গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
মুক্তি : ১৯৯৯
দৈর্ঘ : ১২২ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ : যুক্তরাষ্ট্র
ভাষা : ইংরেজি
পরিচালনা : স্যাম মেণ্ডেজ
প্রযোজনা : ব্র“স কোহেন, ডান জিঙ্কস
চিত্রনাট্য : আলান বল
অভিনয় : কেভিন স্পেসি, আনেটে বেনিং, থোরা বার্চ, মিনা সুভারি, পিটার গালাঘের, ভেস বেন্টলি
সঙ্গীত : টমাস নিউম্যান
চিত্রগ্রহণ : কনার্ড এল হল
সম্পাদনা : তারিক আনোয়ার, ক্রিস্টোফর গ্রিনবারি
কাহিনী সংক্ষেপ : বাইরে থেকে লেস্টার ও ক্যারোলিনকে যথার্থ স্বামী-স্ত্রী মনে হয়। তাদের বাড়ি-ঘর, সন্তান, প্রতিবেশি সব দিক থেকে তারা পূর্ণ। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। মাঝ-বয়সী লেস্টার পৌঢ়ত্বের স্থবিরতায় ভূগছে। তার কন্যা জেন তাকে ঘৃণাই করে, স্ত্রী ক্যারোলিন তাকে সময় দেয় না।
ক্যারোলিন তার রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায় ব্যস্ত, ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দী বাডি কেনের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। জেন পাশের বাড়ির অদ্ভূত ছেলে রিকি’র প্রেমে পড়ে। রিকি আড়াল ভিডিও ক্যামেরায় জেনের ছবি তোলে, সে ড্রাগ ব্যবসায় জড়িত। লেস্টার তার কন্যা জেনের বান্ধবী এঞ্জেলাকে দেখে মুগ্ধ হয়, সে এঞ্জেলাকে নিয়ে নানা ফ্যান্টাসিতে ভোগে। এঞ্জেলার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লেস্টার ব্যায়াম শুরু করে, তার একঘেয়ে চাকরীটি ছেড়ে দেয়।
সে আবার তারুণ্যে ফিরে যেতে চায়। এঞ্জেলা মাঝ-বয়সী লেস্টারকে ব্যবহার করতে থাকে। আর লেস্টার ক্রমশ এক চূড়ান্ত পরিণামের দিকে এগুতে থাকে।
বিশেষত্ব : লেস্টার ও ক্যারোলিন ছবির একটা দৃশ্যে মিলিত হতে গেলে ক্যারোলিন তাকে সাবধান করে বলে, কাউচে যেন বিয়ার না পড়ে। লেস্টার হাউ তুলে বলে ‘এটা স্রেফ একটা কাউচ।
’ কিন্তু আমেরিকান বিউটি স্রেফ একটা আমেরিকান সাজানো গোছানো ছবি নয়। মার্কিন মধ্যবিত্ত সমাজের সৌন্দর্যের প্রতি এ ছবি স্রেফ একটা কটাক্ষও নয়, কেননা, এ ছবিতে লেস্টারের মাঝ বয়সী জীবনের মাধ্যমে মার্কিন মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ, অপূর্ণ বাসনা আর বুড়ো হওয়ার তীব্র ভয় উঠে এসেছে। আমেরিকার সমাজের প্রেম, যৌনতা, সৌন্দর্য, বস্তুবাদ, আত্ম-স্বাধীনতা, মাতৃত্ব-পিতৃত্ব ইত্যাদিকে প্রহসনের দৃষ্টিতে তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তির পর সাধারণ দর্শক ও সমালোচকের প্রশংসা পেয়েছে এ ছবি। সারা বিশ্বে সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করেছে।
৭২তম অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য ও সেরা চিত্রগ্রহনের পুরস্কার পেয়েছে এ ছবি। শিকাগো ফিল্ম ক্রিটিকস এসোসিয়েশন ও ব্রডকাস্ট ফিল্ম ক্রিটিকস এসোসিয়েশন এ ছবিকে সেরা ছবির সম্মান দিয়েছে। গোল্ডেন গ্লোবেও এটি সেরা ছবি সহ সেরা পরিচালক ও সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছে। ২০০৮ সালে দশ হাজার পাঠক দেড়শজন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং পঞ্চাশ জন সমালোচকের ভোটের মাধ্যমে এম্পারার ম্যাগাজিন সর্বকালের সেরা ছবির তালিকা বের করে, এ তালিকায় ৯৬ নম্বরে আমেরিকান বিউটি ঠাঁই পায়।
বিশেষ তথ্য :
১. এ ছবির ট্যাগলাইন বা মূল থিম হলো ‘লুক ক্লোজার’।
ছবির পোস্টারে এই লাইন দেখা যায়। আমেরিকান সমাজকে আরও কাছ থেকে দেখার ইংগিত রয়েছে এই লাইনে। কিন্তু পরিচালক স্যাম মেন্ডেজ এই ট্যাগ লাইন শুরুতে ভাবেননি। ছবির সেট নির্মাণের এক কর্মী লেস্টারের অফিসের কিউবিকলে এই কথাটি লিখে দেয়। পরে সম্পাদনা টেবিলে স্যাম মেন্ডেজ এটি লক্ষ্য করেন এবং তার এতো ভাল লাগে যে এটিকেই তিনি থিম লাইন করেন।
২. কার্যনির্বাহী প্রযোজক স্টিভেন স্পিলবার্গ নিজে স্যাম ম্যান্ডেজকে এই ছবির পরিচালক হিসাবে সুপারিশ করেছেন। উল্লেখ্য, এটি স্যাম ম্যান্ডেজের প্রথম চলচ্চিত্র। এর আগে তিনি মঞ্চ নাটকের নির্দেশক ছিলেন। দ্য ব্লু রুম এবং ক্যাবারে তার নির্দেশিত দুটি বিখ্যাত মঞ্চ নাটক। স্পিলবার্গ তার মঞ্চ নাটক দেখে বলেছিলেন, উনি একজন বড় মাপের ভিজ্যুয়ালিস্ট যার আছে অসাধারণ সিনেমাটিক স্টাইল।
স্যাম স্পিলবার্গের কথাকে সত্য প্রমাণ করেছিলেন, প্রথম ছবিতেই সেরা পরিচালকের অস্কার পেয়েছেন তিনি।
৩. ছবিতে আমেরিকান বিউটি কথাটির নানা ব্যাখ্যা আছে। প্রযোজক ডান জিঙ্কসের মতে, ক্যারোলিন যে গোলাপ চাষ করে এটা তার দিকে ইংগিত দিতে পারে, কারণ এই সুন্দর গোলাপের আড়ালে রয়েছে কাটা। কিংবা এটা যথার্থ সুন্দরী এঞ্জেলাকে ইংগিত করতে পারে, এমনকি এটা আমেরিকানদের স্বপ্ন এবং দৈনন্দিন জীবনে সৌন্দর্য বলতে কী বোঝায় তার অর্থও বহন করে। চিত্রনাট্যকার ও সহ প্রযোজক এলান বলের মতে, এটা দ্ব্যর্থকতা বোধক।
এটা এমন এক থিম যা দ্বারা আমরা বোঝাতে চেয়েছিলাম আপাত আমরা যা দেখি এর আড়ালে রয়ে গেছে অন্য কোন মানে।
৪. স্যাম মেন্ডেজ তার এই ছবিতে অত্যন্ত দক্ষ কলাকুশলীদের নিয়েছিলেন। সঙ্গীতের জন্যে টমাস নিউম্যানকে নেয়া হয় এবং চিত্রগ্রহনের জন্যে কিংবদন্তীতুল্য চিত্রগ্রাহক কর্নাড হলকে নেয়া হয়। কনার্ড আটবার অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এই ছবির জন্য তিনি অস্কার পান।
৫. মিনা সুভারি ও থোরা বার্চকে হাই স্কুলের শিয়ারলিডার নাচের জন্যে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিলো। এই নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন বিখ্যাত গায়িকা পওলা আব্দুল। ক্যালিফোর্নিয়ার টরেন্সের সাউথ হাই স্কুলে এটি শুটিং হয়।
৬. রিকি যে রেঁস্তোরায় কাজ করে সেখানকার বারটেন্ডার রূপে একজন প্রযোজক ব্র“স কোহেনকে দেখা যায়।
৭. স্যাম মেণ্ডেজ মিনা সুভারি ও থোরা বার্চকে ভিন্ন ভিন্ন রকম দেখাতে চেয়েছিলেন।
ছবি যতো এগিয়ে যায় থোরা ততো কম ম্যাকআপ দিতে থাকে আর মিনা ততো বেশি মেকআপন দিতে থাকে। দুই বালিকার পার্থক্য তীব্র করতেই এই উদ্যোগ।
৮. ছবির পোস্টারে যে সুন্দরী নারী হাত ও পেট দেখা যায় তা আসলে মিনা সুভারির নয়; অভিনেত্রী মডেল কোল হান্টারের।
৯. কেভিন স্পেসি এবং আনেটে বেনিং পরিচালক স্যাম ম্যান্ডেজের প্রথম পছন্দ ছিলো। যদিও লেস্টার ও ক্যারোলিনের চরিত্রের জন্যে টম হাঙ্কস এবং চেভি চাসেকে বলা হয়।
টম হাঙ্কস ম্যান্ডেজের পরের ছবি রোড টু প্রিডিসন (২০০২)-এ অভিনয় করেন।
১০. ছবির শুটিংয়ের সময় থোরা বার্চের বয়স ছিলো ১৭, তাই তাকে দিয়ে নগ্ন দৃশ্যটি করাতে নগ্ন দৃশ্যটি করাতে গেলে অভিভাবকের অনুমতি লাগতো। এই দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় থোরার বাবা-মাই শুধু নয়, চাইল্ড লেবার প্রতিনিধিও সেটে উপস্থিত ছিলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।