আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুনী নুর চৌধুরীর দাবি, সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলনা,জিয়া,ওসমানীর সমর্থন আদায় করেছে শুধু



কানাডায় অবস্থানকারী বঙ্গবন্ধুর খুনী নুর চৌধুরীর একটি সাক্ষাতকার প্রচার করেছে টরন্টোর সিবিসি রেডিও। সেই সাক্ষাতকারের অনুলিখন করে প্রকাশ করেছে নতুনদেশ ডটকম । সবার সঙ্গে শেয়ার করতে সাক্ষাতকারটি এখানে পোষ্ট দিলাম। খুলেছে মুখ খুলেছে বঙ্গবন্ধুর খুনী নুর চৌধুরী দীর্ঘ পনের বছর ধরে কানাডায় বসবাস করলেও কখনোও মিডিয়ার কাছে মুখ খুলেননি নুর চৌধুরী। স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে।

তাঁর সহযোগিদের কয়েকজনের ফাসিঁ কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু কানাডায় আশ্রয় নিয়ে নুর চৌধুরী থেকে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চলতি সপ্তাহে কানাডার সিবিসি রেডিও তার একটি সাক্ষাতকার প্রচার করে। সিবিসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশগুলো নতুনদেশ ডটকমের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো। সিবিসি: আপনি বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত এবং দণ্ডিত।

তা সত্বেও আপনি অবাধে কানাডায় বসবাস করছেন এবং কানাডা সরকারের সহায়তা চাচ্ছেন। কেন কানাডা সরকারের সহায়তা চাচ্ছেন? নুর চৌধুরী : হ্যাঁ, আমি কানাডা সরকারের সাহায্য চাই। কারন আমি নির্দোষ। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে আমি জড়িত নই। আমি কানাডার রেসিডেন্ট।

আমি কানাডা সরকারের কাছে আমার নিরাপত্তা চাই এবং ন্যায়বিচার চাই। সিবিসি: বাংলাদেশের আদালতের বিচারে আপনি এবং অন্য ১১ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আপনি নিজে গুলি করে তৎকালীন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেছেন বলে তদন্ত এবং সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়েছে। নুর চৌধুরী : এটা ঠিক না। ঘটনার সময় আমি ওখানে ছিলাম না।

আমি অন্য কোথাও ছিলাম। এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়ার মতো অনেক লোকই আছে। কানাডায় আমার রাজনৈতিক আশ্রয়ের সময়েও তারা এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছে। কিন্তু তারা ভীত, সে কারনে প্রকাশ্যে এগিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছে না। সিবিসি: তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আপনার দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে কেন ? নুর চৌধুরী : আমি ক্যু সমর্থন করেছি।

সে সময়ে এই ক্যু ‘বিপ্লব’ এবং ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে সমর্থন এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেখানে ক্যু হয়েছে, পাল্টা ক্যু হয়েছে। একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আমি এই ক্যু এর ব্যাপারে দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জেনারেল ওসমানী এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানের সমর্থন আদায় করেছি। জেনারেল জিয়া পরে দেশের প্রেসিডেন্ট হন।

আমার ব্যাটালিয়ন তখন ঢাকায় ছিলো। আমি তাদের দিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের মাধ্যমে রক্তপাত এড়ানোতে ভূমিকা রাখি। সেই সময় ক্যু সমর্থক এবং বাদবাকী জনগনের মধ্যে একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো। সিবিসি : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট আপনি কোথায় ছিলেন? নুর চৌধুরী : আমি সেখানে ছিলাম না। আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আমি অন্য কোথাও ছিলাম ।

অন্য কিছু করছিলাম। সিবিসি: কি করছিলেন ? নুর চৌধুরী : নিরাপত্তার স্বার্থে আমি ওই সময় কোথায় কাদের সঙ্গে ছিলাম তা আলোচনা না করার জন্য আমি আপনাকে অনুরোধ করবো। সিবিসি: আমরা জেনেছি আপনি ওই সময় টি শার্ট বানাচ্ছিলেন। নুর চৌধুরী : তা ঠিক। সিবিসি: হত্যাকাণ্ডের সমর্থনে বের করা রেলির জন্য আপনি টি শার্ট বানাচ্ছিলেন? নুর চৌধুরী : ঠিক।

সিবিসি: আপনি কি ভোর পাঁচটায় টি শার্ট বানাচ্ছিলেন? হত্যাকাণ্ডটি ভোর ৫টায় হয়েছে । নুর চৌধুরী : আমি সন্ধ্যা থেকে ভোররাত ৫ টা পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। সিবিসি: আপনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন? নুর চৌধুরী : আমি আমার আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ছিলাম। সিবিসি: সেখানে আত্মীয়স্বজন ছাড়া অন্য কোনো নিরপেক্ষ লোক কি ছিলো? নুর চৌধুরী :সেখানে আমার আত্মীয় স্বজন ছাড়াও অন্য লোক ছিলো। সে একজন কানাডীয়ান।

সিবিসি: আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার বিচার হয়েছে এবং আপনি দণ্ডিত হয়েছেন? নুর চৌধুরী : হ্যাঁ, তা সঠিক । সিবিসি: এমন্যাষ্টি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক এবং গ্রহনযোগ্য মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলেছে বিচার অবাধ এবং নিরপেক্ষ হয়েছে। নুর চৌধুরী : হ্যাঁ, তারা বলেছে। কিন্তু আমি জানিনা তারা এই মামলার কতোটা গভীরে তারা যেতে পেরেছেন।

আমি জানি না তারা কিসের ভিত্তিতে এই কথা বলেছে। মামলায় অভিযোগের পাশাপাশি,অভিযুক্ত এবং সাক্ষীদের বক্তব্য থাকে। অভিযুক্তদের পক্ষের সাক্ষীদের নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি মনে করি বিচারটা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে। সিবিসি: তাহলে আপনি দেশে গিয়ে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন না কেন? নুর চৌধুরী : বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমার কোনো আস্থা নেই।

ওখানে বিচার কেনা বেচা হয়। সিবিসি: ঘটনার সময় আপনার বয়স ছিলো ২৪ বছর? নুর চৌধুরী : ঠিক। সিবিসি: আপনি সেনা বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেন? নুর চৌধুরী : ঠিক। সে সময় আমি ছিলাম সিভিলিয়ান এবং ব্যবসা করছিলাম। সিবিসি: কি ব্যবসা? নুর চৌধুরী: আমদানি রপ্তানি ব্যবসা।

সিবিসি: পচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর পর আপনিসহ জড়িতদের কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দেওয়া হয়! নুর চৌধুরী: ঠিক পর পর নয়, ক্যু এর অনেক পরে। সিবিসি: কখন? নুর চৌধুরী : ৭৫ এর শেষে অথবা ৭৬ এর দিকে। সিবিসি: ক্যু তো হয়েছে ৭৫ এ। তার মানে ওই বছরই বা পরের বছর। নুর চৌধুরী : পরের বছর।

সিবিসি: কি হিসেবে আপনাকে পোষ্টিং দেওয়া হয়? আপনার কি কাজ ছিলো? নুর চৌধুরী : আমাকে ইরানে সেকেণ্ড সেক্রেটারি হিসেবে পোষ্টিং দেওয়া হয়। সিবিসি: তখন আপনার বয়স মাত্র ২৫। এই বয়সেই মিলিটারির চাকরি,ব্যবসা, কূটনীতিক হিসেবে চাকরী ? নুর চৌধুরী : হ্যাঁ। সিবিসি: কিভাবে সম্ভব এটা ? নুর চৌধুরী : এটা খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে অধিকাংশ সেকেণ্ড সেক্রেটারিই ওই বয়সের।

সিবিসি: ৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা হত্যাকাণ্ডে আপনার ভূমিকার জন্য আসলে পুরষ্কৃত করেছে! বিচার থেকে রেহাই দিতে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। নুর চৌধুরী : আমি জানি না। যারা এটা করেছে তারা বলতে পারবে এটা কোনো রিওয়ার্ড কী না। আমি জানি এটা কোনো রিওয়ার্ড ছিলো না। আমার চেয়ে কম বয়সেও অনেকে বড় এসাইনমেন্ট নিয়ে বিদেশে যায়।

তখন তো আমি মাত্র আমার রেংক শুরু করেছিলাম। অবসরে চলে যাই। সিভিলিয়ান হয়ে যাই। সিবিসি: তখন আপনার রেংক কি ছিলো? নুর চৌধুরী: মেজর । সিবিসি: খন্দকার মুশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি পাশ করে আপনি ও আপনার সহযোগিদের হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে অব্যহতি দেয়।

সেটাও ঈঙ্গিত করে আপনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আপনি ইনডেমনিটি পেলেন কেন? নুর চৌধুরী :প্রেসিডেন্ট উত্তর দিতে পারবেন তিনি কেন ইনডেমনিটি দিয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত অনেক ঘটনারও শেখ মুজিব ইনডেমনিটি দিয়েছেন। জিয়াউর রহমানও আরো কিছু ঘটনাকে ইনডেমনিটি দিয়েছেন। সিবিসি: তারা কি খুন ,অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডকেও ইনডেমনিটি দিয়েছে? নুর চৌধুরী : অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড ইনডমেনিটি দেওয়ার কথা বলা হয়নি।

সিবিসি: তাহলে আপনি ইনডেমনিটি পেলেন কেন? নুর চৌধুরী : আমি ইনডেমনিটি পাইনি। আইন বলেছে পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা ইনডেমনিটি পাবে। সিবিসি: সেটা কি---(শেষ করার আগেই) নুর চৌধুরী: সেটা যারা অংশ নিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমি ক্যুতে অংশ নেইনি। সিবিসি: আপনি তো কূটনীতিক ।

কানাডা এলেন কেন? নুর চৌধুরী : সে সময় হাসিনা ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং স্বেচ্ছাচারীভাবে আমাকে দেশে ডেকে পাঠায়। আমি ভেবেছি অন্য কোথাও গিয়ে পরিস্থিতি পর্যব্ষণ করা ভালো। ভালো সময় এলে দেশে ফিরে যাওয়া যাবে। সিবিসি: এর অর্থ কি ? আপনি কি ইতিমধ্যে জানতেন যে আপনি সন্দেহভাজনদের একজন? নুর চৌধুরী : ক্ষমতায় আসা মাত্রই হাসিনা আমাকে দেশে ডেকে পাঠায়। সিবিসি: আর আপনি দেশে ফিরে যাওয়ার বদলে..(শেষ হওয়ার আগেই) নুর চৌধুরী : আমি ভিজিটর ভিসা নিয়ে কানাডা চলে আসি।

সিবিসি: রিফিউজি স্ট্যাটাস চেয়ে কখন আবেদন করেন? নুর চৌধুরী : কানাডা আসার এক বছর পর। আমি দেখলাম লোকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে। সিবিসি: মনে হচ্ছে কোনো কারনে আপনি দণ্ডিত হবেন এটা আপনি জানতেন এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিলেন। সে হিসেবেই আপনি কানাডায় আসেন? আপনি কি সন্দেহ করেছিলেন দেশে গেলে আপনাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে? নুর চৌধুরী : আমি সন্দেহ করিনি, আমি ভেবেছি। আমি জানতাম হাসিনা আমার পেছনে লেগে আছে এবং প্রতিশোধ নেবে।

সিবিসি: এটা কি প্রতিশোধ? না কি তার পিতা খুন হয়েছিলেন, সেই খুনের বিচার চাওয়া ? তার বাবা খুন হয়েছিলেন,খুনীদের বিচার চাওয়া, বিচার করা প্রতিশোধ হবে কেন? এটা বিচার বা ন্যায় বিচার নয় কেন? নুর চৌধুরী : প্রতিশোধ বলছি, কারন আমি এতে জড়িত না, কিন্তু হাসিনা আমার পেছনে লেগে আছে। সিবিসি: আগামী মাসে শেখ হাসিনা কানাডা আসছেন। তিনি চাচ্ছেন আপনাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে। কানাডা সরকারের প্রতি আপনার বক্তব্য কি? নুর চৌধুরী : আমি নির্দোষ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।

আমি আইন মান্যকারী নিরীহ নাগরিক। আমি কানাডার রেসিডেন্ট। কানাডা সরকারের কাছে আমি নিরাপত্তা চাই, ন্যায় বিচার চাই। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।