আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাণহীন সংসদ: এমপিদের মতো অনুপস্থিত থাকছেন মন্ত্রীরাও



মহাজোটের উল্লেখযোগ্য সংসদ সদসদের অনুপস্থিতি ক্রমাগত নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে সংসদ অধিবেশন। সংসদ সদস্যদের মতোই অনুপস্থিত থাকছেন মন্ত্রীরাও। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার চলতি অধিবেশনের ১৯তম কার্যদিবসের শুরুতে ট্রেজারি বেঞ্চের সামনের সারিতে ছিলেন শুধু কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। পরে আখতারুজ্জামান বাবুকে চিফ হুইপ ডেকে আনলে সংখ্যা দাঁড়ায় দুইতে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে অনেকদিন পর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চলতি অষ্টম অধিবেশনে যোগদানে সরকারি দলের সদস্যদের অনাগ্রহের বিষয়টি প্রথমবারের মতো ধরা পরে গত ৩ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন চলতি এ অধিবেশনের প্রথম বেসরকারি সদস্য দিবসে সংসদ সদস্যদের আনা সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের ব্যাপারে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনুপস্থিতির কারণে তাদের বক্তব্য না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ওইদিন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছে। কিন্তু সরকার যদি আমাদের গুরুত্ব না দেয়, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যদি আমাদের কথা না শুনেন, অবহেলা করেন- তাহলে আমরা কোথায় যাব?’’ এসময় তিনি বেসরকারি সদস্য দিবসে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উপস্থিতি নিশ্চিতের আহবান জানান।

এর আগে এই একই ইস্যুতে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য প্রদানকালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ও প্রতিমন্ত্রী মুজিবর রহমান ফকিরের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদকে অবহেলার অভিযোগ তুলেন। তিনি বলেন, ‘‘আজ সংসদের বেসরকারি দিবসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপনের খবর মন্ত্রণালয় আগে থেকেই জানত। তবুও সংসদে স্বাস্থ্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা ওই মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত নেই। তাদের এই আচরণ সংসদকে অবমূল্যায়নের সামিল। ’’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে সংসদে সরকারি দলও ঠিকমতো উপস্থিত থাকছে না।

বিরোধীদলের অনুপস্থিতি তো আছেই। এর থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে সংসদ এবং জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সংসদ সদস্যদের কমিটমেন্টের অভাব আছে। এর প্রতিকার হওয়া উচিত। ” তিনি বলেন, ‘‘টানা ৯০ দিন অনুপস্থিত নিয়ে যে বিধানটি আছে সেটিরও কিছু পরিবর্তন দরকার। সংবিধানের এ বিধানটিতে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় নতুন যোগ করা যেতে পারে।

’’ সম্প্রতি কোরাম সংকট নিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘‘মহাজোটের এক-চতুর্থাংশ সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকলেই কোরাম পূর্ণ হয়। এখানে সেটিও হচ্ছে না। সংসদ সদস্যরা চিকিৎসকদের মতো রোস্টার মেনটেইন করে সংসদে আসতে পারেন। ’’ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত ২৬ প্রশ্নকারী সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র পাঁচজন প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালে অধিবেশন কক্ষ ছিলেন। বাকি ২১ জন ছিলেন অনুপস্থিত।

এর মধ্যে প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই পর পর সাতটি তারকা চিহ্নিত প্রশ্নকারী সংসদ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। এই অবস্থায় বৈঠকে সভাপতিত্বকারী ডেপুটি স্পিকার নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নির্ধারিত প্রশ্নকর্তার অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে অন্য কাউকে প্রশ্নটি উত্থাপনের সুযোগ দেয়া শুরু করেন। সংসদে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার ইঙ্গিতেই তিনি ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চলতি অধিবেশনের ১৪তম কার্যদিবসে কোরাম সংকটের কারণে মুলতুবি করা হয় সংসদের অধিবেশন। ওইদিন রাত ৯টা ৭ মিনিটে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন।

সেদিন রাত ৯টায় অধিবেশনে কোরাম না থাকার বিষয়টি ডেপুটি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। এসময় মাত্র ৪৮ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে মন্ত্রী ছিলেন মাত্র চারজন। পরে সংসদ সদস্যদের হাজিরার জন্য কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী পাঁচ মিনিট বেল বাজানো হলে চারজন সদস্য অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে উপস্থিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জন। এরপর হুইপ শেখ আব্দুল ওহাব ‘কোরাম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই’ জানালে অধিবেশন ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতুবি ঘোষণা করা হয়।

ওইদিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর নির্ধারিত আলোচনাসহ বেশ কিছু কর্মসূচি বাদ পড়ে। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদে স্পিকারসহ ন্যূনতম ৬০ জন সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম পূর্ণ হয়। চলতি অধিবেশনের শুরু থেকেই সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য ও মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি সবার নজরে আসে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ ৪/৫ জনের আসন ছাড়া প্রথম দুই সারির বাকি প্রায় সব আসনই খালি পড়ে থাকছে।

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসস্যদের সরব উপস্থিতিতেও ভাটা পড়েছে। প্রথম দিকে নবীণ এমপিদের মধ্যে সংসদে উপস্থিত থাকার যে আগ্রহ ছিল তাও এখন অনেক কমে গেছে। অধিবেশনের বিভিন্ন কাজে তাদের অংশগ্রহণের মাত্রাও কমেছে। অনেকেই প্রশ্ন ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব দিয়েও নির্ধারিত আলোচনার সময় সংসদে থাকছেন না। এমনকি অনেক সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার জন্য চিফ হুইপের কাছে নাম দিয়েও আলোচনার সময় অনুপস্থিত থাকছেন।

এর ফলে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠকের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কোরাম সংকটের শঙ্কায় দ্রুতই অধিবেশন মুলতুবি করতে বাধ্য হচ্ছেন স্পিকার। তাছাড়া কোরাম হতে দেরি হওয়ায় নিয়মিতই নির্ধারিত সময়ের ১০ থেকে ২০ মিনিট দেরিতে শুরু হচ্ছে অধিবেশনের কার্যক্রম। চলতি অধিবেশনে বিরোধীদলের যোগদান নিশ্চিত হলেও ইতিমধ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘সরকারি দলের আচরণ প্রত্যাশিত না হলে বিরোধীদলের সংসদে যোগদান দীর্ঘকালীন নাও হতে পারে। ’ অথচ সংখ্যায় ক্ষুদ্র হলেও বিরোধী দলের উপস্থিতিতে বরাবরই সংসদ প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।

কিন্তু বিরোধীদল না থাকায় সরকারি দলের সদস্যরা সংসদে বিরোধীদলের সমালোচনা করে বক্তব্য দিলেও পাল্টা জবাব না থাকায় সেই এক তরফা সমালোচনায় কোনো প্রাণ থাকছে না। সরকার দলীয় অনেক সংসদ সদস্যকেই সংসদ চলাকালে অধিবেশন কক্ষে না গিয়ে সংসদ ভবনের নিজ কার্যালয়ে অথবা লবিতে অবস্থান করতে দেখা গেছে। অনেকে আবার বৈঠক করছেন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।