কাল ২৬০ দেখে ভেবেছিলাম জেতা সম্ভব। কারণ সাকিব বলেছিলেন ২৫০+ ডিফেন্ড করা সম্ভব। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম এই শ্রীলঙ্কাই কদিন আগে ভারতের মাটিতে ভারতের ৪১৪ রানই প্রায় চেজ করে ফেলেছিলো। মাত্র ৩ রানে নাটকীয়ভাবে হেরেছিলো। তারপরও আশাটা অমূলক লাগেনি।
কারণ সাকিব ঠান্ডামাথার লোক আর শ্রীলঙ্কার দলটি ভিন্ন, প্রায় নতুন দল। যেমন জয়সূরিয়া বা আমাদের দু:স্বপ্ন মুরলীও নেই। গতবার শুরুতেই ৫ রানে ৪ উইকেট ফেলেও শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারিনি ''জবরদস্ত ব্যাটসম্যান'' মুত্তিয়া মূরলীধরনের মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য ! আর আমাদের ছিলো ডাকসাইটে কোচ জেমি সিডন্সের ''উইনিং কম্বিনেশন!''
কাল অবশ্য সবকিছু ছাপিয়ে ভিলেন হয়ে উঠেছিলেন ''মি. শিশির'' ! সব দোষ ''শিশির ঘোষ'' ! সাকিব সাহেবও শিশিরকে এক হাত নিলেন। তবে কালকের অস্বাভাবিক শিশির আর শীত আসলেই আমাদের কাবু করে ফেলেছিলো। যদিও শিশির বা শীত শ্রীলঙ্কার দুই বুড়া হাড্ডি সাঙ্গাকারা বা দিলশানকে জয়ের স্পৃহা থেকে দূরে রাখতে পারেনি।
আমাদের দেশ হলো সর্বদা ক্ষমতার দাপট দেখানোর দেশ। সবসময় কেউ না কেউ আমাদেরকে হাইকোর্ট দেখাতে থাকেন। ফুটবল ওয়ালাদের হাইকোর্টের চোটে কোচ ডিডো বাপের নাম ভুলে গেছেন। আর আমরা সাফ ফুটবলে হেরে ভূত হয়ে জেতার নাম ভুলে গেছি।
আইসিএল নামক এক ঝড় এসে আমাদের আর পাকিস্তানের ক্রিকেটকে প্রায় পথে বসাবার যোগাড় করেছে।
আইসিসির নাম দিয়ে আমরা প্রায় চিরকালের জন্য ওইসব ''ভিলেনদের'' নিষিদ্ধ করে দিলাম। ক্ষমতার দাপট কাহাকে বলে !
আমরা ভুলে গেলাম, কেরি প্যাকার ঝড়ের সময় এমন একটা অহঙ্কারের যুগ এসেছিলো। আমাদের সে অহঙ্কার কালের পরিক্রমায় ধূলায় মিশে গেছে। কেরি প্যাকারের উস্কানির ফল আজকের জনপ্রিয় একদিনের ক্রিকেট। ক্রিটোররা যে ক্রিকেট খেলে আজ দুটি পয়সার মুখ দেখছে তার মূলেও সেই কেরি প্যাকার।
এই সব ভুলে গিয়ে যা করার করলাম। তারপর দেখি আমাদের ক্রিকেট বসদের অহঙ্কারের ঝাঁজ একটু কমেছে। প্রথমে এই ভুল ভেঙেছে পাকিস্তানের কর্তাদের। আইসিএল ফেরতদের দলে ভিড়িয়ে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে নেয় পাকিস্তান। আমরা শেষ পর্যন্ত অহঙ্কার ভুলে ৪ জনকে দলে ডাকলাম।
সাথে বলতে ভুললাম না, ভালো খেলে দলে টিকতে হবে। এ নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই। দলে টিকতে হলে ভালো খেলতে হবে, এটা শোনার জন্য আইসিএল খেলার দরকার নেই। এটা চিরন্তন সত্য।
হায় রে দুর্ভাগা দেশ ! একের অহঙ্কার ভাঙে তো আরেক অহঙ্কার মাথাচাড়া দেয়।
এবার অহঙ্কার আমাদের শক্তিমান (!?) কোচের। সিলেক্টারদের প্রায় চ্যালেঞ্জ করে দল ঘোষণার পরদিনই তিনি সাংবাদিকদের বললেন, উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চান না। আইসিএলদের ব্যাপারে প্রকাশ্যেই আপত্তি জানালেন। সিলেক্টাররা বুদ্ধিমানের মতো নীরব থাকলেন। কারণ কোচকে বরখাস্ত করার মতো সালাহুদ্দিনীয় বা বাদলীয় দাপুটে ক্ষমতা এই ক্রিকেট বসদের এখনো হয়নি বোধ হয়।
তারপরও সিলেক্টাররা চূড়ান্ত দল ঘোষনার সময় আইসিএল ফেরৎ শাহরিয়ার নাফিস ( সাকিবের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৪টি আন্তর্জাতিক শতরানের মালিক) আর হার্ডহিটার আফতাব আহমেদকে দলে রেখেছিলেন। আমাদের যেহেতু ইনজুরির জন্য বোলিংটা দুর্বল হয়ে গেছে তখন আমরা কেন ব্যাটিংটার ওপর জোর দিলাম না। ভারত বরাবরই বোলিংয়ে দুর্বল। কিন্ত দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইন আপ ব্যবহার করে ওরা এখন বিশ্বের ১নং দলে পরিণত হয়েছে। এই টুর্নামেন্টে ওরাওতো খেলছে আমাদের সাথে।
ওদেরটা দেখলে কি হতো জানি না। কিন্তু কোচ বাহাদুর টললেন না। তিনি উইনিং কম্বিনেশন তত্ত্বে অটল থাকলেন। যদিও বোলিং সাইডে তার উইনিং কম্বিনেশন কিন্তু বহাল নেই।
ফলে যা হবার তাই হলো।
জেতার জন্য ভালো একটা সুযোগ হাতছাড়া হলো। আমরা ভুলিনি আমাদের দল অস্ট্রেলিয়া নয়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এই প্রতিভাবান তরুণদের ঠিকভাবে কাজে লাগালে আমরা বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বে প্রভাশালী দল হবার সামর্থ্য রাখি। এ জন্য প্রয়োজন অর্থহীন অহঙ্কার আর ক্ষমতা দেখানোর কু অভ্যাস ত্যাগ। তা না হলে হারার জন্য শিশিরের শব্দের আড়ালে লুকালেও শেষ বিচারে পার পাওয়া যাবে না।
এখন অপেক্ষায় আছি, কোচ বাহাদুর উইনিং কম্বিনেশন তো ভাঙবেন না বলে ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছেন, দেখি তিনি এবার ''লুজিং কম্বিনেশন'' ভাঙতে রাজী হন কিনা।
তারপরও সাকিবদের সাথে থাকি। ওদের ওপর বিশ্বাস রাখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।