গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
মুক্তি : ১৯৫৭
দৈর্ঘ : ১৬১ মিনিট
রঙ : সাদাকালো, আংশিক রঙিন
দেশ : যুক্তরাজ্য
ভাষা : ইংরেজি
পরিচালনা : ডেভিড লিন
প্রযোজনা : স্যাম স্পিগেল
চিত্রনাট্য : মাইকেল উইলসন, কার্ল ফোরম্যান, পিয়েরে ব্যুলে (মূল উপন্যাস)
অভিনয় : উইলিয়াম হোলডেন, এলেক গিনিস, ঝ্যাক হকিন্স, সেস্যু হাওয়াকে
সঙ্গীত : ম্যালকোলম আর্নল্ড
চিত্রগ্রহণ : জ্যাক হিল্ডার্ড
সম্পাদনা : পিটার টেইলর
কাহিনী সংক্ষেপ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছে এর কাহিনী। সিঙ্গাপুর আত্মসমর্পণ করলে একদল ব্রিটিশ সেনাকে বন্দী করে থাইল্যান্ডে আনা হয়। এখানে জাপানী এক বন্দী শিবিরে কর্ণেল সাইটোর সামনে তাদেরকে আনা হয়। কর্ণেল কাওয়াই নদীতে সেতু তৈরির জন্যে সবাইকে তৈরি হতে বলেন। এই সেতুটি জাপানীদের সমর কৌশলের বিবেচনায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রিটিশ সেনাদের কমাণ্ডার কর্ণেল নিকোলসন এতে আপত্তি জানান। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কোন বন্দী অফিসার শারীরিক শ্রম দিতে বাধ্য নয়। জবাবে সাইটো কর্ণেল নিকোলাসকে শাস্তি দেয়। মেডিক্যাল অফিসার মেজর ক্লিপটন মধ্যস্থতা করতে এসেও শাস্তি পায়। এদিকে সৈন্যরা ইচ্ছা করে কাজ দেরীতে করতে থাকে।
১৯০৫ সালে রুশ-জাপান যুদ্ধের বিজয় উৎসবকে অজুহাত করে সাইটো নিকোলাসকে মুক্ত করে এবং তার অফিসারদের স্বাধীনভাবে কাজ করানোর অনুমতি দেয়। নিকোলাস তার কিছু অফিসারের আপত্তি সত্ত্বেও ক্যাপ্টেন রিভেজ এবং মেজর হাগেসকে ব্রিজ তৈরির দায়িত্ব দেয়। কর্ণেল নিকোলাস চান ব্রিটিশ সেনারা এই সেতুটি তৈরি করুক।
এদিকে তিনজন বন্দী পালানোর চেষ্টা করে, দুজন মারা যায়, কিন্তু মার্কিন নেভি কমাণ্ডার শেয়ারস আহত হয়েও পালিয়ে যায়। বহুদিনের চেষ্টায় গ্রামের লোকদের সহায়তায় সে মাউন্ট লাভানিয়া হাসপাতালে পৌঁছায়।
শেয়ারস ভাল চিকিৎসার আশায় এখানে নিজেকে ব্রিটিশ অফিসার বলে পরিচয় দিয়েছিলো। সে মৃত আরেক অফিসারের পোশাক পরে আসে। এদিকে মেজর ভার্ডেন শেয়ারসের আসল পরিচয় জানতে পারে এবং তাকে বলে, সেতুটি ধ্বংস করতে।
এদিকে নিকোলাস নির্দিষ্ট সময়ে সেতু বানানোর কাজ করতে থাকে। শেয়ারস, ভার্ডেন ও কানাডিয় ল্যাফটেনেন্ট জয়েস কাওয়াই নদীতের কাছে আসে।
তারা পানির নীচে বিস্ফোরক প্রতিস্থাপন করে।
জাপানী সৈন্য ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের বহন করা ট্রেন নিয়ে পরদিন সকালে এই সেতুর উদ্বোধন করা হবে। ভাটাতে পানি কমে যাওয়া নিকোলাস বোমার তার দেখতে পায় এবং সাইটোকে জানায়। ট্রেনটি এগিয়ে আসতে থাকে। দুই দেশের দুই কর্ণেল ট্রেনটি বাঁচাতে চেষ্টা করতে থাকে।
নীচে শত্র“রা সেতু ও ট্রেন ওড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। ছবি শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে।
বিশেষত্ব : ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রি এই ছবিটিকে ‘সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক অথবা নন্দনতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ বিবেচনা করে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। এ ছবি অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা চিত্রনাট্য, সেরা আবহ সঙ্গীত ও সেরা চিত্রগ্রহণ সহ ৭টি পুরস্কার জিতে নেয়। ব্রিটিশ অস্কার বলে খ্যাত বাফটা পুরস্কারে এ ছবি সেরা ব্রিটিশ চলচ্চিত্র, সেরা ব্রিটিশ অভিনেতা এবং বেস্ট ফিল্ম ফ্রম এনি সোর্স শিরোপা জিতে নেয়।
গোল্ডেন গ্লোবেও এ ছবি সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক ও সেরা অভিনেতার শিরোপা জিতে নেয়। এছাড়া নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিক এওয়ার্ড-এ সেরা চলচ্চিত্র, সেরা অভিনেতা ও সেরা পরিচালকের পুরস্কার পায়। ২০০৫ সালে ব্রিটিশি টিভি চ্যানেল চ্যানেল ফোর-এর এক জরিপে বিশ্ব সেরা ১০০ চলচ্চিত্রের মধ্যে এটি ১০ম স্থানে ঠাঁই পায়। ১৯৫৮ সালের অন্যতম ব্যবসা সফল ছবি ছিলো এটি।
বিশেষ তথ্য :
১. শেয়ারসের চরিত্রটি চিত্রনাট্যকার কার্ল ফোরম্যান লিখেছিলেন হামফ্রে বোগার্টের কথা মাথায় রেখে।
কিন্তু বোগার্ট অন্য ছবিতে ব্যস্ত থাকায় হ্যারি কোনকে নেয়া হয়। কর্ণেল নিকোলাস চরিত্রে ক্যারি গ্র্যান্টকে ভাবা হয়েছিলো, কিন্তু ক্রাইসিস ছবির ব্যর্থতার কারণে তাকে আর নেয়া হয়নি। পরে চরিত্রটি লরেন্স অলিভিয়ারকে করতে বলা হয়, সে ব্যর্থতা প্রকাশ করলে এলেক গিনিস অভিনয় করেন এবং অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন। অবশ্য শুরুতে এলেক গিনিসও এ চরিত্রটি করতে রাজী ছিলেন না।
২. চিত্রনাট্যকার মাইকেল উইলসন ও কার্ল ফোরম্যান কমিউনিস্ট সন্দেহে কালো তালিকাভূক্ত ছিলো।
ফলে চিত্রনাট্যকার হিসাবে তাদের নাম ছবিতে দেয়া হয়নি। ফলে পিয়েরে ব্যুলে চিত্রনাট্য রূপান্তরের জন্য অস্কার পেয়ে যান। উল্লেখ্য পিয়েরে ব্যুলে মূল উপন্যাসটি ফরাসী ভাষায় লেখেন এবং তিনি একবর্ণও ইংরেজি জানেন না। এক বর্ণ ইংরেজি না জানা ব্যক্তি ইংরেজি ছবির চিত্রনাট্য লেখার জন্যে অস্কার পুরস্কার পান এটি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। ১৯৮৪ সালে কর্তৃপক্ষ মাইকেল উইলসন ও কার্ল ফোরম্যানকে স্বীকৃতি দেয়।
কিন্তু এ স্বীকৃতির জন্যে উইলসন বেঁচে ছিলেন না, আর ঘোষণা দেয়ার আগের দিন ফোরম্যানও দেহত্যাগ করেছিলেন। পরে ছবিতে তাদের নাম সংযোজন করা হয়।
৩. ছবিতে যে সেতু দেখানো হয় সেটি বানাতে খরচ হয়েছিলো ২৫০,০০০ ডলার। কোন অভিনেতা নির্বাচিত হওয়ার আগেই সেতুটি বানানো হয়ে গিয়েছিলো। বাস্তবে সেতুটি বানাতে সময় লেগেছিলো ৮ মাস এবং বানানোর দু’বছর পর ধ্বংস হয়েছিলো।
এই সেতুটি বানাতে প্রায় ১ লক্ষ সেনাকে বাধ্য করা হয়েছিলো, সেতু নির্মাণকালে প্রায় ১২ হাজার সেনার মৃত্যু হয়।
৪. ছবির গল্পটি আংশিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি সত্যি ঘটনা থেকে নেয়া। ১৯৯১ সালে পিটার ডেভিস ‘দ্য ম্যান বিহাউন্ড দ্য ব্রিজ’ গ্রন্থে কর্নেল নিকোলাসের স্মৃতি লিপিবদ্ধ করেছেন।
৫. মূল উপন্যাসিক পিয়েরে বুল যুদ্ধের সময় থাইল্যান্ডে বন্দী ছিলেন। কর্নেল নিকোলাস চরিত্র সৃষ্টিতে তার যুদ্ধবন্দী জীবনে দেখা একাধিক ফরাসি অফিসারকে কাজে লাগিয়েছেন।
৬. শুটিং চলাকালে ডেভিড লিন স্রোতসিনি নদীতে যুবে যাচ্ছিলেন। জিডফ্রি হর্ন তার জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।