ভালো পোলা
১৬ কোটি মানুষকে যদি কোন কিছু এক কাতারে আনতে পারে তা হল আমাদের ক্রিকেট। ক্রিকেট এর সাফল্যে অন্তত একদিনের জন্য হলেও আমরা ভুলে যাই বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা,শেয়ার বাজারে অব্যহত দরপতনের কথা। সবার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে-ক্রিকেট। সাকিব টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিলেই পারত, আশরাফুল ৭ এ কেন ,তামিম ওই শটটা আর খেলে না কেন রে যেটা দিয়া জহিরকে পাঠিয়েছিল স্টেডিয়ামের বারান্দায়,রকিবুল-ইমরুল একটু বেশীই স্লো খেলে-এমন অনেক আলোচনায় মেতে উঠে দেশের আপামর জনতা। খেলা হয়ত সবাই ঠিকমতো বুঝেও না কিন্তু নিজের দেশ খেলছে এটাই আমাদের গর্বের জায়গা।
ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা - কথাটা আমরা ভুলতেই বসেছিলাম ক্রিকেটটারদের নিয়মিত সাফল্যের কারনে। ক্রিকেট দেবতা বোধহয় মুচকি হাসলেন আর তাতেই আমরা ৫৮ রান এ অলআউট। স্বপ্নেও হয়ত কেও ভাবেনি দেশকে এত বড় লজ্জায় ডোবাবে আমাদের তরুন দলটা ।
দল হারলেই দেশে নয়া নয়া কিছু বুদ্ধিজীবীর উত্থান হয়, যারা দোষ চাপায় বলির পাঁঠা ওই অধিনায়কের উপর। অনেকে একপা এগিয়ে প্রশ্ন তোলেন খেলোয়াড়দের দেশপ্রেম নিয়েও।
আমরাও কম যাইনা। রকিবুল-আশরাফুলদের গালি দিয়ে তাদের বংশ উদ্ধার করি। একটা কথা একদমই ভুলে যাই যে ওই ১১ জন তো আমাদের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যেই ,তারা তো আমাদেরই প্রতিনিধি। এই পরাজয় কোন না কোন ভাবে হয়ত আমাদেরও। শুধু জয় ই নেবো আর পরাজয়ে বলব তোদের তো চিনি না- এটা কাম্য নয়।
সাকিবের একটা কলাম পড়লাম প্রথম আলোতে। সাবেক ক্রিকেটটারদের অনেকটা ছোট করা হয়েছে লেখাটা তে। হয়ত এর পেছনে সাকিবের ক্ষোভও কিছুটা কাজ করেছে যার কারন এর আগেরদিনই বিডি নিউজ এ এক সাবেক খেলোয়াড় ইচ্ছামতো তুলাধুনা করেছেন অধিনায়ক সাকিবকে,প্রশ্ন তুলেছেন তার দেশপ্রেম নিয়ে। তবুও এগুলা কোন যুক্তি হতে পারেনা সাকিবের বেফাঁস মন্তব্যের। কেউ কেউ দেখলাম এজন্য সাকিবের পদত্যাগ ও দাবি করেছেন,কেউ আবার আরো একপা এগিয়ে পারলে তাকে শূলে চড়ান।
আমরা কি ভুলে গেছি যে ওই ১১ জন কতবার আমাদের এনে দিয়েছে আনন্দের উপলক্ষ???
সাকিব নিঃসন্দেহে ভুল করেছে কিন্তু মাথাগরম বাঙ্গালীর কিছু স্বভাব যদি সাকিবের মাঝে সঞ্চারিত হয়ে থাকে তবে তাকেও আপনি কিভাবে দোষ দিবেন। ২১-২২ পেরোতেই আমরা তাঁদের অধিনায়কের মিউজিক্যাল চেয়ারে বসিয়ে দেই, কখনো কখনো আবার তাঁদের ক্ষমা চাইতে হয় বিসিবি সভাপতি মস্তফা কামালের মতো বেকুবদের পায়ে ধরে। এত চাপ মাথায় থাকলে ধোনির মতো কুল কাপ্তান ও কি করত তা প্রশ্নবিদ্ধ।
ভারত ম্যাচ হারলেই একটা অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় "ম্যাচ কা মুজরিম" নামে যেখানে সব দায় চাপানো হয় কোন এক খেলোয়াড়ের উপর। আমি বলছি না আমরাও এটা শুরু করেছি তবে খেলোয়াড়দের প্রতি আমাদের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের ওই সংস্কৃতির দিকেই নিয়ে যাচ্ছে।
ভারতীয়রা বলে,তাদের কাছে নাকি ক্রিকেট ধর্ম । তাই হয়ত তারা হারলেই খেলোয়াড়দের বাড়ি ভাংচুর করতে দ্বিধা করেনা। আসুন আমরা বলি, ক্রিকেটটাররা আমাদের ধর্মযাজক ,এতে করে আমরা অন্তত তাদের বাড়িতে পাথর মারার সাহস পাব না। এখানে উল্লেখ্য, খেলোয়াড়েরা কিন্তু জিতলে আমাদের বাড়িতে পাথর মারতে আসেন না।
একটা কথাই বলব আমাদের ক্রিকেটটাররা তো শুধু মাঠের খেলায়ই হেরেছেন।
তারা তো হারেনি নোংরা রাজনীতি- দূর্নীতি, লোভ-লালসার কাছে যাতে হেরে বসে আছে সমগ্র দেশ। তাই আসুন আরও একবার গেয়ে উঠি লাল-সবুজের জয়গান কারন ওরাই আবারও আমাদের জন্য এনে দিবে আনন্দের উপলক্ষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।