গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
মুক্তিকাল : ১৯১৫
কাহিনী সংক্ষেপ : কর্ণেল বেন ক্যামেরুন এবং কংগ্রেস ম্যান অস্টিন স্টোনম্যানের মধ্যে দীর্ঘদিনের পারিবারিক বন্ধুত্ব বিদ্যমান। গৃহযুদ্ধের শুরু হলে পরিবর্তিতত পরিস্থিতিতে পুরনো পারিবারিক বন্ধুত্বে শুধু ফাটলই ধরে না, তারা একেবারে পরস্পরের বিপরীত অবস্থানে চলে যায়। যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু দুই পরিবারই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যুদ্ধের পর স্টোনম্যান সপরিবারে দক্ষিণে চলে যান নিজের রাজতৈনিক ভাবনা ও আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতিষ্ঠিত করতে। ক্যামেরুন অস্টিনের এই সিদ্ধান্তকে শ্বেত আমেরিকানদের বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে দেখে।
আর এই হুমকি ঠেকাতে সে ক্লু ক্ল্যাক্স ক্লেন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।
বিশেষত্ব : সম্ভবত চিরকালের অন্যতম বিতর্কিত ছবি দ্য বার্থ অব নেশন। এ ছবির প্রথমাংশে ব্যাপকভাবে গৃহযুদ্ধকে তুলে ধরা হয়, দ্বিতীয়াংশে ক্লু ক্যাক্স ক্লেন এর প্রতিষ্ঠাকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। জেনারেল লি’র আত্মসমর্পণ, লিঙ্কনের গুপ্ত হত্যার মতো সে যুগের উল্লেখযোগ্য সব ঘটনাই প্রায় তথ্যচিত্রের মতোই বিশ্বস্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এটাই প্রথম ছবি যা আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছিলো।
বার্থ অব নেশনকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রথম মাস্টার পিস গণ্য করা হয়। একদিকে চলচ্চিত্রের মৌল কৌশল সমূহের স্বার্থক ব্যবহার এবং অন্য দিকে বর্ণবাদী দর্শনের প্রচার এ ছবিকে সমালোচনার তুঙ্গে নিয়ে যায়। শৈল্পিক চিত্রগ্রহণের পাশাপাশি দক্ষ সম্পাদনা এই চলচ্চিত্রের অন্যতম আকর্ষণ।
মূল তথ্যাদি
দৈর্ঘ : ৩ ঘণ্টা ১০ মিনিট
রঙ : সাদাকালো, আংশিক রঙিন
দেশ ও ভাষা : আমেরিকা ও ইংরেজি
পরিচালক : ডি ডব্লুউ গ্রিফিথ
প্রযোজক : ডি ডব্লুউ গ্রিফিথ
চিত্রনাট্য : টমাস এফ. ডিকশন জে আর
[উপন্যাস, দ্য ক্লান্স ম্যান: এন হিস্টোরিকাল রোমান্স অব দ্য ক্লু ক্লুক্স ক্যান, দ্য লিওপার্ড স্পট, নাটক : দ্য ক্ল্যান্স ম্যান]
ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ, ফ্রাঙ্ক ই উডস
পুরস্কার/ সম্মান :
শিল্পী ও কলাকুশলী
অভিনয় : লিলিয়ান গিস, ম্যা মার্স, হেনরি বি ওয়ালথহল, মিরিয়াম কোপার, মেরি এলডেন, রাল্ফ লুইস, জর্জ সিগমান, ওয়ালটার লং
সঙ্গীত : জোসেফ কার্ল ব্রিল, ডি ডব্লুউ গ্রিফিথ
চিত্রগ্রহণ : জি ডব্লিউ বিৎজার
সম্পাদনা : ডি ডব্লুউ গ্রিফিথ, জোসেফ হ্যানাবেরি, জেমস স্মিথ, রোজ স্মিথ, রাউল ওয়ালস
শিল্প নির্দেশনা :
বিশেষ তথ্য :
১. ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে ‘দ্য ক্ল্যান্স ম্যান’ নামে এ ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছিলো। কিন্তু পরে নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে এর নামকরণ বদলে যায়।
২. সেই সময়ের দুই দশক জুড়ে এটি সবচেয়ে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র ছিলো। মাত্র ১১০,০০০ ডলার ব্যয়ে নির্মিত এ চলচ্চিত্র কোটি ডলারের ব্যবসা করেছিলো। ওয়াল্ট ডিজনীর বিখ্যাত এনিমেশন ফিল্ম øো হোয়াইট মুক্তির আগ পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর ধরে এ ছবি একচেটিয়া ব্যবসা করে গেছে।
৩. গ্রিফিথের হাতে এ ছবির জন্যে কোন লিখিত চিত্রনাট্য ছিলো না। টমাস ডিকশনের উপন্যাস ও নাটক থেকে কাহিনী নিয়ে পুরো ছবিটাকে তিনি মনে মনে চিত্রায়িত করেছিলেন।
এমনকি এ ছবির জন্যে তিনি কোন নোটও ব্যবহার করেননি।
৪. আজকের চলচ্চিত্রে বহুল ব্যবহৃত রাতের দৃশ্য, বহিঃদৃশ্য, প্যানারোমিক শট, হাই এঙ্গেল শট ইত্যাদি এ ছবিতেই প্রথম দক্ষভাবে তুলে ধরা হয়।
৫. প্রবাদতুল্য পরিচালক জন পরিচালক ফোর্ড [স্টেজকোচ] এ ছবিতে একজন ক্ল্যান্সম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
৬. এটাই প্রথম চলচ্চিত্র যা হোয়াইট হাউজে আলাদাভাবে প্রদর্শিত হয়। এবং তৎকালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইড্র উইলসন এ ছবির উচচ প্রশংসা করেন।
পরবর্তীতে গ্রিফিথের বিরুদ্ধে যখন ‘ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সম্যান্ট কলার্ড পিপল’ [এনএএসিপি] বর্ণবাদের অভিযোগ আনে তখন তিনি প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে কাজে লাগান।
৭. পরবর্তীতে গ্রিফিথ এ ছবির একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ বের করেন যেখানে ক্লু ক্লেক্স ক্ল্যানের প্রসঙ্গ বাদ দেয়া হয়।
৮. ইতিহাসে বর্ণবাদী ছবি হিসেবে এ ছবি নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই। মুক্তির কয়েক দশক পরও এ ছবি নানা প্রশর্দন কেন্দ্রে বহু দাঙ্গার সৃষ্টি করেছে। সে সময় বোস্টন, ডেনভার, ফিলাডেলফিয়া, মিনাপোলিস, পিটসবার্গ, ওহিও, সেন্ট লুইয়ের মতো বড় বড় শহরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিলো।
কিন্তু সব দাঙ্গা আর বিতর্ক এ ছবির লাভের অঙ্ককে বাড়িয়েই দিয়েছিলো। সকল বির্তকের পরও প্রবল দর্শক চাহিদার মুখে এ ছবির সব দোষই কেটে যায়। যদিও এখনও কারো কারো ধারণা আছে তীব্র বর্ণবাদী দল ক্লু ক্ল্যাক্স ক্লান এর নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে এ ছবিকে ব্যবহার করা হয়!
৯. মজার ব্যাপার হলো, ছবির প্রধাণ কালো চরিত্রে সাদারাই কালো সেজে অভিনয় করেছিলো। সত্যিকারের কালো নিগ্রোরা কেবল অপ্রধাণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।