আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃতির সাথে বেড়ে উঠা (৪)ঃ ছেলেবেলার ঈদ !!

স্বপনের সমাধি খোঁড়া এ জীবন ... মনের গোপন ঘরে যে শ্বাপদ ঘর করে তাকেই লালন করে চলা এ জীবন!

“এখন আর আগের মত ঈদে মজা নেই” এই কথাটা প্রায়ই শোনা যায়। আসলেই কি ঈদের আনন্দ দিন দিন কমে যাচ্ছে? নাকি আমরা বড় হয়ে যাচ্ছি আর আনন্দ পাবার ক্ষমতা হারাচ্ছি?? এটাই মনে হয় ঠিক- ঈদের আনন্দ ঠিকই আছে, আমাদের গ্রহন করার ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখনকার বাচ্চাদের কাছে নিশ্চয় ঈদের আনন্দ একই আছে!! ছোট বেলাটা গ্রামে কাটিয়েছি; তাই ছেলেবেলার ঈদ কেটেছে মা-মাটি আর প্রকৃতির সাথে, খেলার সাথিদের সাথে। রোজা শুরু হতেই কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যেত- ঈদের আর কত দিন বাকী। ঈদের আগের রাতে তো উত্তেজনায় ঠিক মত ঘুমাতে পারতাম না।

সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে পাড়ার বড় ভাইদের সাথে ঈদগাহে যেতাম রঙিন কাগজ দিয়ে ঈদগাহ সাঁজাতে। তারপর দল বেঁধে বাসনা (সুগন্ধি) সাবান দিয়ে গোছল করা। এখানে একটা মজার ব্যাপার ছিল, কার সাবান কত সুগন্ধি সেটা নিয়ে একটা কম্পিটিশন হত। লাক্স, লাইফবয়, কসকো সাবান ছিল এ ক্যাটাগরি; কেও এর বাইরে বিদেশী কোন সাবান দেখাতে পারলে তো ভা-ব-ই আলাদা! গরীব মানুষেরা ব্যবহার করত হাবীব সাবান নামে ছোট একটা সাবান। এরপর নতুন কাপড় পরে, মায়ের হাতে সিন্নি খেয়ে ঈদগায়ে নামাজ পড়তে যাওয়া।

প্রায় সব বারই কাপড় পরার আগে অজু করতে ভুলে যেতাম এবং প্রতিবারই ঈদগাহে পৌঁছুতে দেরি হয়ে যেত। বাবা’র সামরথ খুব বেশি ছিল না, তাছাড়া অনেক গুলো ভাই বোন ছিলাম। পুরাটা নতুন কাপড় সাধারণত হতো না; এক ঈদে উপরের অংশ নতুন তো আরেক ঈদের নীচের অংশ। উপর-নিচে পুরাটা নতুন কাপড় পড়েছি হাতে গোনা কয়েক বার। তবে ঈদের আগের দিন আব্বা পুরাণ কাপড় টাকেই সুন্দর করে বাজারের দোকান থেকে ইস্ত্রি করে নিয়ে আসতেন।

নামাজে হুজুরের প্রতিবছর একই বকর বকর মোটেও পছন্দ হতো না; শুধু মন থাকত কখন নামাজ শেষ হবে আর দল বেঁধে বাড়ী বাড়ী গিয়ে সিন্নি খেতে পারব। পাড়ার প্রায় সব বাড়ীতেই যেতাম সিন্নি খেতে, যদিও ২/৩ বাড়ী খাওয়ার পর আর কিছু পেটে ঠুকত না। ঈদের দিন আরেকটা কারনে খুব ভাল লাগত তা হচ্ছে এই দিন কেও পড়তে বসতে বলত না এবং যা খুশি তাই করে বেড়ান যেত। বছরের এই দুইটা দিন ছিল ওপেন মার্বেল খেলার পারমিশন। এভাবেই কেটে যেত ঈদের দিন! বিকালের দিকে একটু খারাপ লাগত! ঈশ! ঈদটা শেষ হয়ে গেল!! ছোট বেলায় কুরবানীর ঈদটা ছিল একটু বিব্রতকর! আব্বা কুরবানী দিতে পারতেন না, আমরা বাজার থেকে মাংস কিনে খেতাম।

ঈদের নামাজ পরে বন্ধুদের বাড়ি যেতে লজ্জা লাগত; কেও যখন জিজ্ঞাসা করত তোরা কি কুরবানি দিয়েছিস? তখন খুব লজ্জা লাগত। অবশ্য চালাকী ও শিখে গিয়েছিলাম- বলতাম এবার আব্বার হাতের অবস্থা ভাল না তাই কুরবানী দেওয়া হয়নি; প্রকৃতপক্ষে আমরা চাকুরী পাওয়ার আগ পর্যন্ত আব্বার হাতের অবস্থা ভাল হবার কোন কারন ছিল না। এখনও কুরবানীর ঈদের দিন কষ্ট লাগে, তবে সেটা অন্য কারনে। এখন আমার টাকায় বাড়ীতে বড় গরু কুরবানী দেওয়া হয় কিন্তু আমাকে আর আমার ছেলে কে খেতে হয় দোকান থেকে কেনা ফ্রোজেন মাংশ। এনিওয়ে – সুখ দুঃখ মিলিয়ে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঈদ ছিল আমার ছেলে বেলার ঈদগুলো।

আপনার??? শেষে ছোট্ট একটা অনুরোধঃ আপনার বাচ্চার জন্য যখন ঈদের কাপড় কিনবেন তার সাথে ফুটপাত থেকে কম দামে হলেও অন্তত একটা নতুন ড্রেস কিনবেন; সেই বাচ্চাটার জন্য, যার বাবা-মা এবার তাঁকে ঈদে কোন কাপড় কিনে দিতে পারছে না। আর সেই কাপড়টা পারলে আপনার সন্তানের হাত দিয়ে তাঁকে প্রেজেন্ট করাবেন! আপনজনের সাথে আপনার ঈদ সুন্দর কাটূক! ঈনশাল্লাহ নেক্সট কুরবানীর ঈদ দেশে করব! সবাইকে ঈদ মুবারাক!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।