আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্যরকম একদিন(একজন বেকারের ডায়েরী - রম্য)

অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন,তাহার বক্ষে বেদনা অপার;

বেকার মানে হইল যার কার(গাড়ি) নাই। যেহেতু আমার কিংবা আমার বাবার কোন কালেই কোন কার ছিল না কাজেই আমি আজন্ম বেকার। বেকার হিসেবে আমার কাজ হইল সারাদিন বাসায় ঘুমিয়ে অত্যন্ত কর্মব্যস্ত দিন যাপন করা। ২২/০৩/২০১১ সকাল বেলা ঘুম ভাংল অ্যালার্মের শব্দে। চেয়ে দেখি ঘড়িতে আটটা বাজে।

এত সকালে আমার মত একজন বেকারের ঘুম থেকে উঠার কথ না। তাহলে অ্যালার্ম বাজার কথা না। তাহলে বাজল কেন?ঘুম ঘুম চোখে চিন্তা করতে করতে মনে পড়ল ৯ টায় টিউশনিতে যাওয়ার কথা। টিউশনি ছাড়া একজন বেকারের আর কীইবা করার আছে। মনে পড়ল আজকে ছাত্রী তিন ঘন্টা পড়ার আবদার জানিয়েছে।

এইটা মনে পড়তেই আবার দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে এল। ঘুম থেকে ঊঠলাম সাড়ে নয়টায়। উঠেই ছাত্রীকে ফোন করলাম। দুই বার ফোন করার পরও যখন ফোন ধরল না বুঝলাম ছাত্রী এখনো ঘুমাচ্ছে। কি আর করা ছাত্রীর মাকে ফোন দিয়া নিশ্চিন্ত হইলাম যে ছাত্রী ঘুমাইতেছে।

কাজেই জানালাম পড়াতে আসতেছি। আমার এই ছাত্রীটি পড়ালেখায় অত্যন্ত ফাঁকিবাজ। আমিও প্রাইভেট শিক্ষক হিসেবে বিশিষ্ট ফাকিবাজ। সপ্তাহে তিন দিন পড়াবার কথা। সেই হিসাবে মাসে ১২ দিন।

কিন্তু যেহেতু আমার ছাত্রী এবং আমি দুই জনেই ফাঁকিবাজ মাসে যাওয়া পড়ে বেশী হলে ৬-৭ দিন। কিন্তু মাস শেষ হওয়ার আগেই পাওয়া যায় বেতন। একজন বেকারের জন্য এর থেকে ভাল আর টিউশনি হতে পারে না। এই রকম একজন ফাঁকিবাজ ছাত্রী তিন ঘন্টা পড়বে এইটা কল্পনাই করা যায় না। তাছাড়া আমারো তিন ঘন্টা পড়ানোর ধৈর্য্য নাই।

এইদিকে মা এসে বলল বাজার থেকে আয়। সারাদিনতো টো টো করে ঘুরে বেড়াস নাইলে ঘুমাস। কাজেই বাজার করে দিয়েই বাসা থেকে বের হতে হল। এগারটায় পড়াতে গেলাম। আমাকে দেখেই ছাত্রীর প্রশ্ন আপনাকে না নয়টায় আসতে বলেছিলাম।

আমি অত্যন্ত নিরীহ মুখ করে বললাম যে ঘুম থেকে উঠতে পারি নাই। কিন্তু ছাত্রীও নাছোড়বান্দা আজ তাকে তিন ঘন্টা পড়তেই হবে। কারন পরেরদিন হোমওয়ার্ক না নিয়ে গেলে ক্লাস থেকে বের করে দেবে। শুনেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। কি আর করা ছাত্রী অঙ্ক করে আর আমি দেখি।

তিন ঘন্টা পড়াতে হবে। বড়ই বেকেয়দা অবস্থা। মাসের শেষ। এখন আমার বেতন পাওয়ার সময় এই সময় টিউশনিতে সিরিয়াস না হইলে চলে না। কাজেই দুঃখভারাক্রান্ত মন লইয়া টিউশনি করাইতে লাগিলাম আর চিন্তা করিতে লাগিলাম কার মুখ দর্শন করিয়া ঘুম হইতে উঠিয়াছিলাম।

চল্লিশ মিনিটের মতন অতিবাহিত হওয়ার পর নাস্তা আসিল বিস্কুট। দেখিয়া মনটা বিষাদে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। কারন তিন ঘন্টা পড়াইতে হইবে এই চিন্তায় ইতমধ্যে নিম্নচাপ অনুভূত হওয়া শুরু করিয়াছে। এখন বিস্কিট খাইলে পানি খাইতে হইবে। পানিখাইলে নিম্নচাপের গতি আরো বৃদ্ধি পাইবে।

কাজেই যেহেতু তিন ঘন্টা থাকিতে হইবে তাই আর বিস্কিটের দিকে অগ্রসর হইতে পারিলাম না। বুঝলাম পুরা দিনটাই খারাপ যাইবে। এইদিকে আমার ছাত্রী আপনমনে অঙ্ক করিয়া যাইতেছে আর সেই বিস্কিটগুলা খাইতে থাকিল। অবশেষে দুইটার দিকে ছুটি পাইয়া প্রফুল্ল মনে বাসার দিকে রওনা দিলাম। মৌচাক মার্কেটের কাছ থেকে বাসায় আসবার জন্য বাসে উঠব।

মৌচাক মার্কেটের কাছে আসতেই দেখলাম একটি মেয়ে একা দাঁড়িয়ে আছে। চেনা চেনা লাগল। আমার দিকে তাকাতেই হেসে উঠল। কাছে যেতেই বুঝলুম আমার বাল্যবান্ধবী। ছোটবেলায় একসাথে কাতুকুতু(কুতকুত নয়) খেলতাম।

খুবি মজার খেলা। বিছানার উপর কয়েকজনে মিলে খেলা শুরু হত। যে যাকে পারবে কাতুকুতু দেবে। বিছানা থেকে পড়ে গেলেই আউট। যে শেষ পর্যন্ত বিছানায় টিকে থাকবে সে ই জয়ী।

এছাড়াও কোল বালিশ দিয়ে বালিশ খেলাও আমাদের পছন্দের তালিকায় ছিল। বহু দিন পর দেখা। কাজেই কথা বলতে বলতে এক সময় বাল্যবান্ধবী জানতে চাইল কি করতেছি। জানালাম বেকার। এই সময় পড়ালেখা নিয়ে জানতে চাইলে জবাব দিলাম ফিজিক্সে সম্মান শেষ করেছি।

বান্ধবীর প্রশ্ন ফিজিক্সে সম্মান শেষ করেছিস না ফিজিক্সের সম্মান শেষ করেছিস?বান্ধবীর প্রতিভায় মুগ্ধ হইয়া গেলাম। মনে মনে বললুম যাক এত দিনে অন্তত একটা মেয়ে পাওয়া গেল যে আমাকে চিনতে পেরেছে। এবার দেখলাম কাছেই দাঁড়িয়ে দুই লোক কথা বলছিল তাদের একজন বারবার এই দিকে দেখছে। বান্ধবীকে বললুম কথাটা। বান্ধবী বলল দাড়া ডাক দেই।

আমি কিছু বলার আগেই সে ইয়াকুব বলে ডাক দিল। দেখলাম সেই লোকটা এগিয়ে আসছে। বুঝলাম বান্ধবী তাকে চেনে। বান্ধবী আমার সাথে ইয়াকুবের পরিচয় করিয়ে দিল এভাবে। ইয়াকুব এ হল তমাল আর তমাল এ হল ইয়াকুব।

আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে বললাম বেয়াকুব ভাই আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম। ইয়াকুব ভাই অত্যন্ত বিরক্ত হলেন। ইয়কুব ভাই জিজ্ঞেস করলেন আমি স্মৃতির(নিরাপত্যাজনিত কানে বান্ধবীর আসল নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না তাই ছদ্মনাম স্মৃতি) বন্ধু কিনা। আমি বললুম যে আমি স্মৃতি হল আমার গার্লফ্রেন্ড। এই খবরে ত ইয়াকুব ভাই পুরাই বিয়াকুব হইয়া গেলেন।

এই দিকে স্মৃতি বলল তুই থামবি। আমাকে থামিয়ে দিয়ে সে ইয়ায়াকুবকে বলল ইয়াকুব এইটা আমার একেবারে পিচ্চিকালের বন্ধু। ওর কথায় কিছু মনে করো না। এই বলে এবার আমার সাথে ইয়াকুবের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় দিল। যেই পরিচয় পাইলাম তাতে আমি নিজেই বিয়াকুব হইয়া গেলাম।

ইয়াকুব আসলে স্মৃতির স্বামী। বছর খানেক আগে বিয়ে করেছে। বুয়েট থেকে পাস করা ইঞ্জিনিয়ার। প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করে। পরিচয় পর্ব শেষ হতে না হতেই ইয়াকুব ভাই আমারে আরেকবার বিয়াকুব কইরা দিয়া স্মৃতিরে বলল বুঝলাম না হয় তোমার ছোটবেলার বন্ধু তাই বইলা আমারে বাসায় বেয়াকুব বল বন্ধুরেও এইটা বলতে হইব।

আমি বুঝলাম ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতেছে। তাই বিয়াকুব ভাইরে বুঝাইলাম যে আমাদের এক বন্ধু যার নাম ইয়াকুব সে সব সময় বেকুবের মত কাজ করে দেইখা আমরা তাকে বেয়াকুব ডাকি। তাই অভ্যাসের বশে উনারে ডাইকা ফেলছি। যাই হোক প্রসঙ্গক্রমে জানতে পারলাম তারা অচিরেই মা-বাবা হতে যাচ্ছেন। তারপর বিদায় নিয়ে আবারো দুখঃভারাক্রান্ত মনে বাসায় ফিরলাম।

আফসোস জীবনে প্রথমবারের মত একটা মেয়ে আমারে চিনতে পারল কিন্তু সেও বিবাহিতা। আর এই বিষয়টাও বুঝতে পারলাম সময়মত বিয়া করলে আমিও দুই বাচ্চার বাপ থাকতাম। আফসোস আমি একজন বেকার...একজন বেকারের জীবন এভাবেই চলতে থাকে...... বিঃদ্রঃ জীবিত কিংবা বিবাহিত কারো জীবনের সাথে এই ঘটনার মিল থাকলে লেখক দায়ী নহে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।