আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার আম্মার ক্রিকেটে হাতে খড়ি। ক্রিকেট নিয়ে অ আ ক খ পোস্ট।

রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই

আমার আম্মাকে নিয়ে ২-১ লাইন একটু বলি। আম্মার বয়স এখন ৬৫ বছর। গ্রামে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিল, তারপর আর পড়ালেখা হয় নাই। ১৯৬০ সালে ১৩ বছর বয়সে আমার আম্মার বিয়ে হয়, গ্রামেই, গ্রামেই ছিলেন ১৯৮৭ পর্যন্ত। পড়ালেখার দৌড় ঐ ক্লাশ ফোর পর্যন্তই।

কিন্তু আম্মার জানার আগ্রহ খুবই প্রবল। অংক, বাংলাদেশের রাজনীতি, বিশ্বপরিস্হিতি - লিবিয়া, মিশর, ১-১১, ড.ইউনুস ইস্যু সবকিছু আম্মার নজরে আসে। বড়বুশ, ছোট বুশ, সাদ্দাম, ক্লিনটন, হিলারী, ওবামা, গাদ্দাফী সবাইকে চিনেন, টিভি নিউজ রিপোর্টার সবাইকে চিনেন, বিশেষ করে ১৯৯৯ সালের একুশেটিভি সবাইকে। আওয়ামীলীগ, বিএনপির সব নেতাদেরও। নিয়মিত পত্রিকা পড়েন, টিভিতে খবর ও দেখেন।

গতকাল বাসায় শুধু আমি আর আমার আম্মা ছিলো। বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের খেলা হচ্ছিলো। ইংল্যান্ডের কেউ আউট হলে চারপাশে সবাই চিৎকার করছিলো। আম্মা বলতো, খামাকা সবাই এতো চিৎকার করছে কেন? আম্মা ক্রিকেট খেলাটা বুঝতো না। খালি এটা বুঝতো, একটা ব্যাট নিয়ে কেউ ব্যাটিং করছে, আর কেউ বল করে, এতোটুকু।

তাই গতকাল তাই চেষ্টা করলাম, আম্মাকে ক্রিকেট খেলা শিখাবো। প্রথমে জার্সি পরিচিতি, কারা কোন দল? তারপর রান কিভাবে হয়? কেমনে রান আউট হয়? কেমনে স্ট্যাপিং হয়? কেমনে ক্যাচ আউট হয়? ৬ বলে এক ওভার, ওভার শেষে বোলার পরিবর্তন হয়। কেমনে বাউন্ডারী হয়, কেমনে ছক্কা হয় একে একে সব কিছু। ইংল্যান্ড ২২৫ রানে আউট হলো, তাহলে বাংলাদেশ যদি ২২৬ করে , তবে বাংলাদেশ জিতবে। ২২৬ রান করার জন্য বাংলাদেশ বল পাবে ৩০০টা।

জুনাইদ যখন ব্যাটিং করছিলো, আম্মা কিচেনে হালকা কাজ করার ফাকে ফাকে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আপডেট নিচ্ছিলো। যখন ১৫৫ রান থেকে ১৭০ রানের মধ্যে একে একে ৫টা উইকেট পড়ল, আম্মার মনে টেনশন ঢুকে গেল। রান্নাঘরের সব কাজ বাদ দিয়ে খেলা দেখতে চলে আসলো। শফিউলকে দেখে আম্মার খুব মন খারাপ হয়ে গেল। বলল, সে তো একেবারে শুকনা একটা ছেলে, তার হাতে ব্যাটিং করার জোর কোথা থেকে আসবে? ইংল্যান্ডের প্লেয়ারদের দেখো, একটা একটা কত্তো মোটা।

তারা খায় বেশি, তাই তাদের গায়ে শক্তি বেশী। ভালো ভালো খাওয়া দাওয়া না খেয়ে বাংগালীরা ব্যাটিং করছে, এটাও তো অনেক। এর মধ্যে সারা দুপুর রোদের মধ্যে সবাই দাড়িয়ে ছিলো। তাই একে একে পাঁচজন কাহিল হয়ে আউট হয়ে গেল। যখন ৩০ বলে ৩০ রান দরকার, আমি টেনশন করছি তখন আম্মা বলছে, এখন যদি একটা ফোর পিটাইতে পারে, তবে একটু সেফ সাইডে চলে যেতে পারবে, শেষে গিয়ে টানাটানি করতে হবে না।

আম্মাকে বললাম, দোয়া করো, আজকে যদি না জিতে,তবে পরে আর খেলতে পারবে না। আম্মাও দোয়া করা শুরু করল। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ জিতেই গেল। আম্মার সে কি খুশি!!!! বাংলাদেশে জিতেছে আর আম্মাও খেলাটা বুঝতে পেরেছেন, তাই তার খুশিটা ডাবল হয়ে গেছে। আর আমরাও বাসায় পেলাম আর একজন একনিষ্ঠ ক্রিকেট ভক্তকে।

গতকাল খেলা বুঝিয়ে দিলাম আম্মাকে, আর একটু আগে আজকে আম্মা নিজে থেকেই এসে বসল, শেষ ৩ ওভারের খেলা দেখার জন্য। ইন্ডিয়া আর দঃ আফ্রিকার খেলাতে যখন শেষ ৭ বলে ৩ রান দরকার, তখন আম্মা বলল, ২টা ছক্কা পিটিয়ে দিলেইতো তারা জিতে যাবে গতকালের মতো। গতকালের শফিউলের ব্যাটিংটা আম্মার মনে ধরে আছে এখনো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।