গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
দৈর্ঘ : ৭৫ মিনিট
রঙ : সাদাকালো
দেশ : রাশিয়া
ভাষা : নির্বাক, রুশ ক্যাপশন
পরিচালক : সের্গেই আইজেনেস্টাইন
প্রযোজক : জেকব ব্লিয়খ
চিত্রনাট্য : নিনা আগাদঝানোভা, নিকোলাই এলেয়েভ, সের্গেই আইজেনেস্টাইন, সের্গেই ত্রেতেকভ
অভিনয় : আলেক্সজান্দাে আন্তোনভ, গ্রিগরি ভাকুলিনচুক, ভাদিমির বারাস্কি, গ্রিগরি আলেক্সান্দ্রভ, ইভান বরোভব, মিখাইল গমোরোভ, আলেক্সান্দ্র লেভেনসিন, বিয়াত্রি ভাইটোলডি
সঙ্গীত :
চিত্রগ্রহণ : এদুয়ার্দ টিসে
সম্পাদনা :
শিল্প নির্দেশনা :
কাহিনী সংক্ষেপ : ১৯০৫ সালে জারের আমলে যুদ্ধ জাহাজ পোটেমকিনের সাধারণ নাবিকরা উর্দ্ধতন অফিসারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। সেই সত্য ঘটনা অবলম্বনেই এ ছবি নির্মিত। পাঁচটি অংশে এ ছবির কাহিনী বিবৃত হয়েছে।
প্রথম অংশ : মানুষ ও পোকা : এই অংশে আমরা দেখতে পাই নাবিকদের জন্য পোকাঅলা দুর্গন্ধ মাংস রান্না করা হয়েছে। তারা এটি খেতে অস্বীকার করছে।
দ্বিতীয় অংশ : বন্দরের নাটক : জাহাজ বন্দরে পৌঁছেছে আর বিদ্রোহের নেতা ভাকুলিনচুক নিহত হয়েছে।
তৃতীয় অংশ : ন্যায়ের দাবীতে একজন মৃত মানুষ : ওডেসা বন্দরের সবাই ভাকুলিনচুকের মৃত্যুতে শোকাহত এবং বিচার প্রার্থী।
চতুর্থ অংশ : ওডেসার সিঁড়িতে : জারের সৈন্যরা ওডেসাতে গণ হত্যায় লিপ্ত।
পঞ্চম অংশ : বাহিনীর সাথে মিলন : এই অংশে আমরা দেখি সৈন্য বাহিনী সাধারণ নাবিকদের সাথে যোগ দেয়।
বিশেষত্ব :
দ্য ব্যাটেলশিপ পটেমকিনকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রোপাগাণ্ডা [প্রচারণামূলক] চলচ্চিত্র বলা হয়।
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ১৯৫৮ সালের এক বিশ্বমেলায় একে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়। আইজেনস্টাইনের এই ছবিতে তার অন্যতম তত্ত্ব ‘মন্তাজ’ এর সফল পরীক্ষা করা হয়। দর্শকের আবেগের উপর চলচ্চিত্রের একের পর এক শটের প্রভাব কিভাবে পড়ে বিপ্লবী চলচ্চিত্রকার কুশেলভ-এর স্কুলের ছাত্র আইজেনেস্টাইন তা-ই পরীক্ষা করে দেখেছেন। দর্শকের মনে আবেগের চূড়ান্ত বিকাশ তৈরির জন্যই যেন তিনি শটগুলোকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যাতে যুদ্ধ জাহাজ পটেমকিনের নাবিকদের জন্যে তাদের হৃদয় কেঁদে ওঠে। অন্য দিকে জাহাজের অফিসারবৃন্দের প্রতিও ঘৃণা প্রকাশ পাওয়া লক্ষ্য ছিলো।
প্রাথমিকভাবে স্বদেশের সাধারণ দর্শক আইজেনস্টাইকে হতাশ করেছে। কিন্তু একাধিক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছবিটি মুক্তি পায় এবং মুক্তির সাথে সাথেই ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে, এবং আইজেনস্টাইনের তত্ত্ব সার্থক হয়। তবে প্রশংসা পেলেও ছবির নৃশংসতা ও মারামারি বহু সমালোচককে বিদ্ধ করে। জার্মানির সাৎসিবাহিনী এ ছবিকে রাজনৈতিক প্রচারণার অন্যতম হাতিয়ার বলে মনে করে। নাৎসি প্রোপাগান্ডা প্রধাণ জোসেফ গোয়েবেল এই ছবি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘অসাধারণ একটি ছবি, যার কোন তুলনাই নেই... যে কেউ যার কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই সে এই ছবি দেখার পরই বলশেভিক হয়ে উঠবে।
’’
বিশেষ তথ্য
১. এই ছবির সবচেয়ে বিখ্যাত দৃশ্যটি হলো ওডেসার সিঁড়িতে গণহত্যা। এই দৃশ্যে আমরা দেখি জারে কসাক বাহিনী সিঁড়ি দিয়ে গুলি করতে করতে ধাপে ধাপে নামছে। তাদের সাদা গ্রীস্মকালিন পোশাক আর সিঁড়ির ধাপের এক অনবদ্য ছন্দে ও কম্পোজিশনে পুরো দৃশ্যটি গ্রহণ করা হয়েছে। যন্ত্রের মতো নেমে আসা এই বাহিনীর আক্রমণের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে একটি ছোট্ট বালক ও তার মা।
মা তার শিশুটিকে একটি গাড়িতে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছ্। ে এক সময় মা পড়ে যান, তিনি মারা যাচ্ছেন, কিন্তু তবু নিজের শরীর গাড়িটির সামনে রেখে ঠেলছেন। তবুও শেষ রক্ষা হয় না, ভীড়ের মধ্যেই গাড়িটি সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে...। এই একটি দৃশ্য এককভাবে বিশ্ব চলচ্চিত্রে কী রকম প্রভাব ফেলেছিলো আসুন তা জানা যাক। এই দৃশ্যের অনুরূপ দৃশ্য আমরা দেখতে পাই টেরি গিলিয়ামের ব্রাজিল, ফ্রান্সি ফোর্ড কপোলা‘র দ্য গডফাদার, ব্রায়ান ডি পালমার দ্য আনটাচেবল, টিবল টাকাসের ডেথ লাইন, লরেল হার্ডির দ্য মিউজিক বক্স, জর্জ লুকাসের স্টার ওয়ার্স এপিসোড ৩, উডি এলেনের বানানা, পিটার সেলারসের দ্য ম্যাজিক ক্রিসমাস ছবিতে।
বিশ্বের সেরা সেরা পরিচালকদের ছবিতে আজও আইজেনস্টাইনের দৃশ্য ধারণ ও মন্তাজ টেকনিক নিয়তি অনুসৃত হয়, হচ্ছে।
২. ওডেসা দৃশ্যের একটি অংশে আমরা একজন নার্সের মুখ হা করে চিৎকার করা এবং তার ভাঙা চশমা দেখি। এই ইমেজ দ্বারা তীব্রভাবে প্রভাবিত ছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন [১৯০৯-১৯৯২]। খোলা মুখ এর ছবি আমরা দেখি বেকনের এবস্ট্রাকশন এবং ফ্রেগম্যান্ট অব ক্রুসিফিকেশন ছবিতে। এ ছাড়াও হেড সিরিজের একাধিক ছবিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
৩. ওডেসার এই গণহত্যার দৃশ্যটি কাল্পনিক। জারদের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং ছবিতে নাটকীয়তা সৃষ্টির জন্যই আইজেনেস্টাইন এই দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। অবশ্য এটুকু সত্য যে পটেমকিন বন্দরে পৌঁছানোর পর বিপুল মিছিল হয়েছিলো। দ্য টাইম এবং স্থানীয় ব্রিটিশ কাউন্সিল জানিয়েছিলো ভিড় কমানোর জন্য ফাঁকা গুলি হয়েছিলো, কোন হতাহতর ঘটনা ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে রজার এবার্ট লিখেছেন, ‘‘আসলে সেখানে জারদের দ্বারা কোন গণহত্যা হয়নি, তবু তাতে ওডেসা দৃশ্যের ক্ষমতা কম নয়... এটা আইরনিকাল যে আইজেনস্টাইন দৃশ্যটি এতো স্বার্থকভাবে ধারণ করেছেন যে ওডেসার রক্তপাত সত্যিই ঘটেছিলো বলে আজ অনেকে বিশ্বাস করে।
’’
৪. সোভিয়েত ইউনিয়নে মুক্তি পাওয়ার পর এ ছবি মুক্তি পায় আমেরিকাতে। জার্মানিতে কর্তৃপক্ষ কিছু দৃশ্য নৃশংস বলে বাদ দেয়া হয়। নাৎসিদের আমলে [১৯৫৪ সাল পর্যন্ত] এ ছবিতে জার্মানিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ব্রিটেনেও দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকে।
৫. এটি চার্লি চ্যাপলিনের অন্যতম প্রিয় একটি ছবি ছিলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।