গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
দৈর্ঘ : ৯৩ মিনিট
রঙ : সাদাকালো
দেশ : ইতালি
ভাষা : ইতালিয়ান
পরিচালনা : ভিত্তরিও ডে সিকা
প্রযোজনা :গুইসেপ্পে আমাতো
চিত্রনাট্য : ভিত্তরিও ডে সিকা, সিসারে জাভাত্তিনি, সুসো চেচ্চি দ’আমিকো, জেরার্দো গুইরিয়েরি, অরেস্তে বিয়ানকোলি,এডলফো ফ্রাঞ্চি, মূল গল্প : লুইজি বার্তোলিনি
অভিনয় : লামবের্তো মা¹িওরানি, এঞ্জো স্টাইওলা, লিয়ানেল্লা কারেল, ভিত্তোরিও আন্তোনুচ্চি
সঙ্গীত : আলেসান্দ্রো সিকোগনিনি
চিত্রগ্রহণ : কার্লো মন্টোরি
সম্পাদনা : এরালডো দা রোমা
কাহিনী সংক্ষেপ : লুইজি বার্তোলিনির গল্প অবলম্বনে নির্মিত এ ছবির কাহিনী যথার্থই সরল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মন্দাক্রান্ত ইতালীর দরিদ্র নাগরিক আন্তোনিও রিচি চাকরীর সন্ধানে ব্যস্ত। একদিন পথে একটি পোস্টারে সে কাজের সন্ধান পায়। এই কাজের অন্যতম শর্ত, সাইকেল থাকতে হবে। কিন্তু তার পুত্রকে সাথে নিয়ে রোমের পথে পথে তার হারানো বাইসাইকেলটি খুঁজে বেড়াচ্ছে Ñ এই হলো ছবির কাহিনী।
স্ত্রী মারিয়া বিছানার চাদরের বিনিময়ে মহাজনের কাছ থেকে সাইকেল আনে। কিন্তু পথের তার সাইকেলটি চুরি যায়। পুলিশ তার এই সামান্য সাইকেল খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে উঠে না। সে তখন বন্ধুদের নিয়ে পথে পথে সাইকেল খুঁজতে থাকে। বন্ধুরাও এক সময় হতাশ হয়ে ফিরে যায়।
এই কাহিনীর চিত্রায়নে দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালীর অর্থনৈতিক দূরাবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। অবশেষে সে তার পুত্র ব্র“নোকে বুঝিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে আবার সাইকেলটি খুঁজতে বেড়োয় এবং সৌভাগ্যক্রমে সাইকেল চোরকে তারা ধরতেও পারে। ব্রূনো দৌঁড়ে পুলিশ ডেকে নিয়ে আসে। পুলিশ এসে দেখে অভিযুক্ত বালকটি অচেতন হয়ে পড়ে আছে, আন্তেনিওকে ঘিরে আছে বালকের প্রতিবেশিরা, তারা অসহায় বালকটির এই অবস্থার জন্য আন্তোনিওকে অভিযুক্ত করে। পুলিশ আন্তোনিওকে জানায়, যেহেতু সে তার কাছে কোন চাক্ষুস স্বাক্ষী নেই এবং কোন প্রমাণও নেই সেহেতু বালকটি বিরুদ্ধে তাদের কিছু করার নেই।
আন্তোনিওকে ফিরে যেতে হয়। প্রতিবেশিরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। শেষ পর্যন্ত সে নিজেই একটা বাইসাইকেল চুরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সাইকেল চুরি করতে গিয়ে সে হাতেনাতে ধরা পড়ে, জনতা তার ছোট্ট শিশুর সামনেই তাকে মারধোর করে। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু বেচারা ব্র“নোকে দেখে সাইকেলের মালিকের দয়া হয়, সে কোন কেস করে না। শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, ভিড়ের মধ্য দিয়ে বেচারা আন্তোনিও ব্র“নোর হাত ধরে যাচ্ছে। তারা দুজনেই কান্না রোধের চেষ্টা করছে।
বিশেষত্ব : সমালোচক ও অন্যান্য চিত্র নির্মাতেদর দ্বারা নিয়মিতই সেরা ছবির তালিকায় বাই সাইকেল থিবের নাম সর্বাগ্রে চলে আসে। এমনকি ১৯৫০ সালে এই ছবিকে বিশেষ সম্মাননা অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়।
মুক্তির মাত্র চার বছর পর সাইট এণ্ড সাউন্ড ম্যাগাজিন একে সর্বকালের সেরা ছবি হিসাবে ঘোষণা দেয়। ২০০২ সালের সাইট এণ্ড সাউন্ডের জরিপে এটি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবির মধ্যে ষষ্ঠ তালিকায় আছে। ১৯৪৫ সালে রবার্তো রসেলিনি তার রোম, ওপেন সিটি ছবির মাধ্যমে নতুন ধারার বাস্তববাদী ছবি সুচনা করেছিলেন বাইসাইলে থিভস তার অন্যতম সেরা উদাহরণ। সত্যিকার অর্থে এই ছবিকে চলচ্চিত্রে নিউ-রিয়ালিজমের প্রবক্তা হিসাবে গণ্য করা হয়। সাধারণ মানুষের সাধারণ গল্পকে চলচ্চিত্রের উপাদান হিসাবে ফুটিয়ে তুলতে এই ছবি অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছে।
মানবতার গল্প বলার জন্য ভ্যাটিকানের শ্রেষ্ঠ ছবির তালিকাতেও এটি ঠাঁই পেয়েছে। স্বদেশ ছাড়াও ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, জাপানেও এ ছবি একাধিকবার সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নিয়েছে।
বিশেষ তথ্য :
১. ডি সিকা রোমের রাস্তাতেই এই ছবির শুটিং করেছেন। তিনি কোন পেশাদার অভিনেতা ব্যবহার করেননি। আন্তোনিও চরিত্রের অভিনেতা লামবার্তোর অভিনয়ের কোন প্রশিক্ষনই নেই।
ছবির এই কেন্দ্রীয় অভিনেতা ছিলেন এক কারখানা শ্রমিক।
২. সারা বিশ্বের সেরা পরিচালকদেরকে এ ছবি নানা ভাবে প্রভাবিত করেছে। টিম বার্টন তার পি-উয়ি’স বিগ এডভেঞ্চার ছবির ধারণাটি নিয়েছেন এ ছবি থেকে। বিখ্যাত তামিল ছবি পোলাধাবানও এ ছবি দ্বারা অনুপ্রাণিত। ভারতীয় নতুন ধারার চলচ্চিত্র তৈরীতে এ ছবির ভূমিকা অসীম।
সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি, বিমল রায়ের দো বিঘা জমি’তেও বাইসাইকেল থিভসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
৩. চলচ্চিত্র সূচনা থেকে বিশেষ ঘরাণার ছিলো। এর আয়োজন, এর গল্প সব কিছুতেই ছিলো অসাধারনত্বের ছাপ। কিন্তু এই ছবিতে ফুঁটে ওঠে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ। এ ছবিতে দারিদ্র-অসহায়ত্ব, যুদ্ধোত্তর ইতালীর সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিব মন্দা একটি সাধারণ মানুষ, তার সন্তান ও একটি বাইসেকেলকে ঘিরে রচিত হয়।
খুব কম ছবিই এতো সহজ করে এতো মহৎ বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছে। মহাজনের দোকানে এক কর্মচারী বিছানার চাদরটি সিলিংয়ের কাছে উঠে যায়, শত শত চাদরের উপর আরও একটি চাদর গুছিয়ে রাখে। এই একটি দৃশ্যেই পরিচালক বুঝিয়ে দেন এই আন্তোনিও’র স্ত্রী’র মতো শত শত লোক চাদর রেখে কিছু না-কিছু নিয়ে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।