ক্লাস সিক্সে উঠে ধর্ম ক্লাসে পেয়েছিলাম সামাদ হুজুরকে। স্কুল লাইফ শেষ করার আগ পর্যন্ত কাঁধ থেকে আর নামাতে পারিনি। গদবাধা লেখা মুখস্ত করতে কার ভালো লাগে? দুই পৃষ্ঠা পড়ার মধ্যে দু-একটা শব্দ মিস্ হলেই হয়েছে....! পাঁচটা বছর ডাবল বেতের বাড়ি খেয়ে খেয়ে পশ্চাতদেশ শক্ত হয়ে গেছিল। সাথে তাঁর দাঁতমুখ খিচানি তো আছেই। আমরা ক্লাস টেনে উঠতে উঠতে সামাদ হুজুর অবশ্য ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলেন।
এর পেছনে একটা মারাত্মক ইতিহাস আছে। একটা বিয়ের দাওয়াতে সামাদ স্যার গিয়েছিলেন আমাদের এলাকায়। দাওয়াত শেষে ফিরছিলেন, তখন সন্ধ্যা। সামাদ স্যারকে গ্রামের রাস্তায় অন্ধকারে একা পেলো আমাদের দুই ব্যাচ সিনিয়র ভাইয়েরা। গামছা দিয়ে নিজেদের মুখ ঢেকে সামাদ স্যারের মুখের শুভ্র শ্বশ্রুর একপাশ কামিয়ে দিলো।
স্যার ধস্তাধস্তি চিৎকার চেচামেচি করার চেষ্টা করছিলেন। বড় ভাইদের একজন কানে কানে বললো "স্যার, ডাবল বেতের বাড়ি খাইলেও আমরা চিল্লাই না। " বড়ভাইরা কাজটা যদিও ভাল করেননি, তবু এই ঘটনার পরে বেত ডাবল থেকে সিঙ্গেল হলো, তাও থাকতো কমনরুমে, প্রয়োজনবোধে আনিয়ে নেয়া হতো। স্যারের পিটুনির চোটে পুরো হাইস্কুল লাইফে ধর্ম ক্লাসটার প্রতি জন্মেছিল প্রচন্ড বিতৃষ্ঞা। বর্তমান জীবনের ব্যস্ততায় অনেক বছর আগের এই ঘটনাগুলো ভুলে গিয়েছিলাম, মনে পড়লো সেদিন এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার পর।
খালাতো বোনের মেয়ে ঈদনা ক্লাস ফাইভে উঠেছে। আপা দিলেন এক বিচিত্র অভিযোগ। ঈদনাদের ক্লাসে একটা হিন্দু মেয়ে ভর্তি হয়েছে। ধর্ম সাবজেক্টায় ঈদনার বই নিজের ধর্ম মোতাবেক "ইসলাম শিক্ষা" আর ঐ নতুন আগন্তুকের "হিন্দু ধর্ম শিক্ষা" হলেও ঈদনার স্কুল ব্যাগে ইসলাম শিক্ষার বদলে একদিন পাওয়া গেছে "হিন্দু ধর্ম শিক্ষা" বই, সাথে এ্যাসাইনমেন্ট খাতায় লেখা "পরবর্তী ক্লাসে অভিভাবক সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে" । আপা স্কুলে গিয়ে শুনলেন ঈদনা তার ম্যাডামকে বলেছে ধর্ম সাবজেক্টে ইসলাম শিক্ষার বদলে তাঁকে 'হিন্দু ধর্ম শিক্ষা' সাবজেক্টটি দেয়া হলে সে আরও ভাল নাম্বার তুলতে পারবে, এই সাবজেক্টটা পড়তে তার ভাল লাগে ।
আপা আমাকে বললেন "চিন্তা করে দ্যাখ...এর কোনো মানে হয়?" আমি কোনো জবাব দিতে পারলাম না... বারবার মনে পড়ে গেল আমার হাইস্কুল লাইফের দিনগুলো....সেই টঙ্গী পাইলট স্কুল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।