। আর এই পাথর মারার হুমকিকে তিনি ইহুদিদের বিধান হিসেবে পরিগণিত করে এই ইহুদি বিধানকেই নাকি মুসলিমরা ইসলামের বিধানে ঢুকিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, .....ইহুদীয় বিধান এসে সুরসুর করে ইসলামের পবিত্র অঙ্গনে বেশ আয়েশে মানুষের বিশ্বাসে ঠাই করে নিয়েছে।
এ কথা সত্য ধরে নিলে রোযার ব্যাপারে তিনি কি বলবেন? রোযাতো মুসলিমদের আগে অন্যরাও পালন করেছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: “তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর” (সূরা আল বাক্বারাহ:১৮৩)। এথেকে বুঝা যায় যে, কোন বিধান আগের ধর্মের অনুসারীদের জন্য থাকেলেই উম্মতে মুহাম্মদীর উপর তা ফরজ হতে পারবে না এমন কোন কথা নেই। মূল কথা হচ্ছে আল্লাহ সর্বশেষ যে বিধান রেখেছেন সেটাই চুড়ান্ত।
আগের বিধান সবই রহিত হয়ে যাবে। সর্বশেষ বিধানটিই ইসলামের বিধান। আগে ছিল কি ছিলনা তা দেখার বিষয় নয়। অল্প বিদ্যা যে কত ভয়ঙ্কর তা বোধকরি এতক্ষণে সবাই অনুধাবন করেছেন। তাই না বুঝে কোন বিষয়ে ঢালাও মন্তব্য না করাই শ্রেয়।
আর যারা বুঝে বিষোদগার করছেন তাদেরকেও বলছি, সঠিক পথ ধরুন। না হয় ফেরআউন নমরুদদের যে পরিণতি হয়েছিল সে পরিণতি আপনাদের জন্যও অপেক্ষা করছে।
আমাদেরকে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। এতএব সৃষ্টিকর্তার মর্জি ও বিধান মোতাবেক তার সৃষ্টকূল পরিচালিত হবে। এটিই যৌক্তিক।
ইসলামের সকল বিধানই মানবের কল্যাণের জন্য। ইসলামের শাস্তি আইনও তাই বাস্তবসম্মত। অপরাধ দমনে এই আইনের কোন বিকল্প নেই। তবে ইসলামের শাস্তি আইন ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোথাও প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা বড় ধরনের বোকামী। আমাদের দেশে যারা ইসলামের নাম দিয়ে বিচার আচার করেন তাদের কাছে ইসলামের সঠিক ধারণা নেই।
সঠিক ধারনা না থাকার কারণে তারা মাঝে মধ্যে ভুল করে বসেন। আর দু একজন মূর্খ মানুষের ভুলের সূত্রধরে ইসলামের শত্রু রা ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন ঢালাওভাবে। সরকারের উচিত যারা আইনকে নিজের হাতে তুলে নেয় এবং ধর্মের নামে বিচার করেন তাদের আসল পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া। আর যারা এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করেন তাদেরকেও কাঠগড়ায় দাড় করানো।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।