আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোররা মারা কবে বন্ধ হবে?

ধন্যবাদ

গত ২২শে জুলাই প্রকাশিত প্রথম আলোয় জোবাইদা নাসরিনের লেখা "দোররা মারা কবে বন্ধ হবে" শীর্ষক লেখাটি পড়ে আমি লিখতে বসলাম। বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুলল। কারণ দোররা মারার ঘটনা বাংলাদেশে শত প্রতিবাদ প্রবন্ধ লিখেও বন্ধ হচ্ছে না। এটা কবে বন্ধ হবে- প্রশ্নটি প্রন্ধকারের। আমাদেরও জিজ্ঞাসা এই অভিশাপটি কবে বন্ধ হবে।

কিন্তু প্রশ্ন আরেক জায়গায় এই খারাপ কাজটি বন্ধ করার সঠিক পদ্ধতিটি কী? তা কি কেউ জানেনা? লেখক নিজে এই জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। আমরাও হয়তো এই কথায় বলব। এর বিকল্প বা এই বাইরে আমরা কোন কিছু চিন্তা করতে পারিনা বা পারবনা। আইন প্রণয়ন করেই কি সমস্যার সমাধান সম্ভব ? এখানেই আমাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা । দেশে বিভিন্ন আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা আমরা পত্রিকাগুলোর পাতায় চোখ রাখলে আমরা ভালভাবে বুঝতে পারি।

আমার নিজের চোখে দেখেছি পাবলিক প্লেসে পুলিশকে ধুমপান করতে যার জন্য ৫০ টাকা জরিমানা করার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন ভাবুন আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থা যদি নিজে আইন ভঙ্গ করে তাহলে কারা আইন মান্য করবে। শুধু এখানেই শেষ নয়। আইনপ্রণয়নের স্থান জাতীয় সংসদের মধ্যে কিভাবে এই আইন নির্লজ্জনকভাবে ভঙ্গ করা হচ্ছে। যা আমি ২০০৬ সালের সর্বশেষ সংসদ শেষনে একজন দর্শক সারি হতে প্রত্যক্ষ করেছি।

বাংলাদেশে আছে আরো আছে নারী নির্যাতন বিরোধী আইন, আছে যৌতুক বিরোধী আইন। তার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তার প্রমাণ যেদিন এই লেখাটি লিখছি সেদিন দেখেছি প্রথম আলোর ব্যাক পেজে এসিড দগ্ধ এক নারীর করুন আর্তনাদ। উপসম্পাদকীয়তে দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে উদ্ধেগ প্রকাশ। আমরা দেখলাম জঙ্গীবাদের নায়ক শায়খ আব্দুর রহমানের করুণ পরিণতি। কুখ্যাত সন্ত্রাস এরশাদ শিকদারের পরিণতি।

এরপরও কি থেমে আছে নব্য এরশাদ শিকদারের জন্ম , নতুন শায়খদের আবির্ভাব। অবশ্যই বলবেন-না। সবাইকে আইনী প্রক্রিয়ায় তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তারপরও থেমে নেই সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ এবং এই দোররা কাহিনী। তাহলে এইসব অভিশাপ হতে মুক্তির সঠিক পথ কোনটি।

এই জন্য জানা প্রয়োজন ঘটনার অন্তর্নিহিত রহস্য। এখন আমি তিক্ত হলেও সঠিক রহস্য উন্মোচন করব। এতে আমাকে যে যতো প্রকারের অশ্লীল বা মন্দ ভাষায় যা ইচ্ছা বলতে পারেন আমার তাতে কিচ্ছু যাই আসেনা। আমরা সমাজ তথা দেশের এইসব অনাচার বন্ধের জন্য বিভিন্ন ধরণের নিজস্ব ইস্টাইলে পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকি। "মাদকে না বলুন "; "মাদক বিরোধী কন্সার্ট"; "আসুন বদলে যায়" এই জন্য কতই না শপথ ------ইত্যাদি।

এই কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে আমি চরম অপ্রিয় সত্য কথা বলতে চাই। মাদক বিরোধী কন্সার্টে কোন সব শিল্পীদের নিয়ে আসা হয়। মাদকের সাথেই যাদের জীবন, তাদেরকে দিয়ে মাদক বিরোধী আন্দোলন!!! এখন ভালো হওয়ার জন্য বিভিন্ন 'শপথ' নেওয়া হচ্ছে। শুদ্ধরুপে বাংলা বলার শপথ নেওয়া হল। এখন দেখুন দেশের বেসরকারী রেডিওগুলোর কি অবস্থা।

দিনরাত তারা এমন উদ্ভট বাংলা ইংরেজি মিশ্রিত শব্দ চয়ন করে থাকে যাকে বলা যায় বাংরেজি। এইগুলোর সাথে আমরা সারারাত আছি। কিভাবে আমরা শুদ্ধ রুপে কথা বলব। মাদকাসক্তকে বিয়ে না করার শপথ নিয়েছে একটি গার্লস স্কুল কলেজের ছাত্রীরা। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছা্ত্র হিসাবে আমি জানি এখানে কিভাবে মদের উৎসব চলে।

বর্ষপূর্তি, র্যাগ ডে ইত্যাদি অনুষ্ঠান গুলোতে মদ থাকে অপরিহার্য উপাদান। এই মদের ব্যবসা বাংলাদেশে টিকিয়ে রেখে কি সম্ভব দেশকে মাদকমুক্ত রাখা ? আমি আরো নির্মম কিছু সত্য কথা বলতে চাই। শিক্ষাঙ্গন তথা গোটা দেশে কিভাবে মদ নামক বিষাক্ত ছোবল হতে আমরা রক্ষা পাব ? কারণ এর সাথে জড়িয়ে আছে স্বয়ং দেশের বিবেকরা। বিভিন্ন উচ্চশিক্ষিতশ্রেণীর একটা বিরাট অংশ এটাকে আভিজাত্যের প্রতীক বলে মনে। আমার এক স্যার আমাদের সামনে প্রচুর সিগারেট খান।

একদিন ক্লাসে এক ছাত্রকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে বললেন- "কী স্যার, ঘুম আসে নাকি? যান, বাইরে গিয়ে সিগারেট খেয়ে আসেন। দেখবেন ঘুম চলে যাবে। " এই আমাদের শিক্ষকদের অবস্থা। তবে তিনি পরে স্বীকার করলেন ধুমপান করা একসময় আভিজাত্যের প্রতীক ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটা একটা খুবই খারাপ অভ্যাস।

এখন এই সব শিক্ষক যদি মঞ্চে উঠে নীতি কথার ফুলঝুরি ছড়ান তাহলে কে শোনবে তার কথা। ঠিক এমন হয়েছে আমাদের বর্তমান অবস্থা। আমাদের দ্বিমূখী চরিত্রের কারণে কোন মহৎ উদ্যোগই সফল হচ্ছেনা। আবার সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিতেও রয়েছে মারাত্মক ভুল। মদের দোকানের লাইসেন্স দিয়ে ধুমপান বিক্রিয় দোকান সাজিয়ে বলা হচ্ছে ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর!!! সমাজে চরম আর্থিক বৈষম্য টিকিয়ে কোন ক্রমেই সন্ত্রাসবাদ দমন করা যায়না।

আজকের বস্তির শিশুই আগামী দিনের এরশাদ শিকদার। দারিদ্র্য বেকারত্ব অশিক্ষা অজ্ঞতা টিকিয়ে রেখে কোন ক্রমেই দেশের অনাচার দুর করা যায়না। ঠিক যেমন যাচ্ছে না এ দোররা কাহিনী। কারণ যারা এর সাথে জড়িত তাদের মধ্যে সঠিক জ্ঞানের আলো পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়নি। জঙ্গীবাদের সাথে যারা জড়িত তারাও ইসলাম সম্পর্কে একেবার অজ্ঞ।

এই তাদেরকেও ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। আমাদেরও ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করা দরকার। এই জন্য মূল সোর্স সরাসরি কুরআন এবং হাদিস অধ্যায়ন করতে হবে। অন্য কোন জায়গা হতে জানতে চাইলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। রাসূল (সাঃ)এর জীবনীর নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে হবে।

তাহলে এই অশুভ তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে দোররা সমাচার। এখানে আরো একটি কথা না বললেই নয় যদিও তা তিক্ত লাগবে। আমি বার বার বলেছি আজ সত্য কথাই বলব তাতে কেউ নাখোশ হোক। এই সব দোররা উপখ্যান কিছু পত্রিকা যারা বিশেষ মতাদর্শে বিশ্বাসী তারা বেশি অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করে।

যার সত্যাসত্যতা নিয়ে বেশ সন্দেহের অবকাশ আছে। যেমন কুমিল্লার দাউদকান্দির ঘটনা সম্পর্কে ঐ এলাকার এক বন্ধুর কাছ হতে জানতে পেরেছি বিষয়টি এতটা নয়। ওখানকার একজন আলেমকে হেয় করার জন্য পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে বানোয়াট কাহিনী ছেপেছে। আর আগেই বলেছি এক শ্রেণীর পত্রিকা বিশেষ উদ্দেশ্যে এই সব কাহিনী বেশ বড়োসড়ো করে ছাপে। তবে এগুলো যে একেবারে মিথ্যা তা নয়।

কয়েকদিন আগে একজন ধর্ষিতাকে দোররা মারার ঘটনা ঘটেছে। এটা নিঃসন্দেহে ঘৃণ জঘন্য। এমন কোন নিয়ম ইসলামে নেই যে ভিকটিমকে উল্টো শাস্তি দিতে হবে। বরং ঐ পুরুষটিকে শাস্তি দিতে হবে এটাই যুক্তির বিচারে আসে। সাথে সাথে একটা কথা না বললেই নয়।

ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতায় আসছে। এটা এত বেশি ঘটে যে এই ঘৃন্য অভিশাপটি গুরুত্ব হারিয়ে এখনো ভেতরের পাতায় ছোট করে স্থান পেয়েছে। এর সমাধান কি আদোও নেই । অবশ্যই আছে।

কিন্তু এখানেও নিরব আমাদের দেশের জাতির বিবেকরা। তাদের কলমে এখানে কালি ফুরিয়ে যায়। তাদের কলম দিয়ে খুব কমই তথাকথিত রুচিহীন বিকৃত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। পত্রিকার পাতায় নগ্ন বিনোদন, ভদ্রবেশী শিল্পপতীদের ফ্যাশন শোর নামে নারীদের পণ্য হিসাবে জৈবিকভাবে উপস্থাপনা , পর্ণ সাহিত্য, পর্ণ ভিডিও, পত্রিকায় পাতায় অশ্লীন বিজ্ঞাপন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে নারীদের স্বল্পবসনাবৃত বিজ্ঞাপন এই সবের বিরুদ্ধে তেমন কোন লেখা বা কলাম আমাদের দেশের কলামিস্টদের কাছ হতে পাওয়া যায়না। এই নোংরা কাজগুলোই কী ধর্ষেন উৎসাহিত করেনা? নারীদের নির্যাতনের কারণ নয় ? আশ্চর্যজনকভাবে সত্য আবার এইসব পত্রিকার ধারক বাহক সাহিত্যিক শিল্পপতি তারাই বিভিন্ন মঞ্চে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

সত্যিই সেলুকাস!!! কী বিচিত্র স্ববিরোধীতা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনীতিকরা বেশ সচেতন! কিন্তু নির্বাচনের সময় একটি গ্রুপ সরাসরি সহিংস কার্যক্রম চালিয়ে প্রার্থীদেও বিজয় নিশ্চিত করে। এখন ক্ষমতাসীন দলের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বিভিন্ন স্থানে কার্যালয় খুলে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত এইগ্রুপগুলো। আজ থেকে কয়েক মাস আগেও যেখানে কোন কার্যালয় ছিল এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে শ্রমিক লীগ, হকার্স লীগ, যুব লীগ, রিকশা শ্রমিক লীগ ইত্যাদি ব্যানার। সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য এ ব্যাাপারেসম্পূর্ণরুপে নিরব। তার কারণ স্পষ্ট।

এরাই নির্বাচনের সময় বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। যার পুরষ্কারস্বরুপ এই পাঁচ বছর আয় রোজগার করবে এই সব ব্যাঙের ছাতার মতো হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কার্যালয়ের মাধ্যমে। আমাদেও আইন প্রণেতারা যদি পার্লামেন্টে অত্যান্ত মুডের সাথে বলে 'সন্ত্রাস দমনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ' তাহলে আমরা তাকে কোন প্রকারের হিপোক্রাট বলব। আমাদের শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায় কারা আমরা সকলেই ভালো জানি। বলে একরকম, করে আরেক রকম ।

এভাবেই চলতে থাকবে আমাদের ভন্ডামী। আমরা আজীবন সন্ত্রাস , চাঁদাবাজি, ছিনতাই ডাকাতি ধর্ষণ নারী নির্যাতন দোররা করে করে আমরা গলা ফাটিয়ে ফেলব, হয়ত এসবের মূল কারণগুলো বিশেষ কারণে নিমর্ূল করা হবে না। অবশেষে এগুলো দমনে আরেকটি নতুন আইন আসবে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার মেরে অমুক ধর্ষকের বিচার চাই বলতে থাকব আর ধর্ষক আজীবন ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যাবে এবং এভাবে এরকম আরেকটি কলাম লেখা হবে "কবে ধর্ষিত হওয়া থেকে মুক্তি পারে নারীসমাজ?"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.